somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনাপ সাইতার এ যেনো পাহাড়ী ঝর্নার দেশ বান্দারবানের রূপসী রাজকুমাড়ী ।

২৭ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃহস্পতিবার দিন টি সবার জন্যই অন্যরকম শপ্তাহের শেষদিন। তারপর দিন ছুটি!! আহ! কি আরাম!! কিন্তু এটা আমজনতার কথা বলছি আমার মতো ভ্রমন পিপাসু মানষদের হিসেবটাই আলাদা । বৃহস্পতিবার মানে দু এক দিন এদিক সেদিক করে নিজ কর্ম থেকে বিদায় নিতে পারলেই কেল্লা ফতেহ !! , বর্ষার মেঘের মতো মনের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে থাকে একটাই ইচ্ছা ..পাগলা তুই ঘর থেকে বের হ…যা কোথাও বেড়াতে । পাহাড় নদী সমুদ্র তোকে ডাকছে বের হ জলদি !! ঠিক এরকমি একটা কুডাক (আমার পরিবারের ভাষায়) দিয়েছিল আমাকে গত শপ্তায়, ঘটনাটা শুর হয়েছিল ঠিক এভাবেই!! সেদিন সারাদিন ছিলো বৃষ্টি, আমি অফিসে ঢুকার পর পর ই বুঝতে পারছি আজকে মনে কু-ডাক দিবে । কিন্তু নাই কোন প্রস্তুতি হঠাৎ করে যাই বা কই !! যাইহোক মনের তীব্র ইচ্ছা আর আবেগের কাছে যৌক্তিক মস্তিস্কের চুরান্ত পরাজয় বরন হলো তখনই যখন আমি আর আমার অফিসে সদ্য জয়েন করা কন্টেন্ট রাইটার কাম ট্যুর পার্টনার ফাহিম বাস ছাড়ার এক ঘন্টা আগে কনফার্ম করলাম আমরা আজকে রাতের বাসে বান্দারবান যাচ্ছি !! ব্যাগ গোছানোর জন্য সময় ৪০ মিনিট। নারায়নগঞ্জ শ্যামলি কাউন্টার থেকে বাস ছাড়বে রাত ঠিক ১০ টায় !! বাস থেকে নেমে কই যাব ? কাদের সাথে যাব ? কত দিন থাকবো কোন কিছু আগে থেকে ঠিক না করেই রাত ১০ টায় আমরা বান্দারবান এর উদ্দ্যেশে বাসে উঠে গেলাম । দেখা যাক আমরা শেষ পর্যন্ত কই যাই !!!

অন্যান্ন দিনের মতো হলে বাস ঠিক ভোরে বেলা বান্দারবান শহরে পৌছে যেত, কিন্তু বিধি বাম, আমরা পৌছালাম সকাল আট টার পর । একদিকে কাউয়া মরা রোদ আর বান্দারবান শহরের শুনশান নিরবতা (কোন গ্রুপ নেই) আমাদের মনে এক জঘন্য কুডাক দিচ্ছিল …আমরা কি কোন গ্রুপ পাবনা ? বুঝতে পারলাম আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি । সবাই আগেভাগে যার যার গন্তব্যস্থলে চলে গেছে । হতাশ মনে আমি আর ফাহিম কোন গ্রুপ ধরার আশায় এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে বাস স্টেশনের দিকে ফেরার পথে দেখি একদল কাফেলা মাত্র বাস থেকে নামছে, একটু সামনে গিয়ে দেখলাম তারা ১১ জন আর এই ১১ জনের কাফেলার লিডার রাহি ভাই এর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এটা ট্যুর গ্রুপ বিডি এর একটি ইভেন্ট । আর তারা যাচ্ছে তিনাপ সাইতার, বিষয়টা অনেকটা মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো। রাহী ভাই নেহায়েত বিনয়ী আর ভদ্র মানুষ !! আমাদের অনুরোধ উনি ফেলতে পারেন নি, সহজেই আমাদেরকে তাদের প্যাকেজের আওতায় নিয়ে নিয়ে আমাদের গন্তব্যহীন সফরকে ষোলকলায় পূর্ন করে দিলেন !! পেয়ে গেলাম ১১ জনের ট্যুর পার্টনার !!! উদ্দেশ্য তিনাপ সাইতার!! আহ! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে….

