
সূর্য রাজা চতুর্দশ লুই।
"সূর্য রাজা" (sun king) চতুর্দশ লুই'এর রাজত্বকাল(১৬৪৩-১৭১৫) ছিল সাফল্যে ভরপুর। সেই সময়ের যেকোনো ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের চেয়ে তিনি সর্বাধিককাল ক্ষমতায় ছিলেন। তার সময়ে ফ্রান্স ইউরোপের নেতৃত্বস্থানীয় আসনে অধিষ্ঠিত হয়। এইসব সাফল্যের মূলে অনেকাংশে অবদান ছিল বিভিন্ন যুদ্ধে ফ্রান্সের জয়লাভ। আর এক্ষেত্রে যার অবদান সর্বাধিক তিনি হলেনঃ জ্যাঁ মার্টিনেট (Jean martinet).

ভার্সেইলীতে রাজা লুই'এর প্রাসাদ।
জ্যাঁ মার্টিনেট ছিলেন ফ্রেঞ্চ সেনাবাহিনীর একজন লেফট্যানেন্ট-কর্ণেল এবং মহাপরিদর্শক। তার মত এতো কঠোর, এতো নিষ্ঠুর, ফ্যানাটিক ড্রিলমাস্টার ফ্রান্স আগে কখনো পায়নি। মার্টিনেট এর আগে, ফ্রেঞ্চ আর্মিতে ছিল ভাড়াটে সৈন্য অথবা ভাগ্যের তাড়নায় যোগদান করা লোকজন। জ্যাঁ মার্টিনেটই প্রথম একটা নিয়োগদানের নিয়ম নীতি ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, সৈন্যবাহিনীতে যোগদান শুরু হয় নিয়মিত সৈন্যদের। কিন্তু তার মতো এতো কঠোর, নিষ্ঠুর এবং চরম নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলা মোটেও সহজ কিছু নয়।
এজন্য ইংরেজি ভাষায় জ্যাঁ মার্টিনেট এর নামের অর্থ দাড়াঁয় কঠোর নিয়মনিষ্ঠ ব্যক্তি। যে কর্মচারী তার মালিককে বলে মার্টিনেট, যে স্ত্রী তার স্বামীকে বলে মার্টিনেট বা যে শ্রমিক তার ফোরম্যানকে বলে মার্টিনেট - তাহলে বুঝতে হবে তারা সবাই চরম ঘৃণা পোষণ করছে ঐ লোকটির উপর যে কিনা তাদেরকে অমানুষিক, নিষ্ঠুর ও চরম নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতে বলছে!!
বাক্যঃ The woman in charge was a martinet who treated us like servant.
মার্টিনেট ফ্রেঞ্চ সেনাবাহিনীতে অনেক অবদান রেখেছিল। তার একটি হচ্ছেঃ বেয়োনেট!! ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক শহরের নাম বেয়োনি (Bayonne)। এই শহরের শিকারীরা তীক্ষ্ণ মাথাওয়ালা ছুরি ব্যবহার করত পশু শিকারের জন্য। তাই এই অস্ত্রের নাম হয়েছে বেয়োনেট (Bayonet)। মার্টিনেট প্রথম এই ছুরি বন্দুকের আগায় ব্যবহার শুরু করে।

বেয়োনেট দিয়ে প্রশিক্ষণ চলছে মার্কিন সেনাবাহিনীতে (১ম বিশ্বযুদ্ধ)
এইবার মার্টিনেট এর একটা ভালো অবদান, যদিও যুদ্ধ সংক্রান্ত, বলে এই পোস্ট শেষ করব। মার্টিনেটই প্রথম ডিপো (Depo- a type of military base for storing food) ধারণার জন্ম দেন। এর আগে সৈন্যরা শত্রু এলাকায় আক্রমণ করলে, তাদের খাবার জন্য বেসামরিক লোকদের খাবার দাবার লুট করত ও ফসল, বাড়ি-ঘর ধ্বংস করত। এর কারণেই "ত্রিশ বছর ব্যাপী চলা যুদ্ধে" জার্মানি'র বিশাল একটি অংশ জনমানবহীন এলাকায় পরিণত হয়। কিন্তু ডিপো ব্যবস্থা চালুর পর বেসামরিক লোকদের উপর হত্যাযজ্ঞ ও লুটপাট অনেক কমে যায়।

দুইসবার্গ এর যুদ্ধ।
১৬৭২ সালে দুইসবার্গ'এর যুদ্ধে মার্টিনেট ফ্রেন্ডলি ফায়ার এ পরে মৃত্যুবরণ করেন!
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:০৫