বিশ্বায়নের এই যুগে পড়ালেখার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সুবিধা এনে দিয়েছে অনলাইন এডুকেশন সোর্স। শিক্ষা বিষয়ক নানা ধরনের তথ্য মুহুর্তেই ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইট থেকে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়া হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুনাম কুড়িয়েছে উইকিপিডিয়া। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান উইকিপিডিয়া, উইকিবুক, উইকি ইউনিভার্সিটি সহ আরো বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে জনমানুষের কাছে পৌছে দিচ্ছে নানা বিষয়ের উপর বিস্তারিত তথ্য। উইকিপিডিয়া এখন অনেক জনপ্রিয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা উইকিপিডিয়া থেকে পড়ালেখার অনেক তথ্য সংগ্রহ করছে। বর্তমানে উইকিপিডিয়া সারা বিশ্বে মোট ২৫০ টি ভাষায় তার প্রজেক্ট চালাচ্ছে। এর মধ্যে বাংলা অন্যতম। বাংলা উইকিপিডিয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং একমাত্র বুরোক্র্যাট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রাগিব হাসান। এছাড়া তিনি ইংরেজি উইকিপিডিয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছেন। উইকমিডিয়া ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রজেক্ট বিশেষ করে বাংলা উইকিপিডিয়া সমন্ধে জানতে আমরা কথা বলেছিলাম রাগিব হাসানের সাথে। তিনি এ সমন্ধে বিস্তারিত জানিয়েছেন। রাগিব হাসান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই তিনি বাংলা উইকিপিডিয়ার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলা উইকিপিডিয়ার ওয়েবসাইটটি হলো http://bn.wikipedia.org । বাংলা উইকিসোর্স এর ওয়েবসাইটি হলো http://bn.wikisource.org । আবার কেউ যদি বাংলা উইকিপিডিয়ায় লিখতে চান তাহলে তাদের জন্য সহজ টিউটোরিয়াল রয়েছে যে সাইটটিতে সেটি হলো- http://www.ragibhasan.com/wikipedia।
রাগিব হাসানের ইন্টারভিউটি নিয়েছেন- একরামুল হক শামীম
যাযাদি : প্রথমেই আপনার কাছে উইকিপিডিয়াসহ অন্যান্য উইকি সম্পর্কিত বিষয়ের মুল প্রতিষ্ঠান উইকিমিডিয়া সমন্ধে জানতে চাচ্ছি। কিভাবে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে?
রাগিব : উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন হলো একটা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। যারা উইকিপিডিয়াসহ এই রকম বেশ কিছু প্রজেক্টের সার্ভার মেইনটেইন করে। ২৫০ টি ভাষায় এদের প্রজেক্ট আছে। বাংলা এর মধ্যে অন্যতম। উইকিপিডিয়াসহ অন্যান্য সব প্রজেক্টে ব্যবহার করা হয় উইকিমিডিয়া নামের সার্ভার সফটওয়্যার। যা সব ভাষাতেই লোকালাইজেশন করা হয়েছে। কেবল একবারে কোর পিন্সিপল যেগুলো যেমন যাচাইযোগ্যতা, কপিরাইট এইসব ক্ষেত্রে সব উইকিতে নিয়ম একই।
যাযাদি : একজন স্টুডেন্টকে তার পড়ালেখার কাজে রেফারেন্স হিসাবে এখন উইকিপিডিয়া কেমন সহযোগিতা করছে?
