চট্টগ্রামের চিহ্নিত শিবির ক্যাডার ভারপ্রাপ্ত খাদ্যপরিদর্শক
বদলির দুইমাস পরও দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে অস্বীকৃতি ।
ঢাকা, ২৮শে আগস্ট ঃ
চট্টগ্রামের আলোচিত এইড মার্ডার এবং চিহিৃত শিবির ক্যাডার হওয়া শর্তেও মুক্তিযুদ্ধা কোটায় চাকরির সুবিধা নিয়ে বহাল তবিবতে কক্সবাজার খাদ্য অধিদপ্তরে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাইট্টা তারেক খ্যাত জিয়াউল করিম তারেক । জানা যায় বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে মুক্তিযুদ্ধা কোটার অবৈধ সুবিধা নিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরে যোগ দেন চট্টগ্রাম নগরী আলোচিত ক্যাডার বাহিনী খুকুমনি-হাবিব খান গ্র“ুফের এই সক্রিয় সদস্য । স¤প্রতি একটি বদলিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতার মধ্য বেরিয়ে আসে এই চ্যান্জল্যকর তথ্য ।
চট্টগ্রাম আ›চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের একটি ঘনিষ্ঠ সুত্রে জানা যায় ,চলতি বছরের ১২ই জুন চট্টগ্রাম আ›চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের এক বদলি আদেশে কক্সবাজার খাদ্রগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল করিম তারেককে জেলা খাদ্রনিয়ন্ত্রকের অধীন কক্সবাজারের শুন্যপদে বদলি করা হয় । একই আদেশে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় হালিশহর সিএসডিতে কর্মরত খাদ্যপরিদর্শক সাইফুল আলমকে । কিন্তু ১২ ই জুন বদলি করা হলেও জিয়াউল করিম তারেক তার নতুন নিয়োগকৃত পদে(কক্সবাজারের সাধারন খাদ্যপরিদর্শকের শুন্য পদে ) যোগ না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ চালিয়ে আসছিলেন । সুত্রটি জানিয়েছে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় নিজের রাজনৈতিক প্রভাব ও দলীয় সন্ত্রাসীদের কাজে লাগিয়ে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে যোগ দিতে বাধা দেয় শিবিরের এই শীর্ষসন্ত্রাসী ।স্থানীয় শিবির ক্যাডারদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলেন জিয়াউল করিম তারেক । এদিকে নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিতে না পরে বিগত দুইমাসেরও বেশি সময় নিয়োগপত্র নিয়ে কক্সবাজার খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে যোগাযোগ করেও কোন সুরাহ না হওয়ায় বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানান সাইফুল আলম ।
আলোচিত এইড মার্ডারের সাথে সংশ্লিস্ট ও চিহিত শিবির ক্যাডার জিয়াউল করিম তারেকের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারী চাকুরীতে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তারেকের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র । সুত্রমতে , নিজ এলাকা কক্সবাজারে প্রতাপের সাথে বিগত তিনবছর খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্রগ্রামের বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা ফজলুর রহমান এ ব্যাপারে তদন্ত করার কোন এখতিয়ার তার নেই বলে জানান । বদলি আদেশের দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও বর্তমান বদলিকৃত কর্মকর্তারা চাকুরি ক্ষেত্রে যোগদান না করার অভিযোগ এনে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে কিনা জানতে চাইলে বৃহঃ¯প্রতিবার চট্ট্রগ্রামের রিজিয়নাল কন্ট্রোলার প্রতিবেদককে বলেন ’একজন কর্মকর্তা বদলি আদেশ না মানলে তার কিছুই করার নেই ।আমি ওনাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বলেছি কিন্তু ওনি দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ’ । প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে রিজিওনাল কন্ট্রোলার জানান , বিষয় অধিদপ্তরের ডিজি অবহিত আছেন । এবং তিনি উর্ধতন মহলের নির্দেশেই কাজ করছেন ।
