ছাত্র অবস্থা থেকে শুরু করে আমি এ পর্যন্ত মোট চারটা অফিসে চাকরি করেছি যার প্রতিটিতেই যোগদান করেছি অগাস্ট মাসে! আজ অফিসিয়ালি নতুন প্রতিষ্ঠানে প্রথম অফিস করলাম। পোষ্টিং হেডঅফিসে। আমার অতীত অভিজ্ঞতা বলে হেড অফিসে কাজের চেয়ে পলিটিক্স হয় বেশি, এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। একদিনে কি পলিটিক্স দেখলাম তা পেশাগত গোপনীয়তার খাতিরে প্রকাশ করবো না। যাহোক, সকাল থেকে আকাশের মন খারাপ আর তার প্যাঁনপেনানি কান্নারও বিরাম নাই। আকাশের প্যাঁনপেনানি কান্নায় শেয়াল ভেজা হয়ে ১১০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে অফিসের সামনে নেমে দেখি বৃষ্টির পানি প্রায় হাঁটু সমান হয়ে ঢলানি মেয়ের মত হেলেদুলে চলছে। গুলশান এমন এক ফালতু জায়গা যেখানে রাস্তার ধারে একটা ছাউনি পর্যন্ত নাই যেখানে মানুষ মাথা বাঁচানোর জন্য দাঁড়াতে পারে। নৌকা ছাড়ার সময় মাঝিরা বদর বদর বলে নৌকা ছাড়ে বিপদমুক্ত থাকতে আর আমি প্যান্ট গুটাই নিয়ে বদর বদর বলে পানিতে নেমে পড়লাম ম্যানহোলে পড়া থেকে বাঁচতে। ঘড়িতে তখন বাজে সকাল ৯.৩৫ মি. ভেজা গা নিয়ে এইচআর গিয়ে রিপোর্ট করার জন্য ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ফ্রেশরুমে গেলাম পরিষ্কার হতে। পরিষ্কার হয়ে ফিরে এসে রিপোর্ট করলাম, বান্দা হাজির এবার যা খুশি করেন।
সই স্বাক্ষর শেষ করে নিয়ে গেল আমার নতুন ডিপার্টমেন্টে। অতীতে এহেন জায়গায় কাজ করেছি তাই খুব একটা বিচলিত হলাম না। বিভাগীয় প্রধান অতি ভালো মানুষ, অমায়িক তাঁর ব্যবহার কিন্তু অন্যরা কেমন যেন সতীনসূচক মনোভাব দেখাতে থাকলো। ভাবলাম প্রথমদিন এমন হতেই পারে। প্রধান আমার ডেক্স দেখিয়ে দিলেন, বসে কম্পিউটার অন করলাম এবং আশ্চর্য হয়ে দেখলাম কম্পিউটারে বেশ কিছু অডিও ভিডিও গান আর নাটক সিনেমা ছাড়া কোন অফিসিয়াল ডকুমেণ্ট নাই। টাশকিত হয়ে ঝিম মেরে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। কিছুক্ষণ পরে ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়রের কাছে গেলাম কোন কাজ থাকলে বুঝে নিতে, তিনি গম্ভীর হয়ে জানালেন এটাচমেন্ট লেটার না পাওয়া পর্যন্ত আমার কোন কাজ নাই। মনের ষ্ট্যাটাসে তখন ফিলিং ধোপার কুত্তা না ঘরকা না ঘাটকা। মনের দুঃখে দু’খানা সাদা কাগজ টেনে নিয়ে গল্প লিখা শুরু করলাম, নিজের মনের অবস্থা তুলে ধরতে লিখা শুরু করলাম ভয়ংকর ভৌতিক পিশাচের গল্প। টানা ৩ ঘন্টা লিখে যে পিচ্চি গল্প প্রসবিত হলো তার থেকে পিশাচের গায়ের লাশ পঁচা গন্ধের চেয়ে পঁচা গন্ধ বের হচ্ছিল। ইচ্ছা মতো ছিঁড়লাম। লাঞ্চের টাইম হয়ে গেল। লাঞ্চ করতে গিয়ে ১.৩০ ঘন্টা পরে ফিরলাম কেউ কিছু মনে করেছে বলে মনে হলো না। আমি আরামপ্রিয় মানুষ হলেও অফিসের সময় বসে থাকার মানুষ না। এটাচমেন্ট লেটার নাই তাই কাজ নাই সেটা আবার কিসের চুলের কথা। আবার দু’খানা সাদা কাগজ টেনে নিয়ে ইংরেজদের ভাষায় কবিতা লিখা শুরু করলাম। কবিতাখানা খানিকটা এমন-
I call on a person from a mysterious land,
He had the signs of salvation and bare hand.
He told me a story about a sand watch-
Which has the power path of time catch!
Not the sunrise or not the dawn,
It is the innocent mind which keeps it on.
Asked him, “Did you”?
“No”- he cried out and mumbled a few.
I call on a person from a mysterious land-
Who saw a wonder watch made of sand.
কবিতা পড়ে নিজের-ই বমি আসলো, power path of time catch! ইয়াক। আর কেমন জানি শেলী’র ওজেমেন্ডিয়াসের নকল নকল মনে হচ্ছে। আবার ছিঁড়াছিঁড়ি। ঘড়িতে তখন বাজে ৪.৩৩ মি. এখনো দেড় ঘন্টা কি করে কাঁটায় ভাবতে গিয়ে ছেঁড়া কাগজগুলো স্কচটেপ দিয়ে জোড়া লাগালাম।
একসময় বহু প্রতীক্ষিত ৬টা বাজলো আর আমি লাফ দিয়ে প্রধানকে গিয়ে বললাম বের হব কিনা। অমায়িক মানুষ সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন। লাফাতে লাফাতে বের হয়ে এসে দেখি ছিঁচকাঁদুনে আকাশ এখনো কেঁদেই চলছে। প্যাঁনপেনানি মার্কা ছিঁচকাদুনেকে চ্যালেঞ্জ করে রাস্তায় মেনে পড়লাম আর কিছুক্ষণ পরেই বুঝলাম কতবড় ভুল করে ফেলেছি। গাড়িতে উঠার অবস্থা নাই, রিক্সার পাইলটেরা উড়জাহাজের পাইলটের মত ভাঁড়া হাঁকছে। আবারও শেয়াল ভেজা হয়ে বাসায় ফিরলাম আর লক্ষ্য করলাম আমার জুতার ভেতর থেকে প্যাঁচপ্যাঁচ করে সানাই-এর করুণ সুর বের হচ্ছে।