বাংলার চারণ কবি নামে খ্যাত কবি শাহ বাঙালি গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে মারা যান। তিনি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার রুহিনী গ্রামে জন্ম নেন। তাঁর আসল নাম শফিউল্লাহ, তাঁর পিতার নাম খুরশিদ আলম মিয়া। তিনি সংগীত অনুরাগী ও স্বরচিত গান করতেন। পরিবারের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। এপার ওপার বাংলা চারণ শিল্পী হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। মোঃ শাহ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবেও অত্যধিক পরিচিত। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনকে চাঙা করার জন্য তিনি গান রচনা করে স্বাধীনতা প্রেমী মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁর রচিত ওরে বাঙালি, ভাষার তরে ঢাকার শহর, বুকের রক্তে রাঙালি, আর কত দুঃখ সইবে বাঙালি-স্বাধীনতাকালীন আলোড়ন জাগিয়েছিলো মুক্তিকামি মানুষদের। শাহ মোঃ বাঙালি ছিলেন একাধারে চারণ কবি, গণসঙ্গীত শিল্পী, ভাষা সৈনিক ও গণজাগরণের নেতা। তিনি সুশাসন, গণতন্ত্র ও বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য লড়াই করে গেছেন। তিনি মুহূর্তের মধ্যে গান রচনা করে সাড়া জাগাতেন শ্রোতাদের মাঝে। বেতার টিভিতে তিনি গানের স্ক্রিপ্ট জমা দিতেন না। তিনি সুর ও কথা নিজেই করতেন এবং সে অনুযায়ী গান গাইতেন। শাহ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ৬৬টি জনসভায় গান পরিবেশন করেছেন। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মাতিয়ে রাখতেন পুঁথিপাঠ ও জাগরণের গান গেয়ে। হয়ত তাঁর গান আর আমরা দেশবাসী শুনব না কিন্তু তার স্মৃতি আমাদের মাঝে থেকে যাবে।
তিনি রেখে গেছেন বাঙালি জাতির কাছে অমূল্য অবদান। যদিও তাঁর জীবনের এ ত্যাগের মূল্যায়ন না করি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে মুজিব বাইয়া যাওরে, বিশ্ববাসীর কাছে রইল আবেদন বন্ধ কর বাঙালির উপর খানের নির্যাতন, ছলে বলে ২৪ বছর বাংলা খাইলা চুষি জাতিরে বাঁচাইতে গিয়ে মুজিব হইল দোষী’ এ রকম গান গেয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, সাহস যুগিয়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। বলতে গেলেই তিনি আওয়ামী ঘরনার লোক ছিলেন। ১৯৭৫ পরবর্তীও তিনি বাঙালির জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে সরব ছিলেন। আজ তিনি আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি স্ত্রী ও ছেলে সন্তান রেখে গেছেন তাঁর অভাবী সংসারে। তিনি অযত্নে অবহেলায় পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। ঠিকমত তিনি চিকিৎসা করতে পারেননি। জীবিত থাকতে তিনি কোন ঐশ্বর্য গড়ে তুলতে পারেননি। তিনি মুক্তিযুদ্ধেই ত্যাগ স্বীকার করে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান অপরিমেয়। তাই তাকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান ও তার স্ত্রী পুত্রদের অভাবী জীবনের দিকে ফিরে দেখা, সহায়তা প্রদান করা বর্তমান সরকারের নিকট সময়ের দাবী। পরিশেষে আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।