আমি মানুষ হিসেবে যে ভয়াবহ আলসে ধরনের, সেটা আমার প্রবল শত্রু কিংবা প্রবল বন্ধু সকলেই স্বীকার করে এবং বন্ধুত্বের খাতিরে বা শত্রুতার উদ্দেশ্যে সকলেই সেটা মেনে নিয়েছে এবং এইজন্য আমি কক্ষনই কোন কাজ বেশিদিন আগ্রহ নিয়ে করতে পারি না।
কিন্তু বরাবরই পশু পাখির প্রতি আমার ভয়াবহ দুর্বলতা। ছোট বেলায় বাড়িতে গেলেই মুরগি, গরু নিয়ে পরে থাকতাম। আমার জীবনের প্রথম দুর্ঘটনা ও এই নিয়ে, মুরগির ছানা ধরতে গিয়ে মুরগির আক্রমনের স্বীকার
আমি একুরিয়ামে মাছ পালনের চেষ্টা ও করেছিলাম বেশ কয়েকবার, কিন্তু কোন এক অজানা কারনে মাছেরা ২/১ সপ্তাহের মধ্যেই পটল তুলত এবং তা দেখে আমার ঘরের লোকজন খুবই আনন্দিত হত কারন পৃথিবী যত আনন্দ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে আনন্দ পাওয়া যায় মনে হয় " I Told u so " বলতে পেরে...
সেই আমি যখন করার কিছু না পেয়ে অবশেষে পাখি পালার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন আমার বাসার লোকজন ছাড়া সবাই ভয়াবহ রকম আশ্চর্য হল এবং আমার মানসিক সুস্থতা নিয়ে গত ২০ বছরে যত আলাপ হয়েছে আবার ও তার পুনরাবৃত্তি ঘটল। কিন্তু আমি " পরাজয়ে ডরে না বীর "
সিদ্ধান্ত তো নিয়ে ফেললাম পাখি পালবো, কিন্তু কোনটা?
শুরু হল নেট ঘাটাঘাটি, অবশেষে বেসিক আলীতে নাম দেখলাম মুনিয়া পাখি, তাই সই। মুনিয়াই পালুম।
এবার কেনার পালা, গেলাম সেলবাজারে, ক্লিক বিডিতে। আরে এত কম দাম!!!! আরেকটু সার্চ, বাসার আসে পাশে কেউ আছে কিনা দেখতে গিয়ে কিছু কবুতরের পোস্ট দেখলাম এবং কিছু বাজারিগরের ও পোস্ট দেখলাম এবং সেই পোস্ট দেখে সিদ্ধান্ত বদল, কিনলে কিনব বাজারিগর। শুরু হল আবার নেট ঘাটাঘাটি, কি পাখি, কি খায়, কেমনে খায় , কেমনে পালে। অসংখ্য ওয়েবসাইট ঘেঁটে বুঝলাম অতি ভালো এই পাখি। পালা খুবই সহজ, নভিসদের অন্য পাখি পালার নেট প্র্যাকটিস হিসেবে বাজি পালতে বলা হয়!!!! সব পড়ে ঐ কৌতুকের কথা মনে পড়ল, “ স্যার আমি আমার মুরগীরে কিছু খাইতে দেই না, সকালে সবারে ২ টাকা ধরাই দিয়ে বলি নিজে চরে খা”
অবশেষে একদিন মিরপুর-১ এ গিয়ে কিনেই ফেললাম ২ টা পাখি সাথে খাঁচা আর খাবার পাত্র, পানির পট, এবং খানা সব মিলিয়ে ৯০০ টাকা। আর খাওয়ার যে দাম দেখলাম তাতে বুঝলাম মাসে বেশি হলে ১৫/২০ টাকা খরচ হবে
দোকানদার কইল, ১ মাসের মধ্যে পাখি ডিম দিবে আর ১৫ দিনেই বাচ্চা !!!
বাসায় আনা হইল, বাসার সবাই আবারো সেই লুক দিল...... আর কইল “আমাদের ঘরের হাত নাকি ভালো না, আমাদের হাতে কিছু হয় না!!!!”
এরি মধ্যে আমার মামাত ভাইয়ের ও শখ জাগল, সেও কিনবে। সে কিনল একজন ব্রিডারের কাছ থেকে, তার কাছ থেকে জানলাম এই পাখিরে আরও অনেক কিছু দেয়া লাগে, মিনারেল ব্লক তার মধ্যে একটা। আবার যাও মিরপুর-১ সেখান থেকে ব্লক কিনতে গিয়ে বিএসবি এর নাম জানা এবং গ্রুপে যোগদান। পরে জানতে পারলাম আমার পাখি নিজেরাই মাত্র ডিম ঠেকে ফুটা বাচচা, ডিম দিবে কি ?!!
