মুরাকাবা বা ধ্যান কি?
ইসলাম হল সাধনা, আত্মশুদ্ধি ও সেবার ধর্ম। ইসলামের চিরায়ত ঐতিহ্য ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হল মুরাকাবা বা ধ্যান। মুরাকাবা বা ধ্যান কি? যুগে যুগে ধ্যানের ধরন বা প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে তবে ধ্যান হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অশান্ত ক্বালব বা মনকে স্থির ও প্রশান্ত করা হয়। ধ্যান হোল মনকে দিয়ে বড় কিছু করানোর প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া। ধ্যান মনকে নফস বা প্রবৃত্তির শৃংখল মুক্ত হতে সাহায্য করে এবং তাকওয়াবান হতে সহায়তা করে। ঠান্ডা মাথায় অবচেতন মনের শক্তিকে অধিক পরিমাণে ব্যবহার করে নিজের ও পরের কল্যাণ করা যায়। ধ্যান মনকে প্রশান্ত করে, উপলব্ধি দান করে এবং ধ্যান-দোয়ায় একাকার হয়ে বহুমত্রিক প্রাপ্তি ঘটে।
মোরাকাবা, ধ্যান, মেডিটেশন এটা ইসলামের উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি। যেমন,নামাজ মুসলমানদের দৈনন্দি এই ফরজ ইবাদতটি আসলে ধ্যান ও যোগাাসনের একটি যুগপৎ উপযোগিতা। আমরা যখন নামাজ পড়ি, দুনিয়ার সকল কোলাহল থেকে দূরে সরে গিয়ে নিবিষ্ঠচিত্তে স্রষ্ট্রার কাছে আত্মনিবেদন করি। হয়তো স্রষ্ট্রাকে দেখছি না শুনছি না কিন্তু তিনি আমাকে দেখছেন, আমাকে শুনছেন এই যে, নিবিষ্ঠচিত্তে কল্পনা, একাগ্রচিত্ততা এটাইতো ধ্যান ।
রাসুল (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পরে মসজিদে নববীর বারান্দায় সাহাবাদের জন্য ধ্যান বা মোরাকাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। এখানে বসে হজ্ব ও ওমরায় আসা নবীর আশেকরা কুরআন পাঠ, নফল নামাজ, ধ্যান বা মোরাকাবা, দরুদ ও মিলাদ শরীফ পড়ে থাকেন। নবীজি সাহাবাদেরকে ৪টি বিদ্যা শিক্ষা দিতেন শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত। মোরাকাবা করলে হৃদয়ের কালিমা বিদুরিত হয়, হৃদয় আলোকিত হয়। মোরাকাবার নিয়ম হল প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে ও রাত্রির তৃতীয় অংশে (রহমতের সময়) জেগে বা অন্য যে কোন সময় আল্লার ধ্যনে মগ্ন থাকা নিজের জীবনের ভুল, বেয়াদবী জন্য মহান আল্লাহর কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা প্রার্থনা করা । এভাবে অধিককাল মোরাকাবা করলে দিলের চোখ খুলে যায়। আর ঐ চোখেই কেবল মো'মেন বান্দার নামাযের মেরাজ হয়ে থাকে। মোরাকাবা হল নফল ইবাদত। নফল ইবাদত হল আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম পন্থা। তাই মোরাকাবা সাধকের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সাহাবায়ে কেরামগণ প্রথমে মোরাকাবা করেছেন। পরে আল্লাহর পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদত নির্দেশিত হয়েছে।
