সকালে অফিস থেকে বের হইসি, আমি আর ইমরান, সারারাত ঝিমাইছি অফিসে। ইমরান রে নিয়ে পাকিস্তানী রেস্টুরেন্ট এ ঢুকব, এমন সময় দুই পূর্ব পরিচিত আরব, আমাকে দূর থেকে দেখে ইয়া ডাকতুর, কেফাল হাল, ইয়া রাজ্জাল... ইত্যাদি বলে চিতকার দিতে দিতে আমাকে জড়ায় ধরে চুমু টুমু খেয়ে একাকার! যারা আরবদের সম্পর্কে জানেন, তারা জানবেন যে, এরা পরিচিত কারু সাথে দেখা হলে গ্রিটিংস কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময় করতেই মিনিট দশেক পার করে দেয়, এই দশ মিনিট কিন্তু লিটারেলী দশ মিনিট!! কথার কথা নয়!! তো কিছুক্ষণ পর ইমরান আমারে চোখ কুচঁকে জিজ্ঞেস করে,
- কোন থা ও?
আমি বললাম,
-মাফি মালুম! মুঝে ক্যায়সে পাতা?
ইমরান বলতেসে
- যেয়সে বাত কিয়া, মেনে সোচা উস দোনো তেরা বাচপানকা বিছরা হুয়া ভাই!!!
ইমরান আর আমি একি বিল্ডিং এ থাকি। এখানকার ম্যাক্সিমাম বিল্ডিং এ মাল্টি ন্যাশনাল লোকজন থাকে। আমাদের বিল্ডিং এ সাত জন ডাক্তার থাকে, বাংলাদেশ, সুদান আর পাকিস্তানের। আগে এক ইন্ডিয়ান ছিল, উনি চলে গেসেন। তো পরে খেতে খেতে আমার ইমরানের অনেক কিছু নিয়ে গল্প হল। ইমরান লতার খুব ভক্ত, ইমরানের গাড়িতে একটা পেন ড্রাইভে শুধু লতা মুঙ্গেশকরের গান! আমাকে বলসিল, ইয়ার আগার মেরে গাড়ী মে ইয়ে লতা'কা পেন ড্রাইভ বাজে তো নো ডিস্ট্যান্ট ইস ফার ফর মি, লং ড্রাইভ কে লিয়ে লতা'স সংস আর আন কম্পেয়ারেবল! আই ক্যান টেক ইউ টু ঢাকা, ইউ হ্যাভ জাস্ট টু প্লে লতা! কথাটা আসলেও সত্য! লং ড্রাইভে আমিও লতা প্লে করে দেখছি, লং ড্রাইভে পুরানো দিনের গান ছাড়া কনসান্ট্রেশন ধরে রাখা যায় না!
ইমরান বাংলাদেশীদের খুব পছন্দ করে, ওর প্রথম বন্ধুও নাকি বাংলাদেশী। আরেক ডাক্তারের গল্প বলে, ডা আবদুল্লাহর! ভদ্রলোক বোধয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের এসিস্টেন্ট প্রফেসর, মেডিসিনের। এম আর সি পি করা ভদ্রলোক। ইমরান তার অন্ধ ভক্ত! আমাকে একদিন ইমরান বলে তেরে কো রাজশাহী মালুম হ্যায়? আমি বললাম তেরে কো রাজশাহী কে বারে মে ক্যায়সে পাতা?
ইমরান সুন্দর জবাব দিসে, আগার কই নেশন ক্রিকেট খেলে তো আই আনো এভ্রিথিং এবাউট দ্যাট ন্যাশন!
ইমরান কথায় কথায় ডা আবদুল্লাহর প্রশংসা করে, ইমরান ঢাকা আসতে চায়, লং ড্রাইভ, আরব-আমিরাত-ওমান-ইরান-পাকিস্তান-ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ! তার পরেই মন খারাপ করে বলে, ইন্ডিয়ার ভিসা আমেরিকার চাইতে নাকি টাফ পাকিস্তানীদের জন্য, ভাইস ভার্সা! সে একদিন যাবেই! মিরপুরে তার একটা ওয়ানডে দেখার খুব ইচ্ছে!
দ্য রিটার্ণ অফ আরব্য রজনী, ২৭/০৩/৩৮