গ্রুপে জয়েন করেই বুঝতে পারলাম আমরা কাদের সাথে আর কেমন লোকদের সাথে জয়েন করেছি !! এক কথায় অত্যন্ত ভদ্র মিশুক আর ভ্রমন পীপাসু সুন্দরমনা ১১ জন মানুষ !! আর আপুরা তো কিউটির ডিব্বা।

সকাল ১১ টার দিকে আমরা রওনা দিলাম! মোটামুটি লম্বা ট্র্যাকিং, প্রথমদিন হাটতে হবে প্রায় ৬-৭ ঘন্টা। প্রথমে চান্দের গাড়ি যোগে ঘাটে পৌছাই, সেখান থেকে বোটে করে রোয়াংছড়ি । সাঙ্গু নদী দিয়ে যারা রুমা পর্যন্ত এর আগে গিয়েছেন তারা যানেন নদী পথে বান্দারবান এর প্রকৃতি কতোটা সুন্দর । দুপাশে পাহাড় আর মাঝখানে নদী !!




রোয়াংছড়ি যাওয়ার জন্য ট্র্যাকিং এর পথ যেখান থেকে শুরু সেখানে পৌছালাম ঠিক বেলা ১২ টার কিছু আগে। হাটার রাস্তা এখান থেকেই শুরু, পাহাড়ে যারা ট্র্যাকিং করেন নি তাদের কি ভাষায় যে বলে বুঝাতে পারবো যে ট্র্যাকং কি জিনিস তাই ভাবছি । ঠিক ১২ টার দিকে আমরা হাটা শুরু করলাম চারিদিকে পাহাড় আর সামনে হাটার জন্য চিকন সরু উচু নিচু বন্ধুর পথ । কখনো অনেক উপরে উঠেই যাচ্ছি তো উঠেই যাচ্ছি আবার কখনো অনেক নিচে নেমেই যাচ্ছি তো নেমেই যাচ্ছি । হাটছি তো হাটছি চারিদিকে সবুজ পাহাড় আর মাথার উপর কড়া নীল আকাশ এর নিচে আমার একদল ভ্রমন পিপাসু মানুষ শুধু হেটেই চলছি , এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়, আমাদের আগে থেকেই বলা হয়েছিল আজকের দিনের সফর রোয়াংছড়ি হয়ে রনিন পাড়া পর্যন্ত । আর সেখানে যেতে আমাদের হাটতে হবে প্রায় ৬-৭ ঘন্টার মত। তাই সবাই বুঝতে পারছিলাম কাজটা আনন্দ না নিয়ে করতে পারলে হাটতে হাটতে বিরক্ত ধরে যাবে, ক্লান্ত হয়ে পরব । তাই পথের এ বাকে ও বাকে কিছু সময়ের জন্য গল্পগুজবের ছলে একটু আকটু বিশ্রাম নিয়ে নিচ্ছিলাম । আর সবাইকে চাঙ্গা করার জন্য রাহি ভাই একটু পর পর গান ভয়াবহ সব গান ধরেই যাচ্ছেন । আমারও কম যাই না। একজন শুরু করলে পুরো টিম এ তা চলতে থাকে