ধ্যানের বহুমুখী গুরত্বের তাগিদে মহাপুরুষ, অলি-আওলিয়াগণ ধ্যানে নিমগ্ন হয়েছেন। ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) এ ধ্যান-চর্চার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হযরত মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহঃ) যিনি বিশেষ পদ্ধতির মোরাকাবার উদ্ভাবক। একদা তিনি গোলাপ বাগানে ধ্যানমগ্ন ছিলেন। নব্যবিবাহিত এক দম্পতি বৃদ্ধ সাধককে বাগানে দেখে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, এ বৃদ্ধ বাগানে চোখ বন্ধ করে কি করছে?। মাওলানা রুমি বলেন, আমি চোখ বন্ধ করে যা দেখি,যদি তোমরা তা দেখতে আমি তো মাঝে মাঝে চোখ খুলি,তোমরা তাও খুলতে না।
হযরত আলী (রা) কি গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে নামাজ পড়তেন তা একটি ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত হয়। একদা হযরত আলী (রা)-র পায়ে তীর বিধলো। প্রচন্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। কয়েকজন সাহাবী তীর খুলতে উদ্যত হলেন। কিন্তু তীরে হাত দিলেই আলী (রা) চিৎকার করে উঠেন ব্যাথায়। সবাই রসূল (স) এর কাছে গেলে, তিনি বলেন আলী (রা) যখন নামাজে সেজদায় থাকবে তখন তীরটা খুলে নিও। কারণ নামাজে সে এত নিমগ্ন্ থাকবে যে, সে ব্যাথা কিছুই টের পাবে না। তা-ই হলো। আলী (রা) নামাজে দাঁড়ালেন। তীর খুলে ফেললেন সাহাবীরা তিনি টেরই পেলেন না।
যুগে যুগে নবী-রসূল, অলি-বুযুর্গ ও সাধকগণ এই ধ্যান-মোরাকাবায় নিমগ্ন হয়েছেন। হয়রত ইব্রাহীম (আঃ) এর মনে যখন প্রশ্ন জাগল কে আমার স্রষ্ট্রা তখন তিনি ধ্যানে মগ্ন হলেন অবশেষে তিনি আল্লাহ পরিচয় লাভ করলেন। রাসূলুল্লাহ (স) হেরা গুহায় ১৫ বছর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। ধ্যানরত অবস্থায় জিব্রাইল (আ.) তার কাছে ওহী নিয়ে আসেন। হযরত মুসা (আ.) সিনাই উপত্যাকায় ধ্যানরত থাকতেন। ধ্যান-মুরাকাবার গুরত্ব সম্পর্কে সূরা আলে-ইমরানের ১৯০-১৯১ আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, “নিশ্চই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন-রাত্রীর আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য নির্দেশন রয়েছে। তারা দাড়িয়ে, বসে বা শায়িত অবস্থায় আল্লাহ স্মরণ করে,তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ধ্যানে(তাফাক্কুর) নিমগ্ন হন এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালন! তুমি এসব নিরর্থক সৃষ্টি কর নি”। উক্ত আয়াতে “তাফাক্কুর” মানে হল গভীর ধ্যান,ইংরেজীতে মেডিটেশন বা কনটেমপ্লেশন।
জীব-জগৎ ও মুক্তির পথ অনুসন্ধান লাভের জন্য এই গভীর মনোনিবেশ এই আত্মনিমগ্নতার নির্দেশ আল্লাহপাক কোরআনের একাধিক জায়গায় দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “কেন তোমরা ধ্যান বা গভীর মনোনিবেশ সহকারে চন্তিা-ভাবনা কর না?”,এমনকি নবীজী (স) কে আল্লাহপাক বলেছেন, “অতএব (তুমি দৃঢ়তার সাথে কাজ কর আর) যখনই অবসর পাও প্রতিপালকের কাছে একান্ত ভাবে নিমগ্ন হও” (কোরআন,সূরাঃ ইনশিরাহঃ ৭-৮)
