"ফুটবলম্যানিয়া" শিরোনামে ফুটবলের ব্যাতিক্রমধর্মী নানা বিষয়ের ওপর ধারাবাহিক পোস্ট দেবার চিন্তা ছিল অনেক দিন ধরেই। কিন্তু নানা ব্যাস্ততার কারনে লেখার সময়ই বের করতে পারছিলাম না। অবশেষে সব ব্যাস্ততার খ্যাতা পুড়ে শুরু করে দিলাম ফুটবলের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ধারাবাহিক পোস্ট। প্রথম পর্বে গুরুগম্ভীর কোন বিষয়ে না গিয়ে বিভিন্ন সময়ে ফুটবলারদের ব্যাতিক্রমী ও বাহারি হেয়ারস্টাইল নিয়েই আলোচনা করবো।
(ডেভিড বেকহ্যাম)
নিত্য নতুন দর্শনীয় সব স্কিল, পাসিং কিংবা ড্রিবলিং ট্রিক্স উদ্ভাবনের পাশাপাশি যুগে যুগে ফুটবলাররা এমন সব হেয়ারস্টাইলেরও উদ্ভব ঘটিয়েছেন যা মানুষকে কখনো করেছে মুগ্ধ, কখনো হতবিহবল, কখনো বা জুটিয়েছে হাসির খোরাক। তেমনি কিছু অদ্ভুত হেয়ারস্টাইল নিয়েই এ পোস্ট।
উপরের ছবিটি স্যার ববি চার্লটনের। ফুটবলের ইতিহাস সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারনাও আছে তাঁদের একনামেই চিনে ফেলার কথা ১৯৬৬ বিশ্বকাপজয়ী এই ইংলিশ ফুটবল তারকাকে। হাস্যকর চুল নিয়ে আলোচনায় আসা প্রথম ফুটবলার তিনি। কি? ভাবছেন এই নিরীহদর্শন চুল হাস্যরসের জন্ম দেয় কিভাবে? আসলে স্যার চার্লটনের মাথার মাঝে ছিল এক বেজায় টাক। তো তিনি ঐ টাক ঢাকার জন্যই একপাশের চুল লম্বা রেখে সিঁথি করে টাকের ওপর ছড়িয়ে দিতেন। কিন্তু খেলা শুরু হলেই সব চুল সরে গিয়ে কি অবস্থা হত দেখুনঃ
ছবি দেখে যতোটা না মজার লাগছে সেসময়ের দর্শক বা খেলোয়াড়দের কাছে ব্যাপারটা তার চাইতেও আরও মজাদার ছিল। তাঁর এই বীভৎস চুল দেখে খেলা চলাকালীন সময়েই খেলোয়াড়দের হাসতে হাসতে মাঠে গড়াগড়ি খাবার নজিরও আছে।
স্যার চার্লটনের পর চুল নিয়ে আলোচনায় আসেন চেলসির ক্রিস গারল্যান্ড তাঁর “বুফ্যান্ট কম্বওভার” স্টাইলের মাধ্যমে।
সত্তর দশকের প্রারম্ভে পোর্টসমাউথের খেলোয়াড় অ্যালেন বিলি তাঁর “জায়ান্ট গোল্ডেন হেস্ট্যাক” চুলের সাথে সবাই পরিচয় করান। বলাই বাহুল্য যে ঐসময়ে বহুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল তাঁর এ স্টাইল।
“টিমোটি বার্নেট” চুলে লিডস ইউনাইটেডের টনি কুরি।
ব্লাকবার্ন রোভার্সের স্ট্রাইকার নোয়েল ব্রাদারস্টোন। এ অদ্ভুতুড়ে চুলের জন্য সমর্থকরা তাঁর নাম রেখেছিল “জিনজার ক্লাউন”।
সত্তর দশকের মাঝমাঝি সময়ে চেলসির জন ডেম্পসি তাঁর “কম্বওভার ডে লা মুয়ের্টে” স্টাইলের জন্য ব্যাপক আলোচিত হন।
সত্তর দশকে আর তেমন কোন আলোচিত হেয়ারস্টাইল দেখা না গেলেও আশির দশক ছিল নিঃসন্দেহে ফুটবলারদের চুলের জন্য রেনেসাঁর যুগ। আর এ রেনেসাঁর কিক অফ করেন ইংলিশ ফুটবলার ক্রিস ওয়াডেল।
অস্ট্রিয়ার সাবেক কোচ ও খেলোয়াড় কন্সট্যানটিনি ছিলেন সময়ের তুলনায় একটু এগিয়ে। সম্ভবত তিনিই ফুটবলবিশ্বের সাথে “মোহক” হেয়ারস্টাইলের পরিচয় ঘটান।
কন্সট্যান্টিনির কাছে ভক্তদের বহুদিনের দাবী ছিল তাঁর চুলের সাথে মিলিয়ে দু’পাশের ভ্রূর রঙও দু’রকম করার। করলে খারাপ হত না।
ছোটবেলায় চুল এলোমেলো থাকলে সবাই বলতো পাখির বাসার মত চুল। তবে চুল যে আক্ষরিক অর্থেই পাখির বাসা হতে পারে তা দেখিয়েছিলেন স্টোক সিটির জর্জ ব্যারি।
’৮৮ ইউরোজয়ী ডাচ ক্যাপ্টেন রুড খুলিত এবার ফুটবলে আমদানি করেন “ড্রেডলক” চুল।
সাবেক বিশ্বসেরা এই খেলোয়াড় তৎকালীন এসিমিলানের ড্রিম টিমেরও প্রাণভোমরা ছিলেন।
মাইক ওয়ার্নার (হানসা রোস্টক)
কার্লোস ভালদেরামার কথা মনে আছে আপনাদের? কলম্বিয়ার সাবেক এই ক্যাপ্টেন দারুন প্রতিভাধর ফুটবলার হলেও মূলত তিনি আলোচনায় আসেন তাঁর বাহারি ঝাঁকড়া চুলের কারনে।
ভালদেরামার দলের আরেক কেশবান ছিলেন গোলকিপার রেনে হিগুইতা।
শুধুমাত্র কার্লি চুলেই নন, হিগুইতা স্টাইলিশ ছিলেন তাঁর খেলাতেও। কতখানি স্টাইলিশ হতে পারেন তার একটি নমুনা পাবেন ছোট্ট এই ভিডিও ক্লিপটি দেখলে।
গোলকিপার হয়েও হিগুইতা প্রায়ই বল নিয়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের কাটিয়ে উঠে আসতেন মাঝমাঠে। অনেকবারই ফ্রি-কিক ও পেনাল্টি শট নিয়ে গোলও করেছেন। জেনুইন অলরাউন্ডার!!
ইংলিশ লিগ ও ইউরোপের একসময়ের সেরা দল নটিংহ্যাম ফরেস্টের সাবেক মিডফিল্ডার জেসন লী। তাঁর এই চুল কে ভক্তরা ডাকতো “পাইনঅ্যাপেল” বলে।
’৯৪ বিশ্বকাপে চুল নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন যুক্তরাষ্ট্রের আলেক্সি লালাস।
মেটালহেড এই খেলোয়াড় মূলত মেটালিকার লিড ভোকাল জেমস হেটফিল্ডকে অনুসরন করেই চুলের এ স্টাইল বেছে নেন বলে দাবী করেন।
তবে ঐ বিশ্বকাপে চুলের জন্য সবচেয়ে বেশি হাইলাইটেড হন ইতালির রবার্তো ব্যাজিও। আগে থেকেই লম্বা চুলের অধিকারী ব্যাজিও তাঁর চুলগুলোকে বেঁধে “পনিটেল” করে রাখতেন। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে গৌতম বুদ্ধের ভক্ত এই খেলোয়াড় অহিংসার ধর্ম বৌদ্ধধর্মের অনুসারী হন। তারপরই সামনের দিকের চুলগুলো ছেঁটে ফেলে “ডিভাইন পনিটেল” চুল নিয়ে খেলতে আসেন আগের বছরের ব্যালন ডি’অর ও ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জেতা এই খেলোয়াড়।
শুধুই কি চুল? ব্যাজিও আলোচনায় থাকেন সেবার তাঁর খেলার কারনেও। বলতে গেলে একাই ফাইনালে টেনে তোলেন ইতালিকে। কিন্তু ফাইনালে হয়ে যান ট্র্যাজিক হিরো। পেনাল্টি মিস করে শিরোপাবঞ্চিত থাকেন। ঐ বিশ্বকাপের কথা মনে করলে এখনো চোখে ভাসে ফাইনালে সেই পেনাল্টি মিস করে ব্যাজিওর বাঁধভাঙা কান্নার করুণ দৃশ্য।
আজ এ পর্যন্তই দিলাম। ফুটবলারদের বিচিত্র চুলের আরও বহু নমুনা আমার কাছে থাকলেও এক পোস্টে বেশি ছবি দেবার ঝুঁকি নিলাম না। এ পর্বের পরের সিকুয়ালে বর্তমান শতাব্দীর বাকি নমুনা নিয়ে দু'য়েকদিনের মধ্যেই আবার হাজির হচ্ছি।
২য় পর্ব
(পোস্টে কোন ভুল তথ্য বা আরও কোন অদ্ভুত হেয়ারস্টাইলের খোঁজ পেলে কমেন্টে উল্লেখ করার অনুরোধ থাকলো।)
To be continued..
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:০৭