এভাবেই প্রায় ৩ ঘন্টা হাটার পড় আমাদের প্রথম যাত্রা বিরতি দিলাম, কিছু খাওয়ার জন্য বিরতি । দুপুর ৩ টা, খুব ছোট খাট একটা দোকান । সেখানে শুকনো কিছু বিস্কিট, ডিম সেদ্ধ আর মামুলি কিছু আনারস ছিল। ভাবছি এত দুর হেটে এসে !! এ কেমন বিচার !! কিন্তু এই মামুলি আনারসগুলো যে কতোটা ভয়ংকর সুস্বাদু খাবার হয়ে দারাতে পারে তার কোন ধারনাই ছিলো না আমাদের । আমি ভয়কংর বলছি স্বাদের দিক বিবেচনায় । আমি এর আগে বান্দারবানে বহু ট্র্যাকিং করেছি । বগালেক, কিউকারাডাং,জাদিপায়ি গিয়েছি বেশ কয়েকবার । এমন সুস্বাদু আনারস আমি কোন দিন খাইনি । মনে হচ্ছে আনারসগুলো এই মাত্র বেহেস্ত থেকে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বান্দারবান ল্যান্ড করেছে । একেবারে ল্যাটায় পেটায় খেলাম (অনামিকা আপুর ভাষায়) কে কয়টা আনারস খেয়েছে কারো জানা নেই । আনারস খেয়ে পেট আর মন ভরে এবার মনে হলো এবার ক্যালোরি যুক্ত কিছু খাই । দুটা ডিম খেলাম আর একটা বাকি পথের জন্য নিয়ে নিলাম । এর মাঝে আমাদের কিন্তু পুরো ১১ জন ট্র্যাভেলারদের সাথে মোটামুটি বেশ খাতির হয়ে গেছে । পুরো টিমে ৪ জন মেয়ে আর আমরা ৯ জন ছেলে । এদের এক এক জনকে একেক ভাবে আলাদা ভাবে পচানো যাবে । তবে এখন না সামনে ।
আমরা রোয়াংছড়ি আর্মি ক্যাম্পে এ পৌছালাম ঠিক শন্ধার পর পর । তখন প্রায় অন্ধকার নেমে এসেছে পাহাড়ী রাস্তায় । আমরা আর্মি ক্যাম্পে সব ফরমালিটিস সারলাম। রোয়াংছড়ি ক্যাম্প দিয়ে প্রবেশ করলেও বের হব রুমা দিয়ে । মানে আমাদের ফেরার পথ আজকের মত দুর্গম ট্র্যাকিং করতে হবে না, রুমা দিয়ে গাড়ির পথে যেতে পারবো। কিন্তু বাধ সাধল আর্মি অফিসারগন ! তারা এ পারমিশন দিতে নারাজ। যে পথে এসেছি সে পথেই ফেরত যেতে হবে । তখনি আমাদের সাথে থাকা মোক্ষম অস্ত্রটি কাজে লাগল তা হলো আপুদের ভাইয়া ভাইয়া ডাক । বিশেষ করে অনামিকা আপু যখন দোয়েল কোয়েল ময়না শ্যামার মতো মধুর কন্ঠে ভাইয়া ভাইয়া বলে যখন আর্মি অফিসারদের পটাতে চেষ্ঠা করছিলেন তখন আমরা ছেলেরাও কাউয়া বরকি আর ভেড়ার কন্ঠস্বর দিয়ে অফিসারদের ভাইয়া ভাইয়া বলে বুঝানোর চেষ্ঠা করছিলাম যেনো আমাদের কে এ পথ দিয়েই নি ফিরতে হয় ।যাইহোক ফলাফল মেয়েদের ভাইয়া ভাইয়া ডাকে সব কিছুই নিয়ন্ত্রনে চলে এলো । আমরা প্রথম দিনের যাত্রা শেষ করলাম রনিন পাড়াতে, আয়তনে বেশ বড় আর বেশ সমৃদ্ধ একটি পাড়া । সেখানে পৌছে মনে হলো ঘরে পৌছে গেছি । এটলিষ্ট রাতটুকু থাকার জন্য একটা শেল্টার হলো। সারাদিনের ট্র্যাকিং শেষে ঘর্মাক্ত ক্লান্ত দেহে একে একে গোসল সেরে নিলাম । খুধায় তো যাই যাই অবস্থা, শহর থেকে রাহি ভাই আগেই ২ টা মুরগী নিয়েছিলেন সাথে, সেটাই রান্না হলো । রান্না করলেন আমাদের অনামিকা আপু। এতো ভালো ট্র্যাকার ভালো রাধতেও পারে, তখন মনে হলো আসলেই যে রাধে সু চুল ও বাধে !

