somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজী নজরুল ইসলামের লেখা থেকে আমাদের সকলের ভালো লাগা কিছু বাণী।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কাজী নজরুল ইসলামের লেখা থেকে আমাদের সকলের ভালো লাগা কিছু বাণী



কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি সম্মান জানিয়ে এই ডাক টিকেটটি প্রকাশ করেছিল পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালে।

নজরুলের কবিতা, বাণী, গান, সুর কিংবা গদ্য লেখা কোনটাকে ছেড়ে কোনটাকে বেশী ভাল লাগবে সেটা বলা খুবই কঠিন। নজরুলের গান-কবিতা যাদেরকে মোহাবিষ্ট করে রাখে তারা একথা স্বীকার করবেন যে কাজী নজরুল ইসলামের যে সুষ্টি সম্ভার সেখান থেকে ভাল লাগার বিষয় তুলে আনার চেষ্টা করার অর্থই হলো অতল সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া। নজরুল বোদ্ধারা যেটা পারেননি, আমরা অতি সাধারণ ভক্ত-শ্রোতা বই তো নই ! কি করে সম্ভব আমাদের পক্ষে কাজী নজরুলের লেখা থেকে প্রিয় কিছু লাইন তুলে আনা ?

তবু সেই দুঃসাহসটা দেখাতে মন চাইল আমার। তার একটা কারণ আছে। কাজী নজরুল ইসলামের রচনাসমগ্র নিয়ে ইদানীং একটু নড়াচড়া করার চেষ্টা করছি আমি। সব যে বুঝে পড়ছি সেই দাবী আমি করছিনা এবং সামান্য অংশ মাত্র পড়ার চেষ্টা করেছি। সেখান থেকে বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থের কবিতায় কবির লেখা যে চরণগুলো আমার ভাল লাগার আমেজকে নাড়া দিয়েছে সেগুলো এখানে শেয়ার করার চেষ্টা করছি। আমার চেষ্টা থাকবে বাকী কবিতাগুলো পড়ার সময় এভাবে ফুল কুড়ানোর মতো করে কিছু কথা কুড়িয়ে আলাদা করে রাখতে।

তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে কাজী নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বেশী শ্র“ত গান বা কবিতা, যেগুলো আমারও অনেক প্রিয়, সেগুলোর বাইরে সাধারণভাবে আমাদের কাছে বহু শ্রুত নয় এমন কবিতাগুলো থেকেই সংগ্রহ করেছি আজকের প্রিয় কথার তালিকা।


কাব্য গ্রন্থ বিষের বাঁশী ঃ

কবিতা- জাতের বজ্জাতি

জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াৎ করছে জুয়া
ছুঁলেই তোর জাত যাবে ? জাত ছেলের হাতের নয় তো মোয়া।
---------------------------------------------------
জানিস নাকি ধর্ম সে যে বর্মসম সহনশীল
তাই কি ভাই ভাঙতে পারে ছোঁওয়া ছুঁয়ির ছোট্ট ঢিল ?
যে জাত-ধর্ম ঠুনকো এত
আজ না হয় কাল ভাঙবে সে ত।
যাক না সে জাত জাহান্নামে রইবে মানুষ নাই পরোয়া।


কবিতা- সত্যমন্ত্র

পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর
বিধির বিধান সত্য হোক।
---------------------
খোদার উপর খোদকারী তোর
মানবে না আর সর্বলোক।
---------------------
ঘরের প্রদীপ নিভেই যদি
নিভুক না রে কিসের ভয় ?
আঁধারকে তোর কিসের ভয় ?
---------------------
সত্য যদি হয় ধ্রুব তোর
কর্মে যদি না রয় ছল,
ধর্ম দুগ্ধে না রয় জল,
সত্যের জয় হবেই হবে
আজ নয় কাল মিলবেই ফল।
---------------------
জাতের চেয়ে মানুষ সত্য
অধিক সত্য প্রাণের টান।
বিশ্ব পিতার সিংহ আসন
প্রাণ বেদীতেই অধিষ্ঠান।



কবিতা - বিজয় গান।

ওরে ভীরু, ওরে মরা !
মরার ভয়ে যাসনি তোরা !
তোদেরও আজ ডাকছি মোরা ভাই।


কবিতা - পাগল পথিক।

মুক্তি সে তো নিজের প্রাণে, নাই ভিখারীর প্রার্থনায়
মরার মতন মরতে, ওরে মরণ ভীতু ক’জন পায় ?


অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থ

কবিতা- বিদ্রোহী।

---------------------
আমি চির বিদ্রোহী বীর
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির।
---------------------



কাব্যগ্রন্থ দোলনচাঁপা

কবিতা -- বেলাশেষে

---------------------
পাখি উড়ে যায় যেন কোন মেঘ লোক হতে
সন্ধ্যা দীপ জ্বালা গৃহ পাণে ঘর ডাকা পথে।
আকাশের অস্ত বাতায়নে
অনন্ত দিনের কোন বিরহিনী কনে
জ্বালাইয়া কনক প্রদীপ খানি
উদয় পথের পানে যায় তার অশ্রু চোখ হানি।
---------------------
আমার যে চারিপাশে ঘরে ঘরে কত পূজা কত আয়োজন,
তাই দেখে কাঁদে আর ফিরে ফিরে চায় মোর ভালোবাসা ক্ষুধাতুর মন।
অপমানে পুণঃ ফিরে আসে
ভয় হয়, ব্যাকুলতা দেখি মোর কি জানি কখন কে হাসে ।


