Geographical Indicators Act সম্পর্কে আমাদের সরকারের উদাসীনতা-
আগে জেনে নিই, GIA কি? বা GI Act কি? GI Act বা Geographical Indicators Act হচ্ছে কোন একটি পন্যের ভূগোলিক স্বত্ত।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের বা WTO এর অন্তর্গত Trade Related Intellectual Property Rights (TRIPS) এগ্রিমেন্টে সাক্ষরকারী সবদেশ তাদের ভৌগোলিক অঞ্চলে অবস্থিত বিখ্যাত পণ্য, বা প্রাকৃতিক সম্পদ (exceptional and extraordinary products ) রক্ষা এবং প্যাটেন্ট করতে পারবেন, GI Act 1999.
আরো জানতে এই ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারেন।
অনেকে বলতে পারেন এই GI কি কাজে আসবে? GI তে রেজিস্ট্রারড প্রত্যেকটি পণ্য অন্য দেশের একই পন্যের চেয়ে ইউনিক হবে এবং রেজিস্ট্রিত পণ্যের একটি প্রিমিয়াম প্রাইস দাবি করতে পারে ঐ দেশ।
এই পর্যন্ত ইন্ডিয়া ১৭৮ টি পণ্য রেজিস্ট্রেশন করেছে। যার মধ্যে আছে বাংলাদেশের নকশী কাঁথা, জামদানি শাড়ি, ফজলি আম।
ইন্ডিয়া জামদানি শাড়িকে Uppada Jamdani নাম দিয়ে অন্ধ্র প্রদেশের প্রোডাক্ট হিসেবে, এবং নকশী কাঁথা আর ফজলি আমকে পশ্চিমবঙ্গের প্রোডাক্ট হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছে, যা মূলত বাংলাদেশ অরিজিন।
ইন্ডীয়ার রেজিস্ট্রিকৃত পন্যসমূহ
একটা জিনিস চিন্তা করতে পারছেন? সামনে হতে ফজলি আম খাওয়ার সময় এটা চিন্তা করতে হবে অন্যদেশের আম খাচ্ছি ।
আসুন দেখে নিই, ইন্ডিয়ার রেজিস্ট্রিকৃত এই ৩ বাংলাদেশী পণ্য কি লিগ্যাল ?
জামদানী শাড়িঃ পার্সী শব্দ ‘জাম’ এবং ‘দানী’ এর সমন্বয়ে জামদানী শব্দটি গঠিত। যার অর্থ যথাক্রমে, কাপ এবং ফুলদানী। এই কাপড়ে বেশির ভাগ ডিজাইন হত ফুলের। ৩০০ খৃস্টপূর্বাব্দে Kautilya তার বই “অর্থশাস্ত্রে” বলেছেন, জামদানী হল হ্যান্ডলুম বা তাঁতে তৈরি মসৃণ কাপড় যা পুণ্ড্রনগরে তৈরি হত। যা বর্তমানে বাংলাদেশ।
জামদানী শাড়ি
১৪ শতকে মরোক্কীয় পরিব্রাজক ইবনে বতুতা যখন বাংলাদেশ ভ্রমন করেছিলেন, তিনি তখন বাংলাদেশে তৈরি জামদানী শাড়ি দেখেছিলেন এবং এর প্রশংসা করেছিলেন। ইংরেজ পরিব্রাজক Ralph Finch ও বাংলার জামদানী সম্পর্কে বলেছেন। তখন জামদানী শাড়ী তৈরি হত সোনারগাঁয়, ঢাকার অদূরে।
এই ঐতিহাসিক জামদানী শাড়ি ইন্ডীয়া রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছে। এবং ইন্ডিয়া এই জামদনী শাড়ি দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে পারবে, এবং ইচ্ছা মত মূল্য হাঁকাতে পারবে। যা বাংলাদেশে বিক্রি হয় খুবই কম মূল্যে। আর এখন বহির্বিশ্বের মানুষ জামদানী বলতে চিনবে উপ্পাডা জামদানী কে, যার ইতিহাস মাত্র ৩০০ বছরের।
