গত দু'দিন ব্লগে ছিলাম না বললেই চলে। আজকে সারাদিন হাতে ছিল প্রচুর সময়! অতএব, সুযোগ পেয়েই একটা একটা করে এ দু'দিনের লেখাগুলো পড়ে শেষ করলাম। আনন্দের কথা হলো, স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অসংখ্য লেখা এসেছে। প্রতিটিতেই প্রচন্ড আবেগে মেশানো- প্রতিটিই একাধিকবার মন্তব্যের দাবীদার।
যান্ত্রিক জীবনের এতো ব্যস্ততা ঠেলে সবার পক্ষে হয়তো সব গুলো লেখা খুঁজে খুঁজে বের করে পড়া সম্ভব নয়। সে ভাবনা থকেই এ লেখার সুচনা।
মোটামুটি যে কয়টা লেখা মনে বেশী পরিমান দাগ কেটেছে, তার সবগুলোরই লিঙ্ক দেয়ার চেষ্টা করেছি। এবং সেই সাথে কাঁচা হাতে দু’কলম রিভিউ লেখার অপচেষ্টা ও চালিয়েছি।
প্রথমেই স্টিকি করা পোষ্ট দু'টি।
প্রথমটির শিরোনাম হলো স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে নিয়ে আমার জীবনের প্রথম লেখা (মুক্তিযুদ্ধে যারা বাবা হারিয়েছ তোমাদের সবার জন্য উৎসর্গ) ২৫ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:০৭। অসম্ভব ভালো একটি লেখা। লেখকের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্মৃতিচারণ আমাদের কাঁদায়। কিন্তু তাঁর '৭১ পরবর্তী সদ্য বিধবা মা'য়ের নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামী জীবন আমাদের ভাবায়। ঐ মা’য়ের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। সম্ভব হলে তাঁকে একবার গিয়ে কদমবুচি করে আসতাম।
দ্বিতীয়টি হলো ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতেই হবে ২৫ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৫। সন্দেহাতীতভাবেই একটি সময়োচিত ও তথ্যবহুল পোষ্ট। যুদ্ধাপরাধীদের নানাবিধ অপকর্মের একটি প্রামান্য দলিল হিসেবে একে চিহ্নিত করা যায় সহজেই। আশা করি অনেকেই একে সোজা প্রিয়তে নিয়ে গিয়েছেন। একটি para সরাসরি quote করলাম , "যারা এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অমানবিক নির্যাতন সমন্ধে জেনেও যুদ্ধাপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের দায়ী ব্যক্তিদের বিচার চান না তাদের প্রতি ঘৃণা হয়। মানবতা বলে কিছু থাকলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইতেই হবে। এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতেই হবে এ বাংলাদেশের মাটিতে।"
এর পরই যে দু'টি পোষ্টের কথা না বললেই নয় সেগুলো হলোঃ
১. মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস- মুহম্মদ জাফর ইকবাল - ডাউনলোড লিংক ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ২:২৯
২. মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-মুহম্মদ জাফর ইকবাল ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:১০
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইহিহাসের সবচাইতে ছোট্ট সংস্করন। বিগত কয়েকদিন ধরে অনেক খুঁজে এর কোন hard copy না পেয়ে soft copy-টাই খুঁজছিলাম। আশা পূরণ হলো। ব্লগের অনেকেরই নিশ্চয়ই আমার মতই অনুভূতি?
স্বাধীনতা দিবস নিয়ে লিখতে গিয়ে অনেকেই তুলে এনেছেন ব্যক্তি গত আবেগ- অনুভূতি। সে রকমই কয়েকটা পোষ্ট এবার।
প্রথমেই নাফিস ইফতেখারের এই লেখা। মুক্তিযুদ্ধকে শান্তিতে থাকতে দিন, দয়া করে......২৫ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৮
পোষ্টের ব্যাপারে কথা বলার আগে আমি লেখকের ব্যাপারে বলতে চাই। নিঃসন্দেহে এই ব্লগার সামহোয়ারইনের সবচাইতে বর্নাঢ্যদের একজন; ছোকরা যাই লেখে তাতেই সোনা ফলে! অর্ধশতের নিচে কমেণ্ট আছে এ রকম কোন ব্লগ নাফিস লিখেছেন বলে মনে পড়ছে না। যেমন এই পোষ্টে ও ৭৫টা! আমার হিংসাই হয়!
