ঘটনাটা ২০১১-১২ সালের, পড়াশোনা শেষ করে সবেমাত্র জবে ঢুকেছি। একবন্ধুর সাথে ঢাকার মহাখালী ওয়ারলেস গেটের একটি ফ্ল্যাট বাসার ছাদের একটি রুমে ভাড়া থাকি। বাড়িওয়ালা আংকেলের কাছে বহুত কাকুতি মিনতি করে সাততলায় ছাদের এই রুমটি ভাড়া নিয়েছে আমার বন্ধু। ছাদের এই রুমটি পেয়ে আমরা দুজনেই খুব খুশি। ছাদে বসে সন্ধ্যার ঝিরিঝিরি বাতাসে চাদের অপরুপ সৌন্দর্য কিংবা তারার মেলা দুটোই দারুণ উপভোগ্য। প্রতি মাসে অন্তত একবার বাড়ি যাই, বৃহস্পতিবার হাফবেলা অফিস করে ছুটি নিয়ে বাড়ি যাই আবার শনিবার বিকেল তিনটেই বাড়ি থেকে রওনা হই রাত দশটা এগারোটা অব্দি ঢাকার ফিরে আসি।
এমনি এক সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। গুলিস্তান থেকে লোকাল বাসে মহাখালী আসছিলাম। মগবাজারে বেশ কিছু যাত্রী নেমে গেল আবার বেশ কয়েকজন বাসে উঠলো, তাদের মধ্যে খুব সুন্দর চেহারার ২০-২২ বছরের একটা ছেলেও বাসে উঠলো এবং আমার পাশেই বসলো। আমি তখন প্রায় ৭/৮ ঘন্টার জার্নি করে ঢাকায় এসেছি তাই খুবই ক্লান্ত, একবার শুধু ছেলেটাকে দেখলাম তারপর পুনরায় ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমিয়ে পড়ার আগে মনে হচ্ছিল ছেলেটা আমাকে কিছু একটা বলতে চাইছে।
ঘুম ভাঙলো নাবিস্কো এসে। ঘুম ভাঙার পরও মনে হল পাশে বসে থাকা ছেলেটা আমার সাথে কথা বলতে চাইছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
- আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চান?
ছেলেটি একগাল হাসি দিয়ে বললো
-ভাইয়া আপনি তো খুবই হ্যান্ডসাম।
কোন ছেলে এভাবে অন্য ছেলের প্রসংশা করতে পারে এটা আমি কোনদিনই শুনিনি।
আমিও তার প্রসংশা করে বললাম
-আপনিও তো বেশ হ্যান্ডসাম।
কথায় কথায় নিজের পরিচয় দিল, নামটা অবশ্য মনে নেই, তাই তার নাম দিলাম রাসেল। সে বললো
-আমি আপনার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন।
আমি বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে।
না জিজ্ঞেস করতেই সে তার ব্যাক্তিগত বিভিন্ন তথ্য আমাকে দিতে লাগলো, এই যেমন
সে ব্রোকেন ফ্যামেলিতে বড় হয়েছে, খুব বেশিদুর পড়াশোনা করতে পারেনি, তার পড়াশোনা এস এস সি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ, কয়েকবার ইন্টার পরিক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেননি, তাই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে।
ছেলেবেলা থেকেই তার সখ ছিল মডেলিং করার। এখন সে ফ্যাশন মডেলিং করে,ভবিষ্যতে নিজেকে একজন দেশ সেরা মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। বাস ততক্ষণে মহাখালী আমতলী পৌঁছেছে এবং আমার নামার সময় হয়ে গেছে। আমি বাস থেকে যখন নামতে যাবো তখন সে বললো
-ভাইয়া আপনার নম্বরটা কি পেতে পারি?
আমি আমার মোবাইল নম্বর তাকে দিলাম তবে তার নম্বর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলাম না।
বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে ভাবলাম একটু ঘুমিয়ে নি, অনেক বড় জার্নির ধকল গেছে শরীরের উপর দিয়ে। কিছুক্ষণ পরই একটি আননোন নাম্বার থেকে ফোন এল, একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম।
-হ্যালো ভাইয়া আমি রাসেল, ঐ যে বাসে আপনার সাথে পরিচয় হল। আমি বললাম
-ও হ্যা
সে বললো
- আপনি ঠিক মত পৌছেছেন, খাওয়া দাওয়া করেছেন?
আমি সবগুলো প্রশ্নের উওর একসাথে দিলাম
-'হ্যাঁ '
- এখনি ঘুমিয়ে পড়ুন বেশি রাত জাগবেন না অনেক জার্নি করে এসেছেন সে বললো।
আমি বললাম
-আচ্ছা, আমি এখন খুবই টায়ার্ড আর কথা বলতে পারবো না আমি রাখছি, বলে ফোনটা রেখে দিলাম।
এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই দিনই সে আমাকে ফোন করতো,
অফিসের কাজে যখন আমি প্রচণ্ড ব্যস্ত, তখনও ফোন করে বলতো,
-সকালে কি খেয়েছেন? দুপুরে কি খাবেন? এইসব ফালতু প্যাচাল।
আমি বললাম
-তুমি কেন আমাকে এতবার ফোন করছো?
সে বললো
-আপনি আমাকে একদিন সময় দেন সামনাসামনি বলবো।
আমি বললাম
-তোমাকে আমি কেন সময় দেবো? তুমি আমার এমন কেউ নও যাকে সময় দিতে হবে। যা বলার মোবাইলে বল।
তখন সে বললো
-আপনি যদি রাগ না করে ধৈর্য ধরে আমার কথা শুনেন তবেই আমি বলবো।
বিষয়টা জানার জন্য আমার খুবই কৌতুহল হল, তাই বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে তুমি কি বলতে চাও বল আমি শুনবো।
তখন সে শুরু করলো
- আসলে আমার চেহারা ছেলেদের মত হলেও আমি নিজেকে ছেলে মনে করি না। মেয়েদের প্রতি আমার কোন আকর্ষণবোধ নেই। আমার আকর্ষণ ছেলেদের প্রতি। আপনাকে আমার খুবই ভাল লেগেছে, আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। এরপর যা বললো সেটা আর বলতে চাই না, নিজের মত বুঝে নিবেন।
এবার আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করলাম।
আমার এমন ব্যবহারে সে বললো
- আপনি রাগছেন কেন? আমিতো আর আপনাকে জোর করছি না?
আমি বললাম
-আর কোনদিন আমাকে ফোন করবে না।
তার শেষ কথা
-আপনার যদি কোনদিন ইচ্ছে হয় তবে এই নম্বরে ফোন দিয়েন।
সঙ্গে সঙ্গে নম্বরটা ব্লক করে দেই।
এরপর আর কোনদিন রাসেল আমাকে ফোন করে বিরক্ত করেনি। আমাদের সমাজে এমন রাসেলদের সংখ্যা কম নয়।
নোটঃ হাবিব স্যার ভায়ের সমকামী বুড়োর খপ্পরে গল্পটি পড়ে এই ঘটনাটা মনে পড়লো।