গণনা এবং পরিমাপ মানুষের আদিমতম বৈশিষ্ট্য। দৃশ্যমান বস্তুজগতের নানান বস্তুর পরিমান গণনা সেই প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে আর এখান থেকেই শুরু হয়েছে গণিতের পথ চলা। বিজ্ঞানে(Science) গণিত আর কলায়(Art) চিত্রশিল্প- এই দুই বস্তুই সকল মানুষের বোধগম্য। সংজ্ঞাগতভাবে গণিত হচ্ছে(Mathematics) পরিমাণ, সংগঠন, পরিবর্তন ও স্থান বিষয়ক গবেষণা। এতে সংখ্যা ও অন্যান্য পরিমাপযোগ্য রাশিসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়। গণিতের সার্বজনীন ভাষা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা একে অপরের সাথে ধারণার আদান-প্রদান করেন। এ কারনে গণিত হচ্ছে বিজ্ঞানের ভাষা(Language of Science)।
বিজ্ঞানের সূচনাকাল হতেই গণিতে কিছু না কিছু কাজ হয়েছেই। আফ্রিকার সোয়াজিল্যান্ডে(Swaziland) পাওয়া বেবুনের দুইটি হাড়ের উপরে গাণিতিকভাবে কাটা দাগকেই গণিতচর্চার সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন বলে ধরা হয় এবং এ হাড়গুলো খৃষ্টপূর্ব ৩৫,০০০ অব্দের! যাই হোক, ব্যাবিলন, মিসর, ভারত, চীন যেখানেই সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে সেখানেই গণিতে কিছু না কিছু কাজ হয়েছে। এর মাঝে ইউক্লিডের ইলিমেন্ট্সের(Elements) কথা আমরা আগেও বেশ ক’বার উল্লেখ করেছি। এছাড়া বেশ কয়েকজন গ্রীক, মিশরীয় এবং ভারতীয় বিজ্ঞানীর কাজের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। কিন্তু, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে গণিতের উপর করা এইসব কাজ তখনো পর্যন্ত কোন সামগ্রিক রূপ পরিগ্রহ করে নি; সেইসাথে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় গণিতের ব্যবহারও খুব বেশী প্রচলিত হয় নি। এরকম একটা অবস্থাতেই মুসলমানরা গোণিতের হাত ধরতে এগিয়ে আসেন। বিজ্ঞানের জগতে মুসলমানদের সদর্প আবির্ভাবের একেবারে প্রথম দিন থেকে পতনের কাল পর্যন্ত যত বিজ্ঞানী এসেছেন তাঁদের একটি বৃহৎ অংশই কোন না কোনভাবে গণিতে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। গণিতের নানান শাখার প্রচলন, বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় বিভিন্ন তত্ত্ব প্রমানে এবং দৈনন্দিন জীবনে গণিতের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এ সময় গণিতের খোল্নলচে পালটে দিয়ে একে নতুন রূপ দেয়া হয়।
বেবুনের হাড়ের উপর গণিত চর্চার প্রাচীনতম নিদর্শন
এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা অনেক সময়ের ব্যাপার এবং তা অনেকের বিরক্তির উদ্রেক করাটাই স্বাভাবিক। তাই, মুসলমানদের মাঝে কেবল যেসব গণিতবিদেরা(Mathematians) সর্বকালেই স্মরণীয় তাঁদের কথা আলোচনা করা হবে। এক্ষেত্রে, একটা কথা মনে রাখা আবশ্যক যে, গণিতে মুসলমানদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের সমস্যা সমাধান এবং মুসলমানদের জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং গণিতের চর্চা সবসময়েই হাতে হাত রেখে চলেছে। ফলে, প্রায় সকল জ্যোতির্বিদই গণিতে দৃশ্যমান অবদান রেখেছেন। সেইসাথে এটা বলে নেয়া আবশ্যক যে, ভারতীয় গণিতের সংস্পর্শ এবং প্রভাবেই সর্বপ্রথম মুসলমানরা গণিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
