১৬ ডিসেম্বর,২০১৩
বাংলাদেশ।
প্রিয় শহীদ ভাই,
আমার সালাম নিবেন।গত ১৭/০৯/১৯৭১-এ লেখা আপনার চিঠিটি আমার সামনে।চিঠির উত্তর দিতে কিছুটা দেরি হওয়ায় প্রথমেই ক্ষমাপ্রার্থী।চিঠির শেষ পর্যন্ত অসংখ্যবার ক্ষমা চাইব, এই তার শুরু।
ভাইজান, আপনার চিঠিতে আপনি খোদার কৃপা চেয়ে আমাদের মঙ্গল কামনা করেছেন আর আমরা এখনও সবার কৃপা ভিক্ষা নিয়েই বেঁচে আছি।সেই যে সদ্য ভূমিষ্ঠ স্বপ্নমাখা দেশটাকে আপনি দেখলেন সে আজ ৪০ বছরের বুড়ো শিশু,সে এখনও হামাগুরি দিয়ে চলে আর মাঝে সাঝেই খায় ভীষণ আছাড়।
ভাইজান, আপনি আমাদের নিয়ে অনেক চিন্তিত দেখে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো, আল্লাহ্ আপনার অন্তরটা কত বড় করেছেন যে শত্রুর বন্দুকের নলের সামনে বুক ঠেকিয়ে ভাই বোনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করেন!ভাইজানগো, আপনার ভাই বোনে’রা অপ্রাপ্তি,হতাশা,গুপ্ত হত্যা,ধর্ষণ,ইভটিজিং,সড়ক দূর্ঘটনা,ছাত্র রাজনীতির নামে নোংরামো-টেন্ডারবাজি-অস্ত্রবাজি,নিরীহ মানুষকে মামলা-হয়রানি-নির্যাতন এসব নিয়ে ভীষণ বাজে ভাবে বেঁচে আছে।
ভাইজান, আপনি যে মীরজাফরদের ক্ষমা করবে না বলেছিলেন, তারা আজ আপনার স্বপ্নমাখা দেশের মন্ত্রী মিনিষ্টার হয়।তাদের অপবিত্র হাত দিয়ে পবিত্র দেশটাকে অশ্লীলভাবে নাড়াচাড়া করে আর কিছু জারজ তাদের ছাতি ধরে থাকে।ঘেন্নায় থুতু ফেলি বাম পাশে।
ভাইজান,আপনি শিক্ষাকে বলেছেন আমাদের স্বাধীনতার শক্তি ও লক্ষ্; সেই শিক্ষার হার দারিদ্রতার দোহায় দিয়ে আজও মোট জনসংখ্যার অর্ধেক পেরোতে পারেনি।কিন্তু আপনি শুনলে অন্তত খুশি হবেন যে দেশে এখন এমন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেখানে ভর্তি হওয়ার জন্য অভিভাবকের নিজস্ব চার চাকার একটি গাড়ী থাকা আবশ্যকীয়।আপনি হয়তো জেনে আরও খুশি হবেন জে,আমাদের দেশের বেশীরভাগ নীতিনির্ধারক ও অভিজাত (আমরা এদের ভালবেসে “মালদার” বলি) পরিবারের সন্তানদের পড়ানোর মত যোগ্যতা এদেশের একটিও সরকারি প্রতিষ্ঠানের নেই,তাই তারা দেশের মানুষের রক্তঘাম মেশানো টাকা খরচ করে বিদেশে পড়তে যায়।
ভাইজান, আপনি লিখেছেন স্বাধীনতার সাথে সাথে সমৃদ্ধিও আসবে।কিন্তু স্বাধীন সুজলা-সুফলা-শষ্য-শ্যামলা দেশটা এখনও ভিক্ষার থালা নিয়ে ঘুরে ফেরে। ভাই-দাদাদের চোখ রাঙ্গানী,চপটাঘাত সহ্য করে দোরের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে ভিক্ষার আশায়।তাও যা দেয় কেড়ে নেয় তারও চেয়ে বেশি।আর দেশি কুকুর গুলোর কামড়া কামড়িতো লেগেই আছে।
ভাইজান,আপনি লিখেছেন “যুদ্ধে আছি”-আপনি/আপনারা দাসত্ব ভেঙ্গে বের হয়ে আসার যে পথ দেখলেন আমরা আজ তা হারিয়ে ফেলেছি।যুদ্ধে যাবার পথে যে ভুখা নাঙ্গা শরণার্থীর মিছিল দেখছিলেন তা আজ বৃত্তবন্দী হয়ে আপনার স্বপ্নমাখা দেশের পথে ঘাটে বিভিন্ন চরিত্র হয়ে ঘুরে ফিরছে।বিজয়ের এই ৪০ বছরে এসে আলী বাবা’র সেই ৪০ চোরের কথা খুব মনে পড়ছে।ভাইজান আমাদের দেশটা সেই ৪০ চোরের হাতে চলে যাচ্ছে না তো?যারা আমাদের সুজলা-সুফলা-শষ্য-শ্যামলা দেশটাকে নিয়ে এমন কোন চিচিংফাঁকে লুকিয়ে রাখছে না তো, যাকে আমরা খূঁজেই পাচ্ছিনা!
জানি এতসব শোনার পরে আপনি ভাল বোধ করবেন না।তাই যত দ্রুত সম্ভব সমাধান জানিয়ে উত্তর পাঠাবেন।
দোয়া ও নির্দেশনাপ্রার্থী
আপনার স্নেহের ছোট ভাই,
.....
(এই লিখাটি এই ব্লগে আমার প্রথম লেখা ছিল যখন আমি গভীরভাবে পর্যবেক্ষিত ছিলাম। প্রায় দু’বছর পরেও মনে হচ্ছে লিখাটার শুধু দিন তারিখ গুলো পরিবর্তন করে দিলেই বক্তব্য একই থাকে। বিজয়ের হারানো স্বপ্ন ফিরে আসুক সবার প্রাণে)