[ জনগণের জন্য কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ, কোনটা কল্যাণকর, কোনটা অমঙ্গলজনক; তা নিয়ে নূন্যতম চিন্তা ভাবনা করা বা কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহনের অধিকার এ দেশের জনগণের নয়, বরং তা দেখার দায়িত্ব একমাত্র সরকারের। কিসের আবার যাত্রী কল্যাণ সমিতি ! যাত্রী কল্যাণ, রোগী কল্যাণ, জনকল্যাণ বলে কিছু নেই। জনগণের কাজ হলো আয়কর প্রদানের মধ্য দিয়ে সরকারকে হৃষ্ট-পুষ্ট করে তোলা যেন রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন ধরণের ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়। ]
বন্ধনী-চিহ্নের মধ্যে থাকা সারসংক্ষেপটি সরকারের দায়িত্বশীল কোন মহলের সরাসরি বক্তব্য বা আলোচনা থেকে উদ্ধৃত্তি করা হয়নি। এটি চলমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বাস্তবিক চিত্র থেকে অনুধাবিত। সেই উপলব্দি থেকে বলা যাই, বিষয়টি এক হিসাবে সৌভাগ্যের বটে ! দেশের উন্নয়নতো থেমে নেই। উন্নয়নের সূচক এখন আসমান-জমিন সর্বত্র বিরাজমান ! তাই নিজ নিজ ভাগ্য ও রাষ্ট্রর উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে সময় নষ্ট করা জনগণের জন্য সমীচীন নয়। বরং জনগণের উচিৎ হবে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন এবং রাষ্ট্রের উন্নয়ন তরান্বিত করতে চব্বিশ ঘন্টা উৎপাদন এবং উপার্জনের পেছনে ছুটে চলা। কেননা জনগণ হয়ে জনগণের কল্যাণকর কিছু নিয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা চালালে বা রাষ্ট্রের অসঙ্গতি ও শাসন ব্যবস্থার ভয়াবহতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে এবং সেগুলো নিয়ে বাস্তবধর্মী সমালোচনা করলে অথবা সমধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি তুললে, তার ফলাফল যে কতটা ভয়ঙ্কর ও হিংসাত্মক হতে পারে, তা প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান হচ্ছে আমাদের চোখের সামনে। বিশেষ করে কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ফ্রন্টে আসা স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা এবং তাদের পদক্ষেপের সুত্র ধরে যারা সরকারি কর্মকান্ডের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেন; তারা শুধু কারাবরণ করেছেন তা নয়, তাদের জীবনের ওপর নেমে আসে হয়রাণী ও নির্যাতনের ষ্টিমরোলার ।
সর্বশেষ আমরা দেখতে পেলাম বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে আটক করেছে পুলিশ। এ কাজ পুলিশ করতেই পারে। আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হোক বা না হোক। মোজাম্মেল সাহেব চাঁদাবাজ ! !
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, মিরপুরের ১৮ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাড়ির দুলাল নামে একজন ব্যক্তি, যিনি নিজেকে মিরপুর রোড সড়ক শ্রমিক কমিটির সড়ক সম্পাদক বলে পরিচয় দিয়েছেন এবং তিনি থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে দাবি করেছেন, মোজাম্মেল হক তাঁর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন ৷এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা তিনি নিয়েছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মামলার বাদির সাক্ষাত মিলছে না। বৃহস্পতিবার মামলার বাদি দুলালের বাসায় গিয়েও সাংবাদিকরা তার দেখা পাননি ৷এমনকি এজাহারের নীচে দুলালের যে ফোন নম্বরটির উল্লেখ আছে, সেই নম্বরে দিনভর চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
মোজাম্মেল সাহেব যাত্রী কল্যাণ সমিতির একজন সংগঠক হিসাবে এ দেশের যাত্রীদের কতটুকু কল্যাণ করতে পারতেন, তা জানা নেই। তবে তাঁর নিজের জীবনে আচমকা নেমে আসা এই অশুভতার ভার তাকে ও তার পরিবারকে যে বয়ে বেড়াতে হবে, তা নিশ্চিত। হয়তো তিনি তাঁর সংগঠনের সহযোগিতা ছিটেফোটা পেলেও পেতে পারেন। যেমনটি আমরা দেখেছি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের গ্রেফতারের ঘটনায় তাঁর পাশে দেশ বিদেশের অনেক বরেণ্য ব্যক্তি, শক্তি এবং মজবুত আর্থিক অবস্থা এগিয়ে চলার বা টিকে থাকার উপকরণ হিসাবে কাজে লেগেছে। কিন্তু সম্প্রতি রাজপথে আন্দোলনে নেমে গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থী কিংবা সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের যৌক্তিক সমালোচনা করে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ষ্ট্যাটাস দিয়ে ফেসে গেছেন, যারা নিতান্তই সাধারণ মানুষ, যাদের সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই, কোন সাংগঠনিক পরিচয় নেই, যারা কেবল অন্যায়, অনিয়ম ও অধিকার নিয়ে কথা বলে; তাদের পাশে থেকে সাহস ও শক্তি যোগাতে সচারচার এগিয়ে আসেন না কেউ।
আমাদের সকলের উপলব্ধি করা উচিৎ একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র গঠনে সুশাসনের কোন বিকল্প নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:০৮