সত্যিই, বিশ্বজুড়েই সুগন্ধির আবেদন এতটাই যে, পোশাক কিংবা অলঙ্কার নয়, ভিড়ের মধ্যে নিজেকে আলাদা করে চেনাতে সৌরভময় উপস্থিতিই যথেষ্ট। আর বিশেষ উপলক্ষ হলে তো কথাই নেই। এজন্যই ভালো পারফিউম সবারই প্রিয়।
কিন্তু আপনি অনলাইনে বা কসমেটিকস এর দোকানে যে পারফিউম কিনছেন তা কি আসল পারফিউম? সত্যি বলতে কি এই দেশে যেসব পাফিউম বিক্রি হয় তার ২/১ টি ব্যাতিক্রম ছাড়া প্রায় সব পাফিউম-ই ভুয়া। দেথা যাক কিভাবে..
এ দেশের বেশীরভাগ মানুষ যেহেতু আন্তর্জাতিক দাম সম্পর্কে অবহিত নয় এবং তারা সাধ্যের মধ্যে ভালো ব্রান্ডের পারফিউম খোঁজে, তাই তারাই সবচেয়ে বেশী প্রতারনার স্বীকার। ইউরোপ এ্যামেরিকায়ও ভুয়া (counterfeit) পারফিউম অহরহ পাওয়া যায়। ফ্লি-মার্কেট, সানডে-মার্কেট বা রাস্তায় ব্যাগে করে (বিশেষভাবে চাইনিজ, টার্কিস এবং জ্যামাইকানরা) যে পারফিউম বিক্রি করে তার বেশীরভাগই তৈরী হয় লোক চক্ষুর আড়ালে ডাউনটাউনের কোনো এক ওয়্যারহাউজে ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল থেকে।
কিভাবে আসল পারফিউম চিনবেন?
ইন্টারনেটে একটু খুঁজলেই আসল পারফিউম চেনার অনেক টিপস পেয়ে যাবেন কিন্তু টিপস ফলো করে চেনাটা বেশ কঠিন। একমাত্র ভালো রিটেইলারে কাছ থেকে কেনা হলেই ধরে নেয়া যায় সেটি আসল পারফিউম। এই দেশের জন্য একটি স্পেশাল টিপস দিচ্ছি যা হয়তো অন্য কোথাও পাবেন না। ব্যাপারটি এরকম:
অনেকের জন্য মেনে নেয়া কঠিন হলেও একটি তথ্য জানাই তা হলো ভালো পারফিউম সস্তা নয় এবং তা মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আন্তর্জাতিক বাজারে যে মূল্য দেয়া থাকে, সেটি এই দেশে লাভ সহ বৈধভাবে বিক্রি করতে হলে কমপক্ষে ২.৫গুন হতে ৩ গুন দামে বিক্রি করতে হবে। মানে হলো যে পাফিউম ভালো রিটেইলার (johnlewis.com, target.com, macys.com) $50 রাখছে, সেটা বৈধভাবে দেশে আনতে এবং ন্যুনতম মুনাফা রেখে বিক্রি করতে চাইলে খুচরামূল্য দাঁড়াবে $150 বা 13,500 টাকা।
ধরেনিলাম ব্যাবসার কারনে অবৈধভাবে বা দেশে ফেরার সময় লাগেজে করে কিছু পারফিউম আনা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রেও যদি কোনো কাস্টমস ট্যাক্স না দেয়া হয়, অন্তত ১০% খরচ পরে যাবে ইউরোপ আমেরিকায় হোম ডেলিভারি/ শপিং এবং ট্রাভেল, প্যাকিং এর জন্য। এরপরে রয়েছে দেশের ব্যাবসার খরচ (যা কমপক্ষে আরো ৩০% থেকে ৫০% মুল্য যোগ করবে) তারপর রয়েছে মুনাফা। বিদেশ থেকে এতো ঝক্কি ঝামেলা সেরে সাধারনত মানুষ চায় ৪০% মুনাফা রাখতে। তবে ব্যাবসা খারাপ হলে ১৫%-২০% লাভেও অনেকে বিক্রি করে দেয়। আপনারা যারা ভাবছেন এর চাইতে কম লাভে আপনাকে কেউ পণ্য বিক্রি করেছে তাহলে আপনি ঠকেছেন। হয় আপনার পণ্য আসল নয়, নয়তো আপনি আসল পন্যের দাম জানেন না। কঠিন সত্য কথা হলো সৌখিন পন্য অন্তত ৩০%-৪০% এর কম লাভে কেউ বিক্রি করে না। তাহলে দাঁড়াচ্ছে অবৈধভাবে আনা পাফিউম হলেও তার বাংলাদেশের মুল্য হবে: আসল মুল্য + (১০+৪০+৪০)%। এর সাথে মানুষের দরকষাকষির জন্য আরো অন্তত ২৫% ভ্যালু যোগ করে রাখা হয়। মানে পন্য যদি আসল হয় দেশের মাটিতে তার দাম হবে অন্তত ২.৫ গুন (অবৈধভাবে আনা হলে) আর কমপক্ষে ৩ গুন বৈধভাবে আনা হলে।
কোথা থেকে আসল পারফিউম কিনবেন? বাংলাদেশে সত্যিকারের ব্র্যান্ডেড পারফিউমের ডিলার বাংলা পারফিউম এবং স্টার এশিয়া নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। তারাই এতদিন ধরে পারফিউম আমদানি করে আসছে। তবে তাদের নিজেদের কোনো শোরুম নেই। এদের থেকে কিনে সরবরাহ করে যমুনা ফিউচার পার্কের কিছু ব্যান্ড শপ, Perfume World বা perfumebd.com এর মতো কিছু ভালো রিটেইলার। আবশ্য এদের নিজেদেরও কিছু সোর্স আছে যারা বিদেশ থেকে সাথে করে পারফিউম নিয়ে আসে। অনেকে এয়ারপোর্ট এর ডিউটি ফ্রি শপ থেকে কিনে এনে বিক্রি করে। সবচেয়ে ভালো হয় বিক্রেতার কাছে সোর্স রিসিট দেখতে চাইলে। তাহলে বুঝতে পারবেন যে এ্যামাজনের মতো ভালো জায়গা থেকে কেনা হয়েছে কি না। তবে এ দেশের রিটেইলাররা সেটি সহজে দেখাতে চায় না। কারন সাধারন মানুষ $40 ক্রয়মুল্য দেখলে সেটির জন্য $120 দিতে হবে, সেটা সহজে মেনে নিতে চায় না।
একটি উদাহরন দিচ্ছি: একটি অনলাইন পাফিউম শপ, branoo.com এই পারফিউমটি (Calvin Klein Ck One Eau de Toilette Spray 200 ml) অফার করছে: 2,750 টাকায় বা £21.15-এ। আর amazon.co.uk এটি বিক্রি করছে £23.98-এ। নিচে দুটি লিঙ্ক-ই দেয়া হলো।
http://www.branoo.com/productdetail/526/Calvin-Klein-CK-One-for-Men-200ml
http://www.amazon.co.uk/Calvin-Klein-One-Toilette-Spray/dp/B000E7WFX4
প্রশ্ন যদি করা হয়, কিভাবে branoo.com প্রফিট করছে, সম্ভবত কোন সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যাবে না।