শেষ বিকেলের আলোটা যেন আজ জীদ ধরে আকাশের সাথে লেপ্টে আছে। বার বার আকাশের দিকে তাকিয়ে ছেলেটির মন বিষন্ন করা প্রশ্ন আসে সন্ধ্যা হতে আর কত দেরি?
আজ যেন কত কাক্ষিত আযানের ধ্বনি আসে সন্ধ্যার বার্তা নিয়ে। ছেলেটি মুখে হাতে পানি দিয়ে বসে যায় বই নিয়ে। মায়ের জায়নামায গুটানোর সাথেসাথে তার ত্বরিত আকুতি " মা ভাত বসাবা কখন? ক্যান রে, মাএ তো সন্ধ্যা হলো এখনো তো সন্ধ্যার চা নাস্তাই খাসনি, ভাতের কথা কেন রে?
বড় বোনের মুখ টিপানো হাসিও আজ মেনে নিচ্ছে ছেলেটা, তোলা থাক অপমানটা কাল্কের জন্য।
আম্মা আব্বা কখন আসবে?
চলে আসছে হয়তো,
আব্বা যাবেনা আজকে?
কোথায়?
ডায়না হোটেলে?
হুম আসার পথে নিয়ে আসবে তো বলেছিলো।
বইগুলোতে হাত বুলিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে শেষ পর্যন্ত সমাজ বিজ্ঞান বইটাই বেছে নেয় ছেলেটা। পড়ার ফাকে কোন কিছু ভাবার জন্য এর চেয়ে ভাল বই আর হয়না।
সুলতানী আমল ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের
চৌরাস্তা ঘিরে।
আচ্ছা আব্বা এখন কোথায়। কান্দিরপাড় কি আসছে? আচ্ছা আব্বা কি বাসা থেকে যাওয়ার সময় টিফিন বাটি নিয়ে গিয়েছিলো? আম্মাকে জিজ্ঞেস করা যায় কিন্তু আপার সামনে না!
এতো মহা সমস্যা হলো, ভালো চিন্তা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে সব খারাপ খারাপ চিন্তা গুলো আগে আসছে।
ডায়না হোটেলের ওই বাটু লোক্টা। আসা যাওয়ার পথে যে ছোট ছোট হাত তুলে সালাম দিবে, কি ফিটফাট সাদা কাপড়, মাথায় ক্যাপ। আমার থেকেও যে ছোট !!!!!
বেয়ারা বোধহয় এতোক্ষনে চলে এসেছে। আব্বা নিশ্চয় বাটিটাও বের ক রে দিয়েছে। আচ্ছা আব্বার কি মনে আছে, গত মাসে খাওয়ার সময় আম্মা বলেছিলো ওরা ঝোল বড্ড কম দেয়, অর্ডার করার সময় বলে দিবে সামনে বার।
আব্বার কি মনে আছে কিনা কে জানে !
আহ! কালো কালো মাখা মাখা ঝোলে গরুর গোস্ত, কি তার ঘ্রাণ। মাঝারি আকারের চারটা গোস্তের টুকরা যেন চারটা....... নাহ ছেলেটা কোন কিছুর সাথে মিলাতে পারেনা, তার আগে মুখে চলে আসা পানিটা ঢোক গিলে ভিতরে পাঠায়।
ছেলেটা আজো ঢোক গিলে যখন সেই হোটেল ডায়নার একবাটি গরুর গোস্তের কথা মনে পড়ে।
নোট : আজ জানতে পারলাম হোটেল ডায়না বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৬