আবিরের আজকে অফিস থেকে বের হইতে হইতে সাড়ে ৬টা বেজে গেছে। অফিসের এক কলিগের সাথে বের হইছে আজকে। মহাখালীর ফ্লাইওভারের চিপা এক রাস্তা দিয়ে ও সৈনিক ক্লাবে যায়। তাইলে রাস্তার জ্যামে পড়তে হয় না। আজকে ও যথারীতি ও ঐ রাস্তা দিয়েই যাচ্ছে। যাওয়ার সময় রাফিয়াকে ২ বার কল দেয়। যথারীতি অন্যদিনের মতো ও ফোন ধরে না। রাফিয়া হচ্ছে ওর এক্সগার্লফ্রেন্ড। ৭ মাস আগের একরাতে রাফিয়া ওকে ফোন দিয়ে জানায় যে ওর ফ্রেন্ডরা ওকে বলছে যে ওর পড়াশুনার জন্য ওর ব্রেকয়াপ করার উচিৎ আবিরের সাথে। কারন আবির নাকি ট্রিপিকাল বয়ফ্রেন্ডের মতো সারাদিন ওর পিছে লেগে থাকে। রাফিয়া চিটাগং এর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেন এ পড়ে। যেইখানে ১৩টা দেশের মেয়েরা পড়ে। আর ৯০ ভাগই বিদেশী। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা ওকে ব্রেকয়াপ করতে বলছে। তাদের সবার দেশে বিদেশে বয়ফ্রেন্ড ঠিকই আছে। ও চিটাগং এ গিয়ে ওকে বুঝায়তে চাইছে ও রাফিয়া দেখাই করে নাই।
আজকে মহাখালী ফ্লাইওভার এর নিচে দিয়ে যাওয়ার সময় একটা মেয়েকে দেখে। টিশার্ট আর জিন্স পড়া। যেহেতু আবির ছেলে মানুষ একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখলে চোখ যাবেই। তারপর আবার সাত মাস ধরে ছ্যাকা খাওয়া ছেলে। ওর তো আরো বেশিই যাবে। ঐ মেয়েটাও জ্যাম থেকে বাচার জন্য ঐ চিপা গলিটায় ধুঁকলো। আবির আর আবিরের কলিগ আগে থাকায় আবিরের কলিগ একমাত্র রিকশাটাটে উঠে যায়। আবির খেয়াল করছিলো যে মেয়েটা ওর পিছনেই আছে। আবির এইটা দেখে ওর কলিগকে বলে পলাশ দা, আমরা আরেকটা রিকশায় যাই। উনি যেহেতু একা, মেয়ে মানুষ উনিই যাক এই রিকশায়। আমরা আরেকটা রিকশায় যাবো। আবিরের কলিগ বেশ বিরক্ত হয়েই রিকশা থেকে নেমে যায়। এই যুগে ফাদার টেরেসাকে নিয়ে সে অনেক বিরক্ত। মেয়েটা একটু অবাক হয় এই উপকার দেখে। শুধু একটা থ্যাংকস দিয়ে মেয়েটা রিকশায় উঠে যায়। ওরা ৬ মিনিটের মধ্যেই রিকশা পেয়ে যায়।
আসল ঘটনটা ঘটে সৈনিক ক্লাবে এসে, যখন আবির কছুখেতের বিশাল টেম্পুর লাইনে দাঁড়ায়। পিছন দিক থেকে একটা মেয়েটা এসে বলে "হাই" ও দেখে অবাক হয়। মেয়েটাকে দেখেই আবির বুঝে যে এই মেয়েটা হচ্ছে একটু আগে উপকার করা মেয়টা। এই অন্ধকারের মধ্যেও মেয়েটা ওকে চিনছে। আর আবিরতো চিনবেই। ঐ মেয়ে আবিরকে দেখার আগে আবির ভালো করেই দেখে নিছিলো মেয়েটাকে। মেয়েটার সবচেয়ে ইউনিক ব্যাপার ছিলো যে মেয়েটা তার ব্যাকপাকটা পিছে না ঝুলিয়ে সামনে ঝুলিয়ে রেখে ছিলো। এরকম আগে আবির কাউকে দেখে নাই। লাইনে দাঁড়ানো সাথে সাথে আবির বেশ ভাব নিয়েই বলতে থাকে, আমি একটু এরকমই। মানুষ দেখলেই উপকার করি। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে আপনি সুন্দর না হইলে আপনাকে আমার উপকার করতেই বয়ে গেছিলো, মনে মনে বলে আবির এই কথা। লাইনে ৫ মিনিট দাড়ানোর পর মেয়েটা একটু অবাক করেই বলে "রিকশায় যাবেন? ৪০ টাকা চাচ্ছে। 50-50 দিয়ে তাইলে রিকশা নেই "
আবিরের বিন্দু মাত্র আগ্রহ নাই। কারন পকেটে তেমন টাকাও নাই। ৮ টাকার যায়গায় এখন ৪০ টাকা যাবে। পকেটে আছেই মাত্র ৫০ টাকার একটা নোট আর কিছু ভাংতি টাকা। যা ২০ টাকার বেশি না। তারপরও এতো সুন্দর একটা মেয়ের সাথে রিকশায় যাবার সুযোগ জীবনে কয়দিন আসে। তাই ও বলে ফেলে "হ্যা চলেন"
