যাই হোক, সে সময় পোষ্টটি পড়ে আমার মনেও প্রশ্নটা জেগে উঠলো। তাই তো, ঘটনাটা কী? সত্যি কথা বলতে কী, আমরা যারা নিজেদের প্রায়োগিক (practical) মুসলমান বলে দাবী করি, অন্য ধর্মের প্রতি আমাদের একটি অনতিক্রম্য উন্নাসিক মনোভাব আছেই। তার উপর আমরা আমাদের ধর্মগ্রন্থকে বিজ্ঞানময় (Not Against the Science) বলে গর্বও করে থাকি! বিজ্ঞানে আমাদের একটা গৌরবময় ইতিহাস আছে বলে শুনি এবং বিশ্বাসও করি । তাহলে, সমস্যাটা কোথায়? মুসলমানরা তাহলে কী কী আবিষ্কার করলো সে সময়? যদি কিছু অবদান রেখেই থাকে কিংবা আবিষ্কার করেই থাকে, তবে তা কোথায় হারিয়ে গেল?
এই জিজ্ঞাসা থেকেই চরম অলসতার মাঝেও একটু আধটু পড়াশোনা চলতে থাকে এর উপর। এমনি সময়ে আচমকা হাতে আসে Science and Islam শিরোনামে বিবিসি নির্মিত একটি তিন পর্বের ডকিউমেন্টারী। বলা যায়, এটিই আমার আগ্রহের সল্তেয় আগুন লাগিয়ে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে এই ব্লগেই ”আল বিরুনীঃ বিজ্ঞান যাঁর কাছ হতে পেয়েছিল গণিত ব্যবহারের হাতিয়ার” শিরোনামের লেখাটা দিই। কেউ কেউ প্রশংসাও করেন।
উৎকর্ষের যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতের মনি হয়ে জ্বলজ্বলায়মান মুসলমানদের কয়েকটি নগরী
কিন্তু, মনে স্বস্তি পেলাম না। মনে হলো, পুরো ইতিহাসের একটা সামগ্রিক চিত্র সংক্ষেপে যদি লিখে ফেলতে পারতাম, তাহলে খুবই ভাল হোত। এখানেই বাঁধে গোলমাল। বিজ্ঞানের ইতিহাস লিখতে গেলে বিজ্ঞান, ইতিহাস এবং দর্শন-এই তিনের উপর নূন্যতম দখল থাকা বাঞ্চনীয়। তার উপর, লেখাটা যদি মুসলমান আর ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে, তথ্যসূত্রের ব্যাপারেও অত্যন্ত সাবধানী হওয়া ছাড়া গতি নেই। ইতিহাস আর দর্শন আমার একাডেমিক পড়াশোনার বিষয় ছিল না কখনো। ইতিহাসের ব্যাপারে যদিও বেশ আগ্রহ ছিলো বাল্যকাল হতেই; তাই বলে, দর্শন! ওরে বাপ্! মাফও চাই, দোয়াও চাই! অন্যদিকে, বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও আমি বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের নই, বরং প্রকৌশলবিদ্যার ছাত্র। ফলে, এ তিনের মিশ্রনে কিছু লেখাটা উত্তম জলখাবারের পরিবর্তে শেষপর্যন্ত জগাখিচুড়ি হয়ে পড়ে কীনা, তাই নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিলোই।
এর সাথে আরো একটা সমস্যা যোগ হলো। বাংলাভাষায় “বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান” শীর্ষক একটা বৃহৎ গ্রন্থ আছে মরহুম এম আকবর আলী লিখিত। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত এই বইটি হাতে পাই নি। অন্য বইগুলো পেয়েছি সেগুলো মূলতঃ এই বইয়ের সাহায্যেই রচিত। মূল বইটা পেলে ঝামেলা কমে যেত।
এছাড়া, যত সংক্ষেপেই লিখি না কেন, এই লেখা কয়েক পর্বে বিস্তৃত হতে বাধ্য। এমন ধারাবাহিক লেখার ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা শুন্য। তার উপর, ব্লগে এখন যে অবস্থা! ছাগ নিধন আর ভাদা দূরীকরণ ছাড়া আর কোন বিষয়েই কারো আগ্রহ দেখি না। এখানে যাঁরা ভারতের গুষ্ঠি উদ্ধার করেন, সামান্য পেটের অসুখেও হয়তো অনেকেই সেদেশে দৌড়ান; আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী লেখা পোষ্টটি প্রকাশের অবসরে বসে হয়তো ডিভি লটারির ফরম পূরণ করেন; যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবীতে মুখে ফেনা তুলে ফেলা ব্যক্তিটিও হয়তো তাদেরই দোসর বা অনুসারী কারো সাথে চোথা(notes) আদান-প্রদান করেন, একসাথে চাকরি বা ব্যবসা করেন! নিঃসন্দেহে, সকলেই এমন নন। কিন্তু, এই দ্বিচারিতা আমাদের জাতীয় চরিত্র -এটাও অস্বীকারের উপায় নেই। কারো প্রতি ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নিয়ে একথাগুলো বলছি না। কেউ মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। মননশীলতার চর্চা আর ভিন্ন মতের উপর সুষ্ঠু আর সুস্থ আলোচনার অঙ্গীকার নিয়ে যে ব্লগের যাত্রা শুরু তা আজ নির্জলা গালিগালাজ আর যে কোন মূল্যে নিজের মত বজায় রাখার বিস্তৃত প্লাটফরমে (চারণক্ষেত্র বললে বোধ করি আরো জুতসই হবে!) পরিণত হয়ে যাচ্ছে। একের পর এক ভাল লেখকেরা বিদায় হয়ে যাচ্ছেন। এ দুঃখ কোথায় রাখি!
যাই হোক, এসব কিছু মিলিয়ে, যে সুবিশাল ইতিহাস দর্শনের অবতারনা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছি তার পেছনে মনের অস্বস্তি দূর করার চেতনাই মূল অস্ত্র। এ হাতিয়ারের উপর ভর করেই লিখতে হচ্ছে বিধায় মূল লেখার আগে এত বড় ভূমিকা (কেউ কেউ শিবের গীত বলতে পারেন- দোষ দেব না) লিখতে হলো। সেজন্য, আন্তরিকভাবে আবারো দুঃখ প্রকাশ করা ।
মূল লেখায় যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা থাকবে সেগুলো হলোঃ
- বিজ্ঞানের সংজ্ঞা এবং এর উৎপত্তি
- মুসলমানদের উদ্ভবের আগমূহুর্তে মানবসভ্যতায় বিজ্ঞানের অবস্থান
- মুসলমানদের হাতে আসার পর বিজ্ঞানের স্বরূপ
- বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতা সাধনে মুসলমানদের কৃতিত্ব এবং পৃথিবীর নেতৃত্ব
- বিজ্ঞানের জগতে মুসলমানদের মূল অবদান
- মুসলমানদের বিজ্ঞানে অবদানের পেছনে মূল চালিকা শক্তি
- বিজ্ঞানের জগতে মুসলমানদের পতন ও পতনের কারন
- বিজ্ঞানের মুসলমানদের অবদান বিস্মৃতির মূল কারন
- বিজ্ঞানের জগতে মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা
মুসলিম স্থাপত্য কলার উজ্জ্বলতম নিদর্শন তাজমহলঃ সূর্যাস্তের আগ্ মূহুর্তে
এর সাথে ছোটখাট আরো কিছু সহ-আলোচনাও এসে যেতে পারে। সেইসাথে, লেখার শেষে একটি গ্রন্থ সহায়িকার তালিকা দেয়ার চেষ্টাও থাকবে। সর্বোপরি, এই ব্লগের যে তিনজন মানুষ এই লেখার পেছনে নিরব অনুপ্রেরনা হয়ে থাকবেন তাঁরা হলেন,
১. ম্যাভেরিক
২. ইমন জুবায়ের এবং
৩. উম্মু আবদুল্লাহ
এঁদের কারো সাথেই ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। তারপরেও, বিজ্ঞান, ইতিহাস, শিল্পকলা আর দর্শনের উপর এঁদের লেখা এবং পরিশ্রম আমাকে অনুপ্রানিত করে সবসময়। পরের পর্বে দেখা হবার আগ পর্যন্ত বিদায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১০ রাত ৯:২১