এই কবিতাটাকে রোমান্টিক পর্যায়ে ফেলা যায়। কবিতাটি আমার অসম্ভব প্রিয়। এবং প্রায়ই শুনি। কবিতাটি লিখেছেন ''জয় গোস্বামী''
আমার মনে হয়, কবিতাটি আপনারা অনেকেই শুনে থাকবেন। এবং অনেকেরই হয়তো প্রিয় কবিতার একটি।
কবিতাটি আমি শিমুল মুস্তফার কন্ঠেই শুনি। অন্য কেউ আবৃত্তি করছে কিনা তা আমি জানিনা।
এই কবিতাটি আমি শুনে শুনে লিখেছি, তাই দু'একটা ভুল থাকা স্বাভাবিক।
আশা করি তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
___________________________________________
আজ যদি আমাকে জিগ্জেস করো,
এ জীবন নিয়ে তুমি কি করেছো এতোদিন ?
তাহলে আমি বলবো,
একদিন বমি করেছিলাম,
একদিন ঢোক গিলেছিলাম,
একদিন আমি ছোঁয়া মাত্র জল,
রুপান্তরিত হয়েছিলো দুধে,
একদিন আমাকে দেখেই এক অপ্সরার মাথা ঘুরে গিয়েছিলো,
একদিন আমাকে না বলেই আমার দুটো হাত ক'দিনের জন্য উড়ে গিয়েছিলো হাওয়ায়,
একদিন মদ হিসেবে ঢুকেছিলাম এক জবরদস্ত মাতালের পেটে,
একদিন সম্পূর্ণ অন্যভাবে বেড়িয়ে এসেছিলাম এক রুপসীর শোকাশ্র রুপে, আর তৎক্ষনাত আহা উহু আহা উহু করতে করতে আমাকে শুষে নিয়েছিলো বহু মূল্যের মসলিন,
একদিন গায়ে হাত তুলেছিলাম,
একদিন পা তুলেছিলাম,
একদিন জিভ ভেঙিয়েছিলাম,
একদিন সাবান মেখেছিলাম,
একদিন সাবান মাখিয়েছিলাম,
যদি বিশ্বাস না হয় তবে জিগ্জেস করুন আমার মৃত্যুকে,
একদিন কা কা করে ডেকে বেড়িয়েছিলাম সারাবেলা,
একদিন তাড়া করেছিলাম স্বয়ং কাকতড়ূয়াকে,
একদিন শুয়োর পুষেছিলাম,
হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন ছাগল,
একদিন দোদমা ফাটিয়েছিলাম একদিন চকোলের,
একদিন বাঁশী বাজিয়েছিলাম,
হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন রাধাকেও,
একদিন আমার মুখ আমি আচ্ছা করে গুজে দিয়েছিলাম একজনের কোলে, আর আমার বাকী শরীরটা তখন কিনে নিয়েছিলো অন্য কেউ,
কে তা আমি এখনো জানিনা,
যদি বিশ্বাস না হয় তো জিগ্জেস করো গিয়ে তোমার......,
একদিন আমার শরীর ছিলো তরু পাতায় ভরা,
আর আমার আঙুল ছিলো লম্বা সাদা বক ফুল,
আমার চুল ছিলো একঝাঁক ধুসর রঙের মেঘ,
হাওয়া এলে যেখানে খুশী উড়ে যাবে,
কেবল সেই জন্য,
একদিন মাঠের পরে মাঠে আমি ছিলাম বিছিয়ে রাখা ঘাস,
তুমি এসে শরীর ঢেলে দেবে কেবল সেই জন্যে,
আর সমস্ত নিষেধের বাইরে ছিলো আমার দুটো চোখ,
এ নদী থেকে,
ও নদী থেকে,
সেই সে নদীতে কেবলই ভেসে বেড়াতো তারা,
সে রকমই কোনো নদীর উপর,
রোগা একটা সাঁকোর মত,
আমি পেতে রেখেছিলাম আমার স্বাস্টাঙ্গ শরীর,
যাতে এপাড় থেকে ওপাড়ে চলে যেতে পারে লোক কোনো বাধা নিষেধ ছাড়াই,
যাতে ওপাড় থেকে এপাড়ে চলে আসতে পারে লোক কোনো বাধা নিষেধ ছাড়াই,
সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন,
এপাড় থেকে ওপাড়ে চলে গিয়েছিলো,
আসগর আলী,
মন্ডলরা,
