শুরুতেই বলে নিচ্ছি সত্যি ১টা গল্প জীবনের সংকটময় পরিস্থিতির।নাম-জায়গা চেন্জকরে দেওয়া হয়েছে।
আপনার -আমার চারপাশে এমন মানুষ হয়ত অনেক আছে এখন ই,কিনতু তারা জানে না তারা কি করবে জীবনের এ সময় টায়?কি করা উচিত তার?কি করলে সবচেয়ে ভালো হবে তার জন্যে?আমি জানি এই ব্লগে অনেক সিএসই থেকে পাশ করা ব্লগার/পাঠক,সিনিয়র আছেন,আপনাদের কমেন্ট আমি আশা করছি সবচেয়ে বেশি।ছোট ভাই কে পরামর্শ দেন তো আপনারা ,তেমন ই না হয় দিলেন।
*********************
"হাসান জাহাংগিরনগর বিশ্ব:কলেজ থেকে সালে এইচ এস সি পাশ করে স্টার মার্কস নিয়ে।এসএসসি গ্রাম থেকে,সেটাও স্টার মার্কস ।আর্থিক অবস্থার কারনে সব পাবলিক ইউনি গুলাতে পরীক্ষা ও দিতে যেতে পারেনি।বড় পরিবার হাসানের।১২জন ভাই বোনের মাঝে সে সবার ছোট,মেধাবী।হাসানের বাবা বেশ বয়স্ক।তার পড়া /ভবিষ্যত নিয়ে পরিবারের কেউ তেমন কিছু বলেন না,তেমন কিছু বোঝেন ও না তারা। ঢাবি, মেডিকেল, বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েও হাসান টিকলনা।এইচ এস সির সময় কার কষ্টের কথাগুলো,স্যারদের বাসায় পড়তে যাওয়া,মাসের টাকাটা ঠিকমত দিতে পারতোনা হাসান,মনে পড়ে যায় সে দিন গুলোর কথা তার।তাও স্যার রা হাসান কে ব্যাচ থেকে বের করে দেননি।ও ভালো করবে এটা আশা করতেন স্যার রা।এখন কি হবে?!!হাসান মোটামোটি বিপর্যস্ত,এবছর আর কোন ইউনিতে চান্স পাবেনা। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ ছেলের মতো হাসান কে ও জাতীয় বিশ্ব:পড়তে হবে।এত কষ্টের ২বছরের পড়ার পর ভালো ১টা ইউনিতে চান্স পাবেনা ভেবে কাঁদল হাসান কয়েকদিন।জাবি তে ভর্তি পরীক্ষা হয় দেরিতে,আর এখানে চান্স পাওয়া টা লটারির মতো,জানে সে।তাও ভর্তি পরীক্ষা দিলো।ততোদিনে ঐ বছর শেষ।পরের বছর শুরু হয়েছে।ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে হাসান সিএসই তে চান্স পেয়ে গেল।কোথাও না হওয়ার পরে এমন বিভাগ এ সে ভর্তি হয়ে খুব খুশি হল।তার ক্লাশ শুরু হলো এইচএসসির পরের বছর আগস্টে,অনার্স ফাইনাল দিলো ক্লাশ শুরুর ৫ম বছর পরে ডিসেম্বরে।প্রজেক্ট দিতে দিতে ৬ষ্ঠ বছরের এর এপ্রিল।রেজাল্ট হয় মে মাসে,সে ছাত্র ভালোই ৩.৭৮ পায় ৪ এ।তার সাথের বন্ধুরা কুয়েট,চুয়েট,রুয়েট থেকে তার আগে বেরিয়ে জব করতে লাগলো এর দের বছর আগে থেকেই।

হাসান টিউশনি করিয়ে অনার্স টা শেষ করেছে।প্রোগ্রামিং করে নাই একদম ই।আসলে ইউনিতে পাশ করতে গেলে প্রোগ্রামিং করা লাগেনা,সিলেবাস এর বই পড়েই দিনরাত পার করে দিতো।তার ক্লাশের কেউই তেমন প্রোগ্রামিং করতো না।এসিএম নিয়ে কয়েক জন নাড়াচারা শুরু করছিল তবে হাসান এসিএম ধরে নাই।সে ভাবছে সিলেবাস পড়ে ভালো ১ টা সিজিপিএ নিয়ে বের হলে এমনিতেই ভালো জব হয়ে যাবে।বড় ভাই কেউ তো বসে নেই।এদিকে হাসানের রুমমেট ৪ জন ও দেখা যাবে পরে,আগে পাশ করি টাইপ ভাবনা ভেবে ৬ বছর কাটিয়ে দিলো।সি,সি++,সি শার্প,পিএইচপি,জাভা এর ১টা ও এরা কেউ ই মোটামোটি ও জানে না।

হাসানের রুমমেট ৪ জনের ১ জন দিলো শেষবছরে ড্রপ।সে দিলো রুম ছেড়ে।আর ৩ জনের সিজিপিএ ৩.৫২,৩.৪৯,৩.৮২।এরা শুধুই বই পড়ে গেছে।রেজাল্ট ভালো কিনতু এদের কারোই জব হচ্ছেনা।এদের কারোই মামা/চাচা/খালি নাই।বড় ভাই দের সাথে চেনাজানা ও নাই।হলে থাকছে এরা সবসময়।

প্রাইভেট ইউনিতে টিচার হিসেবে ২/১ টা কল পেয়েছে হাসান আর তার ১ জন রুমমেট,ব্যস ঐ পর্যন্ত ই।আর যাও কল পায় ওরা ,জব হয় না ,কারন প্রোগ্রামিং নিয়ে তেমন কিছুই বলতে পারেনা ৪জনের কেউই।

চালু১টা ধারনা হলো সিএসই তে জব অনেক এখন।কিনতু কই হাসান তো কল পায় না?!!তার চেয়ে কম সিজিপিএ নিয়ে ২ জন রুম মেটের জব হয়ে যায়।আর বেশি সিজিপিএ পাওয়া হাসান আর তার রুমমেট বসে বসে মাছি মারে।বিদেশে পড়তে যাবে সে উপায় নেই,আর্থিক অবস্থা ভালো না কারোই।মজার ব্যাপার হলো হাসানের এমএসসি ভর্তির সময় এসে যায়।যে ২ জন কোনরকমে জব পেয়েছে তারা কেউই এমএসসি তে ভর্তি হয় না জাবি তে।হাসান আর তার ঐ বন্ধু ভর্তি হয়ে যায় এমএসসি তে জাবি তে।হাসান এখন খুব হতাশ।কারন সে জানে আর ও ২.৫ বছরের জন্য ছাত্র হয়ে গেলো সে।ওরা ৪ জন ই খুব সাধারন পরিবার থেকে উঠে এসেছে।ভালো জব,সুখি জীবনের স্বপ্ন দেখেছিল।
এবার রাতুল এর গল্প।হাসানের রুমমেট রাতুল।ঢাকায় বড় হয়ে উঠেছে রাতুল,তার গল্প টাও হাসানের মতোই।তার চিন্তা কিভাবে ভালো ১টা সিকিউরড জব ম্যানেজ করা যায়।তার সিজিপিএ ৩.৫২।সে এমএসসি ভর্তি হয়নি জাবি তে।([কান্নার ইমো হবে]।তার ইচ্ছা এমবিএ করবে।অনেক চিন্তা করে দেখলো রাতুল ব্যাংকে জব হলে আর্থিক দিক দিয়ে মোটামুটি ভালো থাকা যাবে।আর এমএসসি ভর্তির হলে এমবিএ করতে পারবে না সে এখন।এদিকে বয়স হয়ে গেছে ২৬বছর ,৪ জনের ই।এম বি এ করতে ও ২ বছর লাগবেই ঢাবি তে।এর মাঝে হাসান ও আর ১ জন তো এমএসসি তে ভর্তি হয়ে গেলো।
রাতুল অনেক সিভি দিচ্ছে বিডিজবস এ,মেইলে।কিনতু জব তো হচ্ছে না।মাঝে মাঝে ভাইবার কল পায়,নিয়োগ কর্তারা এমন সব প্রশ্ন করে,হা করে তাকিয়ে থাকে রাতুল।কিছু উত্তর দেওয়ার চেষ্টা ও করে,ঐ পর্যন্তই ।এভাবে সে আর ও মনে মনে ভেবে দেখল:এমআইএস থেকে যদি এমবিএ করতে পারে ,তাহলে হয়তো সে ১টা জব পেয়ে যাবে।পড়াশুনা করেই ভাইবা দিতে যায় রাতুল,তাও টার মনে হচ্ছে ৪/৫ বছর ধরে টুকটাক কোডিং/প্রোগ্রামিং না করে ভাইবার সময় পড়ে জব পাওয়া যায় না।এটা রাতুলের নিজস্ব ভাবনা।তাই সে পিওর সিএসসি /সফটওয়ার/প্রোগ্রামার হতে চায় না।

মাঝে মাঝে ক্ষেপে ওঠে মন,ধুরররর!! কেন যে সিএসসি পড়তে আসলো!!
ঐ দিন রাতুল বললো "আর তো পারছি নারে, ১টা কিছু করা দরকার"!!


***************
গল্পটা শেষ এখানেই ,আসলে এটা গল্প ও না ঠিক,আপনারা যারাই পড়ছেন/ পড়বেন, মেজাজ খারাপ করতে পারেন,কিনতু হাসান,রাতুল রা খুব কস্টে আছে।পরিবার গুলো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ও জানিনা ওদের ভাগ্যে কি আছে,কি হবে ওদের?তবে ওরা ও ভালো ছাত্র ছিলো,এখন ও আছে।কিছু করতে না পারার কস্ট টা তারাই বুঝবেন ,যারা এ সময় টার ভেতর দিয়ে গেছেন
সবাই ভালো থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:২৮