খাওয়া দাওয়া শেষে আড্ডাবাজি এক এক জনের এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার । আমাদের মাঝে অলরেডি এক একজন একেক টাইটেল ধারী হয়ে গেছেন তার মধ্যে শক্তিমান ইমরান ভাই। যিনি একাই একশ । ট্র্যাকিং করার সময় নিজেদের ব্যাগটাকেই মাঝে মাঝে মনে হয়ে বাইরে ফেলে দেই, তখন উনি একাই বহন করেছেন আপুদের আরো দুটি ব্যাগ । বুঝতে হবে শক্তিমান ইমরান ভাই । আপুদের কথা আসলে প্রথমেই অনামিকা আপু সম্পর্কে বলা হয়ে গেছে তারপার আরেকজনের নাম আসবে সে হলো বিশিষ্ঠ জোকফোবিয়া আক্রান্ত রোগী ফারজানা আপু জোক এর নাম বল্লেও উনি লাফ দিয়ে উঠেন । পুরো সফরটায় যাকে দেখলেই জোকের কথা মনে পড়েছে । কিন্তু আফসোস !!!পুরো ট্র্যাকিং এ তাকে একটাও জোকে কামরায়নি। অন্তত একটা জোক তাকে কামরানো উচিৎ ছিল !!!
শান্ত শিষ্ঠ শান্তুনু আপুর কথা এড়িয়ে যাই কিভাবে । খুবি ধীর গতীতে কথা বলেন, নামের সাথে সব মিল থাকলেও ট্র্যাকিং এ উনি দুর্ধর্ষ । যতো জোরে বা দ্রুততার সাথেই হাটি না কেনো পুরো টিমের সবার আগে থাকেন শান্তুনু আপু। খুব ধীর স্থির গতীতে একটানা হাটা দেখে বুঝাই যাবে রিয়েল ট্র্যাকার । মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে কণিষ্ঠ সেতু আপু, তাকে তো আমি ইউনিভারসিটিতে সদ্য জয়েন করা কুমাড়ী কন্যা ভেবে ফেলেছিলাম। মনে করেছিলাম সব চেয়ে কম বয়সী মেয়ে পুরো টিমের মাঝে, ঠিক তখনি আমার ভাবনায় বাজ পড়ল উনি ১৬ বছরের ছেলের মা !!! টিনের চালে কাক !! আমি অবাক !! এইটা কেমনে সম্ভব । তাকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই ! অসম্ভব মিশুক একজন মানুষ । ভালো লাগতেই হবে !! যাইহোক আপুদের ব্যাপরে বেশি বল্লে ভাইয়ারা মাইন্ড খাবে । গ্রুপে খুব কম বয়সি বোধ হয় আমার সাথে নারায়নগঞ্জ থেকে বয়ে নিয়ে আসা ফাহিম । ট্র্যাকিং করার জন্য অদম্য পরিশ্রম করার মন মানসীকতা সম্পন্ন একজন। আমার সাথে ট্র্যাকিং করেছে সেই কেউকারাডাং থেকে শুরু করে আজকে তিনাপ সাইতার পর্যন্ত, মাঝির বাহু দেখলেই বুঝা যায় মাঝি কেমন, তাই ফাহিমের ট্র্যাকিং এবিলিটি নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই । এছাড়া ইব্রাহিম ভাই, আবিদ ভাই আর তার সাথে মাহমুদ ভাই যিনি আমাদের সবার চেয়ে বয়সে বেশ সিনিয়র উনিও প্রথম দিন হেটেছেন প্রায় সমান তালে । আবিদ ভাই এর ফার্ষ্ট লুকেই যেকেউ বুঝে ফেলবে উনি একজন ট্র্যাকার । সেই লেভেলের ট্র্যাকিং বেশ ছিল তার । সেই ব্যাগ !! সেই প্রস্তুতি!! আর সেই লেভেলের মুভমেন্ট !! পিয়াস ভাই এর কথা যদি বলি তাহলে তিনপা এর সবচেয়ে মজাদার বিষয়টা চলে আসবে, রনিন পাড়ায় উনি মোটামুটি হয়রানির শিকার হয়েছেন !! আর সেটা কোন মানুষের হয়রানি না ভুতের !!! সবাই যখন গোসল সেরে আসছিলো তখন উনি গোসলের যায়গার আশ পাশ থেকে অদ্ভুত চিৎকার এর আওয়াজ পেয়েছেন । আর সেখান থেকে ভয়ে চলে আসার সময় পথ হারিয়ে এদিক সেদিন ছুটোছুটি করে পথ হারিয়ে অন্য যায়গায় চলে গিয়েছিলেন!! যদিও পুরোটা ফানি ছিল। নাথিং সিরিয়াস !! মনের ভয় পেয়েছিলেন. সত্যিকারের ভুত নয়। রাতে আমরা যখন রিল্যাক্স হচ্ছি তখন মারুফ ভাই আমাদের জানালেন এখন পর্যন্ত আজকের দিনে আমরা প্রায় চার হাজার ক্যালোরি বার্ন করেছি হেটে !! আমার মত মটুদের জন্য এর চেয়ে সুখবর আর কি হতে পারে । মারুফ ভাই কে থ্যাংকস দিলাম মনে মনে, কারন উনার এই এক কথায় আমার পরের দিনের যাত্রার গতী আরো অনেক বাড়িয়ে দিবে। যাইহোক পার্টনার দের নিয়ে আরো গল্প হবে সামনে । এবার সেই খেয়ে দেয়ে মোটা হয়ে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম!!


