somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একমাত্রিক রসগোল্লা (ছোট গল্প)

৩১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাদমানের হাতের ছাতাটা অনেক কসরত করেও বন্ধ করতে পারছে না। একেতো জুতা ভর্তি কাদা তার উপর এই ফুটন্ত ছাতা লিফটম্যান বোতামে আংগুল চেপে রেখে বারবার তারদিকে তাকাচ্ছে। বেগুনী ছাতার গায়ে গোলাপি রঙের ফুল ফুটে থাকা দেখে যে কেউ বলে দিতে পারে এটা একটা মেয়েদের ছাতা।

আজ বাসা থেকে বের হবার সময় থেকে নানা ধরণের ঝামেলা শুরু হয়েছে। অফিস যাবার উদ্দেশ্যে সাদমান কেবল বাসার গেট থেকে পা বাইরে রেখেছে অমনি তিনতালা থেকে পিছু ডেকে তার বউ চিৎকার করলো, "এই টিভি'র রিমোট কোথায়?"

সাদমান কোনমতে রাগ চেপে বললো, "রিমোট আমার পকেটে, ওটাকে অফিসে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি। তুমিও যাবে?"

"আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও, শুধু শুধু রাগ করো কেন তুমি?"

অনেকক্ষণ ধরে আসি আসি করতে থাকা বৃষ্টিটা এবার আকাশ ভেংগে নামলো। সারা বাসায় খুঁজেও তার ছাতাটা না পেয়ে বউয়ের রঙচংয়ে ভরা ছাতাটা নিয়ে রওনা হয়েছিল সে। বৃষ্টির দিন এমনিতেই রিকশাওয়ালাদের মুড এসে থাকে, কোথাও যাওয়ার ব্যাপারে তাদের উদাশীন মনোভাব ঋশিদেরও হার মানায় তার উপর এই বাহারি ছাতা মাথায় নিয়ে আজ যে রিকশাওয়ালাকেই সে জিজ্ঞাসা করে 'ভাই যাবেন?' সে একবার ছাতাটার দিকে তাকিয়ে মুখ বেকিয়ে বলে, 'নাহ যামুনাহ'

'ভাড়াটা বাড়াই নিয়েন'

'নাহ ঐদিক যামুনাহ'।

বেশ কয়েকবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে সাদমান তার বহুবার কাজে দেয়া পুরাতন টেকনিকটাই কাজে লাগালো। এই টেকনিকের নাম সে দিয়েছে, ৯৯৯ টেকনিক। জরুরি অবস্থায় যেমন ৯৯৯-এ কল করা হয় তেমনি একটা ফোন কলের মাধ্যমে ব্যবস্থা আর কি।

টেকনিকের ধারা অনুযায়ী খুব উত্তেজিতভাবে মোবাইলে কথা বলতে বলতে দৌড়ে একটা খালি রিকশায় চেপে বসলোভসে আর মোবাইলে বলতে থাকলো, "হাজতে যেন না নেয়, থানার বেঞ্চিতে টাইট হয়া বসে থাকতে বল, ওসি সাহেব রে তোরা ম্যানেজ করতে পারবি না, যা বলার আমি এসে বলবো, তোরা সাব-ইন্সেপেক্টার সাহেবকে ম্যানেজ কর।" কথাবার্তার এই পর্যায়ে রিকশাওয়ালা পেছনে একবার তাকায়ে কষে প্যাডেল মারে।

তার অফিস একটা পুলিশ থানার পাশে। সে থানার সামনে রিকশা থেকে নেমে যায়। কোন এক জটিল মনস্তাত্ত্বিক কারণে রিকশাওয়ালারা পুলিশের হাতে ধরা খাওয়া মানুষের প্রতি অতি সহানুভূতিপ্রবণ হয়। বহুবার বহুজন এই নকল বাক্যলাপ শুনে নানান এক্সপার্ট আ্যডভাইসও দিয়েছে, যেমন "ভাই উডানোর সময় মাইর দিছে কি? দিলে ভালো, তাইলে এখন আর মারবো না অথবা থানা হাজত হইলো টাকার খেল বা বড় ন্যাতা কেউ জানা থাকলে অক্ষণি ফুন লাগান, দ্যাখবেন পানি কাটার লাহান চ্যালচ্যালায় বাড়াই আইবো।" তবে কেউ যখন বলে, "মামা টাইট হয়া বসেন আর আল্লাহ খোদার নাম করেন, কোন চিন্তা নাই উইড়া যামু, আপনার প্যারেশানি দেইখ্যা পেট পুড়ে" তখন সরল মধ্যবিত্ত মনটায় খচখচানি উঠে।

প্রতিবারের মতো টেকনিকটা আজও কাযে দিয়েছিল। কিন্তু একটা মিথ্যা দিয়ে দিন শুরু করাতে মনের খঁচখঁচানিটা থেকে গেল। আর্থিকভাবে দূর্বল হলে মানুষকে বাঁচার তাগিদে নানান ধরণের ফন্দি-ফিকির অর্থাৎ টেকনিক জানতে হয়। মনের খঁচখঁচানি ভাব দূর করারও তার একটা টেকনিক আছে। এই টেকনিকের নাম, 'দিলখুশ টেকনিক'। সে তার মনটাকে তার শৈশবের ছুটির দিনগুলোতে নিয়ে যাই। যেখানে বাবার হাত ধরে সকালে হাঁটতে বের হয়, পানিতে ফুটে থাকা শাপলাগুলোকে সূর্যের আলো পড়ায় বুঁজে যেতে দেখে অবাক হয়ে, মায়ের আঁচলের শুভ্র গন্ধ শুষে নেয় বুক ভরে, পাটি বিছিয়ে খড়ের উপর শুয়ে থাকে শীতের নরম রোদে, ভাই-বোনদের সাথে বিকেল বেলা দাঁড়িয়াবান্ধা খেলে। তারপর চোখের কোণায় হালকা একটা ঝিকিমিকি আর জ্বালা তারপর-ই দিলখুশ।

দিলখুশ ফুরফুরে মেজাজটা নিয়ে লিফটের সামনে এসে এই ছাতা যন্ত্রটার যন্ত্রণায় কিছুটা বেসামাল সে বর্তমানে। লিফটের তিনধাপ পেরিয়ে বসের নাকের ডগায় চশমা নিয়ে তাকিয়ে থাকা শ্যেন দৃষ্টি, ডেস্কে জমে নানান জটিলতায় ভরা নথি, অফিস পলিটিক্সের মারপ্যাচ হঠাৎ সবকিছু যেন বড় গোলমেলে মনে হলো তার। গোলাপি ফুল ফুটে থাকা ছাতাটা মাথায় নিয়ে সে ফিরে চললো নিজের বাড়ীর পথে। বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে সিরিয়াস মুখ করে বউকে বললো, "তোমার টিভি'র রিমোটটা ফেরত দিতে আসলাম।"

সাদমানের এই টেকনিকটার নাম "মনে মনে মিষ্টি"। সে প্রতিদিন অফিসে ঢোকার আগে মনে মনে মিষ্টি খেয়ে ফেলে, ভেবে নেয় এমন-ই কোন একটা হতে পারতো সুন্দর দিনের কথা। তারপর ঝাঁপ দিয়ে ঢুকে পড়ে অফিসের দরজা পেরিয়ে, সকালের মনে মনে খাওয়া মিষ্টিটুকু সারাদিনের গরল পান করাটা অনেক সহজ করে দেয় তখন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফ্রিতে ১০১ টি AI টুল, কোনটির কি কাজ বাংলায় বর্ণনাসহ!!

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪

ফ্রিতে ১০১ টি AI টুল, কোনটির কি কাজ বাংলায় বর্ণনাসহ!!

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

AI টুল ব্যবহার করে জীবনকে করুন আরও সহজ এবং সৃজনশীল! কয়েক ঘন্টার কাজ করে নিন কয়েক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৈয়দ মশিউর রহমান বনাম হাসান কালবৈশাখী: একি ঘৃণার নতুন সংস্করণ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৯ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:০৬



ব্লগার সৈয়দ মশিউর রহমান শিল্পী নুসরাত ফারিয়াকে বিমানবন্দর থেকে আটক করার প্রসঙ্গে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেই পোস্টে তিনি আশা করেছেন যে ফারিয়াকে জেলে পাঠানো হবে এবং তাকে ‘ডিম থেরাপি’... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনের সমাবেশে লাখ লাখ লোক যায় অথচ রোহিঙ্গাদের করিডর বিষয়ে উনারা নিশ্চুপ এটা মোনাফেকী হওয়া গেলো না ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ১৯ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:১৪




রোহিঙ্গাদের ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের থেকে ভিন্ন সেই জন্য রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে স্থায়ী ভাবে বসবাসে ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী না ।জাতিসংঘের মানবিক করিডর বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরত যাওয়ার একটা সুযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলা বাক্যে "কি" এবং "কী" এর ব্যবহার; অনেকেরই যা অজানা

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:০৬

বাংলা বাক্যে "কি" এবং "কী" এর ব্যবহার; অনেকেরই যা অজানা

বাংলা ভাষায় "কি" এবং "কী" দুটি আলাদা অর্থ ও ব্যবহারে প্রশ্নবোধক বাক্যে ব্যবহৃত হয়। এদের পার্থক্য বোঝার জন্য আমরা ব্যাকরণ, উচ্চারণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যাটায়ার পোস্ট : " মুজিব " ছবিতে অভিনয় করেও জায়েদ খান যে কারণে বেঁচে যেতে পারেন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০১


ইন্টেরিম সরকার দেশ ব্যাপী মারাত্মক সংস্কার শুরু করেছে। সে সংস্কারের অংশ হিসাবে ' মুজিব : একটি জাতির রূপকার ' ছবির সাথে সম্পৃক্ত লোকজনকে সাইজ করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×