গণিতে সবার আগে বলার মত যাঁদের অবদান তাঁরা হচ্ছেন দুই ফাজারী, আবু ইস্হাক ইব্রাহিম আল-ফাজারী (أبو إسحاق إبراهيم بن حبيب بن سليمان بن سمورة بن جندب الفزاري; ?-৭৭৭)এবং আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন্ ইব্রাহিম আল-ফাজারী(أبو عبدالله محمد بن إبراهيم الفزاري;?-৮০৬), সম্পর্কে যাঁরা পিতা –পূত্র। তাঁরা মিলিতভাবে ( ইয়াকুব ইবন্ তারিক(يعقوب بن طارق; ?-৭৯৬)ও সাথে ছিলেন) ভারতীয় সিদ্ধান্তের একটি ‘সুর্য্য সিদ্ধান্ত’ এবং ব্রহ্মগুপ্তের প্রায় সবগুলো কাজের অনুবাদ সম্পন্ন করেন এবং তার ভিত্তিতে ‘আজ্ জিজ্ আল-মাহ্লুল মিন আস্-সিনহিন্দ্ লি-দারাজাত্ দারাজা’ রচনা করেন। এরপর পরই সাবিত ইবন ক্বুরা(৮৩৬-৯০১), হাজ্জাজ ইবন্ ইউসুফ ইবন্ মাতার(৭৮৬-৮৩৩;কুখ্যাত উমাইয়া শাসনকর্তা নন) এবং অবধারিতভাবে হুনায়ন ইবন্ ইসহাক(৮০৯-৮৭৩) আলাদা আলাদাভাবে টলেমীর আল-ম্যাজেস্ট, ইউক্লিডের ইলিমেন্টস্ সহ গ্রীক গণিতের বড় বড় কাজসমূহের অনুবাদ কাজ সম্পন্ন করে ফেলেন। খৃষ্টীয় অস্টম এবং নবম শতকে আরো যাঁরা গণিতে অবদান রাখতে সক্ষম হন তাঁদের মধ্যে আবু আলী ইয়াহিয়া(?-৮৩১), হারুন ইবন্ আলী(?-৯০০) আহ্মাদ ইবন্ মুহাম্মাদ নাহাওয়ান্দী(?-৮৩৫), আল-মারোয়ারেজী, আল-ফারগানী উল্লেখযোগ্য।
সংখ্যায় দশমিক চিহ্নের প্রবর্তনকারী সম্ভবতঃ পৃথিবীর প্রথম পান্ডুলিপি, আরবী ভাষায়
কিন্তু, গণিতে এসব বিজ্ঞানীর কাজ একজন মাত্র ব্যক্তির অবদানের কাছে চাপা পড়ে যায়। তিনি আর কেউ নন আবু আবদুল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইবন্ মুসা আল-খোয়ারিজ্মি(৭৮০-৮৫০), বিজ্ঞানের ইতিহাসের জনক জর্জ সার্টন(George Sarton) যাঁকে যে কোন বিচারে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। গণিতে তাঁর মৌলিক কাজের ফিরিস্তি অনেক লম্বা। সেদিকে না গিয়ে শুধু দুইটি অমর কীর্তি নিয়ে কথা বলি। আজকের দিনে একটি শিশুও ১ থেকে ৯ এবং ০ এই দশটি চিহ্নের সাহায্যে মূল গাণিতিক কাজগুলো সম্পাদন করতে সক্ষম। কিন্তু, মাত্র এক সহস্রাব্দ আগেও ব্যাপারটা এত সহজ ছিলো না। এক হাজারের পরে কোন সংখ্যা থাকা সম্ভব- এটি অনেকেরই কল্পনারই বাইরে ছিল। এরকম পরিস্থিতিতে আল-খোয়ারিজমি এসে বদলে দিলেন দৃশ্যপট। বললেন, মাত্র দশটি চিহ্নের সাহয্যে শুন্য হতে অসীম পর্যন্ত সকল সংখ্যাকে সহজে প্রকাশ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে তাঁর লেখা বইটির নাম হলো “অন ক্যালকুলেশন অভ হিন্দু নিউম্যারালস্ (ল্যাটিনঃ Algoritmi de numero Indorum)”; মূল আরবী নামটি আমার জানা নেই । মূল ধারনাটি তিনি নিলেন এরও আগের হাজার বছর ধরে চালু ভারতীয় উপমহাদেশের গাণিতিক সিস্টেম থেকে আর এর সাথে দশমিক সংখ্যার ব্যবহার যোগ করে একে আরো উন্নত করে তুললেন। তাঁর দ্বিতীয় কীর্তি হচ্ছে