রাসূলুল্লাহ (স.) কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেন নি। ধ্যানের গুরত্ব সম্পর্কে বলেন, (হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত) নবীজী (স) বলেন, “সৃষ্টি সম্পর্কে এক ঘন্টার ধ্যান ৭০ বছর নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম” (মেশকাত শরীফ)। হয়রত ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত, নবীজী (স) বলেন, ''এক ঘন্টার ধ্যান (তাফাক্কুর) সারা বছরের ইবাদতের চেয়ে উত্তম''।
আত্মশুদ্ধি পথে বাধা-সমূহ হোল প্রথমত,ক্বালব বা মনের বিষ যেমনঃ রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, ঈষা, হিংসা, অহং, আমনতহীনতা, গীবত বা পরর্চ্চা, মিথ্যা, হতাশা, অপবাদ, কু-চিন্তা ইত্যাদি অপরটি মনের বাঘ, যেমনঃ না শুকরিয়া বা নেতিবাচকতা ও অমূলক ভয়-ভীতি বা তাকওয়াহীনতা। মুরাকাবা বা ধ্যানের মাধ্যমে এসকল বাধা সমূহ দূরীভূত হয়ে আল্লাহর সাথে বিলিন হয়ে যাওয়া যায়।
হিজরি প্রথম শতকের শেষ দিকে সুফি সাধকগণের মধ্যে অনেকের আবির্ভাব হয়, যারা শুধু নিরব সাধনায় সন্তুষ্ট থাকতে পারেন নি। সাধনার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ধ্যানানুশীলনেও আত্মনিয়োগ করেন এবং ধ্যানের মাধ্যমে ক্বলব জারি করে আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করেন। এতে চরম আনন্দের সন্ধানই তাদের পথ হয়ে দাঁড়ায়। সংসার ত্যাগ ও স্বেচ্ছাদরিদ্রতাকে ইতিপূর্বে সওয়াবের কাজ মনে করা হলেও তাদের ধারণা সৃষ্টি হয় যে, রাত-দিন আল্লাহ তাআলার পথে আত্মসমর্পণের বাহ্যিক রূপই হচ্ছে বৈরাগ্য ও দরিদ্রতা অবলম্বন করা। সেকালে সকল সুফি সাধকগণই কঠোর শরিয়তের পাবন্দ ছিলেন। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের অনুসরণে নামাজ, রোজা প্রভৃতি ধর্মীয় এবাদত তাঁরা গভীর নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন করতেন। হযরত ওয়াইস আল-করনী (রহ.), হযরত ইব্রাহীম বিন আদহাম (রহ.), হযরত ফুজায়েল বিন আয়াছ (রহ.), হযরত রাবেয়া বসরী (রহ.), হযরত আবু সোলাইমানুদ্ধারানি (রহ.), হযরত ইবনে আরবি (রহ.), হযরত যুন্নন মিসরী (রহ.), হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.), হযরত মনসুর হাল্লাজ (রহ.) সেকালে বিখ্যাত বিখ্যাত সাধকপুরুষগণের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
সুফিতত্ত্বের মধ্যে কবিত্বের দিক দিয়ে হযরত শেখ সাদী (রহ.), হযরত হাফিজ (রহ.), হযরত জামি (রহ.), হযরত মাহমুদ সাবিস্তারী (রহ.), হযরত জালালুদ্দিন রুমি (রহ.), হযরত ফরিদুদ্দিন আত্তার (রহ.) অন্যতম ছিলেন। অপরদিকে, আল্লাহর অস্তিত্ব সত্তার বাস্তব অনুভূতি নিজের ব্যক্তিসত্তাকে পরম সত্তার মধ্যে বিলীন করে “ফানা” প্রাপ্তি এবং অবশেষে “বাকা” বা অমৃত আহরণই সুফি সাধনার মূলকথা। কাজেই কোন অবলম্বন ব্যতীত নিছক শূন্যের মধ্যে ফানায় পৌঁছা সহজতর নয়।