রাগিব : উইকিপিডিয়াতে বর্তমানকালের যেকোন এনসাইক্লোপিডিয়ার চেয়েও বেশি তথ্য আছে। এমন অনেক বিষয় নিয়ে সেখানে তথ্য আছে যা হয়তো মুল ধারার ছাপা বিশ্বকোষে থাকবে না। আর তথ্যগুলো সব হালনাগাদ করা। যেকোন ঘটনার কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘন্টার মধ্যেই উইকিপিডিয়াতে সেটার তথ্য চলে আসে। এই ব্যাপারটা কিন্তু প্রিন্ট এনসাইক্লোপেডিয়া পারবে না।
এখন পড়ালেখার কাজে উইকিপিডিয়া ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেকোন এনসাইক্লোপেডিয়া কিন্তু কারো কোন বিষয়ে জানার জন্য প্রথম ধাপ। মানে আমাকে কোন বিষয়ে গবেষণা করতে হলে প্রথমে এমন সোর্স খুঁজবো, যেখানে তথ্যগুলো সম্পর্কে ওভারভিউসহ অনেক তথ্য দেয়া আছে। উইকিপিডিয়ার মুল নীতিগুলোর মধ্যে প্রধান হলো যাচাইযোগ্যতা। যেকোন তথ্যই কোথা থেকে নেয়া তার সুত্র দিতে হয়। কাজেই শিক্ষার্থীরা বিস্তারিত জানতে চাইলে তা দেখে নিতে পারে। অনলাইনে থেকে যেকোন তথ্য বের করতে হলে উইকিপিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কয়েক সেকেন্ডেই যা পারে, প্রিন্ট এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে তথ্য বের করতে সময় লাগবে মিনিট বা ঘন্টা।
যাযাদি : সেইক্ষেত্রে বাংলা উইকিপিডিয়া কেমন ভুমিকা রাখছে? বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের জন্য?
রাগিব : আমার মতে বাংলা বিশ্বকোষের ক্ষেত্রে একটা বড়ো শূণ্যতা ছিলো এতোদিন। বাংলাতে জনমানুষের কাছে তথ্য পৌছে দেয়ার মতো বিশ্বকোষের সংখ্যা ছিলো হাতেগোনা। আর যা ছিল তার অধিকাংশই প্রিন্ট এনসাইক্লোপিডিয়া। যার সব খন্ডের দাম হাজার হাজার টাকা। ফলে সেগুলো শিক্ষার্থীদের হাতের নাগালের বাইরে। বাংলাপিডিয়া ছিলো একটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু তা বাংলাদেশের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির উপর লেখা তথ্যের সংকলন। সাধারণ জ্ঞান, বিশ্ব ইতিহাস, বিজ্ঞান, গনিত, রাজনীতি, ভূগোল এইসব ব্যাপারে সহজে ইন্টারনেটে বাংলাতে তথ্য পাওয়াটা আগে অসম্ভব ছিলো। এই শূণ্যতা পুরণ করতে পারছে এখন বাংলা উইকিপিডিয়া।কারণ কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে বাংলা উইকিপিডিয়াতে জড়ো করা হয়েছে দুনিয়ার সব বিষয়ের সব জ্ঞানের কথা।আর মাতৃভাষাতে জ্ঞান লাভ করাটা বিদেশী ভাষাতে জ্ঞান লাভের চাইতে অনেক বেশি কার্যকর। ইংরেজির জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে বিষয়ের অনেক জ্ঞান, অনেক তথ্য আমাদের শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। বাংলাতে সেই তথ্য এনে দুনিয়াকে আাগমীর শিশুর কাছে উপস্থাপন করাটাই বাংলা উইকিপিডিয়া প্রকল্পের লক্ষ্য।
যাযাদি : এখনো পর্যন্ত ১৭১৩০ টি ভুক্তির কাজ চলছে। ২০০৮ সাল শেষ নাগাদ আপনাদের লক্ষ্য কতো?
রাগিব : আমরা এই বছরের জন্য বিশাল একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। এবার বইমেলাতেও উন্নতর আমরা এসওএস চিলড্রেনস বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (BDOSN) এর সহায়তায় উইকপিডিয়ার (ইংরেজি সংস্করণ) বিতরণ করেছে। সেখানে শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের বিশাল আগ্রহ দেখা গেছে। আর সবার দাবি ছিলো, বাংলা উইকিপিডিয়ার ও এরকম সিডি সংস্করণ বের করা হোক, যাতে তা ইন্টারনেট নেই এমন সবার কাছেও পৌছানো যায়। এই লক্ষ্যে আমরা BDOSN এর সহায়তায় এবার ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বাংলা উইকিসিডি প্রকাশের পরিকল্পনা করেছি। এতে থাকবে জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস, বাংলাদেশের ভুগোল, এলাকা পরিচিতিসহ এক হাজারের বেশি পূর্ণ দের্ঘ্যের তথ্যমূলক নিবন্ধ, খ্যাতনামা লেখকদের রচনা নিয়ে উইকি-সংকলন। এছাড়া মুক্ত লাইসেন্সে ব্যবহারযোগ্য উইকিমিডিয়া কমন্সের বাংলাদেশ রিলেটেড ছবিও থাকবে।
যাযাদি : আপনারা উইকি মাস পালন করেন, উইকি আড্ডা হয়। সেই আড্ডায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য কোন উদ্যোগ কি আপনাদের আছে? আমি বলতে চাইছি উইকিপিডিয়া বাংলার সাথে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কেমন?