বীজগণিতের(Algebra) আবিষ্কার। বীজগণিত ছাড়া আজকের উচ্চতর গণিতের এক পৃষ্ঠাও অকল্পনীয়। তাঁর অমর গ্রন্থ ‘আল-কিতাব আল-মুখতাসার ফি হিসাব আল-জাবর্ ওয়াল মুক্বাবিলা’('الكتاب المختصر في حساب الجبر والمقابلة' English:The Compendious Book on Calculation by Completion and Balancing") বীজগণিতের ভিত্তিমূল। বইয়ের নামের ‘আল-জাবর’(الجبر) শব্দ থেকেই ‘অ্যালজেব্রা’ শব্দের উৎপত্তি। এছাড়া গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং যুক্তিবিদ্যা সহ অন্যান্য স্থানে আজকের দিনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত অ্যালগরিদম্(Algorithm- কোনো একটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য কতগুলি সুনির্দিষ্ট ও ধারাবাহিক ধাপবিশিষ্ট পদ্ধতি) আরবী আল-খোয়ারিজ্মির ল্যাটিন অপভ্রংশ ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব ছাড়াও দ্বিপদী সমীকরণ, জ্যামিতি, ত্রিকোনমিতি, পরিমিতি সহ গণিতের সকল শাখাতেই আল-খোয়ারিজ্মির সচ্ছন্দ বিচরণ ছিল। তাঁর পরেই গণিতে যাঁদের নাম উল্লেখ করতে হয় তাঁরা হচ্ছেন আল-মাহানী, বনু মুসা ভ্রাতৃত্রয়(এই তিন ভাই হচ্ছেন আবু জাফর(৮০৩-৮৭৩), আহ্মাদ(৮০৩-৮৭৩) এবং আল-হাসান(৮১০-৮৭৩) ইবন্ মুসা) এবং সাবিত ইবন্ ক্বুরার পুত্র সিনান্ ইবন সাবিত ও পৌত্র ইবরাহিম ইবন সিনান(৯০৮-৯৪৬) প্রমুখ।
আল-জাবর্ ওয়াল মুকাবিলা
দশম শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদ হচ্ছেন আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইবন্ জাবির ইবন্ সিনান আল-বাত্তানী(محمد بن جابر بن سنان البتاني ;৮৫৮-৯২৯)। ত্রিকোনমিতি তাঁর হাতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ন শাস্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। Sine, Cosine, Tangent প্রভৃতি ত্রিকোনমিতিক অনুপাতের তাৎপর্য সঠিকভাবে অনুধাবনের মাধ্যমে তিনি এসব অনুপাতের পারস্পরিক সম্পর্কের সূত্রগুলো(যেমনঃ tanA=sinA/cosA) আবিষ্কার করেন, যেগুলো আজো সমানতালে ব্যবহৃত হয়। গণিতে বাত্তানীর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে রয়েছেন আবুল ওয়াফা বুজ্জানী(৯৪০-৯৯৮) , আবুল কামিল ইবন্ আস্লাম(৮৫০-৯৩০) এবং আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবন্ আল-হাসান আল-খাজানী(৯০০-৯৭১) বেশ বিখ্যাত। আবুল ওয়াফা sin(A+B)= sinAcosB+cosAsinB সূত্রের আবিষ্কারক। অন্যদিকে, বীজগণিতে অসাধারণ বুৎপত্তি সম্পন্ন মিশরীয় গণিতবিদ আবুল কামিলকে ‘আল-হিসাব আল-মিশরী’ নামে ডাকা হোত, যার অর্থ হচ্ছে ‘মিশরীয় ক্যালকুলেটর’(Egyptian Calculator)।
