দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জটি দুইটি দেশের মধ্যে নয়, ছয়টি দেশের মধ্যে বিরোধের উৎস! মাত্র ৫ কি.মি. এর চেয়েও কম ভূখন্ড নিয়ে গঠিত স্প্রাটলি আইল্যান্ডস (Spratly Islands )! কিন্তু এই আগ্নেয় দ্বীপপুঞ্জ সমুদ্র বক্ষে ৪,১০,০০০ বর্গ কি.মি.ব্যাপী প্রসারিত। অন্তর্গত দ্বীপ ও কোরাল রিফ এর সংখ্যা একশত এর বেশি ।
বিরোধঃ
এই দ্বীপপুঞ্জগুলোতে কোনো কালেই কোনো আদিবাসী বসবাস করেনি। তাই বলে দাবির ক্ষেত্রে কেউই পিছিয়ে নেই।
সমগ্র দ্বীপপুঞ্জের দাবিদার হলোঃ
১.চীন (পিপলস রিপাব্লিক অব চায়না)
২.তাইওয়ান(রিপাব্লিক অব চায়না)
৩.ভিয়েতনাম
আর আংশিক দাবিদার'রা হলোঃ
৪.মালয়েশিয়া
৫.ফিলিপাইন
আর এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোনের দাবিদারঃ
৬.ব্রুনেই!
চীনের দাবির মূল যুক্তি হচ্ছে প্রাচীন আমল থেকেই চৈনিক মানচিত্রগুলোতে এই দ্বীপপুঞ্জগুলো দেখানো আছে। Wanli Shitang নামে দেখানো দ্বীপপুঞ্জগুলোই বর্তমান কালের স্প্রাটলি আইল্যান্ডস । আর যারা পিপলস রিপাব্লিক অব চায়না এবং রিপাব্লিক অব চায়না এই দুইয়ের ইতিহাস জানেন, তারা ইতোমধ্যেই বুঝে ফেলেছেন চীন কোনো ভূখন্ডে নিজেদের মালিকানা দাবি করলে, সেটা দাবি করা তাইওয়ানের জন্য ফরয হয়ে যায়!
সমস্যা সৃষ্টি হলো ভিয়েতনামকে নিয়ে, কারণ ১৭ ও ১৮ শতকের ভিয়েতনামিজ মানচিত্রগুলোতে এই দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা দেখানো হয়েছে ভিয়েতনামকেই। আর চীনের মানচিত্রের ব্যাপারে তাহলে কি হলো? চীনের তৈরি করা মানচিত্রে যা দেখানো হবে, তার সবই যে চীনের তা কে বলেছে? ঐ মানচিত্রে চীন এবং তার আশেপাশের জানা ভূখন্ডের চিত্রায়ন করা হয়েছে। আরো আছে, ঐ মানচিত্রে যে সাগরে Wanli Shitang অবস্থিত, তার নাম দেওয়া ছিল Sea of Jiaozhi, আর উত্তর ভিয়েতনামের পূর্বের নাম ছিল ঐটি। তাহলে ভিয়েতনাম নিজেদেরকে দাবিদার বলতেই পারে!একইভাবে অন্যদের দাবির পক্ষেও নানা রকম যুক্তি-তর্ক আছে।
কথা হলো কেন এই দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে টানাটানি? ১৯৬৮ সালে চীনা সরকারের করা এক মূল্যায়নে জানা গেছে, তেল এবং গ্যাসের বিশাল রিজার্ভ এই দ্বীপপুঞ্জ, এতোটাই বেশি যে তা কুয়েতকেও হার মানাবে! এর পরে ১৯৭৬ সালে ফিলিপাইনতো তেল আবিষ্কার করে এর প্রমাণ দিয়ে দিলো।

১৯৮৮ সালে এই দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে বিরোধে চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে এক যুদ্ধে অনেকগুলো ভিয়েতনামিজ নৌযান ডুবে যায় ও অনেক সৈন্য হতাহত যায়।
বর্তমান অবস্থাঃ
এই দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ ইতু আবা (Itu Aba ) রয়েছে তাইওয়ানের দখলে। আর স্প্রাটলি আইল্যান্ড(দ্বীপপুঞ্জের নামেই দ্বীপটির নাম) নামক চতুর্থ বড় দ্বীপটি রয়েছে ভিয়েতনামের অধীনে। বর্তমানে ৪৫ টি দ্বীপ চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন এর সামরিক দখলে আছে। বাকিগুলোতে এখনো সামরিক উপায়ে দখলদারিত্ব কায়েম হয়নি। ২০০৫ সালে চীন,ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের সরকারি তেল কোম্পানিগুলো স্প্রাটলি আইল্যান্ডস এ সিসমিক জরিপ চালানোর জন্য এক যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এর মধ্যেও দাবি পাল্টা দাবি অব্যাহত আছে। ২০০৯ সালেই মালিকানা সংক্রান্ত অনেকগুলো দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
আগের পর্বঃ বিরোধপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জঃ কিউরিল আইল্যান্ডস
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ উইকিপিডিয়া