আমরা তখন একসাথে থাকতাম, আমি আর কবিতা। না, না,,
সম্পর্ক টম্পর্ক তেমন কিছু না, আমরা শুধু একসাথে ছিলাম,,দীর্ঘদিন,
কোনো সম্পর্কে যাবার চেষ্টা যে আমাদের ছিলো না এমনটা হলফ করে বলতে না পারলেও এটা ঠিক যে আমরা কোনো সংজ্ঞায়িত সম্পর্কে
বিশ্বাস করতাম না। সংজ্ঞায়িত সম্পর্কের অনেক দায়বদ্ধতা থাকে,
এক্ষেত্রে আমরা বোধ হয় একটু স্বাধীনতা চেয়েছিলাম। আমরা ঠিক ঠিক জানতাম, আমরা দু'জন কেউ কারো কিছু নই, তবু আমরা ছিলাম
অনেক অনেক অনেক কিছু। আমাদের সামাজিক অবস্থানের সিনেম্যাটিক পার্থক্যের মতৈ আমাদের দু'জনার ভৌগোলিক তফাৎটাও ছিলো ম্যালা, এই যেমন আমি যখন হাতভর্তি জোৎস্না নিয়ে ওর সাথে কথা বলতাম, তখন ওর মাথাভর্তি রোদের আসমান। রোজামাসে আমার ইফতারের একঘন্টা আগেই ওর সেহরীর টাইম শেষ হয়ে আসতো। শুক্রবারদিন ওর বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মসজিদের সংরক্ষিত মহিলা বুথে বসে ও যখন আমায় কল করতো,,তখন আমার চোখে মধ্যরাতের গহিন আন্ধার,,,ভাঙ্গা-কাঁচা ঘুমের গলায় আমি তখন কবিতাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করতাম, 'আচ্ছা, এত তাড়া কিসের শুনি, এই কলটা তো তুমি ডর্মে ফিরেও করতে পারতে, না কি?' কবিতার কন্ঠ তখন অদ্ভুত সিরিয়াস হয়ে উঠতো, 'না, আমি তোমাকে এ সময়টাতেই কল করতে চাই, এইমাত্র নামাজ শেষ করেছি, এখনো মসজিদে, আমি এখন সার্বিকশুদ্ধ- এ অবস্থায় আমি তোমায় সত্যিকারের পাই, পু্র্ণাঙ্গ তোমায়। আর আমি তোমাকে এ-ও বুঝাতে চাই যে আমার এ পাওয়ার মাঝে কোনো পঙ্কিলতা নাই।'
আজ কবিতার সাথে আমার চুয়ান্নটি বন্ধুত্ব,,
শুধু আমরা দু'জন একসাথে নেই। যাবার আগে কবিতা গুণে গুণে ঠিক তিনমূহূর্ত নীরব ছিলো, এরপর যা বলেছিলো তা অনেকটা এরকম,
'বিদায় কবি। আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি না, তবে একটা কথা মনে রেখো, আমি তোমার সাথে থাকবো না ঠিকই, কিন্তু আমি তোমার সবখানে থাকবো, একদিন তুমি আমায় হন্যে হয়ে খুঁজবে, কিন্তু কোত্থাও পাবে না; অথচ আমি থাকবো তোমার সবখানে,,সবখানে,,,,'
এরপর থেকেই আমি কবিতা কে খুঁজি,,সবসময়,,খুব সম্ভবত আজীবন আমি কবিতাকেই খুঁজতে থাকবো। এখন,, ঠিক এই মুহূ্তে,, কবিতার সাথে আমার চুয়ান্নটি বন্ধুত্ব,,শুধু আমরা দু'জন একসাথে নেই।
আচ্ছা, আমরা কি সত্যিই একসাথে নেই? কেউ জানেন? বলতে পারেন?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:১৭