ওরা একটা রিকশায় উঠে, রিকশায় উঠে যথারীতি আবির বেশ ভদ্রভাবে বেশ গ্যাপ দিয়ে মেয়েটার সাথে বসে। আবিরের ভিতরে যতই দুষ্টামি থাকুক না কেনো, বাইরে সে যথেষ্ট ভদ্র থাকার চেষ্টা করে। রিকশায় উঠে জানতে পারে যে মেয়েটা নিউট্রেশন আর ফুডে বিষয়ে অনার্স করছে। আর এখন সে একটা মিডিয়া হাউসেও টুকিটাকি কাজ করে। কিন্তু সবেচেয়ে অবাক হয় মেয়েটার নাম শুনে। আমারা যারা মুসলমান তারা নামের সাথে বিন কিংবা বিনতে লাগায়লে বাবার নাম আসে। কিন্তু এইখানে মেয়েটা নামের শেষে মায়ের নাম লাগানো, মানে "নিসাত বিনতে নার্গিস"। ২০ মিনিটের ঐ রিকশা জার্নিতে আবির ঐ মেয়ের ১৪ গোষ্টি খবর নিয়ে নেয়। আর ও এইটা জানতে পারে যে মেয়েটা পুরান কচুক্ষেতে থাকে। রিকশা মোবাইল মার্কেটের সামনে নামায় দিলে আবির পুরা ভাড়াটাই দিয়ে দেয়, আর ওর বাসা উলটা দিকে হলেও ও বলে যে আমি মিরপুর ১৪ তে থাকি। যাতে নিসাতের সাথে কিছুটা রাস্তা হেটে যেতে পারে। নিসাতকে যে কফি অফার করবে পকেটে আসে ৪০ টাকা। ২ কাপ কফির দাম পড়বে ৮০ টাকা। নিজে নিজে গালি দিতে থাকে কেনো যে ও টাকা উঠায় রাখলো না ও। তাইলে আজকে ওকে কফির জন্য বলতে পারতো। নিসাত যথেষ্ট ফ্রেন্ডলি ছিলো। কফি অফার করলে না করতো না মনে হয়। ওদের গল্প চলতে থাকে।
ঠিক বাসার কাছে এসে আবির খেয়াল করে যে আবির নিসাতের নাম ছাড়া আর কিছুই জানে না। এখন যদি যদি নিসাত চলে যায়, তাইলে কোন ভাবেই নিসাতের আর খোজ ও পাবে না সে। আবার কোন মেয়ের ফোন নাম্বার চাইতেও ওর লজ্জা লাগে ওর। অনেক আমতা আমতা করে নিসাতকে বলে আচ্ছা আপু আপনার আজকে তাড়াহুড়া আছে। তাই আপনাকে আজকে না, আরো কোন একদিন যদি আল্লাহ বাচায় রাখে তাহলে আপনাকে আমি কফি খাওয়াবো। আপনার ফেসবুক এড করা লাগবে না। ওনলি নামটা বলেন, আমি আপনাকে মেসেঞ্জারের ম্যাসেজ পাঠায় রাখছি। নিসাত বিনতে ফারিয়া নামেই কি ফেসবুক? নিসাত হেসে বলে "না ভাইয়া আপনি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টই পাঠায়েন, আমি আপনাকে এড করবো। আমার ফেসবুক নাম হচ্ছে নীলা"
আবির জিজ্ঞেস করে বানান কি Nila না Neela?
নিসাত বলে না শুধু "নীলা" বাংলায়। এই বলে নিসাত বিদায় নেয়।
আজকে প্রায় ২ বছর ৭ মাস পর আবিরের ঐদিনের কথাটা মনে পরছে। কারণ নিসাতের সাথে ওর বিয়ে হয়েছে প্রায় ৯ মাস আগে। নিসাতকে ফেসবুকে এড করার পর ওদের প্রথম ৪ মাস ধরে শুধু চ্যাটই চলতে থাকে। আবির কোন সময়ই নিসাতের সাথে দেখা করতে অথবা ফোন নাম্বার চাইতো না। এতো কাছাকাছি থেকেও কোন সময় নিসাতকে বলতো না দেখা করি। নিসাতের এই জিনিষটা খুব ভালো লাগতো। চ্যাটের সুবাদে জানতে পারে যে ওদের পরিচয়ের ৩ মাস আগের নিসাতের বয়ফ্রেন্ড আরেকজন কে বিয়ে করে ফেলে। তাই নিসাতও অনেক আপসেট ছিলো। আর আবিরের মতো হিউমারওয়ালা ছেলে একটু আদটু হাসায় পটানোর চেষ্টা করে। নিসাতের সাথে রিলেশনে হবার পর রাফিয়া আবিরের কাছে ফেরত আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু নিসাতের ইনোসেন্সের জন্য অন্য কোন মেয়ের কথা আর আবির চিন্তাই করতে পারে নাই। আবির এখনো চিন্তা করে যে সেইদিনের একটা ছোট উপকার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হয়ে যাবে আবিরের জীবনে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩১