পুরুষের চার বিয়ে নিয়ে অনেক জায়গায় অনেক ভাবে বিতর্ক হয়েছে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারনেই ধর্মতেও এর প্রভাব পড়েছে। এ নিয়ে বহু সমালোচক বহুভাবে এর সমালোচনা করেছে। নারীকে পুরুষের অধিনস্ত করার জন্যেই এই সব প্রথার চালু হয়েছে, নারীদের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করার জন্যে এই সব প্রথার ব্যবস্থা, নারীদেরকে অসম্মান বা অমর্যাদা করার জন্যে এইসব প্রথার ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রত্যেক সমালোচকের সমালোচনার উদ্দেশ্য থাকে এইটা যে চার বিয়ের কারনেই নারীরা পুরুষের নিকট কৃতদাস সরূপ, তারা পুরুষের কাছে নিরাপদহীন, অমর্যাদাকর অবস্থান নিয়ে চলে ইত্যাদি। আর এটা ঘটেছে দর্মের কারণে। কারণ ধর্মে যদি পুরুষ যদি চার বিয়ে করতে পারে তাহলে নারীদেরকে কেন চার বিয়ে করতে অনুমতি দিল না? তাহলে ধর্মে এটাকে কি বৈষম্য বলা যায় না? যদি পুরুষ পারে তবে নারীরা কেন করতে পারবে না? তবে ইসলাম ধর্মে চার বিয়ে প্রসঙ্গে আমার বিশ্লেষন হলো এইরূপ।
ইসলাম ধর্মে চার বিয়ের কথা বলা হয়েছে, এ কথাটা সঠিক। কিন্তু কিছু পুরুষকে তার পরিস্থিতির জন্যে বিয়ে করতে নিরুৎসাহ করা হয়েছে তা কিন্তু কেউ বলেন না। পুরুষের চার বিয়ে নিয়ে হৈ হুল্লোর করে সবাই এই বলে যে এতে করে নারীরকে অমর্যদা করা হয়েছে, কিন্তু পুরুষকে বিয়ে করার জন্যে যে অযোগ্য ঘোষনা করা আছে এটা কিন্তু কেউ বলে না। এখন আসুন কোন পুরুষকে বিয়ে করার জন্যে অযোগ্য ঘোষনা করা হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করি।
ঐসব পুরুষকে বিয়ে করতে নিরুৎসাহিত বা নিষেধ করা হয়েছে, যারা মনে করে বিয়ের পর সে তার স্ত্রী বা সন্তান (যদি সে সন্তান গ্রহন করে) এর ভরণপোষণ করতে পারবে না সঠিক ভাবে। বলা আছে, যতদিন পর্যন্ত সে এই অবস্থান অর্থাৎ তার বিয়ে করা স্ত্রী বা তার সন্তান (যদি সে সন্তান গ্রহন করে) ভরণপোষণ করার মত যোগ্যতা লাভ করতে না পারে ততদিন পর্যন্ত সে বিয়ে করতে পারবে না। এর জন্যে সেই সব পুরুষের এবাদত সরূপ বলা হয়েছে, প্রতিদিন রোজা রাখা, তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে একদিন পরপর রোজা রাখা। এখানে রোজা রাখার উদ্দেশ্য এই নয় যে , সে রোজা রাখলেই তার আয় বৃদ্ধি পাবে।
এখানে এই এবাদতের উপর আমার নিজ বিশ্লেষন দিচ্ছি, রোজাকে আমরা সংযম বা সিয়াম হিসাবে জানি। বিবাহ অযোগ্য পরুষের জন্যে কি সংযমের প্রয়োজন? প্রথমত তার দৈহিক সুস্থতার জন্যে জৈবিক চাহিদাকে সংবরণ করা। যা রোজা রাখার কারণে সম্ভব। এই কারণে যে রোজা আপনি রাখছেনই সংযমের উদ্দেশ্যে। দ্বিতীয়ত রোজা রাখা একটু কষ্টকর ব্যাপার যা আমরা একমাস ফরজ রোজার দ্বারা বুঝতে পারি। আতএব প্রতিদিন বা একদিন পরপর রোজা রাখার অর্থই হচ্ছে কষ্টের পরিমানটা কি পরিমানে বেড়ে যাওয়া তা অনুমান করা। অতএব এই কষ্ট থেকে যত তাড়াতাড়ি রেহায় পেতে হলে নিজেকে কিছু একটা করতে হবে, অর্থাৎ যোগ্যতা অর্জনের জন্য ইন্সপাইরেশন সৃষ্টি করা। অর্থাৎ আমি যত তাড়াতাড়ি নিজের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবো তত তাড়াতাড়ি রোজা রাখার কষ্ট থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবো। আমার মতে যে কোন এবাদতই হচ্ছে মানুষের মধ্যে মেন্টাল পিস ক্রিয়েট করা। এজ এ সাইকাটিস্ট হিসাবে আপনি যদি চিন্তা করেন, মানুষের মধ্যে মেন্টাল পিস থাকলে, তার শরীর সুস্থ থাকে ফলে তার মধ্যে এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি পায়, এতে করে তার মধ্যে কাজ বা পরিশ্রম করার যোগ্যতা বৃদ্ধি বা প্রেরণা লাভ পায়। এ গেল বিবাহ অযোগ্য পুরুষের ক্ষেত্রে তার অবস্থান।
তাহলে আমরা পেলাম কেন পুরুষকে বিয়ে করার জন্যে অযোগ্য ঘোষনা দিয়েছে ইসলাম ধর্মে? কারণ সে তার স্ত্রী সন্তানের (যদি সে বিয়ের পর গ্রহন করে) ভরণপোষণ করতে অযোগ্য বলে। তাহলে কথা হলো কোন নারীকে বিয়ে করতে হলে পুরুষকে আগে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এখন আমার প্রশ্ন এই যে, এই বিধান দিয়ে আল্লাহ কি নারীর প্রতি পুরুষের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন করেছেন কিনা? এটাই যদি হয় তাহলে নারী যে পুরুষ দ্বারা অবহেলিত নয় এটা কি বুঝায় না?