রাগিব : এই ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিতভাবে ইউনিভার্সিটিতে উইকিক্যাম্প করা হচ্ছে। বিডিওএসএন এর উদ্যোগে বাংলা উইকিপিডিয়ার কর্মীরা বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে হাতে কলমে ওয়ার্কশপ করে উইকিপিডিয়াতে তথ্য খোঁজা, তথ্য যোগ এবং সম্পাদনের কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এছাড়াও পোস্টার, বুকলেট ইত্যাদির মাধ্যমে এই ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সহাযতা করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা উইকিপিডিয়ার কর্ আছেন, তারা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ব্যাপারে কাজ করেছন। ইতিমধ্যেই ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, শাহজালাল ইউনিভাসির্টি, বুয়েট, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, এনএসইউ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি থেকে আমরা অনেক সাড়া পেয়েছি।
যাযাদি : বাংলা উইকিপিডিয়ার নীতি নির্ধারকদের একজন আপনি। আপনার কাছে জানতে চাইছি বাংলা উইকিপিডিয়ার সুদুরপ্রসারী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
রাগিব : আমাদের লক্ষ্য হলো আগামীর শিশুর কাছে পৃথিবীর সব জ্ঞানকে মাতৃভাষায় বাংলাতে উপস্থাপন করা। আমাদের স্বপ্ন হলো জ্ঞানের প্রতিটি শাখার, প্রতিটি বিষয়ে মানসম্মত নিবন্ধ যোগ করার মাধ্যমে শিশু-কিশোর-শিক্ষার্থীদের কাছে জ্ঞানের আলো নিজের ভাষায় উপস্থাপন করা। এর জন্য আমাদের নিবন্ধের সংখ্যা ও মান বাড়াতে হবে। আর সেই সাথে উদ্যমী কিশোর-তরুন জনমানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
আর উইকিপিডিয়ার সব তথ্য সব জ্ঞান হলো মুক্ত। কপিরাইটের বেড়াজাল আবদ্ধ নয়। জনমানুষের কাছে মুক্তভাবে, বিনা বাধায় উপস্থাপন করে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর কাছে পেৌছে দেয়াটাই আমাদের সাফল্য হবে। তাই ভবিষ্যতে কেবল ইন্টারনেট না বরং সিডি, ডিভিডি ও ছাপার মাধ্যমে বাংলা উইকিপিডিয়ার সংকলন প্রকাশ করা হবে।আর এসব বিলি করা হবে বিনা মুল্যে বা ন্যুনতম খরচে, যাতে ধনী দরিদ্র সব শিক্ষার্থীরা এটি পেতে পারে।
যাযাদি : শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয় ভিত্তিক আরো নিবন্ধ যোগ করার ক্ষেত্রে আপনারা কোন উদ্যোগ নিয়েছেন কি?
রাগিব : আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি বিভিন্ন সিরিজে তথ্য বা নিবন্ধ যোগ করার। যেমন ভাষার উপরে নিবন্ধ, ভূগোলের উপরে, রাসায়নিক উপাদানের (মৌলিক পদার্থের) উপরে, বাংলাদেশের সব জেলার ও উপজেলার উপরে তথ্য, গনিতের প্রাথমিক থেকে শুরু করে জটিলতম তথ্য পর্যণ্ত আস্তে আস্তে তথ্য জোগার হচ্ছে। এর মধ্যে ভৌগোলিক তথ্য বেশ সমৃদ্ধ হয়ে এসেছে। এশিয়ার সব দেশের ভাষা, জাতীয় পতাকা, সঙ্গীত, ইত্যাদির উপরে তথ্য যোগ প্রায় শেষ। সব কয়টি মৌলিক পদার্থ সম্পর্কে তথ্যছক আছে। আমাদের দেশের ইতিহাস, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনী যোগ হয়েছে। এরকম বেশ কিছু তথ্যভিত্তিক সিরিজ রয়েছে।
যাযাদি : বাংলা উইকিপিডিয়ায় নিবন্ধ লেখা, এডিট করার ক্ষেত্রে কতোজন কাজ করছে বলে আপনার মনে হয়? মানে ইউজার কতোজন যারা বাংলা উইকির সাথে কাজ করছে?
