প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | তৃতীয় পর্ব
বাড়ি ফিরে লায়লা বড় বোন শায়লার কাছে সব খুলে বলে। বলে, জামিল ভাই খুব ভালো লোক আপু। তোর আর কি দোষ, এমন লোকের সঙ্গে কিছুদিন কাছ করলেও আমিও উনার প্রেমে পড়ে যেতাম। ছোটবোনের এমন কথা শুনে হেসে দিল শায়লা। তারপর আর এ নিয়ে কথা বাড়ালো না।সারারাত কেঁদে কাটায়।পরদিন লায়লাকে দিয়ে জামিলকে ফোন করায়। রেশমার বাসার ঠিকানা নিল। দুবোন মিলে রেশমাদের বাসায় গেল।
লায়লাকে দেখেই চিনতে পারলো রেশমা। লায়লাদের কলেজে কিছুদিন পড়িয়েছিল সে। প্রবল আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ। বাবা মার বাড়িতে থাকছে, বাবা-মা যাতে বোঝা মনে না করে তার জন্যই কলেজের শিক্ষকতা নেওয়া। অবশ্য বাবা-মার চাপের মুখে বেশিদিন শিক্ষকতা করতে পারেনি সে। একমাত্র মেয়ে জীবনধারণের জন্য এইভাবে কষ্ট করুক তা চাননি বাবা মা।
রেশমার কাছে সব খুলে বলে শায়লা ও লায়লা। প্রথমদিকে রেশমা খুব বিরক্ত হয়। কিন্তু সব শুনে মন গলতে শুরু করে। জামিলের সংসারে ফিরে যাবে এই প্রতিশ্রুতি নিয়েই বাড়ি ফিরে শায়লা।অন্যদিকে রেশমা তার মাকে সবকিছু জানিয়ে জিজ্ঞেস করে-মা আমি কী যাবো?
কোনো দিন আমি নিজে থেকে তোর ওপর কিছু চাপিয়ে দেইনি। তুই যখন জামিলের সংসার ছেড়ে চলে এসেছিলি, তখনও আমি তোকে কিছু বলিনি। তুই যা মনে করিস, তাই কর।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মা।
সবকিছু গুছিয়ে নিল রেশমা। পরিচিত বাসাটিতে গিয়ে পৌছালো সন্ধ্যা নাগাদ। দারোয়ান দেখেই খুশি হয়ে হাতের ব্যাগ নিয়ে ভেতরের রুমে দিয়ে আসলো।ভিতরে পরিচিত কাজের লোককে রেশমা জিজ্ঞেস করলো- তোমাদের স্যার কোথায়? উত্তর আসলো দ্বিতীয় তলায়। সিড়ি ভেঙ্গে যাওয়ার সময় রেশমার মনে হতে লাগলো একেকটি বছর পার হচ্ছে। দ্বিতীয় তলায় জামিলের রিডিং রুমের মুখে ডুকতেই শুনতে পেল ভরাট কন্ঠের গান- চোখের আলোয় দেখেছিলাম চোখের বাহিরে, অন্তরে আজ দেখবো বলে আলোক নাহিরে! বাইরে থেকে রেশমা বলে ওঠলো, কে বলে আলোক নাই? এই যে আমি আছি। রেশমার কণ্ঠস্বর শুনে অবাক হয়ে বের হলো জামিল। তুমি! এতোদিন পর। জামিলের কথায় বিস্ময় সরে না। প্রায় ১ বছর পর রেশমার অভিমান ভেঙেছে।
কেন আসতে পারি না? এটা বুঝি আমার ঘর নয়? রেশমার চটজলদি উত্তর।
উত্তরে কিছু না বলেই দাড়িয়ে থাকে জামিল। কাছে গিয়েই রেশমা তাকে জড়িয়ে ধরলো। জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর জামিল বললো- সব ঠিক হয়ে যাবে আবার। সময়জ্ঞান ভুলেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে থাকলো তারা। যেন পারিপার্শ্বিক অবস্থান তাদের সামনে নেই। বেশ কিছুক্ষণ পর রেশমা বললো, এবার ছাড়ো জনাব, বাসার সবকিছু গুছিয়ে নেই।
কয়েকদিন শায়লার ফোন নাম্বারে চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া গেল। অবশেষে নায়লাকেই ফোন করে বসলো জামিল। ফোন ধরতেই উৎকন্ঠার সঙ্গে জিজ্ঞাসা, নায়লা কী ব্যাপার? শায়লার ফোন বন্ধ কেন?
‘আপুর কয়েকদিন ধরে নিজের রুম থেকে খুব একটা বের হচ্ছে না। কারও সঙ্গে কিছু বলে না’।লায়লার জবাব যেন তৈরিই ছিল। লায়লার পড়ালেখার বিষয়ে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে ফোন রেখে দিলো। রেশমার কাছে শায়লার সব বিষয়ে খুলে বললো জামিল। পরদিন রেশমা নিজেই শায়লাদের বাসায় গেল।শায়লাকে সঙ্গে করে নিয়ে ফিরলো বাসায়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা একসঙ্গে থাকলো। নানা বিষয়ে আলাপ করলো। রেশমা শায়লাকে নানা পরামর্শ দিল।
এক পর্যায়ে বললো- তোমার প্রতি আমি খুব কৃতজ্ঞ শায়লা। তুমি আমার ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছো। তোমার চেষ্টা না থাকলে হয়তো আমার ভালোবাসার মানুষটিকে পুনঃরায় কাছে পেতাম না।
শায়লা কী বলবে বুঝতে পারছে না। নিরবতা দেখে রেশমা আবারও বলা শুরু করলো, দেখো শায়লা আমি জানি তুমি জামিলকে ভালোবেসে ফেলেছো। তোমার দোষ কি বলো, আমার সঙ্গে যখন জামিলের প্রথম দেখা হয় তখন আমি ইউনিভাসির্টির প্রথম বর্ষের ছাত্রী। সে তৃতীয় বর্ষে পড়ে। ইউনিভার্সিটির ফিল্ম ক্লাবের সদস্য হতে গিয়েছিলাম। সেখানেই জামিলের সঙ্গে পরিচয়। প্রথমে জামিলের আচরণে খুব বিরক্তি হয়েছিলাম। প্রথম দিনেই আমাদের কিছু গা জ্বালানো কথা শুনিয়েছিল। কিন্তু জামিলের সঙ্গে কিছুদিন কাজ করার পর উপলব্ধি করা শুরু করলাম, এমন একজন মানুষই আমার জীবনের সঙ্গী হতে পারে। নানাভাবে খোঁজ নিয়ে জানলাম জামিল তখনো কারও সঙ্গে প্রেম করছে না। কেউ তাকে অফার করে বসে এই ভয়ে কিছুদিনের মধ্যেই লজ্জা শরম ভুলে সরাসরি প্রেমের অফার করে বসেছিলাম। পাক্কা ২৭ দিন অপেক্ষার মধ্যে রেখে সে রাজি হয়েছিল। শায়লার অন্যমনস্কতা দেখে কথা থামালো রেশমা। আবার শুরু করলো- শোনো মেয়ে, তুমি যখন ইচ্ছা ওর সঙ্গে দেখা করতে আসবে পারবে।আমি কিছু মনে করবো না। তবে সাজেস্ট করবো, বিয়ের পর খুব বেশি না আসতে। তাহলে তুমি ওর বৃত্ত থেকে কখনই বের হতে পারবে না। স্বামীকে ঠকানো ঠিক না। তাই না? বলেই মুচকি হাসলো। তুমি অনেক ভাগ্যবতী। তোমার পাশে যে পুরুষটিই আসবে সেই সুখী হবে।
প্রসঙ্গ পাল্টে অন্য নানা বিষয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে আসলো শায়লা। রাস্তায় বের হতেই আবার ফিরে গিয়ে সুখী দম্পত্তির সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আসার খুব ইচ্ছা হলো। হঠাৎ করেই খুব কান্না পেতে লাগলো। প্রাণপনে চেষ্টা করতে থাকলো যাতে লোকজনের সামনে রাস্তায় কান্নাকাটি না করতে হয়। ভাবলো, ভাগ্যবতী মেয়েদের কাঁদতে নেই।
(সমাপ্ত)