এখন আসুন আরও একটি বিষয়ে আল্লাহর বিধান কি বলছে, "পুরুষ নারীর উপর কর্তৃত্ব রাখে, আল্লাহ তাদের একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠতা দান করেছেন বলে এবং তারা নিজের ধন ব্যয় করে বলে।" এই আয়াতের অংশটি যদি বিশ্লেষন করা যায় তাহলে কি দাঁড়ায়। পুরুষ এই কারণে নারীর উপর কর্তৃত্ব রাখে কারণ তারা নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং তারা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহন করে। এখানে একটি শব্দ দৃষ্টি কটু বলে অনেকের কাছে মনে হয় যা হলো "শ্রেষ্ঠ", তবে আমি একটি ইংরেজি ট্রান্সিলেশনে দেখেছি সেখানে শ্রেষ্ঠতা শব্দটির বদলে ব্যবহার করেছে "সার্টেইন কোয়ালিটি" অর্থাৎ নারী এবং পুরুষের কিছু ডিফারেন্সির কারনে হয়তো "শ্রেষ্ঠ" বা "সার্টেইন কোয়ালিটি" বলা হয়েছে যেমন, নারীর চেয়ে পুরুষ অবাধে চলাফেরা করতে পারে, পুরুষ নিজের নিরাপত্তা দিতে পারে, পুরুষ নারীর চেয়ে শক্তিশালী, পুরুষ নারীর চেয়ে পরিশ্রমী ইত্যাদির কারনে হয়তো। ধরেই নিলাম পুরুষ নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে কর্তৃত্ব পেল পুরুষ, তবে পরের অংশে আবার বলা আছে "তারা নিজের ধন ব্যয় করে বলে" অর্থাৎ তারা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহন করে।
অর্থাৎ বিয়ের পরে নারী যখন স্বামীর ঘরে আসবে তখন থেকে নারীর অর্থ ব্যয় করার কোন দায়িত্ব নাই, যদি নারী বিয়ের পরে তার পিতার কাছ থেকে কোন সম্পদ নিয়ে আসে সেটাও ব্যয় করা কোন প্রয়োজন নেই তার স্বামীর ঘরে এবং এটাও বলা আছে যে বিয়েতে যে মহরানা আদায় করা হয় তা পরিশোধ ছাড়া স্ত্রীর সাথে স্বামীর সহবাস পর্যন্ত নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ এই মহরানার অর্থ নারী স্বামীর ঘরে প্রবেশের আগেই পাচ্ছে, কিন্তু তার স্বামীর ঘরে ব্যয় করতে সে বাধ্য নয়। সে এই সবকিছুই নিজের জন্যে সঞ্চয় হিসাবে রেখে দিতে পারে বা সে স্বামীর ঘরে আসার পরে নিজে ইউটিলেশন করে তার সম্পদ বা অর্থকে বৃদ্ধি করতে পারে এবং তার লভ্যাংশও তার স্বামীকে দিতে সে বাধ্য নয় । তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে অর্থনৈতিক ভাবে বিয়ের পর পুরুষের চেয়ে নারীরাই বেশী নিরাপদ। কারণ প্রথমত তার ভরণপোষণের চিন্তা নেই, দ্বিতীয়ত তার ভবিষতেরও চিন্তা নেই। কারণ তার পিতার সম্পদ এবং তার স্বামীর দ্বারা প্রাপ্ত মহরানার অর্থ এবং যদি সে ইউটিলেশন করে লাভ করে, সবই তার ভবিষ্যত সঞ্চয় হিসাবে থাকছে। অর্থাৎ একটি শ্রেষ্ঠ শব্দ দ্বারা নারীর সব নিরাপত্তা যদি পুরুষের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে নারী কেমন করে নিরাপদহীন বা অসম্মানজনক বলে মনে হবে এই ধর্মে। বরং নারীকে আরও নিরাপদ এবং সম্মানজনক অবস্থান দেয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি।