- ভাই গানটা শুনেন। এত ভালো গান আগে কখনও শুনেন নাই।
- না ভাই আপনার ভালো লাগলে আপনই শুনেন।
- আরে ভাই এটা ****** এর গাওয়া একটা হিট গান। অসম্ভব জনপ্রিয় শিল্পী। বাচ্চা থেইকা বুড়া সবাই ওনার হার্ডকোর ফ্যান।
- সরি ভাই, আমি ওনার নামটা এই প্রথম শুনলাম।
- কন কি ভাই? ওনারেই চিনলেন না। আপনি তো বোকার স্বর্গে বাস করেন মিয়া।
উপরোক্ত কথোপকথনের বোকার স্বর্গে বাস করা লোকটি আমি নিজে আর চালাকের স্বর্গে বাস করা ভদ্রলোকটি আমার এলাকার এক বিজ্ঞ ভাইবন্ধু। আর গানখানা হল তথাকথিত নামজাদা কোনও হিন্দি গায়কের গাওয়া আইটেম সং নামক একধরণের উচ্চমানের সঙ্গীত। যা কিনা বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার কাছে অসংখ্য জনপ্রিয়।
এবার কাজের কথাটা বলি। কারও ব্যক্তিগত পছন্দকে হেয় করার কোনও ইচ্ছা আকাঙ্খা আমার নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত পছন্দের নামে এই সব ভিনদেশী কালচার যখন আমাদের সংস্কৃতিকে গ্রাস করে চলছে তখন মুখ বন্ধ করে বসে থাকাটাও একটা মুর্খামি। যেখানে কোনও অনুষ্ঠান মানেই হিন্দি গানের ছড়াছড়ি। সেই অনুষ্ঠান পাড়া মহল্লার পিকনিক হোক আর হোক না কোনও সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসব, হিন্দি গানের সাথে উদ্দাম উছছ্রিখল নৃত্য না থাকলে কোনও অনুষ্ঠানই যেন পূর্ণতা পায় না এদেশে এখন । দেশের উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু যে সব বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সেখানকার কালচারাল প্রোগ্রাম গুলো দেখলেও মাঝে মাঝে অবাক হতে হয়। এই যদি হয় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা তাহলে এ জাতির কাছ থেকে আর কতটুকু আশা করা যেতে পারে।
কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কানে হেডফোন লাগিয়ে হিন্দি গান শুনুক আমার তাতে কোনও আপত্তি নাই। কিন্তু যখন বিনোদনের নামে এই সস্তা রসিকতা পুরো সমাজ জুড়ে ক্যান্সারের মত ছড়িয়ে পরতে থাকে তখন আসলেই আমাদের এই অত্যাচার বন্ধ করা দরকার। ছোট ছোট বাচ্চারা বাংলাদেশের কয়জন কণ্ঠশিল্পী কে চিনেন আমি জানি না কিন্তু হিন্দি সব সিঙ্গার দের নাম তাদের ঠোঁট আগায় থাকবে আশা করি। এই যখন বর্তমান প্রেক্ষাপট তখন আমরা নিশ্চয় বুঝতে পারছি যে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোন দিকে ঠেলে দিচ্ছি। এখন হয়ত বাংলা সংস্কৃতির রুগ্ন দশা আমরা দেখতে পারছি তারা হয়ত সেই সুযোগটাও পাবে না।
কিছুদিন আগে রব উঠেছিল যে কিছু ইন্ডিয়ান চ্যানেল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু সেটা কেন করা হল না এটা বুঝতে পারছি না। পা এর উপর পা তুলে দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ দেখতে দেখতে হয়ত কেউ কেউ ঘুমিয়ে পরব অথবা কেউ না দেখার ভান পাশ ফিরে শুয়ে থাকব। আমরা কি জানি ওই গান গুলো এখন আমাদেরকে টার্গেট করেই বানানো হচ্ছে। কারন আমরা না বুঝে শুনেই গিলে চলছি গান রূপী তাদের প্রোডাক্ট অথবা আইটেম।
হিন্দি ভাষা অথবা তাঁদের কালচার কে ছোট করার অভিপ্রায় আমার নাই। তাই বলে নির্বিচারে তাঁদের তৈরি প্রোডাক্ট কেন গ্রহন করতে হবে? ভাল খারাপের পার্থক্য বুঝে ভালোকে মূল্যায়ন করার পাশাপাশি খারাপটাকেও বর্জন করার শিক্ষা দিতে হবে আমাদের সন্তানদের।
বাংলাগানের এই করুন দশা তাঁদের জন্যই যারা এই দেশে জন্মে সারাক্ষন ভিনদেশী পণ্য নিয়ে মেতে আছে। তাদেরকে বলব বাংলাগান শুনুন অবশ্যই বাংলা গানের সুদিন ফিরবে। এখনও দেশে অসংখ্য প্রতিভাবান শিল্পী আছে। তারা আপনাদের হতাশ করবে না।
তাহলে অন্তত আমরা যারা বাংলা গানকে ভালবাসি তাদেরকে কেউ খ্যাত বলে গালি দিতে পারবে না। আর আমাদেরকে বাস করা লাগবে না বোকার স্বর্গ নামক অদ্ভুত এক ঝুলন্ত এক স্থানে যেখান থেকে না যায় নিচে নামা- না যায় উপরে ওঠা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৩০