এবার আসা যাক কোন বিষয় প্রসঙ্গে। কেউ যদি টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করতে চায় তার উচিত টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর প্রতি প্রাধান্য দেয় এমন ইউনিভার্সিটিতে পড়া। কিছু ইউনিভার্সিটি আবার কিছু বিষয়ের জন্য পৃথিবীখ্যাত। যেমন সুইডেনের স্টকহোম ইউনিভার্সিটির মেডিকেল বিষয়ক পড়াশোনার খ্যাতি রয়েছে আবার যুক্তরাষ্টের এমআইটির ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনার খ্যাতি রয়েছে। বিষয়ের প্রাধান্য দিয়ে ইউনিভার্সিটি বাছাই করতে হবে।
কোথায় পড়াশোনা
কোথায় পড়াশোনা করবেন তা ঠিক করার আগে চারটি বিষয় মাথায় রাখুন।
* আপনি দেশে কীভাবে পড়াশোনা করেছেন এবং বিদেশের উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে আপনি কী চান?
* আপনার পছন্দের বিষয় অথবা গবেষণার বিষয়।
* আপনার পছন্দ অনুযায়ী বেশকিছু ইউনিভার্সিটির প্রোফাইল।
* আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য, কোর্স খরচ এবং ভর্তি যোগ্যতার দিকে খেয়াল রাখুন।
এ চারটি বিষয় নিয়ে ভাবলে কোথায় পড়াশোনা আপনার জন্য ভালো হবে তার ধারণা পেয়ে যাবেন। এ ধারণাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী ধাপের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন।
সুযোগ-সুবিধা আবাসান ও খরচ
কোথায় পড়াশোনা করবেন তার জন্য যে দেশ অথবা এলাকার সুযোগ-সুবিধা, আবাসন ও খরচের বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন সুইডেনে টিউশন ফি নেই, আবার জাপানে পার্টটাইম জবের বেশ সুযোগ রয়েছে, অষ্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা থেকে সিডনিতে আবাসন খরচ বেশি। এটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হলো। এরকম অনেক খুঁটিনাটি বিষয়কে ঘিরেই এলাকা নির্ধারণ করতে হবে।
ধরা যাক, আপনার পছন্দ কানাডা। তারপর এলাকার কথা ভাবলেন। অটোয়া এবং টরেন্টোতে অবস্থিত দুটি ইউনিভার্সিটির মান একই রকম। সে ক্ষেত্রে আপনাকে দেখতে হবে কোথায় আপনার জন্য সুবিধা হবে। কোন এলাকায় খরচ কম হবে। আপনার জন্য যদি টরেন্টো সুবিধা হয় তাহলে টরেন্টো ইউনিভার্সিটিতেই আপনার পড়া উচিত।
পড়াশোনার মান
পড়াশোনার মান অনেক ক্ষেত্রেই ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই সহজ উদাহরণ দিয়ে এটি বোঝানো যাক। বাংলাদেশে গ্রাম কিংবা মফস্বল এলাকার কলেজগুলো থেকে শহর এলাকার কলেজগুলোর পড়াশোনার মান অনেক বেশি (কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে)। তেমনটিই বিদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোর জন্য প্রযোজ্য। কানাডার ক্ষেত্রে অটোয়া এবং টরোন্টো এলাকার ইউনিভার্সিটিগুলো পড়াশোনার মান অন্যান্য এলাকার ইউনিভার্সিটি থেকে বেশি। আবার যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে লন্ডনের ইউনিভার্সিটিগুলোর পড়াশোনার মান বেশি।
ইউনিভার্সিটি নির্বাচনের আগে এ বিষয়গুলো ভাবতে হবে।
কোন বিষয়ে পড়াশোনা
এবার আসা যাক কোন বিষয়ে পড়াশোনার ব্যাখ্যায়। এখানেও দুটি দিক নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব। তবে সেটা নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাহিদার ওপর। কোনো কোনো শিক্ষার্থী দেশে যে বিষয়ে অনার্স করলেন, সে বিষয়েই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চান। কেউ কেউ আবার ট্র্যাক ছেড়ে অন্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চান। যেমন ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স করে এমবিএ করার ইচ্ছা হলো। এ দুটি ক্ষেত্রেই বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ইউনিভার্সিটি নির্বাচন করা উচিত।
যে শিক্ষার্থী নিজের অনার্স করা বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই উচ্চশিক্ষা নিতে চান তার উচিত ওই বিষয়ের সেরা সেরা কিছু ইউনিভার্সিটির তালিকা তৈরি করা। ইন্টারনেটে বিষয়ভিততিক সেরা ইউনিভার্সিটির তালিকা পাওয়া যায়। তবে সেটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন শিক্ষার্থীর কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকেই কয়েকটি ধাপে সেরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করতে হবে। ধরা যাক, কোন শিক্ষার্থী বায়োটেকনোলজি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চান। তাকে প্রথমেই বাছাই করতে হবে কোন কোন ইউনিভার্সিটি এই বিষয়ে কোর্স করায়। প্রথমে তালিকাটা অনেক বড় হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এর মধ্যে কোন ইউনিভার্সিটিগুলোর সারা বিশ্বে সুনাম রয়েছে তা বাছাই করতে হবে। তাহলে তালিকাটা অনেক ছোট হয়ে আসবে। সেই ছোট তালিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট ঘেটে বায়োটেকনোলজি বিষয়ের কোর্স কারিকুলাম ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেখতে হবে। এক্ষেত্রে কোর্স কারিকুলামের বিষয়টি নজর দিতে হবে আগে। দেখতে হবে বর্তমান সময়ের সঙ্গে কোর্স কারিকুলাম কতটা প্রাসঙ্গিক। এভাবে ধাপে ধাপে তিনটি পছন্দের ইউনিভার্সিটি নির্বাচন করে ফেলা সম্ভব। এ তিনটি ইউনিভার্সিটি থেকেই নিজস্ব সুযোগ-সুবিধা ভিততিতে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্বাচন করা উচিত।
কৃতজ্ঞতা : দৈনিক সমকাল, ক্যাম্পাস পাতা, প্রকাশ ৮ জুলাই ২০০৭।