আমরা যারা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের আশেপাশে বসবাস করি অর্থাৎ কাফরুল/ইব্রাহিমপুরে আর কর্মক্ষেত্রে যেতে কচুক্ষেত-বনানী সংযোগ সড়ক অথবা স্বর্নালী-জাহাঙ্গীর গেইট ব্যবহার করতে হয় তারা কিভাবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মিলিটারী খামখেয়ালপিনা আর একগুয়েমীর বলি হতে হচ্ছে তা আর কেউ বুঝবে না। অথচ এই দুটি সড়ক পথে প্রতিদিন কম করে হলেও আমার মনে হয় ১০,০০০ লোক যাতায়াত করে। মিরপুর-১৪ টু কাকলীর গাড়িগুলি সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতি ১০ মিনিট পরপর যাতায়াত করে, প্রতি গাড়িতে গড়ে ৪০ জন করে যায়, তার সাথে স্বর্ণালি-জাহাঙ্গীর গেইটে যাতায়াতকারী+শাহীন স্কুলের বাচ্চাদের ধরলে এ সংখ্যা অবশ্যই আরো বেশি। কিন্তু এই দুটি রুটে পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। কী যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহায়ে এ দুটি রুটে জনসাধারণ যাতায়াত করে তা নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন, বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে ১১টা আর বিকেল ৩টা থেকে ৯টা পর্যন্ত।
মিরপুর-১৪ থেকে কাকলী পর্যন্ত চলাচল করে সেনাবাহিনীর আশির্বাদপুষ্ট/অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের নিজস্ব পরিবহন বাসগুলি, মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তা বর্তমানে ৭ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে। কি এক অদৃশ্য কারণে এই রুটে আর কোন কোম্পানী রুট পারমিট পায়না। এই রুটে বিশেষ করে কচুক্ষেত থেকে সৈনিক ক্লাব পর্যন্ত বাসের পাশাপাশি কিছু সিএনজি/মিশুক চলাচল করত। মিরপুর-১৪ এবং কচুক্ষেত থেকে কাকলী পর্যন্ত একই বাসভাড়া হওয়া সত্ত্বেও অফিস টাইমে বাসগুলি মিরপুর-১৪ থেকেই যাত্রী ভর্তি করে আনে, ফলে কচুক্ষেতে শত শত যাত্রী লম্বা লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে করে ঠেলাঠেলি গাদাগাদি করে ৩/৪ জন করে যাত্রী হয়তো প্রতি বাসে উঠতে পারে। এদের জন্য আশির্বাদ ছিল ঐ সিএনজি/মিশুক। মাঝখানে সিএনজি/মিশুক এর পাশাপাশি অটোবাইক নামক ব্যাটারী চালিত যানগুলি চলাচল শুরু করলে যাত্রীদের মুখে হাসি ফোটে কিন্তু সেনানিবাস কর্তৃপক্ষের সে হাসি ভাল লাগলো না, বন্ধ করে দিল ওগুলির লাইসেন্স নেই অভিযোগে। তবুও সিএনজি/মিশুক অনেকাংশে কষ্ট লাঘবের উপায় হিসেবে চলছিল।
স্বর্ণালী হতে শাহীন কলেজ, আধা কিলোমিটারের রিক্সা ভাড়া ২০ টাকা, যদিও সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ দুই মাথায় দুটি রিক্সা ভাড়ার চার্ট লাগিয়ে নিজেদের দায় সেরেছেন এবং সেখানে এই ভাড়া ৭ টাকা লেখা আছে, সেটা রিক্সাচালকরা মানল কি মানল না তা দেখার কেউ নেই। সকালে শাহীন স্কুলের শত শত শিক্ষার্থী আর অফিসযাত্রীদের দৌড়াদৌড়ি আর ঠেলাঠেলির মাছে আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছিল মিশুক। যাতে সিঙ্গেল যাত্রী ১০টাকার বিনিময়ে যেতে পারতো। এখানে উল্লেখ্য যে, এই রোডে চলাচলকারী বড় গাড়িগুলি শাহীন কলেজ থামে না। আর তাদের নিকটবর্তী স্টপেজ সৌদি কলোনীর দূরত্ব এই গন্তব্যের মঝখানে। গতি এবং সাশ্রয় দুদিক থেকেই মিশুকগুলি ছিল এই রুটের বড় আশির্বাদ।
গত ১১ ডিসেম্বর থেকে কোন এক অদৃশ্য কারণে সেনানিবাসের সব রুটে ৪ স্ট্রোক মিশুক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমার মনে হয় বিজ্ঞ পাঠকদের নিকটে নতুন করে আর এই দুই রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগের কাহিনী খুলে বলার কোন অবকাশ নেই। আর এসব কেন হচ্ছে, কাদের স্বার্থে করা হচ্ছে, জনসাধারণকে জিম্মি করে কোন উদ্দেশ্যে এসব খামখেয়ালীপূর্ণ ও একগুঁয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে তা যে কেউ বুঝতে পারছেন। আমাদের কষ্টের কথা বলার কি কোন জায়গা নেই??