somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সকাল বেলা রাশিফল না দেখে বাইরে নামার কুফল

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগেই বলে রাখছি, সংশ্লিষ্ট কারো যদি এই লেখা দেখার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও থাকত তবে আমি ইহা প্রকাশ করতাম না ।
আমার মাল্টিমিডিয়া সেটে গতরাত থেকে নেট পাচ্ছিলো না ।ফলস্বরুপ কাওসারে নাইজেরিয়ান গার্লফ্রেন্ডের মেসেজের রিপ্লে দিতে পারিনি । এহেনো কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সকালবেনা মামাকে ফোন দিলাম । মামার সার্ভিসিংয়ের দোকান , সকালে কাজের কোনো চাপ নেই । তাই সাতটা বাজতেই সাইকেল নিয়ে বের হলাম । যদিও সাইকেলে ব্রেক নাই তবে তাতে আমার তেমন সমস্যা হতো না । ত বটতলার মোর ঘুরে যখন গার্লসের দিকে যাচ্ছি তখন রাস্তার বিপরিত দিক থেকে একটা মেয়ে ডাক দিলো । আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই ভুল দেখছি ! বরিশালে আমি একদমই নতুন । আমার কোনো আত্বীয় বা পরিচিত কোনো মেয়ে বরিশালে নেই । আসার পর থেকে কারও সাথে পরিচয়ও হয় নাই । নিশ্চিত হওয়ার জন্য হাত দিয়ে ইশারা করে জানতে চাইলাম 'আমি?' মাথা ঝাকিয়ে জবাব দিলো হ্যা । সাইকেল ঘুড়িয়ে পাসে নিয়ে থামালাম । জিজ্ঞেস করলো 'আপনার কি কোনো তারা আছে ?'
ভাবতেছিলাম কি বলবো । সাতটা দশ বাজে । দশটায় কোচিং ক্লাস । মামার কাছে নটার আগে গেলেই হবে । তবুও ইতস্তত করছি । বললাম 'ক্যানো?'
'আমাকে একটু পলিটেকনিকের সামনে নামিয়ে দিবেন ? আমার কাছে রিকশা ভারা নেই ত!'
সাইকেল চালানো শিখেছি একমাসও হয়নি । সাইকেলের সাইজও বেশ ছোটো । তার উপর ব্রেক নেই ।সবচেয়ে বড় কথা হলো সাইকেল দেখলে মনে হয় ভাঙ্গারির দোকানের মাল । কাওসাররে পিছনে নিয়া কয়েকদিন ডাবলিং চালাইছি । তাও কন্ট্রোল করতে ও অনেক সাহায্য করছে ।
'কী হলো?'
'না মানে , আমি ত পলিটেকনিক চিনি না !'
'আমি চিনি' বলেই সাইকেলের পিছনে উঠে বসলো । জিজ্ঞেস করলো পা রাখার কোনো যায়গা আছে কিনা ! অবাক হলাম । আমি বললাম 'না' । মুখে কেমন বিরক্তি ফুটিয়ে তুললো । ডান হাত দিয়ে কোমর পেচিয়ে ধরার পর আমি চালাতে শুরু করলাম । মিনিটের কাটা না ঘুরতেই বলে উঠলো 'থামুন , আপ্নি নামেন ত !'
এবার ভরকে গেলাম , বললাম আপ্নি পিছনেই বসুন ।
'আরেহ , সমস্যা নাই , আপনিই চালায়েন । একটু নামুন'
নামার পর ব্যানিটি ব্যাগ আর পানির পট হাতে দিয়ে বললো 'ধরুন ত !'
