দিন চলে যায়, এভাবে ওভাবে কি জানি কেমন করে! আসলে ঘড়ির কাটাঁ থামেনা কখনোও! যাইহোক! আমাদের এখানকার গল্প বলি। পুরো আরবের সবচাইতে বাজে জায়গা এটা। আমি একাধিক মানুষ কে জিজ্ঞেস করেছি, সবাই বলসে সবচাইতে দুধর্ষ জায়গার মাঝে এটা একটা। এখানে এখনো প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে মানুষ, রাতের বেলা পাহাড় ডিঙ্গিয়ে আসার সময় (আভা/খামিস মুশাইত) থেকে আসার সময় ১০০ কিমি রাস্তা আজনবীদের স্পীড থাকে দেড়শ কিমি পার আওয়ার, নতুবা বদু (বেদুইনরা) ধরবে, বদুরা মরুভূমির মাঝে সোজা চলে যাওয়া রাস্তার পাশে ঝোপের মাঝে হাইলাক্স গাড়ী নিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে, মনের মত আজনবী পাইলেই কোপ, টাকা-পয়সা-জান সব চলে যাবে!
সকালে নাস্তার সময় ইদানীং নিজেরে বাংলা সিনেমার চৌধুরী সাহেব লাগে! নিজের ইচ্ছে মত খাই, সে হোক পাচঁ টাকার চিকেন বার্গার কিংবা তিন টাকার ডিমের কিংবা হস্পিটালের ক্যান্টিনে শুক শুকা, শুক শুকা হল ডিম ভাজির ঝুড়ি ঝুরি স্টাইল, আমি ক্যান্টিনে বসে চৌধুরী সাহেবের মত এপ্রন খুলে নাস্তার সাথে দেয়া চীজ আগে তন্দু রুটির মত খবুসে মাখাই, দেন তা দিয়ে ডিম ভাজি খাই, মাঝে মাঝে একটু আধটু জ্যাম কিংবা জেলী!
রোগী কম বেশী ভালই হয় ইমার্জেন্সীতে,সমস্যা হয় মহিলাদের নিয়ে, বিয়ে হওয়া মাত্র সৌদী মহিলারা ড্রামের মত মোটা হয়ে যায়, আজকে একজন মহিলা আসছিলেন, পাইলস নিয়ে। একটা সত্য কথা হল, সৌদি মহিলারা যতটুকু বাধ্যবাধকতা মেনে চলেন তার অনেকটাই পুরুষ আরোপিত, এমনিতে তারা খুব ই মজার মানুষ, খুব ই ফ্রী। পাইলস হওয়া মহিলার পার রেক্টাল এক্সামিনেশনের অনুমতি চাইতেই উনি রাজী হয়ে গেসিলেন, ব্যাপারটা অবাক করার মত! যারা বোঝেন না, পার রেক্টাল এক্সামিনেশন হল তার পায়খানার রাস্তায় আঙ্গুল দিয়ে পরীক্ষা করা!
তবে সব অভিজ্ঞতাই আনন্দের নয়, একদিন এক বাচ্চা, সর্বোচ্চ পাচঁ বছর বয়স হবে ধরেন, হাতে কিভাবে যেন ব্যথা পাইসে, আমি হাত একতু টিপে টুপে দেখতেই মেয়ের বাপ লাফ দিয়ে উঠসে বাপে, অথচ মেয়ের বয়স সর্বোচ্চ পাচঁ বছর হবে! ভয়ানক ক্ষেপে গেসিলাম আমিও, বাট ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে আনা আমেল!! আমেল মানে হল কাজের লোক! হোক সে অশিক্ষিত বাট সে সৌদি!
আরেকদিন, আমি এপ্রন পড়া, গলায় স্টেথো, রুমের ভিতর এসির ঠান্ডায় জমে গেসিলাম, ভাবলাম হাল্কা একটু বিড়ি টেনে গা গরম করি, এসময় একটু দূরে গাড়ীতে বসা দুই সৌদি হাওইয়ান খানকির পুলা আমারে ডাকতেসে, আই মীন টিজ করতেসে- ইয়া আমেল, ইয়া আমেল!!
শেষ একদিনের ঘটনা বলি, কি উদ্ভট দুনিয়ায় আমি থাকি। বাবা আর বনাত/বিনত (কন্যা) আসছেন, আমি কন্যা কে দেখে ঠান্ডার ট্রিটমেন্ট মনে মনে রেডী করতেসি, আন্দাজে বয়স নির্ধারণ করতেসি, কন্যা আতফাল (শিশু), হঠাত কন্যার বাবা বলতেসে উমর সাবা তাশ (কন্যার বয়স ১৭), আমার তো বিচি কান্ধে, কন্যার হাইট কিংবা দেখতে কোন মতেই ৫/৬ এর বেশী হবে না, কি মুশকিল!! পরবর্তীতে যা বুঝলাম তা হল, ১৭ বছরের তরুণী কন্যার অসুখ, উনি তার ট্রিটমেন্ট নিতে আসছেন, এখন ডাক্তারের ওখানে বিমারের স্যাম্পল হিসেবে তো রোগী লাগতে পারে, তাই উনি স্যাম্পল হিসেবে ছোট কণ্যা কে নিয়ে আসছেন, আমি ভ্রুকুটি করতেই হেসে বলতেসে
-কুল্লু সেম সেম হাদাঁ!!
দ্য রিটার্ন অফ আরব্য রজনী, তৃতীয় পর্ব, ২৬-০৯-২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:১৮