একাদশ শতকে যথারীতি আল-বিরুনী, ইবন সীনা আর ইবন হাইছামের কাজের নিচে আর সকলেই চাপা পড়ে গিয়েছেন। এদের মধ্যে আবু মাহ্মুদ আল-খুজান্দী(৯৪০-১০০০), আহ্মাদ ইবন ইউনুস(৯৫০-১০০৯) , আবুল জুদ মুহাম্মাদ ইবন লাইসুস্সানী এবং আলী ইবন্ আহ্মাদ উল্লেখযোগ্য। আবু রায়হান মুহাম্মাদ ইবন্ আহ্মাদ আল-বিরুনী(৯৭৩-১০৪৮) সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। তাঁর সুবৃহৎ বিজ্ঞানকোষ ‘কানুন মাস্উদী‘ এর ত্রিকোনমিতি অধ্যায়টিতে নজর বুলালেই বোঝা যায় গণিতে তাঁর কাজের পরিমান কত সুদুরপ্রসারী। তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে, তিনি বিজ্ঞানকে গণিত ব্যবহারের হাতিয়ার তুলে দিয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ০ থেকে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত প্রতিটি ডিগ্রি এবং ডিগ্রির ভগ্নাংশের জন্য একটি সাইনছক(Sine Table) তৈরী করেন এবং এ জন্য তিনি যে পদ্ধতি ব্যবহার করেন তা আজকের দিনে ইন্টারপোলেশন তত্ত্ব(Theory of Interpolation) নামে পরিচিত, যদিও এই তত্ত্বের আবিষ্কারক হিসেবে আমরা মহাবিজ্ঞানী আইজাক নিউটনকেই(Issac Newton) চিনি। ইবনুল হাইছাম(৯৬৫-১০৩৯) বিশুদ্ধ গণিতের উপর ৪১টি এবং জ্যামিতির উপরে ২৬টি গ্রন্থের প্রনেতা। মানবচক্ষুর কার্যাবালীর ব্যাখ্যাদানে জ্যামিতির ব্যবহার এক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে বড় কীর্তি।
দ্বাদশ শতকেও গণিতবিদেরা তাঁদের কাজের পস্রা সাজিয়ে একের পর এক আসতে থাকেন যাঁদের মধ্যে ইউনুস সাফ্ফার(?-১০৩৫), জারক্বালী(১০২৯-১০৮৭), ইবনুস্ সামাহ্(?-১০৩৫), ইবন্ আবু রিজাল, ইবনুদ্ দাহ্হান(?-১১৯১) এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে, এদের ছাড়িয়ে যাঁর নাম বেশী উচ্চারিত হয় তিনি হলেন কবি ও দার্শনিক ওমর খৈয়াম(১০৪৮-১১৩১)। বীজগণিতের বহুমাত্রিক সমীকরণের(Multidimentional Equation) উপর তিনি প্রচুর কাজ করেন এবং অনেকদুর এগিয়ে যান। দ্বিপদী উপপাদ্য(Bionomial Theorem) এর উপর তাঁর এবং অপর মুসলমান বিজ্ঞানী আল-খারাজীর(৯৫৩-১০২৯) অবদান এত বেশী যে, সহজেই তাঁদের একজনকে এর কৃতিত্ব দেয়া যেত, যদিও সে কৃতিত্ব গিয়ে জুটেছে বিজ্ঞানী ব্লেইজ্ প্যাস্কেলের(Blaise Pascal; ১৬২৩-১৬৬২) ভাগ্যে।
ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধানে ওমর খৈয়ামের প্রচেষ্টা
ত্রয়োদশ শতক হতেই মুসলমান গণিতবিদের মৌলিক কাজের পরিমান কমে যেতে থাকে। এদের মধ্যে কামাল আল-দীন আল-ফারিসী(১২৬৭-১৩১৮), শরফ আল-দীন আল-তুসী(১১৩৫-১২১৩), ইবনুল লুবিদি(১২১০-১২৬৭), জামশেদ আল-কাশী(১৩৮০-১৪২৯) এবং ইবন্ আল-শাতীর(১৩০৪-১৩৭৫) গণিত বিষয়ে একাধিক গ্রন্থের রচয়িতা। তবে, নাসিরুদ্দীন আল-তুসী(১২০১-১২৭৪) এদের সকলকে অতিক্রম করেছেন। ‘মারাগাহ্’ মানমন্দিরে বসে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের পাশাপাশি গণিতেও তাঁর অমিত প্রতিভার সাক্ষর রাখেন। আল-বাত্তানীর হাতে আলাদা শাস্ত্র হিসেবে গোড়াপত্তন হওয়া ত্রিকোনমিতি(Trigonometry) তুসীর হাতেই পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ইউক্লিডের ইলিমেন্টস্ কেন্দ্রিক জ্যামিতি থেকে বেরিয়ে এসে তিনিই প্রথম Non-Euoclidean Geometry এর সূচনা করেন এবং তাঁর কপালের লিখন হিসেবে সে কৃতিত্ব চলে যায় সপ্তদশ শতকের ইতালীয় বিজ্ঞানী জিওভান্নি জিরোলামো সাচ্চেরীর(Giovanni Girolamo Saccheri; ১৬৬৭-১৭৩৩) কাঁধে!
