somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘রকস্টার’ হিন্দি সিনেমার দর্শক প্রস্তত হওয়ার পূর্বেই যে সিনেমাটা চলে এলো!

২৫ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেক নামী দামী ও বিখ্যাত সিনেমা থাকতে হঠাৎ ‘রকস্টার’ এর মত হিন্দি সিনেমা নিয়ে কেনো লিখছি বিষয়টা নিজের কাছেই অবাক লাগছে। যেখানে সিনেমাটার মিডিয়া রিভিউ নেগেটিভ, বক্সঅফিস কালেকশন দূর্বল, পাবলিক ওপিনিয়নও সুবিধার না। সেখানে এমন একটি সিনেমা নিয়ে হঠাৎ কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে কেনো বুঝতে পারছি না!
ইমতিয়াজ আলীর ‘জব উই মেট’ সিনেমাটা মনে হয় অনেককেই দেখেছেন। আমি অনেকেই বলতে সর্বদর্শী (যারা সব ধরণের সিনেমা দেখেন, তাদের বুঝাচ্ছি) দর্শকদের কথা বলছি। সেই ‘জব উই মেট’ দেখে আমি বেশ বিনোদিত হয়েছিলাম। তখন জেনেছিলাম এই পরিচালক এক সিনেমা যাদের নিয়ে করেন, পরে আর তাদের নিয়ে কাজ না করে নতুন কাস্টিং নিয়ে কাজ করেন। তার পরবর্তী সিনেমা ‘লাভ আজকাল’ এবং এখন ‘রকস্টার’ এর মাঝে সেই কথার সত্যতা পাওয়া যায়। সবগুলোতেই ভিন্ন কাস্টিং।
ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার বেশ পছন্দের ফিল্ম ক্রিটিক হচ্ছেন ‘তারণ আদর্শ’। তিনি ‘রকস্টার’ এর রিভিউ এ বলেছেন, “সিনেমাটার অনেক সিকুয়েন্স এবস্ট্রাক্ট, যা দর্শক বুঝতে পারে না। তাঁর মতে, ইমতিয়াজ আলী’র সিনেমা হিসেবে রকস্টারকে পাওয়া যায় না। তাঁর রেটিং অনুযায়ী সিনেমাটি ৫ পয়েন্ট এর মাঝে ২ পাওয়ার যোগ্য। আর রণবীর কাপুরের অভিনয় এবং এ. আর রহমানের মিউজিকের জন্য তিনি আরো ১ পয়েন্ট এক্সট্রা দিয়েছেন। অর্থাৎ সর্বমোট ৩ স্টার।
সাধারনত কোনো সিনেমা দেখার আগে সেই সিনেমার রিভিউ দেখতে আমার ভাল লাগে না। কেননা, সেই ক্ষেত্রে সিনেমাটি সম্পর্কে একটা পূর্ব ধারণা তৈরী হয়ে মাথায় বসে থাকে। আর সেই বসে থাকা ধারনা দর্শক হিসেবে সিনেমাটা দেখতে দেয়না নিজেকে। চোখ আর মনকে জাজমেন্ট্যাল মন থেকে দেখতে প্রভাবিত করে। তারপরও সিনেমাটা দেখতে বসে গেলাম।
সিনেমাটা দেখার বিশেষ কয়েকটা কারণের মধ্যে অবশ্যই এ আর রহমানের কম্পোজিশন, ইমতিয়াজ আলী’র ডিরেকশন আর রণবীর কাপুরের আস্তে ধীরে ভাল অভিনয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা আগ্রহ যুগিয়েছে।
