স্বাধীন বাংলাদেশে ড: ইউনিসের নোবেল প্রাপ্তি সবচেয়ে বড় অর্জন। ১৯৭১ থেকে ২০১১ কারো কোন কাজের জন্য আন্তর্জাতিক মহলে আমরা এতটুকু সম্মান নিয়ে দাঁড়াতে পারি না। আমি দেখেছি কুইন মেরী ইউনিভার্সাটির একদল ছেলেমেয়েরা থিসিসের জন্য ড: ইউনুসের বই ব্যাবহার করছে। হয়তো আপনার কাছে ব্যাপারটি তুচ্ছ হতে পারে কিন্তু একজন বাংলাদেশী হিসেবে গর্বে আমার বুক ফুলে উঠেছে।
এবার আসুন দুর্নিতীর বিষয়ে। এটি একটি ট্যাবু যে দেশের বাইরে এখন শেখ মুজিবকে কেউ চিনে না বরং বাংলাদেশ বললে ড: ইউনুসকে চেনে এটি সহ্য করতে না পেরেই শেখ হাসিনা তথা সরকারের এই অপমান প্রকল্প। সেই সরকারের হাতে (আপনার কথা অনুযায়ী এবং বিডিনিউজ২৪ এর ভাষ্য অনুযায়ী) নিরেট প্রমান থাকা সত্বেও আবুল মাল আব্দুল মুহিত (এবং নরওয়েজিয়ান সেই রিপোর্টার) বললো যে তারা দুর্নাতীর কোন প্রমান পায়নি! যুক্তির বলিহারি।
বাংলাদেশে দুর্নিতীবিরোধী সবচেয়ে বড় কাজ হয়েছে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। তখন দেখা গিয়েছে আমাদের রাজনিতীবিদদের চরিত্র কেমন। যদি বলেন মামলাগুলো ছিল সাজানো, তবে বলব বুকের পাটা থাকলে সাজানো মামলা প্রমান করে সসম্মানে আদালত থেকে বেরিয়ে যাও। সরকারে এসে চোরের মতো মামলা (সরকারী ক্ষমতার অপব্যাবহার করে) প্রত্যাহার করো কেন? আপনি ভুলে গেলেও মহাখালির ফ্লাইওভারের চুরি, বার্জমাউন্টেন্ট প্লান্টের চুরি, আজম জে চৌধুরীর দেয়া ঘুষ, মিগ ২৯ যুদ্ধবিমান কেনার চুরি, তারেকের কক্সবাজারের জমি দখল, জয়ের বর্তমান অবৈধ ভিওআইপি ব্যাবসা, রাশেদখান মেননের ভিকারুননেসা স্কুলে ভর্তি বানিজ্য...এসব সবাই ভুলে যায়নি। আর মনে রাখবেন এই রাজনিতীবিদরা যে টাকা চুরি করে তা আমাদেরই কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা। আর এরা কিন্তু ধর্মগ্রন্থহাতে শপথ নিয়েছিল যে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে।
যেজন্য ড: ইউনুসকে জোর করে অপসারন করা হয়েছে, তা দুর্নিতী নয় তা হল এক কাগুজে আইন (জেদ)। তাঁর যে অবদান তাতে শুধু তাঁকে ধরে রাখার জন্য হলেও ওই আইন সংশোধন করা প্রয়োজন ছিল। গ্রামিন ব্যাংক সরকারী বা দাতব্য সংস্থা নয়, এটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান যার অর্থ হল কাউকে ধরে বেঁধে লোন দেয়া না। যার প্রয়োজন নিবে, যার দরকার নেই নিবে না। আর আপনার কথা অনুযায়ী এটি মানুষের উপকারের চাইতে যদি ক্ষতি বেশী করে তবে সাধারন মানুষের মাথায় কি ঘিলু নেই? আর যদি বলেন তাদের কাছে আর কোন অপশন নেই, তাহলে দেশ যারা চালায় তারা বসে বসে কি করছে? সরকারী ব্যাংকগুলো নিশ্চই গ্রামীন ব্যাংক থেকে ভালো, তো সেখানে গেলেই তো প্রবলেম সলভড্।
নোবেল পুরস্কার জাস্টিফাই করার মতো যোগ্যতা আমি আপনি কেন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের-ও নেই। কারন সে পর্যায়ে আমরা যেতে পারিনি। বরং আগে আমাদের পরিচয় ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্ণিতীগ্রস্থ দেশ হিসেবে। পরে ছিল নোবোল বিজয়ী ড: ইউনুসের দেশ হিসেবে আজ আমাদের পরিচয় হতে যাচ্ছে নোবেল বিজয়ী ড: ইউনুসকে অপমানকারী দেশ হিসেবে। একটি কথা মনে রাখা উচিৎ, সম্ভবত গত এবং আগামী ১০০ বছরেও আমরা এতটুকু সম্মান পাবনা যতটুকু ড: ইউনুস একা বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছেন। এই প্রাপ্তি যেন আমরা হেলায় না হারাই কারন : যে দেশে গুনির কদর নেই, সে দেশে গুনি জন্মাতে পারে না।