রাগিব : বাংলা উইকিপিডিয়ার নিবন্ধকৃত সদস্য হাজারের উপরে। তবে এখন নিয়িমিতভাবে কাজ করছে প্রায় ২০-২৫ জন। তারা প্রায় প্রতিদিন সম্পাদনা করে থাকেন। এদের অনেকে বাংলা উইকিপিডিয়াতে ৫০০০ বা তারো বেশি সম্পাদনা করেছেন। কয়েকজন ১০ হাজারের বেশি সম্পাদনা করেছেন। এদের অধিকাংশই বাংলাদেশের তরুন, তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন আছেন। এছাড়া অফলাইনে তথ্য, নিবন্ধ পাঠিয়ে অনেকে সাহায্য করেছেন। যেমন মুক্তিসংগ্রামী বাঘা যতীনের দৌহিত্র প্রখ্যাত পন্ডিত ড. পৃথ্বিন্ধ্র মুখার্জী ফ্রান্সের প্যারিস থেকে ডাকযোগে আমাকে নিবন্ধ পাঠাচ্ছেন বাংলা উইকিতে দেযার জন্য। দেশে অনেকেই দূর্লভ ছবি বাংলা উইকিপিডিয়াকে দান করেছেন। যেমন ভাষা সৈনিক অধ্যাপক রফিকুল ইসলামভাষা আন্দোলনৈর বেশ কিছু ছবি বাংলা উইকিপিডিয়াকে দান করেছেন।
যাযাদি : এখন জানতে চাইবো, উইকির সাথে আপনি জড়ালেন কিভাবে?
রাগিব : আমি ইংরেজি উইকিপিডিয়ার সাথে জড়াই ২০০৪ সালের মার্চ মাসে। পিএইচডি করতে সুদুর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি।বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহনের জন্যই প্রায়ই ইন্টারনেটে অনুসন্ধান চালাই। তখন দেখতে পাই, উইকিপিডিয়া নামের সাইটে অনেক তথ্য চমৎকারভাবে রয়েছে। কিন্তু দুঃখ পেলাম, বাংলাদেশ সম্পর্কে আদৌ কোন তথ্য নেই।থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই তা বিকৃত বা ত্রুটিপূর্ণ। সেজন্য বাংলাদেশকে ডিজিটাল মাধ্যমে তুলে ধরতেই প্রথম উইকিপিডিয়ায় কাজ শুরু করি। এর মধ্যে আবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে শর্মিলা বোস কিছু পাকিস্তানী অপপ্রচার শুরু করে। সেই অপপ্রচারের বিরোদ্ধে সত্যকে তুলে ধরার জন্য রীতিমতো গবেষণা করে এই ব্যাপারে নিবন্ধ লেখা শুরু ও তথ্য যোগ করি। আর বাংলাদেশ সম্পর্কে দুনিয়ার অনেকেই কিছু জানেনা, বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এসব নিয়ে তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায় না। এইসব তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদেরই। আমাদের কথা আমাদেরই বলতে হবে। বাইরে থেকে এসে বিদেশী কেউ সেটা করে দিবে না। এভাবে কাজ করতে করতে গত ৪ বছরে ইংলিশ উইকিতে প্রায় পাঁচশত এর অধিক নিবন্ধ শুরু করেছি । বাংলা উইকিপিডিয়া প্রজেক্টে ভালোভাবে ২০০৬ থেকে কাজ শুরু করি।
যাযাদি : আপনি বাংলা এবং ইংরেজি উইকিডিয়ার এডমিনিস্ট্রেটর। এই দুই ভাষায় কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