বাবুল ইসলামরা,
সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন ওপাড় থেকে এপাড়ে চলে এসেছিলো, তোমার নতূন শাড়ী পরা মা,
টেপ জামা পরা আমার শান্তু মাসী,
একদিন সংবিধান লিখতে লিখতে,
একটু তন্দ্রা এসেগিয়েছিলো আমার,
দুপুরের ভাতঘুম মতো এসেছিলো একটু,
আর সেই ফাঁকে কারা সব এসে ইচ্ছে মত কাটাকুটি করে গিয়েছে,
দেহি পদ-পল্লব মুদোর রং,
একদিন একদম ন্যাংটো হয়ে,
ছুটতে ছুটতে চৌরাস্তার মোড়ে এসে,
আমি পেশ করেছিলাম বাজেট,
একদিন হা করেছিলাম,
একদিন হা বন্ধ করেছিলাম,
কিন্তু আমার হা এর মধ্যে কোনো খাবার ছিলনা,
কিন্তু আমার না এর মধ্যে কোনো খাবার ছিলনা,
একদিন দুই গাল বেয়ে ঝড় ঝড় করে রক্তকরন অবস্থায়,
জলে,
কাদায়,
ধান ক্ষেতে,
পাট ক্ষেতের মধ্যে হাতরে হাতরে আমি খুঁজে ফিরেছিলাম আমার উপড়ে নেওয়া চোখ,
একদিন পিঠে ছোড়া গাঁথা অবস্থায়,
রক্ত,
কাশতে কাশতে আমি আঁছড়ে এসে পড়েছিলাম দাওয়ায়,
আর দল বেঁধে লন্ঠন উঁচু করে,
আমায় দেখতে এসেছিলো গ্রামের লোক,
একদিন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে থেকে,
সারা গায়ে আগুন নিয়ে আমি ছুটে বাড়িয়েছিলাম,
আর লাফ দিয়ে পড়েছিলাম পঁচা পুকুড়ে,
পরদিন কাগজে সেই খবর দেখে আঁতকে উঠেছিলাম,
উত্তেজিত হয়েছিলাম,
অশ্রুপাত করেছিলাম,
লোক জড়ো করেছিলাম,
মাথা ঘামিয়েছিলাম,
আর সমবেত সেই মাথার ঘাম ধরে রেখেছিলাম দিস্তে দিস্তে দলিলে,
যাতে পরবর্তীতে কেউ এসে গবেষনা শুরু করতে পারে যে,
এই দলিলগুলোয় আগুন দিলে ক'জনকে পুড়িয়ে মারা যায়,
মারো মারো মারো,
স্ত্রী ও পূরুষ লোকের জন্য আয়ত্ব কর দু'ধরনের প্রযুক্তি,
মারো মারো মারো,
যতক্ষন না মুখ দিয়ে বমি করে দিচ্ছে হৃদপিন্ড,
মারো মারো মারো,
যতক্ষন না পেট থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে পেটের বাচ্চা,
মারো মারো মারো,
এইখানে এমন এক আর্তনাদ ব্যাবহার করা দরকার,
যা কানে লাগলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে মাথার খুলি,
এইখানে এমন এক সঙ্গম ব্যাবহার করা দরকার,
যার ফলে অর্ধেক শরীর চিরকালের মত পূতে যাবে ভূ-গর্ভে,
এইখানে এমন এক থুথু নিক্ষেপ করা দরকার,
যে থুথু মুখ থেকে বেরোনো মাত্রই বিদীর্ণ হবে অতীকায় নক্ষত্র রুপে, এইখানে এমন এক গান ব্যাবহার করা দরকার,
যা গাইবার সময় নায়ক আর নায়িকা শুন্যে উঠে গিয়ে ভাসতে থাকবে, এইখানে এমন এক চুম্বন চেষ্টা প্রয়োগ করা দরকার,
যার ফলে মারো থেকে ও অক্ষর,
বাঁচাও থেকে ও অক্ষর,
তীব্র এক অভিকর্ষযোগ টানে ছিঁড়ে বেড়িয়ে এসে পরস্পরের দিকে ছুটে যাবে,
এবং এক হয়ে যেতে চাইবে,
আর আবহমান কালের জন্য,
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দুই প্রেমিক প্রেমিকার মুখ,
আকাশের দিকে উত্তোলিত তাদরে ক্রোড় বেয়ে থাকা হা,
একটি অনন্ত ও ধ্বনীতে স্তব্ধ হয়ে থাকবে,