পরদিন সকালে উঠলাম ৭টার দিকে, আগের দিনে প্রচন্ড পরিশ্রান্ত দেহে ঘুমিয়েছি । কোনরকম একটা ঘুম দিয়ে উঠলাম সকালে । উঠেই দেখি দু একজন আপু উঠে গেছেন আমাদের আগেই । রাহি ভাই তো ব্যাস্ত সৈনিক এর মতো একটু পর পর আমাদের তাড়া দিচ্ছেন । যাইহোক বিছানায় কোন রকম গাই-গুই না করে আমরা নাস্তা সেরে ঠিক নয়টার মধ্যে রওনা হয়ে গেলাম আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্য তিনাপ সাইতার এর উদ্দেশ্যে । হাটতে হবে প্রায় ৪ ঘন্টার মতন । প্রথমে পাহাড়ী রাস্তা । তারপর ঝিড়িপথ । ঝিরিপথ ধরে হাটতে হাটতে আমারা পৌছে যাব তিনাপ সাইতার । শুরু হলো আমাদের দ্বিতীয় দিনের হাটা …গতকালের হাটা আর আজকের হাটা অনেক পার্থক্য আজ পায়ে একটু জোর বেশি । কারন ঝর্না দেখা আর ঝিরিপথের এ্যডভেঞ্চার এ সবার মনে আনন্দ ধরিয়ে দিচ্ছে । আমার মতো বেসুরা কন্ঠে ও গুন গুনিয়ে গান চলে আসে;

আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল
বাতাসের আছে কিছু গন্ধ….
রাত্রীর গায়ে জ্বলে জোনাকী,
তটিনীর বুকে মৃদু ছন্দ


আহ !! মধু !! মধু মধু মধু!! পাহাড়ী পথগুলো একটু কঠীন তার উপরে জোকের ভয় তো আছেই। সেদিন আবহাওয়াটাই ছিল জোকে ধরার মতো, ভেজা আর স্যাত স্যাতে । ফলাফল যা হবার তাই হলো । যাত্রার প্রথম বিরতীতে আমার বুঝতে পারলাম পুরো টিমের উপর জোক জেকে বসেছে । জোকের হাত থেকে বাচতে সেই লেভেলের এক এক জনের প্রস্তুতি ছিল !! হাতে পায়ে কেরসিন ঢালা থেকে শুরু করে আট সাটা জামা !! আর আপুদের প্রস্তুতি তো সেই থেকে সেই লেভেলের!! জুতা থেকে মাথা পর্যন্ত আবৃত স্কিনি জাতিয় পোষাকে !! যেনো জোক ধরার কোনো রাস্তাই না থাকে !! আমার কিন্তু শুধু থ্রি কোয়র্টার পড়া!! তার পরে পুরো জুতা পর্যন্ত পুরো পা খালি !! দেখা যাক কতক্ষন জোক থেকে বেচে থাকি !! এতো সবাইকে জোকে ধরলেও তখনো কিন্তু ফারজানা আপুকে জোকে ধরেনি !!! আফসোস !!

সত্যি কথা বলতে প্রথম দিনের মত দ্বীতিয় দিন আমাদের অতো খারাপ লাগছেনা হাটতে । বড়ং বেশ ভালোই লাগছে । প্রথম দফার পাহাড়ি পথ ছাড়িয়ে আমরা প্রবেশ করলাম ঝিড়িপথের মুখে, কিন্তু তার আগে আমরা পথে ফেলে আসলাম অসংখ্য ছোট ছোট পানির ফোয়ারা, ছোট ছোট ঝর্না। ছবি তোলার জন্য তো আপনি কনফিউসড হয়ে যাবেন কোন যায়গাটা বাদ দেবেন ছবি তোলা থেকে । কখনো মনে হয় দুনয়ন ভরে দেখি !! আবার মনে হয় ক্যামেরা বন্দি করে না নিলে পড়ে এগুলো দেখবে কি করে । হৃদয় বলে শুধু তাকাস না ..দেখ হৃদয় ভরে …আর যৌক্তিক মস্তিস্ক বলে ছবি ছবি তুল ছবি তুল !! আমি যে কি করি !!

ঝিড়িপথ কেমন সে ব্যাখ্যা আমার মতো ট্র্যাভেলার এর পক্ষ্য সম্ভব নয় তাই সেই আশাও দিচ্ছিনা , আমার যে সে পরিমান শব্দ ভান্ডার নেই এর সৌন্দর্য্য তুলে ধরার । কখনো বড় বড় পাথর ডিঙিয়ে, আাবার কখনো হাটু , কোমর পরিমান জলের ভিতর হেটে চলছি , আর যেখানেই পারছি একটু আকটু ছবি তুলে নিচ্ছি দলগত ভাবে । ছবি তোলার ব্যাপারে কি স্টাইল তো বলাই হয়নি । বেশ মজার একটা স্টাইল । সবাই কি!! এর মতো রিয়্যাক্ট দিয়ে ছবি তোলা যা ভ্রমনে বেশ আনন্দ দিয়েছে সবাইকে। কিছু কিছূ যায়গায় ঝিড়িপথের পানির স্রৌত তো সেই লেভেলের !! একটু খানি অসতর্ক অবস্থায় আপনি স্রোতে বেকায়দায় পড়ে যাবেন । এমনি ব্যালেন্স হাড়িয়ে গেলে বড় ধরনের এক্সিডেন্ট হবার সম্ভাবনা রয়েছে । যেসব যায়গায় একটু বেশি স্রোত ছিল সে সমস্ত যায়গায় সবাই এক সাথে একে অপর কে সহয়তা করে পার হয়েছি !! আর এখানেও সক্রিয় ছিলেন ইমরান ভাই সাথে মারুফ ভাই ও ।






এতোটা পথ ঝিড়িপথে হেটে যাচ্ছি তাই বলে আমাদের ক্লান্তি বোধটুকু নেই । আর এটাই বান্দারবানের প্রকৃতি। আপনি প্রচুর বৃষ্টিতে ভিজবেন রোদে পুরবেন । অসুস্থ হবেন না খুব একটা। যাইহোক আমরা ঝিড়ি পথের যাত্রা বিড়তি নিয়ে খুব একটা ভাবছিলাম না !! তখন আমাদের কানে আর মনে কিছু একটা সামনে আছে তার পুর্বাভাষ দিতে শুরু করলো। বুঝতে পারছি সামনে কিছু একটা আছে যা আমাদের সামনের দিকে আরো নিয়ে যাচ্ছে । পেছন থেকে শুধু প্রেষনা দিচ্ছে সামনে আগানোর !! ঠান্ডা হীম শীতল একটা বাতাস আমাদের গায়ে আরাম ধরিয়ে দিচ্ছৈ । আর কানে শুনতে পাচ্ছি …শো শো শব্দ ,তার মানে সামনে তিনাপ সাইতার ঝর্না !!! ঝর্নার কাছে পৌছানোর অনেক আগেই তো কানে মনে পেয়ে গিয়েছিলাম তার আগাম সু-বার্তা। তাই আগ্রহী মনে এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে !!
অবেশেষে চলা আসলাম সেই কাঙখীত ক্ষনে !! আমাদের সামনে সুবিশাল তিনাপ সাইতার!! যাকে দেখার জন্য আমাদের এতো এতো পথ চলা । যা আশা করেছিলাম তার চেয়েও অনেক বড় আর ঘন!! এ যেনো শুধু ঝর্না নয় বরং সৌন্দর্য্যে তার চেয়ে বড় কিছু । সুবিশাল ঘনত্ব নিয়ে পাথরে আছড়ে পরছে তিনাপের ঝর্না !!



কোথা হতে আসে পানি কোথা যায় মিশে !!
ছুটো ছুটি করে তবু পাইনাকো দিশে !!!

আরে আমি তো কবি হয়ে গেলাম তিনাপ এসে!! আমি ঝর্নাকে সবসময় নাড়ীর সাথে তুলনা করি আর পাহাড় কে পুরুষেরর সাথে । তিনাপ সাইতার অসংখ্য পাহাড় (পুরুষের) বুকে যত্নে লালিত এক ষোড়ষী কুমাড়ী !!! যাকে পাবার জন্য সব সব পুরুষ ই নিজের সব কিছু বিসর্জন দিতে পারে । তিনাপ সাইতার সেই আজন্ম লালিত পুরুষ পাহাড়ের বুকে আগলে রাখা একটি নাড়ী !! যাকে ছোয়া যায় !! ভালোবাসা যায়!! যেমন তার গুন তেমনি তার রুপ !! অপরুপ এই ঝর্না দেখতে এসে আমরা সকলেই বিমোহিত । হৃদয় দিয়ে উপলব্ধী করছি তার সৌন্দর্য্য। সবাই ছবি তুলে চলছি যে যার মতো । রাহি ভাই স্টেন গানের মতো একের পর এক ডি এস এল আর চেপেই যাচ্ছেন । যদিও বেশির ভাগ ই আপুদের ছবি !! ঝর্নার নিচে দারিয়ে সবাই গোসল সারছি । সেই কি পানির ক্ষুড়ধারা !! উপর থেকে পড়ছে আর গায়ে জানিয়ে দিচ্ছে বাপু তুমি কি সইতে পারবে আমার ভাড় !! অসংখ্য স্রোত ধরায় নেমে পড়ে নিচে তৈরি হয়েছে একটি সুন্দর ছোট খাট খাল এর মতন । সেখানেও কম স্রোত নয় আমার ট্যুর পার্টনার ফাহিম, আবদি ভাই, জোকাপু (ফারজানা আপু) শান্তুনু আপু আমার সবাই ঠিক ঝর্নার সবচেয়ে গতীময় যায়গাটায় বসেছিলাম অনেকক্ষন । পুরো শরীরে কে যেনো ঢোল পেটাচ্ছে !! আর শান্তুনু আপু তো ঝর্নার পাথরে বসে ধ্যানে বসে গেছেন !! পুরো সফরে তিনি হুট হাট ধ্যানে বসে যেতেন । এটা বেশ ভালো লেগেছে । আমরা মোটামুটি সব যায়গাতেই ছবি তুললাম । ট্যুর বিডি গ্রুপ (টিজিবি) এর সাথে এটাই আমার প্রথম ট্যুর, আশা করি আরো ট্যুর হবে তাদের সাথে ইনশাআল্লাহ !! রাহি ভাই অসম্বব মিশুক একজন মানুষ । আর গাইড হিসেবে তো কোন কথাই নাই !! সব মিলিয়ে আমাদের তিনাপ সফরটি ছিলো অনন্য অস্বাধারন, কারন প্রতিটা মানুষ ছিলেন অস্বাধারন মিশুক প্রকৃতির, যাদের সাথে একটি নয় এমন হাজার টা ট্যুর দেয়া যাবে। ফেরার পথে একটু মন খারাপ হচ্ছিলো এই ভেবে ঢাকা যেয়ে হয়তো কেউ কারো সাথে দেখা বা কথাও হবে না । যে যার লাইফে ডুব দিবে, ইভেন আমি নিজেও। হয়তো এটাই স্বাভাবিক, এটাই নিয়ম । ভালো থাকি আমরা সবাই, ভালো থাকুক পুরো বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×