তীক্ষ্ণ, অথচ এমনি এক অজানা গহ্বর থেকে টান-টান আশা সারাক্ষণ বিহ্বল করে; অভিজ্ঞতা কিছুই ছিল না বলেই জোড়াচোখে দু'বেলা হাসি আর ভাবি—‘প্রেমের হত্যাকারী তুমি। কোনোদিন মুক্তি পাবে না।’ আরো মনে পড়ে— ‘খাচার পাখি তুমি। খাচার ভেতর না ঢুকলে মাজা ভেঙে যাবে।’ দৃষ্টি জানালায় দাঁড়ানো আরো কিছু অপেক্ষা… তারপর এ-থেকে শুরু, এ-থেকেই অপেক্ষার টানেল ঘুরতে ঘুরতে প্রাত্যহিক চিন্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছে ইচ্ছের ঠিক আগে যারা চেষ্টা করেছে তাঁদের গতিপথ থামবে কোথায়? কিংবা দৃষ্টিযাত্রার শেষবিন্দুতে যেতে পারলে অপেক্ষাক্ষরণ বিষয়ক কিছু রচনা বাস্তবনির্ভর হলেও পূর্ণ হয়ে ওঠবে কী? নাকি রক্ত মাংসের ঘ্রাণে পাপগুলোর চেতনারূপ-স্মরণযোগ্যতা মেপে দেখবে?… যন্ত্রণা কিংবা সান্ত্বনা যে কারো থাকতে পারে, যতদূর বসে আছি, মিশে আছি, তাহাই স্বাভাবিক গতি। জানবে নীরবে নয় শত-সহস্র ইশারায়, সম্ভাবনায়, একাকী জেগে আছি কৃত্রিম সাজে। তবু মেঘে ঢাকা রোদ স্মৃতি ছিঁড়ে সুতো হলো; দিনের স্মৃতিগুলো ক্রমান্বয়ে চোখের প্রত্যক্ষতা হারিয়ে যাচ্ছে, হারাচ্ছে অভিজ্ঞতা পাশ চেষ্টাসহ আশাকঙ্কালের স্তুপ…
বরফ গলে যাওয়া শব্দগুলোর অনুভূতিহীন হলেও অজানারহস্য ভেদ করে আলাদা কৌতূহল বাড়ায়; কল্পনায় দোলায় কিন্তু কানে বাজে না। ফলে আগামীর কবিতার প্রকরণ-ধরণ-ধারণ কি হবে জানি না; আমি ভাবি কবিতার ভেতর থাকবে কল্পনাকাতর, সর্বইন্দ্রিয়াতীত, সময়ান্তের অজানা গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া কথকতা… কবিতায় লিখা হবে কালের শাদাকাহিনী, আগামস্মৃতিবার্তা। আমি কি জানি— কবিতা কেনো যে নিভৃতে ভাবায় সকল মুহূর্তের অক্ষমতা… তবে কেনো যে চোখের জল লিখে রাখে না-বলা আরো… আরো যত কাহিনী অলেখা রচনা। আরশি চোখ শুধু দৃশ্য দেখি আর ভাবি, জল থেকে যত স্পর্শ আসে, সবই স্মৃতির পেছনে হাঁটে, পেছনেও থাকছে পাহাড়সম কথা
অবসর কি জানে? আমার দিন যাপন নিয়ে আমার জিজ্ঞাসা আবুল হাসানের মতো আমারও বলতে ইচ্ছে করে ‘আমার হবে না আমি বুঝে গেছি…’ অথবা ‘আমি জানতাম হে অর্জুন! আমি ঠিক জানতাম!...’ এক ব্যর্থ আশায় পার করি সময়, কথা হয় ঘন তুষারের সাথে, কখনো দূর্বাঘাসে বসে, কখনও গাছের ছায়ায় বা খাড়ারোদে; দীর্ঘরাত্রির কাছে শুশ্রুষা চেয়ে গোপনে সমর্পিত হই… গভীর মমতায় কেউ কখনোই কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেনি; একটু-আধটু খোঁজ খবর নেয়নি! মাঝে মাঝে মন বিষণ খারাপ লাগে, চাই মন খারাপের আধুনিকা শিখে কৃত্রিম জীবনযাপন করি চালাক হই, কিন্তু পারি না!
