আমরা বাঙালিরা বড্ড আবেগী আর বিশ্বাসী ৷ যে যখন যা বলে বিশ্বাস করে বসি ৷ যেমন ধরুন হাসতে হাসতে কেউ আপনাকে মিথ্যা বললে আপনি তাকে বিশ্বাস করবেন তার সম্ভাবনা ৭৮ শতাংশ ৷ বছর বছর অনেকে নতুন কথা নিয়ে আসে আর আমরা সেগুলো গোগ্রাসে গিলি ৷
" দোষ নেই নেতাদের, ক্রোশ নেই ক্রেতাদের
দমে দমে দাম বাড়ে গান বাজে বেতারে ৷ " ( অর্ণব )
পরিবর্তন শব্দটার মধ্যে একটা নেশা আছে ৷ হঠাৎ বারাক ওবামা এসে বলল পরিবর্তন আসবে তাই ওদেশের মানুষ বিশ্বাস করে নিল ৷ শুধু অন্য রঙের বলে ওর কথা বিশ্বাস করে অবস্থার উন্নতি খুব হয়েছে বলে মনে তো হয়না ৷ নিজেদের কাছে কোন উপায় না থাকার চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক কিছু হতে পারে বলে মনে হয়না ৷
"সহে না যাতনা দিবস গণিয়া ... বসে আছি শুধু পথপানে চেয়ে ৷" ( রবি ঠাকুর )
পরিহাস করতে গেলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের দিকে তাকালেই হবে ৷ যেমন ধরুন জিয়া খান নামে একজন অখ্যাত ভারতীয় আত্মহত্যা করেছে দেখে পত্রিকাগুলো তাদের বিনোদন পাতাকে দুঃখ পাতা বানাতে এতটুকু অপেক্ষা করেনি ৷ অথচ ঐ পত্রিকায়ই এমনভাবে দুর্ঘটনার মৃত্যুর ঘটনা লেখে যেন এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ৷ না মরলেই বরং একটা বিজ্ঞাপন বেশি দেয়া যেত ! একবিংশ শতাব্দীতে নিউজ এজেন্সির মত ভাল ব্যবসা আর হয়না ৷ এখানে প্রতিদিন সাধারণ সংবাদকর্মী মরলে কিছু যায় আসে না ৷ কিন্তু প্রোভোকেটিভ লেখার দায়ে আটককৃতদের মুক্তি না দিলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকেনা ৷ চলছে ভাল সবকিছু ৷ এখানকার খারাপ সংবাদ বেশি বিক্রি হয় ৷ তারমানে আমাদের রুচি নীচে নেমে
গেছে ৷ ভাল কিছু বোধকরি আর ভাল লাগেনা ৷
" যা দেখি তার সবই ভাল, ভাল ভাল লাগে না ৷"( মারজুক রাসেল )
মানুষ নিজেও জানে না সে কী চায় ৷ এজন্যই সে সবকিছুর স্বাদ নিয়ে দেখতে চায় ৷ নাহলে 'কবি' নির্মলেন্দু গুণের সবচেয়ে বিক্রিত বইয়ের তালিকায় গদ্যের বই উপরে থাকার ব্যাখ্যা আর কী থাকতে পারে ৷ আমলা থেকে পেশা বদল সবচেয়ে বেশি হবার কারণ আমি জানি না ।
" হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস " (এন্ড্রু কিশোর )
মানুষের চিন্তা-বিকৃতি বেড়েই চলেছে ৷ সতের মাসের শিশু ধর্ষণের ব্যাখ্যা যাজকরা দিতে না পারলেও সতের বছরের শিশু ধর্ষণের কারণ অবশ্যই তার পোশাক, ধর্ষকের মানসিকতা নয় তা বলতে তারা এতটুকু দ্বিধা বা দেরী করেননা ৷ এবং ভাবতে খারাপ লাগে শেষে যখন ঐ মেয়েকেই সমাজে মুখ লুকাতে হয়, অপরাধীদের নয় ! তার চেয়েও হাসির বিষয় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী এমনকি স্পিকার পর্যন্ত মহিলা ৷ কোথায় যেন পুরুষতান্ত্রীকতার ভুত এখনও থেকে গেছে ৷ একটু খোলা হাসতে চাওয়ার আধখানা স্বপ্নও তারা দেখতে গিয়ে দেখেনা ৷ তাদের মনের প্রজাপতিটা বন্ধঘরেই আটকে থাকে ৷ আবেগের তীব্রতা বেড়েই চলেছে ৷ সবকিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি না করলে আমদের আর হয়না ৷ অন্য ধর্ম, রঙ, জাতি এমনকি মতের মানুষকেও আমরা ব্যক্তিগত শত্রু বানিয়ে ফেলতে দ্বিধা করছিনা ৷ নিজের দোষকে ঢাকতে অপরের দোষ কেন বড় তা নিয়ে লাফাতে লজ্জা করেনা আমাদের !
"প্রজাপতিটা যখন তখন উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে রাঙা মেঘের মতন "
নিজের দিকে তাকালেও কেমন খারাপ লাগে ৷ অসাধারণ স্কুল আর কলেজ স্মৃতি ছাড়া ভাল কোন কিছুই আমার নিজের অর্জন করা নয় ৷ আজকাল স্বপ্নগুলোও দুঃস্বপ্নের মত ৷ ভয় হয় স্বপ্ন দেখতেও ভুলে
গেছি ৷ অনেক চেষ্টা করেছি এসব বাদ দিতে ৷ কিন্তু কীভাবে 'চেষ্টা না করতে' হয় তা জানা নেই ৷ হেলাল হাফিজ, আবু হাসান শাহরিয়ার বা কবির সুমন আপনাকে বাস্তবতা থেকে নিয়ে যেতে পারবে বটে ৷ রেখে দিতে পারবে বলে মনে হয়না ৷ বাস্তবতায় ফেরত আসাটাই ওদের সংস্পর্শে থাকার একমাত্র খারাপ দিক ৷
"কেন হারিয়ে যায় স্মৃতিগুলো, স্মৃতিগুলো কেন হারিয়ে যায় " (নামটা বর্ষন বলবে )
তারপরও সব শেষ হয়নি ৷ এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে বাঙালিরা মরতে ভয় পায় নি ৷ সাভারে সতের দিন পরেও মৃত্যুর কাছে হার মানে নি মেয়েটা ৷ ফেসবুকের লেখার জন্যও শাস্তির বিধান আমাদের স্বাধীনচেতা মানসিকতা দমাতে পারেনি ৷ নতুন করে শুরু করতে পারটা আমাদের রক্তেই আছে ৷ আমাদের সাধারণের মধ্যেই অসাধারণ লুকিয়ে আছে ৷
জয়তু বাঙালি ৷ জয়তু বাংলাদেশ ৷ শুভ হোক সবার ৷