
পূর্ব কথা বা ছগিরের লুঙ্গি পর্ব:
ছগির মিয়ার জন্ম ...বাংলাদেশের অনেক চরগুলোর কোন একটিতে। শৈশবেই ছগির মিয়াকে দাস হয়ে এক মফস্বল শহরে চলে আসতে হয়েছিল। গ্রামের কাল্লু চেয়ারম্যানের মেয়ের বাড়িতে। সেই বাড়ীর আন্ডাবাচ্চাদের পড়াশুনার প্রতি সগির মিয়ার প্রবল আগ্রহ দেখে বাড়ির মালিক তাকে সংলগ্ন এক সরকারি প্রাইমারীতে ভর্তি করিয়ে দেন কাজ শেষে পড়বার জন্য। জিনিসদের (পড়ুন জিনিয়াস) টিপিক্যাল ছোটবেলার গবদা মার্কা মাথার উদাসি পড়াশুনা না দেখিয়ে কেমন করে কেমন করে যেন ছগির ফাটিয়ে ফেলা টাইপ পড়াশোনা দেখাতে লাগল।
আশেপাশের টাস্কিত মানুষজনকে ভিমরিত করে ছগির যখন ক্লাস ফাইভে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে গেল, তখন... তার সদয় এবং বউএর সামনে ভ্যাবদা টাইপ গৃহকর্তা পর্যন্ত বউ এর আদেশ অমান্য করে ছগিরকে একটা মোটামুটি মানের হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন।
....অতঃপর ক্লাস টেন পর্যন্ত ছগির বাংলা সিনেমার ছাগলের বাচ্চা সম নায়কগুলোর মত করে ক্লাসে ফাটাইয়াদিছি টাইপ রেজাল্ট অব্যাহত রাখল। অবশ্য বর্ণনায় ছগিরের অভিব্যাক্তি বাদ রেখেছিলাম এত পর্যন্ত, কারন... আসলে চর থেকে শহরে আসার প্রথমদিনে যেমন মুখভঙ্গি করে ছগির এসেছিল.. এতদিনেও তার কোন পরিবর্তন হয়নি।
যাবতিয় জাগতিক বিষয়ের উপর ছগিরের সেই প্রাণহীন লুক ...মাদাম তুসোর মোমের মুর্তির চোখের মত অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে। প্রথম প্রথম এ নিয়ে নানান ঝামেলা হলেও ...আস্তে আস্তে সবাই ধরেই নিয়েছে ...ছগির মিয়ার মস্তিস্কের সাথে স্নায়ু মন্ডলির বড়ধরনের বিচ্ছিন্নতা আছে। এইটা ভাবার আরেকটা কারণ.. চরথেকে শহর.. এবং ছোট-বড় স্কুল অব্দি ছগির মিয়ার পোশাকেও তেমন পরিবর্তন হয়নি। শুধু স্যান্ডো গেন্জিটা পাল্টে বাড়ির ছেলেগুলোর ফেলে দেওয়া শার্টগুলো তার জন্যে জুটেছে। কিন্তু তার সেই রূপবান লুঙ্গিটা ....বার দুয়েক এডিশন পাল্টানো ছাড়া সস্থানেই দেখা গেছে। অবশ্য স্কুলের পোংটা পোলাপানের ছগিরের রংচঙ্গে লুঙ্গিটার প্রতি একটা বাড়তি আকর্ষন সবসময়ই ছিল। কিন্তু টান দিয়ে স্থান চ্যুত করার পরও যে মানুষ উদাস হয়ে দাড়িয়ে থাকে ...তার বস্ত্র হরণ করে পোলাপান আনন্দ পেত না। এমনও দেখা গেছে ...পোলাপান নিজেরাই পরে বিরক্ত হয়ে সিস্টেম রিস্টোর করে দিয়েছে।

ক্লাস টেনে উচ্চতর গণিত আর পদার্থ বিজ্ঞানের প্রতি ছগিরের বাড়াবাড়ি আগ্রহ দেখে ...অংকের নিখিল স্যার বুঝলেন তার ক্লাসে একটা ভবিষ্যত সত্যেন বোস এর ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। ছগিরের কারণে সেই বছর ক্লাস টেন এর উচ্চতর গণিতের পোলাপান নিখিল স্যারের বিখাউজ ক্লাস টেস্টগুলোর হাত থেকে বেঁচে যায়। কারণ ততদিনে ওই ক্লাসটা ছগির আর নিখিল স্যারের গণিত আলুছানার ক্লাসে পরিনত হয়।
সবার উচ্চাশাকে বাম হাতের কনি আঙ্গুল দেখিয়ে ছগির মিয়া বোর্ড ফুটো করে বের হয়ে কলেজে যায়।

তবে কলেজে একটা টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিল। কো-এড কলেজে ছগির মিয়ার ভুষভুষা শার্ট আর রূপভান লুঙ্গি ...ফ্যাশন হিসেবে ব্যাফক জটিলতার জন্ম দিল। বোর্ড স্ট্যান্ড করা ছাএ যদি এই বেশে আসে তাহলে আমরা নয় কেন... এই মন্ত্রে কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের গরু-ছাগল মার্কা নিরিহ ছাএ গুলো ফাস্ট ইয়ারের ফুট-ফাট ইসটাইল মারা সামর্থবান ছাএদের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে রূপবান লুঙ্গির বেশে কলেজে আসতে আরম্ভ করল। ...অবস্থা এমন দাড়ালো যে কলেজ সময়ে কলেজের মাঠে আর ক্লাসে ..উৎকট রংএর একটা চোখে খোচা মারা আভা ছড়িয়ে পড়ত। আর সাথে অতি উত্তেজনায় অনেকেরই সদ্য অভ্যাস করা লুঙ্গি গুলো ধরনীর প্রবল মধ্যাকর্ষন বলে নেমে আসতে আরম্ভ করতে লাগল। সে এক ...দেখার মত দৃশ্য।

এহেন পরিস্থিতিতে ...কলেজের প্রিন্সিপাল তার ভুড়িবাগিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করলেন। কারণ অবস্থা এমন ...তাকেও কয়েকদিন পর পোংটা পোলাপান প্যান্ট খুলিয়ে ছাড়বে।
অবশেষে ...আমাদের ছগির মিয়া প্রিন্সিপালের অনুরোধে লুঙ্গি ছেড়ে প্যান্ট পড়তে আরম্ভ করলেন। এই শর্তে... তিনি শুধু কলেজ সময়টুকু এই ত্যাগ স্বিকার করবেন।


লেখাটা অনেকদিন ড্রাফটে ছিল। ...ভাল লাগলে পরের পর্ব আসবে।
ব্যবহার করা ছবিটি উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৮