
অপেক্ষা:
এই শহরে অজস্র চৌকাঠ আছে। যেগুলো দরজা জানালা আর গল্পের বইয়ের মলাটের মত চারদেয়ালের ভেতরের গল্পগুলোকে আগলে রাখে।
নিজের গল্পটা সবাই জানি। অন্তত জানার ভান করে থাকি। মাঝে মাঝে খুব কৌতূহল নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে খুব কাছের অথচ
অজানা চৌকাঠের ওপাশের গল্পগুলোকে পড়তে ইচ্ছে করে।
এই শহর আমাকে অনেকগুলো মুখোশ দিয়েছে। ভদ্রতার মুখোশটা সেইসব চৌকাঠ পাড়ি দিতে গিয়ে আট্কে যায়।
আসলেইতো এই অনাবশ্যক কৌতূহলের তো কোন মানে নেই।
কি দরকার জেনে, ওইপাশের একটুকরো বারান্দায় ওই বুড়ো মানুষটা ইজিচেয়ারে শুয়ে
সারাদিন কি ভাবে। এই এলাকার কাকগুলো ছাড়া আর কেউই-কি নেই সঙ্গ দেবার মত?
নিঃসঙ্গতা নিয়ে অনেকরকম আয়েশ করি আমরা। কিন্তু মাঝে মাঝে ছুটির দুপুরগুলোতে এই বুড়োকে দেখে নিজেই শিউড়ে উঠি। সময় একদিন আমারও
হবে। তবে যেন ওই সর্বগ্রাসী নিঃসঙ্গতার পর্বে যাবার আগেই চ্যাপ্টারটা শেষ হয়ে যায়।
জীবনটা ঠিক কতটুকু লম্বা হলে খারাপ হয় না এটা নিয়ে ভাবিনি কখনো। তবে ঝট্পট্ সহজ যে উত্তরটা মাথায় আসে সেটা হল, যতদিন আমার জন্য
কেউ অপেক্ষা করে থাকবে... ঠিক ততদিন। যথেষ্ট স্বার্থপর আমি। সম্ভবত ভীতুও। তারপরও ঘোলাচোখে স্মৃতির জাবর কেটে অপেক্ষার চেয়ে, মুক্তি পাওয়া
অনেক ভাল।
... :
মাসখানেক হল আমার একপথের বাসস্ট্যান্ডের পরিবর্তন হয়েছে। ফেরার বাসটা এখন নতুন এক জায়গা থেকে ধরতে হয়। রাতের প্রায় ফাঁকা বাসে চড়াটার
সম্ভবত কোন নেশা আছে। কিছু মানুষ চন্দ্রাহত হয়। চাঁদের আলোয় তাদের নেশা হয়। আমার নেশা হয় ধুলোর ছায়া পড়া রাতের সোডিয়াম বাতির আলোয়।
কথাটার মধ্যে যথেষ্ট ঢং-ভাব আছে তারপরও রাতের প্রায় ফাঁকা বাস আর এইসব আলোছায়ার মায়ায় পড়ে গেছি। কোন কাজ না থাকলেও ইচ্ছে করে দেরি
করে বের হই।
ছোট স্ট্যান্ড। দিনের শেষ বাসে চড়ার জন্য দুয়েকজন অপেক্ষায় থাকে। আর অপেক্ষায় থাকে রাস্তাঘেঁষে দাড়ানো ভ্যানের ওপর চা-সিঙ্গারার দোকানটা।
বাপ-ছেলের যৌথ উদ্দোগের দোকান। বাবার বয়স খানিকটা ক্যালেন্ডারে আর বেশিরভাগটাই ক্লান্তিতে বেড়েছে, কিন্তু ছ-সাত বছরের ছেলেটাই প্রায় সব।
পিচ্চিটার সাথে গল্প করার চেষ্টা করে দেখেছি কয়েকবার। তেমন আগ্রহী না, বরং বাপটা বেশ গল্পবাজ। একয়েকদিনে মুখচেনা হয়ে গেছে। দোকান ফাঁকা থাকলে
টুকটাক গল্প জমানোর চেষ্টা করে।
শহরের সবচেয়ে বড় প্রাসাদটার সামনে রাতে আমরা অপেক্ষায় থাকি। কয়েকজন ঘরে ফেরার, আর দুজন আরেকটা একইরকম দিন শুরু করার।
রাতের শহরটা অন্যরকম। ফুটপাথের ছায়ায় যেসব ছায়ামানুষেরা অপেক্ষায় থাকে ঠিক তাদের মত। দিনের আলোয় শহরটা হারিয়ে যায়।
খুব প্রিয় একটা মানুষের হাত ধরে একদিন ঘুমিয়ে যাওয়া শহরে আমার পছন্দের একটা রাস্তা ধরে সারারাত হাটব। সব ফ্যান্টাসি হয়ত সত্যি হয় না...
তার পরও মাঝে মাঝে এইসব ছোট-ছোট প্রিয় অপেক্ষাগুলো মন্দ না।
এবং মাইনক্যা-চিপা:
ইউনিভার্সিটির পোলাপাইন সব ছিটকে যেতে আরম্ভ করেছে। কেউ বৈদেশ কেউ নিরুদ্দেশ। মাঝে মাঝেই কারো কথা মনে পড়লে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় পাসপোর্টে
এক্সপোর্ট কোয়ালিটি, মেইড-ইন-বাংলাদেশ সিল নিয়ে চলে গেছে। নয়ত চড়ে খাচ্ছে। ধুর-ধুর ...সবই মায়া

পোলাপাইনের অনেক রকম লক্ষ। সবাই সেদিকেই ছোটার চেষ্টা করছে। আমার কোন লক্ষ নেই এটাই একটা বড় সমস্যা।

কি করছি দেখাতে হয়। ভদ্রলোক যেভাবে নিয়ম করে সপ্তাহে দু-দিন মুখ কালো করে সময়টা পার করে তাতে আমারই মায়া লাগে। ভাবছি সামনে স্যারকে
বেনামে 'ফেয়ার এন্ড আগলি' টাইপ ক্রিমগুলো পার্সেলে পাঠাব। হাজার হোক... শিক্ষকের মুখ কালো করার মত পাপের ভাগিদার হতে চাই না।
মাঝে মাঝে নিজের হাত-পা কামড়াতে ইচ্ছে করে। কোন পাপে যে এইলোক আমার এডভাইজর হয়ে গেল!
ব্লগর-ব্লগর:
সকাল থেকে মেঘ আজকে। বাতাসটা শরৎকালের কিন্তু মেঘটা ছন্নছাড়া। ব্যাপার্না।

মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে।। ...
বহুদিন ব্লগর-ব্লগর করা হয় না। মিস করি ব্লগের প্রিয় মানুষগুলোর লেখাগুলো, তারপরও জোর করে দূরে থাকি। বেশিদিন কোনকিছু নিয়ে মেতে থাকতে
পারি না। ...পুরানো মানুষগুলোর নতুন লেখাগুলো পড়তে পড়তে মনেই হয়না বহুদিন এর লেখা পড়া হয়নি।
নিজের একটা ব্যক্তিগত খুব খারাপ সময়ে ব্লগ লেখা শুরু করেছিলাম। ভাল সময়টা যখন ফিরে এলো, সবকিছু ভুলে থাকার ব্লগটাও কেমন করে যেন দূরে চলে গেল।
মানুষ হিসেবে-- আসলেই আমি খুব স্বার্থপর।
মেঘের পরে মেঘ জমেছে...