আমি বোকার মতো হাতে নিয়ে দাড়ালাম । তিনি সাইকেল নিয়ে চালানো শুরু করলেন । আমি পিছনে পিছনে হাটতে লাগলাম । ব্যানিটি ব্যাগটায় খুব ওযন ওযন লাগছিলো । দু আড়াই কেজি ত হবেই । কী এটার ভিতর ? আগ্রহ দমিয়ে ভদ্রতার সাথে ব্যানিটি ব্যাগ আর বোতল নিয়ে হাটতে থাকলাম । সাইকেল ততক্ষনে দৃষ্টিসীমার বাইরে । এইবারেই ভয় লাগা শুরু । কিন্তু সাত আট মিনিট পরেই তিনি হাজির হলেন । বললেন তিন বছর পরে সাইকেল চালাইতেছে । এবার সাইকেল ঘুড়িয়ে আবার চালানো শুরু করলেন । এই দফায় প্রায় আধাঘন্টা । আমি পলিটেকনিকেও দুবার ঘুরে এলাম । সাইকেল কিংবা তেনার কোনো হদিস নেই । এবার ভাবছিলাম সাইকেলটা বুঝি গেলোই । সাইকেলের দাম এখনও পরিশোধ করিনাই । আগ্রহ দমিয়ে রাখতে না পেরে ব্যাগটা খুললাম । একটা মোবাইল অন্তত থাকবে ভাবছিলাম । কিন্তু না । বিশাল এক ডাইরি । ভিতরে কোথাও একটি কলমের আচরও নেই । এক পকেটে কিছু গয়না গাটি । তবে অবশ্যয়ই সোনার নয় । ওই পকেটে বেশি ঘাটলাম না । ডাইরির ভিতরে ও বাইরে কিছু কাগজের টুকরো । বিচ্ছিন্ন কিছু লেখা পড়া আছে । তবে প্রত্যেক টুকরোতেই একটা মোবাইল নম্বর লেখা আছে । অন্য পকেটে একটা বিশাল চিরুনি , একটা চুল বাধার ব্যান্ড , দুটো ছোটো কাঁচা আম । আর কিচ্ছু নেই । পুরো ব্যাগে একটা ফুটো পাইও নেই । তবে ব্যাগটা বেশ দামি হওয়ার কথা ।
বারবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছিলাম । যদি দেখে ফেলে আমি তার ব্যাগ সার্চ করছি তবে বিষয়টা খুব খারাপ দেখাবে ।
কিন্তু কৈ ? তার ত দেখাই নেই !
পৌনে আটটারও পরে তার দেখা পেলাম । এসে জিজ্ঞেস করলো, সাইকেল কত টাকায় কিনেছি ! বললাম সাইকেল আমার না , আমার বন্ধুর ।
'সাইকেলটারে মানুষ বানাও না ক্যান ?'
'আগে নিজে মানুষ হই !'
'তুমি ত মানুষই ! নইলে কি আমারে সাইকেল দিতা ?'
আমাকে অপরিচিত কেউ হটাত্‍ করে তুমি বললে খুব অসস্তি লাগে , যত সিনিয়রই হোক না ক্যানো ।
বললাম 'আমাকে একটু সদর রোড যেতে হবে । দেড়ি হয়ে যাচ্ছে ।'
'তোমার কাছে ফোন আছে ?'
ফোন দিতে তরিকুল নামে কাউকে ফোন করে পলিটেকনিক্যানের সামনে আসতে বললো । আমাকে বললো 'এতক্ষন যেহেতু দাড়াইছো , আর পাঁচটা মিনিট দাড়াও'
এবার পাঁচ মিনিট পরেই আসলো । সাথে ছেলেটাও । আমাকে একটা থ্যাংকু বলে সাইকেলটা ফেরত দিলো । মোটামুটি হাফ ছেরে বাচলাম ।
কারও নামই কেউ জিজ্ঞেস করিনি । আমি চাইছিলাম বিষয়টা যতটা সম্ভব স্কিপ করতে । তবে কোথায় পড়ে সেটা জিজ্ঞেস করার পরও পরিস্কার করে বলেনি । বাসা নথুল্লাবাদ । আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো কোথায় পড়ি ! বললাম সেকেন্ড টাইমের জন্য পড়াশুনা করছি । বললো সেকেন্ড টাইম কি ? বিসিএস ?
বললাম অতো বড়ো হইনি । ভার্সিটি এডমিশান ।
মামার কাছে যেতে যেতে ভাবছিলাম , ক্যানো যে রাশিফল না দেখে বের হৈলাম ! পুরো সকালটাই মাটি !
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×