কবিতা - পথহারা

বেলা শেষের উদাস পথিক ভাবে
সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে
উদাস পথিক ভাবে।
---------------------
পথের পথিক পথেই বসে থাকে,
জানেনা সে কে তাহারে চাহে
উদাস পথিক ভাবে।
---------------------

হঠাৎ তাহার পথের রেখা হারায়
গহন ধাঁধাঁর আঁধার বাঁধা কারায়
পথ-চাওয়া তার কাঁদে তারায় তারায়
আর কি পূবের পথের দেখা পাবে
উদাস পথিক ভাবে।


কবিতা - উপেক্ষিত

কান্না হাসির খেলার মোহে অনেক আমার কাটল বেলা
কখন তুমি ডাক দেবে মা, কখন আমি ভাঙব খেলা ?
---------------------
চাই যারে মা তায় দেখি নে
ফিরে এনু তাই একলা
পরাজয়ের লজ্জা নিয়ে বক্ষে বিঁধে অবহেলা।
আজকে বড় শ্রান্ত আমি আশায় আশায় মিথ্যা ঘুরে
ও মা এখন বুকে ধর, মরণ আসে ঐ অদূরে।
---------------------
আর সহেনা মাগো এখন আমায় নিয়ে হেলাফেলা
---------------------
চারদিকে মা প্রবঞ্চনা
ভালোবাসার গিল্টি সোনা।
আজ মণি কাল ধূলিকণা
জুয়ার হাট এই প্রেমের মেলা।
খুইয়েছি সব সাধের খেলায়, বুক ভেঙেছে হেলার ঢেলা
এখন তুমি নাও মা কোলে, নয় অকূলে ভাসাই ভেলা।


কবিতা - পূবের চাতক

সকাল সাঁঝে চেয়ে থাকি পূর্ব গগনের পাণে
কেন যে তা, তার আঁখি আর আমার আঁখিই জানে।
---------------------
উদয়ঘাটে হাসে যখন পোড়ারমুখী শশী
শশীর মুখে চেয়ে ভাবি শশী তো নয় দোষী।
---------------------
যেদিন আমি বিদায় নিব শেষের খেয়া বেয়ে
জানিনা তার আঁখি সেদিন থাকবে কোথায় চেয়ে।



কবিতা -- পূজারিনী

বিশ্ব যারে করে ভয় ঘৃণা অবহেলা
ভিখারিনী ! তারে নিয়ে একি তব অকারণ খেলা ?
তারে নিয়ে একি গুঢু অভিমান ? কোন অধিকারে ?
নাম ধরে ডাকটুকু তা’ও হানে বেদনা তোমারে ?
কেউ ভালোবাসে নাই ? কেউ তোমা’ করেনি আদর ?
জন্ম ভিখারিনী তুমি ? তাই এত চোখের জল, অভিমানী করুণা কাতর।





কবিতা - আশান্বিতা

আবার কখন আসব ফিরে সেই আশাতে জাগব রাত
হয়তো সে কোন নিশুত রাতে ডাকবে এসে অকস্মাৎ।
---------------------
পোড়া চোখের জল পুড়ায়না কেমন করে আসবে ঘুম ?
এনে পড়ে শুধু তোমার পাতাল গভীর মাতাল চুম।
কেমন করে আসবে ঘুম ?


কবিতা - পিছু ডাক

সখি ! আমার আশাই দুরাশা আজ তোমার বিধির বর
আজ মোর সমাধির বুকে তোমার ওঠবে বাসর ঘর।
---------------------
বিদায় সখি, খেলা শেষ এই বেলা শেষের খনে
এখন তুমি নতুন মানুষ নতুন গৃহকোণে।


কবিতা -- কবি রানী

তুমি আমায় ভালোবাস তাই তো আমি কবি
আমার এ রূপ - সে যে তোমার ভালোবাসার ছবি।
---------------------
তুমি ভালোবাস বলে ভালোবাসি সবি।



কাব্যগ্রন্থ - ছায়ানট

কবিতা - চৈতী হাওয়া

শূণ্য ছিল নিতল দীঘির শীতল কালো জল
তুমি কেন ফুটলে সেথা ব্যথার নীলোৎপল ?
আঁধার দীঘির রাঙলে মুখ
নিটোল ঢেউ এর ভাঙলে বুক
কোন পূজারী নিল ছিঁড়ে ? ছিন্ন তোমার দল
ঢেকেছে আজ কোন দেবতার কোন সে পাষানতল।



কবিতা - অবেলায়

বৃথাই ওগো কেঁদে আমার কাটলো যামিনী
অবেলাতেই পড়ল ঝরে কোলের কামিনী।
ও সে শিথীল কামিনী।
খেলার জীবন কাটিয়ে হেলায়
দিন না যেতেই সন্ধ্যে বেলায়
মলিন হেসে চড়ল ভেলায়
মরণ গামিনী।
আহা ! একটু আগে তোমার দ্বারে কেন নামিনি
আমার অভিমানিনি।


কবিতা -- লক্ষীছাড়া

আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন
শেষে সেই আমারে কাঁদায়, যারে করি আপনারি জন।
---------------------
আমি তবু কেন সজল চোখে ঘরের পানে চাই
নিজেই কি তা জানি আমি ভাই ?
---------------------
আর কেউ হবেনা আপন যখন সব হারিয়ে চলতে হবে
পথটি আমার নির্জন।
আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন।


কবিতা -- বিদায় বেলায়

হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা
আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদোনা
---------------------
ওগো যাবে যাও, বুকে ব্যথা নিয়ে যেয়োনা।







সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৩৬
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×