এরি মধ্যে আরও ২ টা পাখি কিনলাম !!! এর মধ্যে একটা আবার উড়ে গেলো!!! এই পাখি নিজে থেকে খাঁচার দরজা তুলতে পারে সেটা কে জানত!!! আবার প্রথম কেনা পাখিদের একটা ডায়েরিয়ায় মারা গেলো
শুরু হল আমার সত্যিকারের পাখি পালা, অভিজ্ঞ ব্রিডারদের বাসায় যাওয়া আসা, তাদের পাখি পালন দেখা, তার অনুকরন করা, সারাদিন ফেসবুক আর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বসে পাখির উপর যত গ্রুপ আছে সবগুলোতে যোগদান করা এভাবে আবার নতুন করে আরও পাখি কেনা, প্রয়োজনীয় অসংখ্য ঔষধ, কাটল বোন কেনা। সপ্তাহে ২/৩ দিন শাক দেয়া, ২/৩ দিন সব্জি দেয়া। মামাতোভাইকে সাথে নিয়ে কত অদ্ভুত জায়গায় ঘুরেছি !!! এভাবে করতে করতে ৪ মাসের মাথায় আমার বাসায় প্রথম কোন বাজিগরের বাচ্চার জন্ম, ২১ শে জুলাই। প্রথম রোজার দিন ইফতারের কিছুদিন পরেই
কিন্তু আবার ও দুর্ভাগ্য, ১ মাস বয়সে আবার ও খাঁচার দরজা তুলে এই বাচ্চাদের পলায়ন এবং কেবল একজনই রয়ে গেলো, বেচারা সবচেয়ে ছোট হওয়ায় বুঝতে পারে নাই অন্য যারা উড়ে গেলো তাদের জন্য এখন ও খারাপ লাগে এই কারনে যে তারা কিন্তু মুক্ত থাকতে পারবে না। কাকের শিকারে পরিণত হবে
একমাত্র রয়ে যাওয়া
আবার ও বাসার ডায়ালগ তোর দ্বারা হবে না, আমাদের হাতে এসব হয় না। এসব করে লাভ কি?
কিন্তু লেগে ছিলাম আর তার ফল এখন পাচ্ছি। এখন আমার কাছে ৪০+ পাখি সব সুস্থ স্বাভাবিক , সারাদিন কিচিরমিচির করে ঘরের মানুষ কে ব্যতিব্যস্ত করে রাখছে।
আর এই পাখির এত রকমের রঙ বৈচিত্র্য , মিউটেশন, হাজার রকম ভেদ দেখে আমার আর সময় কাটানোর উপায় ও খুজতে হয় না। কারন এই পাখির কান্ড কীর্তি দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাড় করে দেয়া ও কোন ব্যাপার না। আর নতুন বাচ্চাদের সব কিছুই এত অসাধারন যে আমি আসলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা এদেরকে নিয়ে পার করি। আস্তে আস্তে উড়তে শেখা, খেতে শেখা, খেতে খেতে ঘুমিয়ে যাওয়া
আমার সঙ্গী সাথিরা
আমার ঘরের প্রথম বাচ্চা ( পলায়নে অনিচ্ছুক , এখন সে পূর্ণবয়স্ক)
আমার কেনা প্রথম পাখিটা, এখন সে গর্বিত মাতা
ওহ মাত্র ৯০০ টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম এখন ১ বছর পরে হিসেব করে দেখি আমার খরচের খাতায় ২২০০০ টাকার বেশি দেখাচ্ছে !!! কিন্তু গত ১ বছরে যেই অপরিসীম আনন্দ আমি পেয়েছি তার তুলনা ও তো কোথাও পাওয়া দুস্কর
কারো যদি বাজেরিগর নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে
বিএসবি
Feather Aviary
এবং আরও অসংখ্য গ্রুপ রয়েছে, এই গ্রুপের অধিকাংশ সদস্যই খুব হেল্পফুল এবং প্রয়োজন হলে বাসায় এসে ও সাহায্য করে এতটাই আন্তরিক!!!!
আর নিজে নিজে শিখতে চাইলে এই ওয়েবসাইট খুব ই ভালো প্রাথমিক ধারনার জন্য
বাজি প্লেস
হ্যাপি ব্লগিং
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪৪