১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
সাংবাদিক সেলিনা পারভীন প্রতিদিনের মত সেদিনও তার ৬ বছরের ছোট্ট ছেলে শাহীনকে আদর করছিলেন।তাকে ঘুম পাড়ানি গান শুনাচ্ছিলেন।ছেলে ঘুমালে মা তার কপালে আলতো করে চুমু দিলেন।হটাত দরজায় প্রচন্ড শব্দ হল।ছেলে শাহীনের ঘুম ভেংগে গেল।সেলিনা পারভীন দরজা খুললেন।সেখানে কিছু পাকিস্তান আরমি ও রাজাকারদের দেখতে পেলেন।রাজাকাররা তাকে বলল তোমাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।সেলিনা পারভীন তাদের সাথে গাড়িতে উঠছিলেন।যাওয়ার আগে তিনি শাহীনকে বললেন বাবা তুমি ঠিক মত খেয়ে নিবে।আমি একটু পরই আসছি।সেই যে সেলিনা পারভীন গেলেন আর তিনি আসলেন না।পরে জানা গিয়েছে রাজাকাররা তাকে নির্মম অত্যাচার করে মেরে ফেলেছে।শেষ পর্যন্ত তার লাশ ফেলে গেল রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে।যদিও সে লাশ আর চেনা যায়নি।এভাবে ১৪ই ডিসেম্বর একে একে দেশের সেরা সন্তানদেরকে হত্যা করতে হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেছিল এই আলবদর বাহিনী,রাজাকার ও আলশামস বাহিনী।এসব কথা আমরা সবাই জানি। আমি কোনও ইতিহাস লিখতেও বসিনি।
পূর্ব পাকিস্তান আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ।তিনি সেদিন বললেন দেশে কোনও যুদ্ধাপরাধী নেই এবং কখনও ছিলও না।এর দু দিন যেতে যেতে না যেতেই জামাতের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মোল্লা বললেন "মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল সুন্দরী নারীর লোভে,হিন্দুদের সম্পদ লুঠ করার জন্য।তারা দেশ কে ভারত বানাবার ষড়যন্ত্রে এখনও লিপ্ত আছে।"বাংলাদেশর যে এই অবস্থা হবে তা সবাই জানতো।আজকে তাদের কত বড় সাহস তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করে যাচ্ছে।তারা মিথ্যাচার করে চলছে।অদূর ভবিষ্যতে তারা হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের আল্লাহর নামে জবাই করা শুরু করবে।তারা আজ দেশের সর্বচ্চো পদে অসীন।৭১ এর পরাজিত শক্তিই যখন এদেশের মন্ত্রী হচ্ছে।দেশের গুরুতব পূর্ণ পদে আছে তখন তো তাদের এ সাহস হবেই। আমরা সবাই জানি যে ৭১ এ নিজামী,মুজাহিদেরা কি করেছিল।তারাই তখন হিন্দুদের সম্পদ দখল করেছিল।এবং দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ও মেয়েদেরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।আজ তারাই মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি।আমার কাকু মুক্তিযুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন।আমি দেখেছি আমার দাদুর অশ্রু ভেজা চোখ। মুক্তিযূদ্ধের অনেক পরে আমার জন্ম।মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা আমি আঁচ করতে পারব না তাও আমি জানি।আজকে আমরাই তো মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রাপ্য সমমান দেই না।অথচ আজকে আমি বাংলায় ব্লগ লিখতে পারছি সেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ,আমরা কি সেই কথা ভুলে গিয়েছি।আজ সাধীনতা বিরোধীরা এ দেশের ইতিহাস বদলে ফেলতে চায়।যখন বিজয় দিবসে তারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে তখন আমি জানি,তোমরা শুধুই এক ক্রর দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাক।সেই দৃষ্টিতে থাকে,ঘৃনা ও হতাশা।
আমি এক মুক্তিযোদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কিসের জন্য আপনারা যুদ্ধ করেছিলেন?যদি জানতেন যে রাজাকাররা এদেশে এভাবে পতাকা বাহিত গাড়িতে চড়ে বেড়াবে আর মুক্তিযোদ্ধারা দু মুঠো ভাতের জন্য আবার যুদ্ধ করবে?তিনি আমার প্রশ্নের জবাবে তার লুংগী হাঁটুর উপর তুলে তার উরু দেখালেন।দেখলাম সেখানে মাংস নেই।এরপরই তিনি আমাকে তার বাসা থেকে বের হয়ে হতে যেতে বললেন।আমি মাথা নিচু করে চলে এলাম।কারণ আজকে রাজাকাররা তাদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করছে তার দায়ভার যে আমাকেও নিতে হবে।
হে মুক্তিযোদ্ধা তোমাদের অভিমানের জবাব আমি দিতে পারিনি সেদিন।হয়তো আমি অত্যন্ত ভীরু।তোমাদের জন্য কিছুই আমি করতে পারিনি।যদি এদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হত তাহলে আন্তত তোমাদের কাছে যাওয়ার সাহস করতাম আবার।
তোমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভাষা আমার কাছে নেই।তবুও নির্লজ্জের মত বলছি ক্ষমা কর আমায়।

আলোচিত ব্লগ
অবশেষে মায়ের বাড়ি ফেরা ও তুরিনের ভুয়া ডিগ্রি কাহিনী—এক আলোচিত আইনজীবীর পতনের গল্প
অবশেষে মায়ের বাড়ি ফেরা ও তুরিনের ভুয়া ডিগ্রি কাহিনী—এক আলোচিত আইনজীবীর পতনের গল্প
আলোচিত আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বিতর্ক বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন
রহস্যঃ কী হলেছিলো মেরি সেলেস্ট জাহাজটির সাথে?
১৮৭২ সালের নভেম্বর মাসের এক শীতের সকালবেলা। সমুদ্রপথে যাত্রা পথে ব্রিটিশ ব্রিগেন্টিন জাহাজ ‘দেই গ্রাটিয়া’র নাবিকরা একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করল। তারা তাদের সামনে একটা জাহাজকে এলোমেলো ভাবে চলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।।খালেদা জিয়া এখন ঢাকায়
দীর্ঘ চার মাস পর যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে আজ মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে দেশে আছেন দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানবিক করিডোর: আশীর্বাদ না অভিশাপ?
মানবিক করিডোর: আশীর্বাদ না অভিশাপ?
রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জন্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরে একটি নিরাপদ ত্রাণপথ বা "মানবিক করিডোর" স্থাপন নিয়ে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক আলোচনা নতুন মাত্রা... ...বাকিটুকু পড়ুন
গেলো বসন্ত এলো বৈশাখ এলো নতুন বাংলা বছর ১৪৩২
রঙে রঙে রঙিন বসন্ত ফুরোতে না ফুরোতেই চলে এলো বাঙ্গালীর প্রানের উৎসব নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া পহেলা বৈশাখ। সেই উৎসব ঘিরে কেটে গেলো বেশ কিছুদিন। ব্যস্ততায় কাটলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের... ...বাকিটুকু পড়ুন