আগেই বলে রাখছি, সংশ্লিষ্ট কারো যদি এই লেখা দেখার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও থাকত তবে আমি ইহা প্রকাশ করতাম না ।
আমার মাল্টিমিডিয়া সেটে গতরাত থেকে নেট পাচ্ছিলো না ।ফলস্বরুপ কাওসারে নাইজেরিয়ান গার্লফ্রেন্ডের মেসেজের রিপ্লে দিতে পারিনি । এহেনো কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সকালবেনা মামাকে ফোন দিলাম । মামার সার্ভিসিংয়ের দোকান , সকালে কাজের কোনো চাপ নেই । তাই সাতটা বাজতেই সাইকেল নিয়ে বের হলাম । যদিও সাইকেলে ব্রেক নাই তবে তাতে আমার তেমন সমস্যা হতো না । ত বটতলার মোর ঘুরে যখন গার্লসের দিকে যাচ্ছি তখন রাস্তার বিপরিত দিক থেকে একটা মেয়ে ডাক দিলো । আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই ভুল দেখছি ! বরিশালে আমি একদমই নতুন । আমার কোনো আত্বীয় বা পরিচিত কোনো মেয়ে বরিশালে নেই । আসার পর থেকে কারও সাথে পরিচয়ও হয় নাই । নিশ্চিত হওয়ার জন্য হাত দিয়ে ইশারা করে জানতে চাইলাম 'আমি?' মাথা ঝাকিয়ে জবাব দিলো হ্যা । সাইকেল ঘুড়িয়ে পাসে নিয়ে থামালাম । জিজ্ঞেস করলো 'আপনার কি কোনো তারা আছে ?'
ভাবতেছিলাম কি বলবো । সাতটা দশ বাজে । দশটায় কোচিং ক্লাস । মামার কাছে নটার আগে গেলেই হবে । তবুও ইতস্তত করছি । বললাম 'ক্যানো?'
'আমাকে একটু পলিটেকনিকের সামনে নামিয়ে দিবেন ? আমার কাছে রিকশা ভারা নেই ত!'
সাইকেল চালানো শিখেছি একমাসও হয়নি । সাইকেলের সাইজও বেশ ছোটো । তার উপর ব্রেক নেই ।সবচেয়ে বড় কথা হলো সাইকেল দেখলে মনে হয় ভাঙ্গারির দোকানের মাল । কাওসাররে পিছনে নিয়া কয়েকদিন ডাবলিং চালাইছি । তাও কন্ট্রোল করতে ও অনেক সাহায্য করছে ।
'কী হলো?'
'না মানে , আমি ত পলিটেকনিক চিনি না !'
'আমি চিনি' বলেই সাইকেলের পিছনে উঠে বসলো । জিজ্ঞেস করলো পা রাখার কোনো যায়গা আছে কিনা ! অবাক হলাম । আমি বললাম 'না' । মুখে কেমন বিরক্তি ফুটিয়ে তুললো । ডান হাত দিয়ে কোমর পেচিয়ে ধরার পর আমি চালাতে শুরু করলাম । মিনিটের কাটা না ঘুরতেই বলে উঠলো 'থামুন , আপ্নি নামেন ত !'
এবার ভরকে গেলাম , বললাম আপ্নি পিছনেই বসুন ।
'আরেহ , সমস্যা নাই , আপনিই চালায়েন । একটু নামুন'
নামার পর ব্যানিটি ব্যাগ আর পানির পট হাতে দিয়ে বললো 'ধরুন ত !'