আজ যদি আমাকে জিগ্জেস করো,
শত শত লাইন ধরে তুমি মিথ্যে লিখে গিয়েছো কেন,
যদি জিগ্জেস করো একজন কবির কাজ কি হওয়া উচিৎ,
কেন তুমি এখনো শেখনি,
তাহলে আমি শুধু বলবো,
একটি কণা,
বলব,
বালির একটি কণা থেকে আমি জন্মেছিলাম,
জন্মেছিলাম লবনের একটি দানা থেকে,
আর অজানা অচেনা এক বৃষ্টি বিন্দু,
কত উঁচু সেই গাছের পাতা থেকেও ঠিক দেখতে পেয়েছিলো আমাকে,
আর ঝড়েও পড়েছে আমার পাশে,
এর বেশী আমি আর কিচ্ছু জানিনা,
আজ যদি আমাকে জিগ্জেস করো,
কোন গ্রহ,
কোন অন্ধকূপ,
রাষ্ট্রের কোন কোন গোপন প্রণালীর ভেতর তুমি ঘুরে বেড়িয়েছো,
তুমি বেড়াতে গিয়েছো,
কোন অস্ত্রাগারে তুমি চা খেয়েছো এককাপ,
তুমি মাথা দিয়ে ঢুষিয়েছো কোন হড়িণ,
কোন বিগ্জাপন,
কোন ফ্লাইওভার,
তোমার পায়ের কাছে এসে মুখ লুকিয়েছে কোন হড়িণ,
তোমার কাছে গলা মুছড়ে দেওয়া আবেদন এনেছে কোন মরাল,
তাহলে আমি বলবো,
মেঘের উপড় দিয়ে,
মেঘের উপড় দিয়ে,
মেঘের উপড় দিয়ে,
মেঘের উপড় দিয়ে,
আমি কেবল উড়ে বেড়াইনি,
হাজার হাজার বৃষ্টি ফোটায় আমি লাফিয়ে লাফিয়ে নেচে বেড়িয়েছি,
মাঠে আর জনপদে,
আজ যদি আমাকে জিগ্জেস করো,
তুমি একই বৃন্তে ক'টি কুসুম,
তুমি সান্ডিল্য না ভরদ্দাদ,
তুমি দুর্লভ না কৈবর্ত,
তুমি ব্যাটারী না হাত বাক্স,
তুমি পেঁপে গাছ না আতা গাছ,
তুমি চটি পায়ে না জুতাপায়ে,
তুমি চন্ডাল না মুসলমান,
তুমি মরা শীলা না জ্যান্ত শীলা,
তাহলে আমি বলবো সেই রাত্রির কথা,
যে রাত্রে শান্ত ঘাসের মাঠ ফুঁড়ে,
নিঃশব্দে,
নিঃশব্দে,
নিঃশব্দে,
চতূর্দিকে মাটি পাথর ছিটকোতে ছিটকোতে,
তীব্র গতিতে আমি উঠতে দেখেছিলাম এক কূতুব মিনার,
ঘূর্ণমান কূতুব মিনার,
কয়েক পলকে শুন্যে মিলিয়ে যাবার আগে,
আকাশের গায়ে তার ধাবমান আগুনের পুচ্ছ থেকে,
আমি সেদিন দু'দিকে দু'হাত ভাসিয়ে দিয়ে,
ঝাঁপ দিয়েছিলাম ফেনায় ফেনায় তোলপার এই সময় গর্ভে,
আজ আমি দুই পাখনায় কাটতে কাটতে চলেছি সময়,
অতীত আর ভবিষ্যত দুই দিকে,
কাটতে কাটতে চলেছি সময়,
এক অতীকায় মাছ,
আমার লেজের ঝাপটায় ঝাপটায়,
গড়ে উঠছে জলস্তম্ভ,
ভেঙ্গে পরছে জলস্তম্ভ,
আমার নাক দিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া ফোয়ারায় উসৃত হয়ে উঠছে জ্বলন্ত মেঘপুন্জ,
আমার নাসার উপরকার খর্গে বাঁধা রয়েছে একটি রশি,
যার অপর প্রান্ত উঠে গেছে অনেক অনেক উপড়ে,
এই পৃথিবী ও সৌরলোকের আকর্ষণ সীমার সম্পূর্ণ বাইরে,
যেখানে প্রতি মুহুর্তে ফুলে ফুলে উঠছে অন্ধকার ইথার,
সেইখানে একটি সৌরদ্বীপ থেকে আরেকটি সৌরদ্বীপের মধ্যপথে,
দুলতে দুলতে,
ভাসতে ভাসতে,
চলেছে একটি আগ্নেয় নৌকা,
এর বেশী আর কিছুই আমি বলতে পারবোনা[/sb।
_________________________________________
এতক্ষন ধৈর্য্য ধরে শোনার জন্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১০:১৯