সিনেমার কনসেপ্টটা এগিয়েছে একটি প্রচলিত এবং হয়তো বা সত্য বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে। খুব সহজ এবং ছোট করে বললে এমন ভাবে বলা যায় যে, প্রেমে ব্যর্থ বা ছ্যাঁকা না খেলে কবি হওয়া যায় না অথবা বড় দুঃখ না পেলে গায়ক হওয়া যায় না; এই ধরণের একটি অণুকম্পা থেকে। ধরে নিচ্ছি পরিচালক এমন একটি প্রথাগত বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে গল্পের অবতারনা করেছেন। সেই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে একজন সংঙ্গীত প্রেমী সাধারণ যুবক গায়ক হিসেবে পরিচিতি পেতে চায়। আর তার জন্য তাকে পরিবার কিংবা প্রিয় মানুষের (এখানে মানুষী বলাই যুক্তিযুক্ত) কাছ থেকে তাকে দুঃখ পেতেই হবে। অর্থাৎ কষ্ঠে পরে কষ্ঠি পাথর হওয়ার মত। আবার বলা যায় সেই সন্নাসী বাউলদের মতই অনেকটা। যারা আপনজন, প্রিয়জনকে ছেড়ে গানের জন্য সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। তবে যেহেতু সময় এবং মানুষিকতার বিষয় জড়িত রয়েছে, তাইপরিচালক ভীন্ন পথে হেঁটেছেন। এই সিনেমায় সেই কাজগুলো করা হয়েছে সেই চিন্তা মাথায় রেখে আধুনিকতার মোড়কে, বলা চলে নিপূণ ভাবে। কোথাও মনে হয়নি পরিচালক আরোপিত কোনো কিছু করেছেন। অসাধারণ কাজটি করেছেন ইমতিয়াজ আলী গল্পের ধারাবাহিকতা ঠিক রেখেই। প্রকৃতপক্ষে, রকস্টারদের জীবন বা যারা প্রথার বাহিরে গিয়ে কাজ করতে চেয়েছেন, নতুন কোনো কিছু সৃষ্ঠি করতে চেয়েছেন, তাদেরকে চীরকাল প্রচলিত মূল্যবোধ ও প্রথার সাথে লড়াই করতে হয়েছে। আর সেই জন্যই নিয়ম ভাঙ্গতে হয়েছে। তাই নিয়ম ভাঙ্গার খেলায় তাদেরকে আমরা মেতে থাকতে দেখি।
রকস্টার সিনেমাটিতে প্রেম ঘর বাধার স্বপ্ন নিয়ে আসেনি, এসেছে ভাল ভাবে বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে, এসেছে সৃষ্ঠির তাড়ণা হয়ে। আর দশটা সিনেমার মত অবশ্য প্রেম আসার কথাও নয়। আমরা যে সকল বিখ্যাত মানুষদের দেখি বা জানি, যাদের একটু পাগলাটে বলে জানি, তাদের প্রেম আর তাদের কাজ এক সময় একাকার হয়ে গেছে। তারা প্রেমের সাথে কাজ; আর কাজের সাথে প্রেমকে সরলীকরণ করেছেন। নিজেদের নিঃশেষ করেছেন সৃষ্ঠির আশায়, তাদের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি চীরকাল মনে রাখার মত শিল্প।
যার কারণে রকস্টার সিনেমাতে এক্সট্রা মেরিটাল এ্যাফেয়ার অনেকের কাছে অযৌক্তিক মনে হতে পারে। কিন্তু এর প্রাসঙ্গিকতা বুঝতে হলে আমাদের একটু পেছনে তাকাতে হবে। এই প্রসঙ্গে আবারো বাউল তথা সাধকদের প্রসঙ্গ আসে। বাউলদেরও সাধন সঙ্গি/সঙ্গিনী ছিল। মানুষের জৈবিক প্রয়োজনে যৌন সম্পর্কের দিকে ধাবিত হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। আর তা এক সময়ের মনের মানুষ কিংবা হারিয়ে যাওয়া মনের মানুষ কিংবা কল্পিত মনের মানুষ যে কেউ হতে পারে। কিন্তু দেখতে হবে সেই সম্পর্ক কেবল দৈহিক নাকি মানুষিকও, তার উদ্দেশ্য সৃষ্ঠির সন্ধান নাকি দৈহিক কারসাজি।

রকস্টার সিনেমাটা আসলে একজন রকস্টার এর শুরু’র কাহিনী নিয়ে। অর্থাৎ এমন অনেক কাজ আছে না যা করার আগে আমরা প্রস্তুতি নেই, তারপর বলি, ওকে, এখন শুরু করা যাক আসল কাজ। রকস্টারটাও তেমন একটি সিনেমা বলে আমার মনে হয়েছে। প্রকৃত রকস্টার বা যেকোনো সৃষ্ঠিশীল মানুষের সত্যিকারের শুরু হয় অনেকটা এভাবেই।
রকস্টার এর গানগুলোর প্রতি আগ্রহ বারে মূলত সুফি ঘরানার জন্য। রহমান রকের সাথে সুফি সংঙ্গীতের যে ফিউশন করেছেন, তা বেশ উপভোগ্য। এই সিনেমার মিউজিকে তাঁকে ভিন্নভাবে কিন্তু স্বকীয় সত্যায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ সুফিইজম এর মাঝে। সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটা মনে গেঁথে থাকে।
যারা দাড়ি-কমা সহ গল্প শুনতে পছন্দ করেন, তাদের কাছে এই সিনেমা ভাল লাগবে না। কারণ এর গল্পবলার ধরণটা ন্যারেটিভ। তবে, যারা ‘আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না’ শব্দের বদলে শুধুঅনুভব করতে চান ‘আমি তোমাকে এই মুহূর্তে জড়িয়ে ধরতে চাই’ টাইপের এক্সপ্রেশন, তাদের কাছে সিনেমাটা ভাল লাগবে।

শেষ দৃশ্যে যখন গানের সাথে মানুষজন দুলতে থাকে আর ক্যামেরা ধীরে ধীরে ক্লোজ-আপ নেয় রণবীর কাপুরের এবং সে গাইতে থাকে নাদান পারিন্দে গানের এই লাইনগুলো ‘...কাগারে কাগারে মুরি ইতনি আরজ তুসে চুনচুন খাইও মাস/ ওরে খাইও না কো ন্যায়না মোর, খাইও না কো ন্যায়না মোর, প্রিয়াকে মিলন কি আস’ তখনকার এক্সপ্রেশনটা দেখার মত। অল্প সময়ের এই এক্সপ্রেশনটার মতো শক্তিশালী মুহূর্ত আমি হিন্দি সিনেমায় খুব কমই দেখেছি। আসলে এখানেই রক গানের সাথে সুফিজম এর ব্যবহার কেনো করা হলো তার শতভাগ উত্তর পাওয়া যায়।

বডিগার্ড মার্কা দক্ষিণী ফ্যান্টাসি সিনেমা দেখে ইন্ডিয়ান দর্শক কতটা অভ্যস্থ হয়েছে তা তাদের পাবলিক ওপিনিয়ন দেখলে বুঝা যায়। সেই সকল ‘এক কিলে বত্রিশ জনকে উড়িয়ে দেয়া’ মার্কা দক্ষিণী সিনেমার ভীড়ে ‘রকস্টার’ এর মত সিনেমার দর্শক পাওয়া একটু মুশকিল। যেখানে তারা সেই সকল সিনেমা দেখার পক্ষে তাদের যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে, ২ ঘন্টার জন্য ‘দিমাঘ’ তথা মাথাটাকে বাসায় রেখে সিনেমা দেখতে যাওয়া! যদি মাথা বাসায় রেখেই সিনেমা দেখতে হয় তাহলে সিনেমাটা দেখলাম কেনো? সিনেমা তো আর কেউ পেট ভরার জন্য দেখে না?

পরিশেষে এই আক্ষেপটা শুধু করে যাই! যদি ইমতিয়াজ আলী আমজনতার কথা মাথায় না রেখে শুধু নিজের জন্য সিনেমাটা বানাতেন, তাহলে হিসেব নিকেশ অনেক পাল্টে যেতো। আফসোস! আফসোস আমাদের সকলের!!
...............................

টরেন্টের জন্য
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোডের জন্য
..................................
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×