somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তারেক_মাহমুদ
আমি লেখক নই, মাঝে মাঝে নিজের মনের ভাবনাগুলো লিখতে ভাল লাগে। যা মনে আসে তাই লিখি,নিজের ভাললাগার জন্য লিখি। বর্তমানের এই ভাবনাগুলোর সাথে ভবিষ্যতের আমাকে মেলানোর জন্যই এই টুকটাক লেখালেখি।

সহযাত্রী

০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাটা ২০১১-১২ সালের, পড়াশোনা শেষ করে সবেমাত্র জবে ঢুকেছি। একবন্ধুর সাথে ঢাকার মহাখালী ওয়ারলেস গেটের একটি ফ্ল্যাট বাসার ছাদের একটি রুমে ভাড়া থাকি। বাড়িওয়ালা আংকেলের কাছে বহুত কাকুতি মিনতি করে সাততলায় ছাদের এই রুমটি ভাড়া নিয়েছে আমার বন্ধু। ছাদের এই রুমটি পেয়ে আমরা দুজনেই খুব খুশি। ছাদে বসে সন্ধ্যার ঝিরিঝিরি বাতাসে চাদের অপরুপ সৌন্দর্য কিংবা তারার মেলা দুটোই দারুণ উপভোগ্য। প্রতি মাসে অন্তত একবার বাড়ি যাই, বৃহস্পতিবার হাফবেলা অফিস করে ছুটি নিয়ে বাড়ি যাই আবার শনিবার বিকেল তিনটেই বাড়ি থেকে রওনা হই রাত দশটা এগারোটা অব্দি ঢাকার ফিরে আসি।


এমনি এক সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। গুলিস্তান থেকে লোকাল বাসে মহাখালী আসছিলাম। মগবাজারে বেশ কিছু যাত্রী নেমে গেল আবার বেশ কয়েকজন বাসে উঠলো, তাদের মধ্যে খুব সুন্দর চেহারার ২০-২২ বছরের একটা ছেলেও বাসে উঠলো এবং আমার পাশেই বসলো। আমি তখন প্রায় ৭/৮ ঘন্টার জার্নি করে ঢাকায় এসেছি তাই খুবই ক্লান্ত, একবার শুধু ছেলেটাকে দেখলাম তারপর পুনরায় ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমিয়ে পড়ার আগে মনে হচ্ছিল ছেলেটা আমাকে কিছু একটা বলতে চাইছে।

ঘুম ভাঙলো নাবিস্কো এসে। ঘুম ভাঙার পরও মনে হল পাশে বসে থাকা ছেলেটা আমার সাথে কথা বলতে চাইছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
- আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চান?
ছেলেটি একগাল হাসি দিয়ে বললো
-ভাইয়া আপনি তো খুবই হ্যান্ডসাম।
কোন ছেলে এভাবে অন্য ছেলের প্রসংশা করতে পারে এটা আমি কোনদিনই শুনিনি।
আমিও তার প্রসংশা করে বললাম
-আপনিও তো বেশ হ্যান্ডসাম।
কথায় কথায় নিজের পরিচয় দিল, নামটা অবশ্য মনে নেই, তাই তার নাম দিলাম রাসেল। সে বললো
-আমি আপনার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন।
আমি বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে।
না জিজ্ঞেস করতেই সে তার ব্যাক্তিগত বিভিন্ন তথ্য আমাকে দিতে লাগলো, এই যেমন
সে ব্রোকেন ফ্যামেলিতে বড় হয়েছে, খুব বেশিদুর পড়াশোনা করতে পারেনি, তার পড়াশোনা এস এস সি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ, কয়েকবার ইন্টার পরিক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেননি, তাই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে।
‌ছেলেবেলা থেকেই তার সখ ছিল মডেলিং করার। এখন সে ফ্যাশন মডেলিং করে,ভবিষ্যতে নিজেকে একজন দেশ সেরা মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। বাস ততক্ষণে মহাখালী আমতলী পৌঁছেছে এবং আমার নামার সময় হয়ে গেছে। আমি বাস থেকে যখন নামতে যাবো তখন সে বললো
-ভাইয়া আপনার নম্বরটা কি পেতে পারি?
‌আমি আমার মোবাইল নম্বর তাকে দিলাম তবে তার নম্বর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলাম না।

বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে ভাবলাম একটু ঘুমিয়ে নি, অনেক বড় জার্নির ধকল গেছে শরীরের উপর দিয়ে। কিছুক্ষণ পরই একটি আননোন নাম্বার থেকে ফোন এল, একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম।