রাগিব : দুই ভাষাতে পাঠক দুই রকম, সম্পাদনা করাও দুই রকমের। ইংরেজি উইকিপিডিয়ার পাঠক হলো সারাবিশ্বের সব মানুষ। আর সেখানে কাজ করে লাখ লাখ উইকিপিডিয়ান। কাজেই সেখানে অনেক বেশি তথ্য যোগ করাটা সহজ। তাছাড়া উন্নত বিশ্বে ইন্টারনেটের সুব্যবস্থা থাকাতে সেইখানে তথ্য যোগ করার লোকের সংখ্যা বেশি। সেই তুলনায় বাংলা উইকপিডিয়ার পাঠক মুলত বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীরা। আর এর উপর কাজ করা উইকিপিডিয়ানদের সংখ্যাবো কম। দেশে ইন্টারনেটের কারিগরী নানা সমস্যার কারনে উইকিপিডিয়ানদের অনেকে তথ্য যোগ করার ক্ষেত্রে সদিচ্ছা থাকলেও সবসময় পারেন না। কাজেই অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও উইকিপিডিয়ানদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা অনেক বেশি। আমার মনে হয় নিজের ভাষায় কাজ করার বিশ্বকোষ গড়ার মতো আনন্দের বিষয়টা অনেক বড় একটা ব্যাপার। তাই ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বাংলা উইকিপিডিয়াতে কাজ করতে বেশি ভালো লাগে। আর বাংলা উইকিপিডিয়ান কমিউনিটি এখনো ছোট। তাই বাংলা উইকিপিডিয়ানদের সবার সাথে অনেক বেশি যোগাযোগ ও ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে। দেশে যখন যাই, তখন সবার সাথে উইকি-আড্ডাতে দেখা হয়।
যাযাদি : উইকি ইউনিভার্সিটির কথা আমরা জানি। বাংলা ভাষায় এর কতোটুকু উন্নয়ন ঘটেছে?
রাগিব : এখনো আসলে অতোটা কাজ শুরু হয় নি। কারণ আমরা ধীরে ধীরে এগুচ্ছি। বাংলা উইকিপিডিয়া প্রজেক্ট আরেকটু সমৃদ্ধ হলে আস্তে আস্তে উইকি ইউনিভার্সিটির ব্যাপারে আমরা কাজ শুরু করবো।
যাযাদি : তাহলে উইকি সঙ্কলন আর উইকি বুক প্রজেক্টের খবর কি?
রাগিব : উইকি সঙ্কল এখন বেশ সমৃদ্ধ। এখানে আমরা কেবল রাখতে পারি কপিরাইট মুক্ত বা কপিরাইট পার হয়ে গেছে এরকম লেখা। ইতোমধ্যেই রবীন্দ্র রচনাবলীর বিশাল অংশ উইকি সঙ্কলনে দেয়া হয়েছে (http://bn.wikisource.org )। সুকুমার রায়, উপেন্দ্রকিশোর রায় এইরকম যাদের যাদের রচনাবলী এখন পাবলিক ডোমেইনে সব কিছুর সঙ্কলন করা হচ্ছে এখানে। ইদানিংকালের লেখকদের অনেকেই অনুমতি দিচ্ছেন তাদের রচনাবলী এখানে দেয়ার জন্য, তাও আমরা যোগ করছি।
উইকি বুকস অবশ্য অন্যরকম।উইকিবুকস হলো বিষয় ভিত্তিক বই, যা আমরা অনলাইনে বসে সঙ্কলন করি। বাংলা উইকিবুকস এখনো অতোবেশি সমৃদ্ধ না। তবে অদুর ভবিষ্যতে এইখানেও জোরেশোরে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা আছে। এই মুহুর্তে বাংলা উইকিপিডিয়াতে মানসম্মত কয়েক হাজার পূর্ণ দের্ঘ্যের নিবন্ধ পরিপূর্ণ করাটাই আমাদের মুল লক্ষ্য।
#### রাগিব ভাইয়ের এই ইন্টারভিউটি ছাপা হয়েছে আজকের যায়যায়দিন পত্রিকায়।
পত্রিকার অনলাইন সংস্করনের লিংক -
http://www.jaijaidin.com/details.php?nid=64856
http://www.jaijaidin.com/details.php?nid=64852
http://www.jaijaidin.com/details.php?nid=64858
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৯