১. আগামীকালের মানব বন্ধনের ব্যাপারে যার সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করবেন।
তায়েফ আহমাদ- ০১৯১৯৫৫৯৯০৭
২. যারা আসছেন তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, নিছক ভারতবিরোধিতা কিংবা সরকারবিরোধিতা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদার কথা বলতে চাই। আমরা সীমান্তে সকল অন্যায় হত্যার বন্ধ চাই- বিচার চাই। ব্যানার-ফেস্টুনের চাইতে তাই, বাংলাদেশের পতাকা হাতে মানব বন্ধনে আসুন- প্রয়োজনে লাল-সবুজ কাগজ দিয়ে বানিয়ে হলেও।
-----------------------------------------------------------------------
ওরা পাখির মত করে আমার বোনের দেহে তপ্ত সীসা ভরে দিয়েছে পাশবিক উল্লাসে। সাড়ে চার ঘন্টা ধরে মূমুর্ষু আমার বোনের তৃষ্ণাকাতর দেহটি ঝুলিয়ে রেখেছে নির্মম কাঁটাতারে।
আমি ভাল করেই জানি, মৃত মানুষের ছবি দেয়া ঠিক নয়। কিন্তু, তারপরেও বেঠিক কাজটা করতে হলো। এই ভীষন বেঠিক কাজটা করে, আরো অনেকগুলো সঠিক কথা বলা থেকে বেঁচে যেতে চেয়েছিলাম। কারন, এই ছবিই সব কথা বলে দেয়।(ছবিটা সরিয়ে ফেলেছি-নিচের লিংকে ফেইসবুক অ্যালবামে গিয়ে দেখে আসতে পারেন, যদি সইতে পারেন)
নাহ্! সেদিনের পত্রিকায় খবর না হলে ‘ফেলানী’কে আমি কোনদিন চিনতাম না!
তাই বলে, একেবারেই কি চিনতাম না?
পেটের দায়ে যে বাংলাদেশী মেয়েটা ঘুঁটে কুড়িয়ে বেড়ায়, গতর খাটিয়ে খায়- সেই আজ ফেলানী- আমার বোন!
নতুন সংসারের সুখস্বপ্নে বিভোর মেয়েটা বাপের মত পোড় খাওয়া ছিল না বোধ হয়। তাইতো কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে গেল তার ছিন্ন জামাটা। জীবনটাও আটকে গেল সেখানেই।
ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া তৃষ্ণাভরা বুক আর ‘লটকে থাকা সার্বভৌমত্ব’ নিয়ে ‘পানি’, ‘পানি’ করে শেষবারের মত যখন আর্তনাদ করছিল আমার বোন, তখন সর্বশক্তিমান খোদা তাঁর আরশে বসে কী ভাবছিলেন? ‘মানুষ’ নামের অমানুষগুলোকে বানিয়ে তিনিও কি একটুখানি থমকে গিয়েছিলেন?
দাদাদের দেশটা খুব ভাল। আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, চার দশক ধরে পেঁয়াজ-রসুন-আদা খাওয়াচ্ছেন, শাড়ি-চুড়ি পরাচ্ছেন। চ্যানেলে-চ্যানেলে সংস্কৃতির সয়লাব। কারো কারো ভাগে বাড়তি কলাটা-মূলোটাও জুটছে! তা এক-আধটা ঘুঁটে কুড়ানির মরণে ওতো শোরগোল কিসের? অবশ্য, এই অবসরে লাশ হস্তান্তরের উসিলায় দুই ‘বন্ধুপ্রতিম’ দেশের সীমান্ত প্রহরীদের পারস্পরিক জানাশোনাটুকু গাঢ় হয়ে ওঠার সুযোগ ঘটে বৈকি। ভালই।
ভুল করে পায়ে পা লেগে গেলেও আমরা আরেকজনকে ‘স্যরি’ বলে উঠি। এর নাম ভদ্রতা- সৌজন্যতাবোধ। এ দূর্ভাগা দেশের কপালে স্যরি টুকুও জোটে না!
আর কেমন করে চুপ করে থাকি? সিরাজ-তিতুমীর জন্মেছিল এই মাটিতে- প্রান দিয়েছিল এ মাটিতেই। শরীয়তউল্ল্যাহ, রজব আলী, সূর্যসেনেরা এখানেই গর্জে উঠেছিল। আজ আমাদের মাঝে ঢুকেছে কাপুরুষতার রক্তবীজ, ভীরুতার জয়ধ্বনি চারপাশে। আমরা আর গর্জাতে পারি না- মিনমিনে গলায় নিজের অধিকার চাইতে সাহস হয় না। আমাদের বোনেরা ঘুমায় অপমান বুকে চেপে।
আর কতকাল?