এদিকে কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে ,জোট সরকারের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে চট্ট্রগ্রামের খুকু গ্র“ফের শিবির ক্যাডার জিয়াউল করিম তারেকের নিয়োগপ্রাপ্তি ও তার বর্তমান দাপটের মুল ভিক্তি খুজে বের করতে পুরো বিষয়টি খাদ্র মন্ত্রনালয়ের ডিজি ইলাহী খানকে অবহিত করা হয়েছে । কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে অনুস›ধান করবে বলেও জানান , কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের এই নেতা ।
নগর শিবিরের ঘনিষ্ঠ একটি সুত্র জানিয়েছে ,জিয়াউল করিম তারেক ১৯৯৫-৯৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজ উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে অধ্যায়নকালীন সময়ে ছাত্রশিবিরের ক্যাডার রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েন । সে সময় শিবির ক্যাডার তারেক চট্টগ্রাম কলেজের শেরেবাংলা হলের একটি চিহ্নিত রুমে থাকতেন । এবং একই রুম থেকে চকবাজারের দেবপাহাড়ের রানা হত্যাকান্ডের সাথে সংশ্লিস্টতার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর মুলত শিবির ক্যাডার খুকুমনি গ্রুফের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন তারেক। ২০০০ সালের ১২ ই জুলাই চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে প্রকাশ্য দিবালোকে আলোচিত এইড মার্ডারের সন্দেহভাজনের তালিকায় থাকা তারেকের বিরুদ্ধে নগরী পাঁচলাইশ থানায় বেশ কটি মামলা রয়েছে বলেও জানা যায় । তবে এসব মামলায় তারেক জামিনে রয়েছেন কিনা তা পাঁচলাইশ থানা কর্তপক্ষ নিশ্চিত করতে পারেননি ।জোটসরকারের আমলে ২০০১ সালের ১৭ই জানুয়ারী তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের খানের দাখিল করা এইড মার্ডারের চূড়ান্ত চার্জশীট থেকে কৌশলে বেরিয়ে পড়েন শিবির ক্যাডার বাইট্টা তারেক ।আদালত এই মামলার চুড়ান্ত রায়ে খুকুগ্র“ফের ক্যাডার সাজ্জাদ,বাইট্টা আলমগীর ,আজম এবং সুলায়মানকে সহ ৪ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ইমন এবং হাবিব খান সহ ৩ শিবির ক্যাডারকে যাবতজীবন কারাদন্ড প্রদান করেন ।
চকবাজার এলাকার স্থানীয় এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী প্রতিবেদককে জানান হাবিব খান, সাজ্জাদ ,(বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছেন ) গিট্টু নাছির (ক্রসফায়ারে নিহত ) সোলায়মান , ফর্সা জাহেদ এবং ফটিকছড়ির নাছির বাহিনীর ক্যাডার বাবুল-নাজিম,আজরাইল দেলেয়ারের (ক্রসফায়ারে নিহত )ঘনিষ্ঠ সহযোগি হিসেবেই চকবাজার এলাকায় পরিচিত তারেক । শিবিরের এই দাগী সন্ত্রাসী তারেক মুলত বাইট্টা তারেক নামে পরিচিত শিবির নিয়ন্ত্রিত চকবাজার এলাকায় । নগর এসবি’র একটি সুত্র জানিয়েছে ,২০০৪ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর নগরির কিংকস অব চিটাগাং থেকে একটি বিশেষ অভিযানে খুকু গ্র“ফের ক্যাডার সাকাওয়াত বেলালকে গ্রেপ্তার হলেও কৌশলে পালিয়ে যান শিবির ক্যাডার বাইট্টা তারেক । জানা যায়, নগরীর আলোচিত একজন আওয়ামী সমর্থিত কমিশনার হত্যাকান্ডের পর থেকে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান নেন এই শিবির ক্যাডার । সেসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলে আতœগোপন করেন এবং নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলেও পরিচয় দিতেন ।
স¤প্রতি বদলিকৃত খাদ্য পরিদর্শক সাইফুল আলম প্রতিবেদককে জানিয়েছেন , দুই মাস ধরে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বললেও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন । এসময় তিনি প্রয়োজনে নিজের পছন্দমত সিন্ডিকেডের কাউকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেবেন বলে সাফ্ জানিয়ে দেয় সাইফুল আলমকে। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হলে বিভিন্ন সুত্র, কেন্দ্রের ছাত্রলীগ -আওয়ামী লীগ নেতা , সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিবেদকের যোগাযোগের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে ঐ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উর্ধতন মহলের সহযোগিতা চেয়ে লবিং শুরু করেন । এবং বদলির আদেশ বাস্তবায়নের প্রয়োজনে শিবির সিন্ডিকেড থেকে কাউকে কক্সবাজার খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব প্রদানের প্রস্তাব দেয় তারেক । কক্সবাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, শিবিরের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট মুলত টেকনাফ-কক্সবাজারের খাদ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন দূর্নীতি ও চোরাচালানের সাথে জড়িত । এই সিন্ডিকেটের সাথে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফজলুর রহমানের ঘনিষ্ঠতার কথাও স্বীকার করেন এই ব্যবসায়ী । নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কক্সবাজার দপ্তরের এক কর্মচারী আরসি ফুডের সাথে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সুসম্পর্কে কথা স্বীকার করে বলেন , ’ স্যার আরসি এবং ডিজির লোক । তাই তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতেই ভয় পায়।এখানে উপর মহলের নির্দেশেই সব কর্মকান্ড পরিচালিত হয় ।’
এদিকে, প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে ডিজি ফুড ইলাহী খান জানান,তারেকের সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে সংশ্লিতা কিংবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রনের বিষয়টি সম্পর্কে তার কোন ধারনা নেই । এসময় ক্যাডার তারেকের সিএসবি রিপোর্ট সম্পর্কে জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি । জানতে চাইলে, শিবির ক্যাডার তারেকের কর্মক্ষেত্রে এমন প্রভাব বিস্তার এবং বদলি হওয়ার পরও দুইমাস যাবত দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন তিনি । এবিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি প্রতিবেদককে জানান । জানতে চাইলে ডিজি ফুড (এ্যাডমিন) আরো জানান , কক্সবাজারের খাদ্য গুদামে নিয়োগ বা বদলির বিষয়টি পুরোপুরি রিজিওনাল কন্ট্রোলরের আওতাধীন ।
এদিকে বৃহ¯প্রতিবার রাত আটটার পর আকস্মিকভাবে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে আইয়ুব আলী নামের তারেকের অন্য এক সহযোগীকেই কক্সবাজার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা জানাজানি হয়ে যায়। তবে রাত ১১টার দিকে ডিজি’র সাথে আলাপকালে তিনি প্রতিবেদককে জানান , এই ধরনের কোন আকষ্মিক নিয়োগের ব্যাপারে তার জানা নেই । এব্যাপারে কোনপ্রকার আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি । খাদ্যনিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম রিজিয়নের কন্ট্রোলার ফজলুর রহমান ও ঢাকার ডিজি’র পরামর্শে রাত আটটার পর আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে তারেকের টেকনাফ সিন্ডিকেটের অন্য এক কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে অধিদপ্তরের সাথে ঘনিষ্ঠ একটি সুত্র । এব্যাপারে সারাদিন ধরে অফিসিয়াল টেলিফোনে ফোন করে এবং মুঠোফোনে এসএমএস পাঠিয়েও চট্টগ্রামের আর.সি ফুডের সাথে যোগাযোগ করা স¤ভব হয়নি । দুইমাস আগে বদলির আদেশপ্রাপ্ত জিয়াউল করিম তারেকের সাথে তার ব্যাক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ফোন ধরেননি সারাদিন । খাদ্য অধিদপ্তর কার্যালয়ে এহেন দূর্নীতি এবং সিন্ডিকেটের অবস্থান সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রি ড. আব্দুর রাজ্জাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি তদন্ত করবেন বলে জানান প্রতিবেদককে । জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রি জানান , আগামী কর্মদিবসে বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।
: প্রতিবেদনটি তৈরিতে আমার এক সাংবাদিক বন্ধু অনেক পরিশ্রম করেছেন ।কিন্তু তার নিউজ এডিটর এতটা সাহসী নন, আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশে এমনই কিছু সাহসী সাংবাদিকের জম্ম হবে ,যারা সব হুমকি আর ভয়ের পথ অতিক্রম আমাদের সামনে সত্য ঘটনা তুলে ধরবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:৩২