বৃষ্টি আসলে পশু-পাখিরা মন-প্রাণ দিয়ে চায় বৃষ্টি থেকে গা বাঁচিয়ে থাকতে । মানুষ হওয়ায় যত সমস্যা । মন চায় বৃষ্টিভেজা শীতলতা , শরীর চায় উষ্ণতা ।
তাছাড়াও, এই বৃদ্ধ বয়সে ভিজতে দেখলে লোকে বলবে কি ! বুইড়া বয়সে ভীমরতি ধরছে ।
আমিনার আম্মা আজকাল দেখতেই পারে না । এই মহিলাকে প্রতি বর্ষায় বৃষ্টিভেজা কদম ফুল এনে দিতে হত ! অথচ, গেল বর্ষায় যখন অনেক কষ্টে এক গুচ্ছ কদম এনে দরজায় দাড়ালাম , কী অপমান টাই না করল ! ভাজ্ঞিস আমিনা ইস্কুলে ছিল !
বারান্দা ঝাড়ু দিতে দিতে বলল এইসব জঞ্জাল নিয়া বাসায় ঢুকলে দুপুর থেকে রান্নাবারা বন্ধ । দক্ষিণ পাশের বারান্দার টিন ফুটা হয়ে পানি পড়ছে । গিয়ে দেখলাম সেইখানে একটা কালচে হয়ে যাওয়া এলুমিনিয়ামের পাতিল বসিয়ে রেখেছে । টুপ টুপ শব্দ করে পানি পড়ছে পাতিলে । মনে মনে ভাবলাম এইটা ঠিক করতে হবে কেন ! ভালই ত লাগছে ! বলার সাহস হল না । মহিলারা ঘর ঝাড়ু দেয়ার সময় বদমেজাজে থাকে । ছোটবেলায় আম্মাও বদমেজাজে থাকতেন এই সময় । ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আছে এই ব্যাপারে ।
মাসের বেতন টেতন পাই নি । মিস্ত্রীদের যে দাম আজকাল ! মাঝে মাঝে ভাবি মিস্ত্রী হয়ে গেলেই ভাল হতো । মিস্ত্রী ডাকার সাহস আর হল না । দেয়ালে মই লাগিয়ে উঠে পড়লাম টিনের ছাদে । বৃষ্টিতে ভেজাও হল , কাজও হল ।
রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসে গেল ।
আমিনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল ।
আমিনার আম্মা আবার একটু বকাঝকা দিয়ে পানি-পট্টি লাগিয়ে দিচ্ছে কপালে । কারেন্ট নাই । মোম জ্বালিয়ে পড়াশুনা করছে আমিনা । ছোটবেলায় আমিও পড়াশুনা করতাম । মাঝে মাঝে আমার আব্বাও পাশে বসে থাকতেন । আমিনা পড়ছে, মাইটোকন্ড্রিয়াকে বলা হয় পাওয়ার হাউজ অফ সেল । আমি ভাবছি । মেয়ে আমার ডাক্তার হবে । আমাদের ঘরের চাল দিয়ে আর পানি পড়বে না ।
ঠিক যেমন আমার আব্বা ভাবতেন !
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪৮