কর্মযোগে আজ ঢাকা আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য মেলায় বেশ কিছুটা সময় কাটাতে হয়েছে, হয়েছে মিশ্র অভিজ্ঞতা।
অতএব সরাসরি চলে আসি আজকের মেলাতে হওয়া অভিজ্ঞতায়।
প্রথমে যা আসে তা হলো মেলা প্রবেশ; যার জন্য গুণতে হবে ৩০/- টাকা

মাঝে-সাঝেই মানব বিষ্ঠার গন্ধ নাকে এসে লুকোচুরি খেলছে, কার্যকারণ হিসেবে উদ্ধার করলাম কোন বিচিত্র কারণে টয়লেটগুলোতে সারাটা দিন যা জমা হয় তা প্রতি টয়লেটের পাশে গর্ত করে চট দিয়ে ঢেকে সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে

এই মেলাটা শীতকালে হয় ভেবে একটু স্বস্তি পাচ্ছিলাম দু’টো কারণে।
এক. ধুলো, গরম আর ঘামের অস্বস্তি থেকে মানুষগুলো রক্ষা পাচ্ছে আর দুই. ষ্টলগুলোর মেয়েদের পোষাকগুলো কিছুটা হলেও তাদের আবরণ দিতে পারছে। বেশিরভাগ ষ্টল-এ পণ্য প্রচার, প্রসার ও বিক্রয়ের জন্য চিত্তাকর্ষক নারীদের ব্যবহার করা হয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পোষাক কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট পণ্য বা আমাদের আচারিত সমাজ অথবা সংস্কৃতির সাথে মানান সই না। একটা আইসক্রীম ষ্টলের মেয়েদের পোষাক দেখে মনে হলো দেশের সব গরম এসে এই ষ্টলে জমা হয়েছে। নারীকে এভাবে পণ্য করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা কি নারীবাদীরা একবারও ভেবে দেখে না নাকি

এবার এমন একটা বিষয় নিয়ে বলবো যেটা নিয়ে আমি নিজেই বিষম বিভ্রান্ত। একটা টেক্সটাইল কোম্পানি তাদের ষ্টলের পাশে একটা বীভৎস ফোয়ারা করেছে, যেখান থেকে কখনো গলগল করে আবার কখনো কখনো ফিনকি দিয়ে রক্তের রঙে পানি বের হচ্ছে; কেমন রুচির মানুষ টাকা খরচ করে এইধরনের ফোয়ারা তৈরী করে এটা দাঁড়িয়ে ভাবছি এমন সময় পাশে তাকিয়ে দেখি মাঝ বয়সী একজন সাদা চামড়ার পুরুষ ১৭/১৮ বছর বয়সী একটা বাংলাদেশি ছেলের অস্বাভাবিক ভংগিতে (যেভাবে সাধারণত প্রেমিক-প্রেমিকাদের দেখা যায়) হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে



যাহোক এসব কিন্তু জনিত বিষয়কে সড়িয়ে এবার আসি শব্দকে ব্যভিচার... দুঃখিত ব্যবহার করে যে প্রচার মাধ্যম পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে। মেলা প্রবেশ মাত্র ঢাক করে যা তাক লাগিয়ে দেবে তা হচ্ছে মেলা কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মেলাময় ছড়িয়ে থাকা বিকট কিছু SP4-এ বাজানো বিকট কিছু বিজ্ঞাপন যা মেলা থেকে বের হয়ে যাবার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত সিন্দাবাদের ভূতের মতো ঘাড়ে চেপে থাকবে। বিজ্ঞাপনের ছিঁড়িতে ভিমড়ি খাবার দশা হওয়া অস্বাভাবিক না। একটা উদাহরণ দিচ্ছিঃ
নাকি গলার একটা মেয়ে ফোন দিয়ে মেকি গলার একটা মেয়েকে বলছে, কিরে তুই আসবি না? উত্তরে মেকি গলার মেয়ে বলছে, নারে আজ যাব না, ও আমাকে মেলার অমুক ষ্টল থেকে তমুক রান্নার সরঞ্জাম কিনে দিয়েছে তাই অর জন্য রান্না করছি (মানে অর্থটা কিছুটা এমন দাঁড়াচ্ছে যে অমুক ষ্টল থেকে তমুক রান্নার সরঞ্জাম কিনে না দিলে রান্নার বদলে ঝাঁটা পেটা হতো); যাহোক, এবার শোনা যাবে কি রান্না হচ্ছে সে প্রসঙ্গে আর একবার দূর্বল হ্রদয়ের ব্যক্তিবর্গের বাকশক্তি হারানোর ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা দিতেই পারে। যে মেন্যু গুলো বিবৃত হবে তা হলো- খিচুরি ভুনা (!), মাটন, ইলিশ Fry (!), ডিম Omelet (!) !!! এই জগাখিচুরি টাইপ মেন্যু আর বিজ্ঞাপনগুলো শোনার পর আমি মেলায় আর বেশিক্ষণ টিকতে পারিনি, কাজ শেষ হওয়া মাত্র ছিটকে বেড়িয়ে এসেছি তাই আমার মেলা পরিক্রমা এখানেই শেষ করতেই হবে।
তবে আবারও না বলে পারছি না এইসব মেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি যা পাবেন তা হচ্ছে লোভী-লোলুপ চোখ আর ভোগবাদের উলঙ্গ বহিঃপ্রকাশ, যা থেকে পারলে নিজে বাঁচুন আর আপনার প্রিয়জনকে বাঁচান।