ঠিক আছে। আমরা চুপ করে থাকি। তবু, চলুন সমবেত হই- একসাথে। আমাদের নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকাই হোক আমাদের শ্রেষ্ঠতম প্রতিবাদ। হাতে-হাত ধরে আমরা হয়ে উঠি, সীমান্তের প্রতিকী প্রাচীর।
আমরা দাঁড়াব নিরবে; হাতে হাত রেখে। দু’দিকে বিস্তৃত হয়ে এ মানবপ্রাচীর লম্বা হয়ে উঠবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া; বেনাপোল থেকে তামাবিল। শব্দহীন ব্যানারে- ফেস্টুনে আমরা দৃপ্তস্বরে জানিয়ে দেব- রক্ত দিয়ে গড়া এদেশ কারো দয়ার দান নয়- লাখো শহীদের রক্ত এই পদ্মা-যমুনার স্রোতে মিশে আছে। বন্ধুত্বের দাম চুকাতে গিয়ে আমরা আর আমাদের আত্মসম্মান বিকিয়ে দেব না!
কিশোর কবি সুকান্ত এক শতক আগে হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ’ নিয়ে বলেছিলেন, ‘এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ ইতিহাস স্বাক্ষী, অত্যাচারীদের আমরা কখনো ছেড়ে কথা বলি নি- আজো বলব না। নয়তো ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
সেই ইতিহাসের অংশ হতে আসুন আসছে ২১ তারিখ বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে মিলিত হই।
দেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে, রাজনীতি নেই, মনোমালিন্য নেই, নেই কোন পথ আর মত।
নাহ্! আমরা সরকারবিরোধী নই! সরকারই দেশ চালাবেন। আমরা কেবল তাঁদের মোটা দাগের ভুলগুলোকে ধরিয়ে দেব। নতজানু নীতিকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করব।
আসুন, আমরা মিলি দেশের স্বার্থে- বন্ধুদের নিয়ে। ব্যানারে-ফেস্টুনে-প্রতিবাদে জানিয়ে দিই আমাদের ক্ষোভ- বুঝিয়ে দিই আমাদের আত্মমর্যাদা।
২১ জানুয়ারি
বিকাল ৩:৩০
জাতীয় প্রেসক্লাব
ফুটনোটঃ
১. খবরঃ ফেলানী হত্যার প্রতিবাদ জানাবে সরকার
প্রতিক্রিয়াঃ ‘এত ‘তাড়াহুড়া করে’ প্রতিবাদ করতে গিয়ে দাদাদের নাখোশ করাটা ঠিক হপে না। আরেকটু সময় ন্যান গো.... ’
২. খবরঃ 'বর্তমানে বর্ডারে মানুষ (বাংলাদেশী) হত্যা অনেক কমেছে'' - ভারতীয় হাই কমিশনারের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বানিজ্য মন্ত্রী ফারুক খান।
প্রতিক্রিয়াঃ‘ এরে জনসমক্ষে জুতাপেটা করা অনেক দিন আগেই জায়েজ হয়ে গেছে।’
রেফারেন্সঃ ফেইসবুকের এই অ্যালবাম
ডিসক্লেইমারঃ
১. গতকাল(জানুয়ারি ১৭) দুপুরে পোস্ট দেয়ার পর থেকেই এতো এতো ঝামেলায় ছিলাম যে, পোস্টে আর ঢুকবার সুযোগই পাই নি। ফলে, পোস্টের শুরুতে যে বীভৎস অথচ, নির্মম সত্য ছবিটা ঝুলিয়ে রেখেছিলাম, সেটা আমার নিজস্ব নৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হলেও সরিয়ে দেয়ার সুযোগ পাই নি। কাল থেকেই অনেক শুভাকাঙ্খী-বন্ধু এটিকে সরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছেন- তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ছবিটি আমি সরিয়ে দিয়েছি। তাই বলে সত্যটুকু বদলে যায় নি। আমাদের ক্ষোভের আগুনও নেভে নি।
২. যে কারনে পোস্টের ছবি সরাতে ২৩ ঘন্টা লেগে গেল, সেই একই কারনে যারা মন্তব্য করেছেন তাঁদের উত্তরটুকুও দিয়ে নূন্যতম সম্মানো জানাতে পারি নি। আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আজ চেষ্টা করব, সেটি দূর করতে।
৩. যারা পোস্টটিকে স্টিকি করার জন্য বারেবারে দাবী তুলেছেন এবং একই কথা অনেকবার করে মন্তব্য করেছেন তাঁদের আবেগের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, পোস্টের সৌন্দর্য্যের স্বার্থে কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে ওগুলো মুছে দিয়েছি। কর্তৃপক্ষ যদি ভাল মনে করেন, তবে স্টিকি করবেন- না হলে করবেন না। কিন্তু, আপনারা আপনাদের এই আবেগকে ছড়িয়ে দিন সবখানে- সবাইকে টেনে আনুন মানব বন্ধনে। এ দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি আপনাদের এই ভালবাসাকে আসুন প্রেসক্লাবের মানব বন্ধনে হাজারো ব্যানারে-ফেস্টুনে প্রকাশ করি।
৪. এই পোস্ট লিখতে লিখতেই জানা গেল, সীমান্তে শাহজাহান আলী নামের আমাদেরই এক ভাইকে বিএসএফ নির্মম নির্যাতনে শহীদ করেছে। আমাদের বলার ভাষা নেই। প্রতিবাদের শক্তি নেই। জানি না, এদেশের ভাগ্যবিধাতারা এভাবে আর কতদিন আমাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেবেন?
একটা ভাল খবর
ফেলানী হত্যা: বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