-হ্যালো ভাইয়া আমি রাসেল, ঐ যে বাসে আপনার সাথে পরিচয় হল। আমি বললাম
-ও হ্যা
সে বললো
- আপনি ঠিক মত পৌছেছেন, খাওয়া দাওয়া করেছেন?
আমি সবগুলো প্রশ্নের উওর একসাথে দিলাম
-'হ্যাঁ '
- এখনি ঘুমিয়ে পড়ুন বেশি রাত জাগবেন না অনেক জার্নি করে এসেছেন সে বললো।
আমি বললাম
-আচ্ছা, আমি এখন খুবই টায়ার্ড আর কথা বলতে পারবো না আমি রাখছি, বলে ফোনটা রেখে দিলাম।

এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই দিনই সে আমাকে ফোন করতো,
অফিসের কাজে যখন আমি প্রচণ্ড ব্যস্ত, তখনও ফোন করে বলতো,
-সকালে কি খেয়েছেন? দুপুরে কি খাবেন? এইসব ফালতু প্যাচাল।
আমি বললাম
-তুমি কেন আমাকে এতবার ফোন করছো?
সে বললো
-আপনি আমাকে একদিন সময় দেন সামনাসামনি বলবো।
আমি বললাম
-তোমাকে আমি কেন সময় দেবো? তুমি আমার এমন কেউ নও যাকে সময় দিতে হবে। যা বলার মোবাইলে বল।
তখন সে বললো
-আপনি যদি রাগ না করে ধৈর্য ধরে আমার কথা শুনেন তবেই আমি বলবো।
বিষয়টা জানার জন্য আমার খুবই কৌতুহল হল, তাই বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে তুমি কি বলতে চাও বল আমি শুনবো।

তখন সে শুরু করলো
- আসলে আমার চেহারা ছেলেদের মত হলেও আমি নিজেকে ছেলে মনে করি না। মেয়েদের প্রতি আমার কোন আকর্ষণবোধ নেই। আমার আকর্ষণ ছেলেদের প্রতি। আপনাকে আমার খুবই ভাল লেগেছে, আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। এরপর যা বললো সেটা আর বলতে চাই না, নিজের মত বুঝে নিবেন।
এবার আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করলাম।
আমার এমন ব্যবহারে সে বললো
- আপনি রাগছেন কেন? আমিতো আর আপনাকে জোর করছি না?
আমি বললাম
-আর কোনদিন আমাকে ফোন করবে না।
তার শেষ কথা
-আপনার যদি কোনদিন ইচ্ছে হয় তবে এই নম্বরে ফোন দিয়েন।
সঙ্গে সঙ্গে নম্বরটা ব্লক করে দেই।

এরপর আর কোনদিন রাসেল আমাকে ফোন করে বিরক্ত করেনি। আমাদের সমাজে এমন রাসেলদের সংখ্যা কম নয়।

নোটঃ হাবিব স্যার ভায়ের সমকামী বুড়োর খপ্পরে গল্পটি পড়ে এই ঘটনাটা মনে পড়লো।







সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:০৫
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপব্লগার "জটিল ভাই"-এর সাক্ষাৎকার

লিখেছেন জটিল ভাই, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৩৭

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জয় বাংলা - জাতীয় শ্লোগান হিশেবে বাতিল: ঐতিহ্যবিরোধী এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত

লিখেছেন কিরকুট, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:৪০



বাংলাদেশের ইতিহাসে "জয় বাংলা" শ্লোগান শুধুমাত্র একটি বাক্য নয়; এটি একটি জাতির আবেগ, চেতনা এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই শ্লোগান ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির প্রেরণা। এটি ছিল বঙ্গবন্ধু... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধ.......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:৪০

পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধ.......

জীবনে কিছু সময়, কিছু দিনের কথা আমৃত্যু মনে থাকে তেমন বেশ কয়েকটি দিন তারিখ আমার জীবনেও খোদাই হয়ে আছে....মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরের ১ম সাব-সেক্টর হেড কোয়ার্টারে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও অতিজাতীয়তাবাদ উন্নয়নের মূল অন্তরায়

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩১


উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রকে কিছু স্বাধীনতা ত্যাগ করতে হবে কথাটি বলেছিলেন অত্যাধুনিক সিংগাপুরের উন্নয়নের কারিগর লি কুয়ান। ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হওয়ার পর ১৯৫৯ সালে স্বায়ত্তশাসিত সিঙ্গাপুরের প্রধান মন্ত্রি হন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাবির ভাই বেরাদার (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকার কি বালটা ফালাচ্ছে বলতে পারবেন?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০

১) সরকারী কোন অফিসে নূন্যতম কোন লুটপাট বন্ধ হয়েছে?
২) জায়গায় চাঁদাবাজী বন্ধ হয়েছে?
৩) আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের নুন্যতম কোন বিচার তারা করতে পেরেছে? বা তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে পেরেছে?
৪। আইন শৃঙ্খলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×