কবিতাই কৃত্রিম জীবন যাপন থেকে দূরে রাখছে, কবিতাই আমাকে বদলে দিয়েছে, জীবন চিনিয়েছে, ভাবতে শিখিয়েছে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ কবিতার জন্যই যে আদিগন্ত সারল্য থেকে আরো গভীরে টানছি, নিত্য নতুন আশায় পুনরুজ্জীবিত হয়ে স্বপ্ন বোনার উম্মাদনা বুকে লালন করে বেঁচে আছি আর হৃদয়ের সব আকাঙ্ক্ষাকে চেপে নকল মানুষ সাজার আনন্দে বিভোর হয়ে ভাবছি ‘মানুষ হইলে মানুষ মিলে, নইলে মানুষ মিলে না'
অনেকেই বলেন আমি সহজকথায় কবিতা লিখি— আমি তা জানি ও মানি; আমি আমার জন্য লিখি, শঙ্খের মতো আমিও ভাবি— ‘কেন লিখি’ কবিতার একটি লাইন বানিয়ে লিখতে শিখিনি, ফলে আমি যৎসামান্য লিখি, নিজের জন্য লিখি একা একা পড়ি আর হাসি, হাসার ভেতরও একধরণের আনন্দ-মুগ্ধতা লুকিয়ে থাকে, এই লুকানোই আমার স্বপ্ন, আমার ভালোবাসা, আর আমার কল্পনার গাঢ়তম অনুভূতি-অনুভব। হয়ত একদিন প্রিয়ভালোবাসা থেকে প্রিয়কবিতা থেকে ছিঁটকে পড়বো, কিন্তু এখনও জানু পেতে আছি একটি শ্রেষ্ট কবিতা লেখার আশায়, জানু পেতে আছি ভালোবাসার অপেক্ষায়
আমি মোহগ্রস্থ মানুষ ভালোবাসার কাঙাল, দিনের পর দিন সে আশা, সে স্বপ্ন এড়াতে পারি না। কারণ জগত, শিল্প, সৌন্দর্য, সংগীত, ঘুমন্তপাহাড়, আদিগন্ত জ্যোৎস্না, রঙধনু… আমাকে মুক্তির পথ দেখায়। একদা আমি সব হতে চেয়েছিলাম। প্রাণভরে যেমন বৈরাগ্যের জীবন চেয়েছি। কখনো সংসারী হতে চাইনি। যেমন হতে চাই না কারো শ্রেষ্ঠ প্রেমিকও সব করার দুঃসাহস বা দার্ঢ্য কোনোটাই আমার নেই। নিজের আনন্দের জন্য কিছু ব্যর্থ পঙক্তি রচনা করেছি। স্রেফ নিজের অতীতকে স্মরণ রাখার জন্য জগতের এতো শুদ্ধ মানুষকে দেখে নিজের গ্লানি বাড়াবার ধৃষ্টতা হয়নি। গাঢ় পূর্ণিমারাতে একদিন আমি যখন ভূমধ্যসাগরের জলরাশি সেঁচে হাওয়ার ভেতর চন্দ্রশিকারে যাব সেদিন কবিতার উদ্দেশ্যে কিছু জলরাশি, কিছু জ্যোৎস্না, কিছু কল্পনা বিসর্জন দিয়ে আসবো সত্যি, সত্যি…
সময় আমার কাছে বেশি আধুনিক মনে হয়; প্রতিটি মুহূর্তকে মনে হয় সমকাল। সময়ে সব আকাঙক্ষারা গুপ্তচর হতে পারেনি তাই স্বপ্নকে বলি তুমি ফুল হও, পাপড়ি হও, সুর হও, ভাবো এতো আশা নিয়ে বেঁচে আছো। কেনো বিশ্বাস চেপে আনন্দ পাও; কেনো শেষ বিকেলে রোদ পশ্চিমাকাশে হেলে গেলে নীড়ে ফিরে আসো? ঘুমের প্রতীক্ষায় রাত্রিবহরে একা জেগে মনোযুদ্ধে রত থাকো… অভিমানে চশমা পরো
আশঙ্কায়, আশার ভেতরটা কেঁপে ওঠে বারবার; আমি অতিমাত্রার সংবেদনশীল; মানাভিমান যেমন অন্যদের চেয়ে বেশি, তেমনি মন-মানুষের আঘাত আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আমি স্বপ্ন নিয়ে খেলি। একদিন এমনই হতে পারে জগতের ভাঙাআকাশ, ডাকাতজ্যোৎস্না, অনাস্বাদিতবেদনা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে দূরপাহাড়ের কিংবা তুষারবাগানে, পাশে তুমি কিন্নর গলায় ডেকে ওঠবে… আর আমি সে সুরের প্ররোচণায় ঘোরগ্রস্ত হতে হতে স্বপ্নাবিষ্টের মতো কবিতা লিখে যাব
মনের-খরা-শূন্যতা লিখে কেবলি কবিতার কাছে শুশ্রুষা চাইবো আর…
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ২:৪৩