তুসীর পরে আর তেমন কোন মুসলমান বিজ্ঞানী গণিতে লক্ষ্যনীয় অবদান রেখেছেন বলে জানা যায় না। স্পেনের আবুল হাসান আলী আল-ক্বালাসাদীকেই(১৪১২-১৪৮৬) মোটামুটিভাবে শেষ মুসলমান গণিতবিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সুদীর্ঘ সাত পর্বব্যাপী টানাহেঁচড়া করা এই হচ্ছে মোটামুটি বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান। সন্দেহ নেই, বিজ্ঞানের উপরোক্ত শাখাসমূহ ছাড়াও আইনশাস্ত্র(Law), ইতিহাস(History), সমাজবিজ্ঞান(Sociology), রাষ্ট্রবিজ্ঞান(Political Science), সমরবিজ্ঞান(Military Science) এবং প্রত্নতত্ত্বে(Archeology) মুসলমানদের উল্লেখ করার মত বেশ কিছু অবদান রয়েছে। কিন্তু, উপরের আলোচনা থেকেই যেহেতু এটি মোটামুটি উপলব্ধি করা গিয়েছে যে, প্রায় আট শতাব্দী বা তারও কিছু বেশী সময় ধরে মুসলমানরা বিজ্ঞানে অতুলনীয় অবদান রাখার মাধ্যমে একটি উচ্চমাত্রার সভ্যতার সূচনা করেছিলেন, সেহেতু, এসব অবদান নিয়ে আর বেশী আলোচনা টেনে এনে পাঠকের বিরক্তির উদ্রেক না করাই শ্রেয় মনে হচ্ছে। এখানে, একটা বিষয় কিন্তু বাদ থেকেই যাচ্ছে, আর তা হচ্ছে, মুসলিম দর্শন এবং দর্শনে তাঁদের অবদান। সন্দেহ নেই, এটি একটি চরম বিতর্কিত(Controversial) বিষয়। অনেকে এ বিষয়ে মুসলমানদের অনেক অবদান দেখতে পান, আবার অনেকে কোনরকম অবদান স্বীকারেই আগ্রহী নন। যাই হোক, মুসলমানদের জীবনযাত্রা, উত্থান, পতন থেকে শুরু করে তাঁদের ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে এই দর্শন(Philosophy) এবং দার্শনিকেরা(Philosophers) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুদুরপ্রসারী ভূমিকা পালন করেছেন। সে আলোচনা শুরু হচ্ছে পরের পর্ব থেকেই এবং এ জন্য এই সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বটি একটু পড়ে রাখা আবশ্যক বলে মনে করছি।
চলবে.....
আগের পর্বগুলোঃ
১. ভূমিকা পর্ব
২. বিজ্ঞানের দর্শন
৩. প্রাচীন বিজ্ঞানের ইতিহাস
৪. মৌলিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান
৫. ব্যবহারিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান
৬. রসায়নবিজ্ঞানে অবদান
৭. আলোকবিজ্ঞানে অবদান
৮. জ্যোতির্বিজ্ঞানে অবদান- প্রথম পর্ব
৯. জ্যোতির্বিজ্ঞানে অবদান- দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৭:৫৫