চিরকাল দূরে থেকে-থেকে তুমি সুদূরের প্রণয়ভাগী হয়ে গেছো
চিত্রার্পিতা, বিলবোর্ড-নিবাসিনী, তোমার গমনোদ্যত পা
মুড়িয়ে দেয়ার জন্য আমি জমাচ্ছি আমার সকল অপরিণামদর্শিতা
সর্বব্যাপী প্রেমোক্র্যাসির ধোঁয়ায় তোমার যতোটুকু শ্বাসকষ্ট
আমি তার ততোধিক নীল নেবুলাইজার
তুমি আসছো মোরগের বিষ্ঠাভরা জংলা পার হয়ে
মিডিয়াগাছের ছায়াফাঁদ বাঁচিয়ে
আমার ডাকবাক্সের ধূলায়, আমার নিখিল বিজ্ঞাপনহীনতায়!
আমি তো তোমার অপলকময়তা দেখে-দেখে
কাঁথামুড়ি দিয়ে পাশ ফিরতাম
নয়তো তোমার গল্পঘরের বারান্দায় বসে দেখতাম
নৈশকোচগুলো গ্যারেজে ফিরছে একে-একে
ঠান্ডা চা আর পোঁতানো পপকর্ন গিলছে টহল পুলিশ --
একটা সিএনজি স্কুটার আরেকটাকে পেছনে-বেঁধে
চলে যাচ্ছে দূরে, কোনো সমকামী অভীপ্সার দিকে
এতসব দেখে-দেখে, তোমার নম্র উপেক্ষার ধ্যানে এ জীবন কাটিয়ে দিতাম
ফুটপাতে, শেষরাত্রির প্রিজনভ্যানে!
তোমার চুলে নিরুত্তাপ স্মরণসভার গন্ধ, যেন তুমি
কখনো মানুষ ছিলে, এখন কুঠুরি, দরজা-জানালা বন্ধ
কলতাবাজার কবরস্থান থেকে পালিয়ে আসা লম্বা-লম্বা সিপাহীদের ছায়া
তোমাকে পাহারা দেয়
তোমার বামচোখের ভেতর একটি ঘুরানো সিঁড়ি
উপরে উঠতে-উঠতে হারিয়ে গিয়েছে মহাশূন্যে
তোমার ডানচোখে অতীতকালের একটি চিৎকার জমে বরফ হয়ে আছে
আমি সেই রাত্রেই কসাইটুলি থেকে কুড়াল চুরি করে আনলাম
দেহপসারিনীদের ছেঁড়াখোঁড়া অভিলাষকে চিরদিনের মত বিদায় জানালাম
তখনো অনেক বাকি ভোর, মফস্বলগামী নিউজপেপার
স্তূপাকার হয়ে আছে জনশূন্য বাস টার্মিনালে
এদের ভাঁজে-ভাঁজে আমি বিছিয়ে দিলাম আমার না-লেখা প্রেমপত্রগুলোকে
একান্নবর্তী ছোট শহরগুলোর আলোবাতাসে ওরা বড় হয়ে উঠবে কোনোদিন!
এসে দেখি, তোমার গল্প থেকে এমন মোহময় সাবানের গন্ধ ছড়াচ্ছে
আর তা তন্ময় হয়ে গিলছে কয়েকটি নির্ঘুম কাক
তুমি কি ওদের সাথেই উড়বে নাকি, বিলবোর্ডবাসিনী!
ওরা কিন্তু সত্যি-সত্যি কাক নয় -- কর্পোরেট মেটাফিজিক্স --
তোমাকে তোমারই স্মৃতির ভেতর কয়েদ করতে এসেছে, তারপর
বাসি মেট্রোপলিটনের পিঁপড়াগুলোকে ছেড়ে দেবে ওরা
তোমার সবুজ শাকসবজির আকাঙ্ক্ষার ভেতর
তবু, কোনোদিন ভোরবেলা জেগে আমি অবাক দেখবো শাদা বিলবোর্ড
অচেনা রূপসী, নতুন কমোডিটি -- তোমার শ্রান্ত ডানাজোড়া আর খুঁজেও পাবো না
যাদের আমি চোখের জলে এতকাল লুকিয়ে রেখেছিলাম!
সিঙ্গাপুর ১২ জুন ২০০৯