যাই হোক, পোষ্টে তাঁর এই কথার সাথে আমার সহমত- "আমি বিজয় দেখিনি। বিজয়ের ১৭ বছর পর আমার জন্ম। কিন্তু এতোটুকু অন্ততঃ বুঝি ঐ লোকগুলো টানা ৯ মাস ধরে পুতুলখেলা খেলতে ঘর-বাড়ি, বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান ছাড়েনি। আজ যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনি, বই পড়ি, লোকমুখে যখন শুনি ঐ লোকগুলোর বীরগাথা - এটুকু অন্ততঃ বুঝি তারা নিশ্চয়ই মহান কিছু করেছিলেন। এই উপলব্ধিটার জন্যে বুদ্ধিজীবি হওয়া লাগে না, টক-শোতে বসে গোঁফে তা দিতে দিতে দেশ-জাতির চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে হয় না - সামান্য কমন সেন্সই যথেষ্ট।"
এর পর আসে স্বাধীনতাকে খুঁজে ফেরা......২৬ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ৯:৪৪ লেখাটি। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দ্বিতীয় প্রজন্মের একজনের মননে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কী পরিমান টানাপোড়েন চলে তাই সফলতার সাথে তুলে ধরতে পেরেছেন প্রজ্ঞা তাসনুভা।
ব্লগের আরেক চিন্তাশীল ব্লগার ইশতিয়াক আহমেদ আবারো এসে গেলো স্বাধীনতা দিবস; চলেন ঝাপিয়ে পড়ি নিজেকে দেশপ্রেমিক প্রমাণের মিছিলে...২৫ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১০:৪৫ পোষ্টে খুলে দিতে চেয়েছেন আমাদের ভন্ডামীর মুখোশ। আশা করেছেন , "সময় অনেক হয়েছে। আর সময়ক্ষেপন নয় নয়। ভেতরে বাইরে দ্রুত ঘটুক যাবতীয় মঙ্গলময় পরিবর্তন। মঙ্গলের পরিবর্তন।"
খোমেনী ইহসানের আজকের দিনে আমার অনেক হাউশ, সবচেয়ে অহঙ্কারী মানুষ আমি, আমরা ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:২০ পোষ্টের শেষে "আমার মধ্যে একটিই অহঙ্কার আমি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক। পৃথিবীর সবচেয়ে অহঙ্কারী মানুষটি আজ খোমেনী ইহ্সান। কাউরে তোয়াজ করার টাইম নাই।" কথা গুলো পড়ে আমার মতো অনেকেরই ছাতি দশ হাত বড় হয়ে যাবার কথা!
অমি রহমান পিয়াল সব সময়ই ব্যতিক্রম। সেই ছাপ তিনি রেখেছেন তাঁর "অপারেশন বিগ বার্ড"- যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুকে ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:৫৫ শিরোনামের এই পোষ্টে। ২৫শে মার্চের কালো রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের সামরিক প্রেক্ষাপট ও পূর্বাপর অন্যান্য পারিপ্বার্শিক ঘটনা তিনি তুলে ধরেন এখানে।
স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে আমাদের চিরকালের তর্ককে নতুন করে ভাবাতে পারে নিচের দু'টি পোষ্ট। পোষ্টের উপর করা অন্যান্য ব্লগারদের মন্তব্যসমূহ ও চিন্তার খোরাক যোগাবে। আমার মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
১. ২৬শে মার্চ ১৯৭১ এ স্বাধীনতা ঘোষণার জন্যই জিয়া কে স্বাধীন বাংলাদেশের সরাসরি সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান করা হয় ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪২
২. একটি জাতির জন্ম ... জিয়াউর রহমান । ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:৪৭
নিচের দু'টি পোষ্ট জাতি হিসেবে আমাদের অকৃতজ্ঞতার জন্য আমাদের লজ্জিত করে তোলে।
১. একাত্তরের শব্দসৈনিকদের স্বীকৃতি দেয়া হোক। ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৯:২৩
একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে মুক্তিকামী মানুষের মনোবল চাঙা রাখতে যারা জীবন বাজি রেখে অনুষ্ঠান প্রচার করেছেন আমরা আজো তাদের স্বীকৃতি দিতে পারিনি। লেখকের ভাষায়, "কন্ঠ দিয়েও যুদ্ধ সম্ভব। এমন ধারণা তৈরী করতে সম্ভব হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধেই। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা সেই কন্ঠ যোদ্ধাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধের ময়দান মাতিয়ে রেখেছিল। আর সারাদেশের মানুষের কাছে এই কন্ঠযোদ্ধারাই পৌছে দিয়েছেন সাহস, স্বপ্ন এবং যুদ্ধের সকল বিজয়ের খবর। অথচ এই কন্ঠযোদ্ধাদের খবর কিন্তু কেউ সহজে নিতেও চায় না।"