নকশী কাঁথাঃ একটি বাংলাদেশের অন্যতম ইউনিক প্রোডাক্ট। পল্লীকবি জসীম উদ্দিন তার জনপ্রিয় “নকশী কাঁথার মাঠ” কাব্য গ্রন্থ লিখেছেন ১৯২৯ সালে। এই কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে বহির্বিশ্ব বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে তৈরি নকশী কাঁথার কথা জানতে পারে। নকশী কাঁথা সাধারনত পুরাতন শাড়ি দিয়ে তৈরি হয়। কমপক্ষে ৪-৫ টি শাড়ি লাগে একটি পুর্নাংগ নকশী কাঁথা তৈরি করতে। এতে সুই সুতা দিয়ে ডিজাইন করা হয়। বেশিরভাগ ডিজাইন হয় ফুল, লতাপাতা, মাছ, পাখির ইত্যাদি। দুটি নকশী কাঁথা কখনো এক হয় না। প্রত্যেক্টির থাকে আলাদা ডিজাইন। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের একটি ইউনিক প্রোডাক্ট।
ফজলী আমঃ এটি নিয়ে কিছু দ্বিমত আছে। ইন্ডিয়া দাবি করে এটি একটি দেরিতে পাকা বড় আম যা সাধারনত আমের সিজনের শেষে পাকে। কিন্ত বাংলাদেশের ফজলি আম?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় বলেছেন, “ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রানে পাগল করে”
আম বাংলাদেশীদের প্রিয় ফল। বাঙ্গালীর ফল বলতে মানুষ বুঝে আম , কাঁঠাল ইত্যাদি। আর আমের একটি সেরা জাত হল ফজলি। যা রাজশাহী অঞ্চলের দিকে জন্মায়। মূলত এটি দেশের বাইরে রপ্তানি হয় না বলেই জানি। কিন্ত এই রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ইন্ডীয়া তাদের ফজলি আমের এডভান্টেজ পাবে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে, ইন্ডিয়ার আম বাংলাদশের ফজলির চেয়ে মিস্টি হবে না।
আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইন্ডিয়া ১৯৯৯ তেই তাদের প্রোডাক্ট রক্ষা করার জন্য রেজিস্ট্রি খুলে বসে আছে।
কেন এমন হচ্ছে?
GI সম্পর্কে আমাদের সরকারের উদাসীনতা। আমাদের নিজের দেশের ইউনিক প্রোডাক্ট গুলো রক্ষার জন্য বা প্রোডাক্ট গুলো কি কি, এই ব্যাপারে সরকারের কোন আইডিয়া নাই বা পর্যাপ্ত ডেটা নাই । এবং এই উদাসিনতার কারনেই প্রতিবেশী দেশ সমূহ আমাদের একান্তই নিজস্ব পণ্য গুলো ক্লেইম করে নিতে পারছে।
যেসব পণ্য জিআইর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেঃ
জামদানী শাড়ি
নকশী কাঁথা
শীতল পাটি
পাট
চাঁদপুরের ইলিশ ( ইলিশ এর জন্য অলরেডি আবেদন করেছে
ইন্ডিয়া )
রয়েল বেঙ্গল টাইগার
বাসমতি চাউল
কালিজিরা চাউল
ফজলি বা অন্য ধরনের আম
বগুড়ার দই
সুন্দরবনের মধু
কুমিল্লার রসমালাই
ঐতিহাসিক স্থান এর মধ্যেঃ
মহাস্তানগড়
পাহাড়পুর
কান্তজীর মন্দির
ময়নামতি ইত্যাদি
এই ব্যাপারে নাকি একটি খসড়া আইন হয়েছিল। ৭ বছর আগে।
এখনও নাকি ঝুলে আছে।
নিজেদের শত বছরের ইতিহাসের রক্ষনাবেক্ষন ই যদি করতে না পারি কিসের জাতি হলাম আমরা?
সকলের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
পোস্ট ক্রেডিটঃ জলকনা আপু ( উনি না বললে এই পোস্টই লিখা হত না)
ইনফোঃ এখানে এখানে