আমি বোকার মতো হাতে নিয়ে দাড়ালাম । তিনি সাইকেল নিয়ে চালানো শুরু করলেন । আমি পিছনে পিছনে হাটতে লাগলাম । ব্যানিটি ব্যাগটায় খুব ওযন ওযন লাগছিলো । দু আড়াই কেজি ত হবেই । কী এটার ভিতর ? আগ্রহ দমিয়ে ভদ্রতার সাথে ব্যানিটি ব্যাগ আর বোতল নিয়ে হাটতে থাকলাম । সাইকেল ততক্ষনে দৃষ্টিসীমার বাইরে । এইবারেই ভয় লাগা শুরু । কিন্তু সাত আট মিনিট পরেই তিনি হাজির হলেন । বললেন তিন বছর পরে সাইকেল চালাইতেছে । এবার সাইকেল ঘুড়িয়ে আবার চালানো শুরু করলেন । এই দফায় প্রায় আধাঘন্টা । আমি পলিটেকনিকেও দুবার ঘুরে এলাম । সাইকেল কিংবা তেনার কোনো হদিস নেই । এবার ভাবছিলাম সাইকেলটা বুঝি গেলোই । সাইকেলের দাম এখনও পরিশোধ করিনাই । আগ্রহ দমিয়ে রাখতে না পেরে ব্যাগটা খুললাম । একটা মোবাইল অন্তত থাকবে ভাবছিলাম । কিন্তু না । বিশাল এক ডাইরি । ভিতরে কোথাও একটি কলমের আচরও নেই । এক পকেটে কিছু গয়না গাটি । তবে অবশ্যয়ই সোনার নয় । ওই পকেটে বেশি ঘাটলাম না । ডাইরির ভিতরে ও বাইরে কিছু কাগজের টুকরো । বিচ্ছিন্ন কিছু লেখা পড়া আছে । তবে প্রত্যেক টুকরোতেই একটা মোবাইল নম্বর লেখা আছে । অন্য পকেটে একটা বিশাল চিরুনি , একটা চুল বাধার ব্যান্ড , দুটো ছোটো কাঁচা আম । আর কিচ্ছু নেই । পুরো ব্যাগে একটা ফুটো পাইও নেই । তবে ব্যাগটা বেশ দামি হওয়ার কথা ।
বারবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছিলাম । যদি দেখে ফেলে আমি তার ব্যাগ সার্চ করছি তবে বিষয়টা খুব খারাপ দেখাবে ।
কিন্তু কৈ ? তার ত দেখাই নেই !
পৌনে আটটারও পরে তার দেখা পেলাম । এসে জিজ্ঞেস করলো, সাইকেল কত টাকায় কিনেছি ! বললাম সাইকেল আমার না , আমার বন্ধুর ।
'সাইকেলটারে মানুষ বানাও না ক্যান ?'
'আগে নিজে মানুষ হই !'
'তুমি ত মানুষই ! নইলে কি আমারে সাইকেল দিতা ?'
আমাকে অপরিচিত কেউ হটাত্ করে তুমি বললে খুব অসস্তি লাগে , যত সিনিয়রই হোক না ক্যানো ।
বললাম 'আমাকে একটু সদর রোড যেতে হবে । দেড়ি হয়ে যাচ্ছে ।'
'তোমার কাছে ফোন আছে ?'
ফোন দিতে তরিকুল নামে কাউকে ফোন করে পলিটেকনিক্যানের সামনে আসতে বললো । আমাকে বললো 'এতক্ষন যেহেতু দাড়াইছো , আর পাঁচটা মিনিট দাড়াও'
এবার পাঁচ মিনিট পরেই আসলো । সাথে ছেলেটাও । আমাকে একটা থ্যাংকু বলে সাইকেলটা ফেরত দিলো । মোটামুটি হাফ ছেরে বাচলাম ।
কারও নামই কেউ জিজ্ঞেস করিনি । আমি চাইছিলাম বিষয়টা যতটা সম্ভব স্কিপ করতে । তবে কোথায় পড়ে সেটা জিজ্ঞেস করার পরও পরিস্কার করে বলেনি । বাসা নথুল্লাবাদ । আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো কোথায় পড়ি ! বললাম সেকেন্ড টাইমের জন্য পড়াশুনা করছি । বললো সেকেন্ড টাইম কি ? বিসিএস ?
বললাম অতো বড়ো হইনি । ভার্সিটি এডমিশান ।
মামার কাছে যেতে যেতে ভাবছিলাম , ক্যানো যে রাশিফল না দেখে বের হৈলাম ! পুরো সকালটাই মাটি !