২. ফরগিভ আস, মি. জর্জ হ্যারিসন ২৭ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ৯:১৪ দেশের শিল্পীদেরই যখন আমরা সম্মান দিতে পারি নি, তখন বিদেশীদের দিতে পারবো সে আশা বাতুলতা মাত্র! "কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" এর মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে আমাদের মুক্তির আকাংখাকে যিনি পৌঁছে দিয়েছিলেন, সেই জর্জ হ্যারিসনকে আমরা তাঁর জীবদ্দশায় কোন সম্মাননা তো দূরে থাক, বাংলাদেশে ও আনতে পারিনি! এতটা নপুংসক আমরা?! লেখকের প্রশ্ন, "বাঙালিরা কি শুধু পেতে জানে-দিতে জানে না? " আমার উদ্ধত মাথাকে নিচু করে দিয়েছে।
শেষদিকে এসে, অতীব বিনয়ের সাথে স্বাধীনতা নিয়ে আমার নিজের একটা লেখার লিঙ্ক দিলাম। রক্তের দামে কিনে পানির দামে বেচা!- এই আমাদের স্বাধীনতা! ২৫ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৩:৩০ তেমন একটা বলার মত লেখা নয়; শুধু মাত্র অনেকগুলো ভালো ভালো লেখার মাঝে একে রেখে জাতে তুলতে চাইলাম। ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন, আশা করি।
একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে দু’টি পোষ্টের কথা বলি। মুক্তিযুদ্ধের কথা।২৫ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১০:০৩ এবং
মুক্তিযুদ্ধ না যুক্তিযুদ্ধ???২৬ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:০৮ -এই দু'টিতেই মোটামুটি একই কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলা হয়েছে।
সৌভাগ্যবশতঃ অনেক দিন পর মডারেটরদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে! তাঁরা এই ব্লগ বাতিল করেছেন। ব্লগে অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিৎ; কিন্তু পাগলের প্রলাপ অবশ্যই বন্ধ থাকা বাঞ্চনীয়। যারা এই অখাদ্য পড়তে পারেন নি তাদের জন্য চুম্বক অংশঃ
"ভারতীয় দালাল আওয়ামীলীগ যখন পাবলিকের মুক্তির আকাংখারে কাজে লাগাইয়া পাকিস্থান ভাংগনের স্বপ্নে বিভোর এরকম একসময়ে এই বাংলার মানুষের উপরে রাইতের আন্ধারে পশ্চিম পাকিস্থানিরা পূর্বেই পরিচালিত গনহত্যা বেগবানে ঝাঁপাইয়া পড়লে আওয়ামীলীগের শাপে-বর হয় বলাই বাহুল্য।............. কেউ কেউ অবশ্য বইলা থাকেন যে, ২৬শে মার্চ ভারতীয় সেনাবাহিনী, পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর পোষাকে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায়। যদিও সত্যতা পাওয়া যায়নি। যদি বুদ্ধিজীবিরা বাইচা থাকতো তাইলে হয়তো একটা কিছু সত্যতা পাওয়া গেলেও যাইতে পারতো। কিন্তু ১৪ই ডিসেম্বরের আগে তাদেরকে মাইরা ফালানো হয়। তাদেরকে ভারতীয় সেনারা মারছে কি-না তা সন্দেহের অবকাশ রাখে। কারন তার আগেই ঢাকা স্বাধীন হইয়াছিল বইলা জনশ্রুতি আছে।......... ১৬ই ডিসেম্বরে ভারতের কাছে আত্ম-সমর্পনের মধ্য দিয়া ৭১ এর বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াই শেষ হয়। আর বুদ্ধিজীবিদের হত্যার মধ্যদিয়া ৭১ এর সঠিক ইতিহাসকে কবর দেয়া হয়।
এই ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধে আমরা কিছু ফকিন্নি ভারতের পক্ষে, কিছু পাকিস্থানের পক্ষে অবস্থান নেই। ভারত ওয়ালা জিত্যা তারা মুক্তিযোদ্ধা হইছে আর পাকিস্থানওয়ালারা হাইরা হইছে রাজাকার। ইতিহাস পরাজিতদের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবেই।"
আমার একটাই প্রশ্ন- আমাদের মাঝে কেউ কেউ এতো উজবুক কেন?
যাই হোক, অনেকক্ষন ধরে ধৈর্য্যশক্তির পরীক্ষা দিয়ে এই প্যাঁচাল শোনার জন্য ধন্যবাদ। কোন ভালো লেখার লিঙ্ক মিস করে গেলে যোগ করে দেবেন- আশা করছি।