সেকালে মনীষীগণ “ফানা”-কে ২ ভাগে ভাগ করেছেন, এক. “ফানাফিল্লাহ” দুই. “ফানাফির রাসুল (স.)”। আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে প্রকৃত পরিচয় পেতে হলে আগে “হাকিকতে মুহাম্মদী (স.)” বা “নূরে মুহাম্মদী (স.)” সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আহরণ করতে হবে। সুফি সাধকগণ এরূপ বিশ্বাসই পোষণ করে থাকেন। তাঁরা আরও বিশ্বাস করে থাকেন সৃষ্টির প্রথমেই ছিল শুধু আল্লাহর নূর। সে নূর থেকেই আল্লাহ পাক সর্বপ্রথমে সৃষ্টি করেছেন “নূরে মুহাম্মদী (স.)” অতপর এ “নূরে মুহাম্মদী (স.)” থেকেই সৃজিত হয়েছে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মা- এবং তার মধ্যস্থ সবকিছু। বহুল প্রচলিত এ ধারণা সুফি বিশ্বাসের এক প্রধান অঙ্গ। সকল সুফি সাধকই মনে করে থাকেন যে, আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হলে “নূরে মুহাম্মদী (স.)” সম্পর্কে অবশ্যই পরিপূর্ণ ধারণা লাভ করতে হবে।
নবী পাক (স.) সম্পর্কে এ রূপ সুউচ্চ ধারণা পোষণ করেন বলেই সুফি দরবেশগণ “হাকিকতে মুহাম্মদী (স.)” বা নূরে মুহাম্মদী (স.) সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে সে জ্ঞানের মাধ্যমেই আল্লাহ পাকের মহান সত্তার সত্যিকার অনুভূতি নিজেদের অন্তর্লোকে জাগ্রত করার প্রয়াস পেয়ে এসেছেন।
ইসলামী যুহদ (কৃচ্ছব্রত) প্রথম হিজরী শতকে বিকশিত হয়েছিল এবং বিভিন্ন তরীকায় পরিণত হয়েছিল; এ সব তরীকার ভিত্তি ছিল কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা এবং এগুলো প্রচার করতেন যাহেদ উলামায়ে কেরাম যাঁরা পরবর্তীকালে সূফী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রথম চার ইমাম, যথা-ইমাম মালেক (রঃ), ইমাম আবু হানিফা (রঃ), ইমাম শাফেয়ী (রঃ), ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ); আরও রয়েছেন ইমাম আবি আব্দাল্লাহ্ মোহাম্মদ আল্ বুখারী (রঃ), আবু হুসাইন মুসলিম বিন আল্ হাজ্জাজ (রঃ), আবু ঈসা তিরমিযী (রঃ) প্রমুখ। অতঃপর যাঁরা আগমন করেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম হাসান আল্ বসরী, ইমাম আওযাঈঁ (রঃ)। এঁদের পরে এসেছেন আত্ তাবারানী (রঃ), ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রঃ), ইবনে হাজর আল্ হায়তামী (রঃ), আল্ জর্দানী, আল্ জওযী, ইমাম মহিউদ্দীন বিন শারফ বিন মারী বিন হাসান বিন হুসাইন বিন হাযম বিন নববী (রঃ), সৈয়দ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী (রঃ) প্রমুখ। এসব যাহেদ আলেম তাঁদের আনুগত্য, নিষ্ঠা ও অন্তরের পরিশুদ্ধির কারণে সূফী হিসেবে খ্যাত হয়েছিলেন এবং তাঁদের চেষ্টার ফলেই মুসলমান বিশ্ব আজকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। ভ্রমণ করা যখন সবচেয়ে কঠিন ছিল এমনি এক সময়ে ইসলাম ধর্ম সূফী পর্যটকদের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টায় দ্রুত প্রসার লাভ করে; এই সূফীবৃন্দ এতো বড় মহান কাজের জন্যেই আল্লাহর পছন্দকৃত বান্দা হবার শর্ত যুহদ আদ্ দুনইয়া (কৃচ্ছব্রত)-তে সুশিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠেছিলেন। তাঁদের জীবনই ছিল দাওয়া, আর তাঁদের খাদ্য ছিল রুটি ও পানি। তাঁদের এই সংযম দ্বারা ইসলামের আশীর্বাদে তাঁরা পশ্চিম থেকে দূর প্রাচ্যে পৌঁছেছিলেন।
হাসান বসরী (র.)----
সুফি তত্ত্বের উন্মেষযুগের শ্রেষ্ঠতম সাধক হচ্ছেন হাসান বসরী (র.)। ইরাকের দক্ষিণে শাতিল আরবের নিকটে বসরা নগরে তিনি বাস করতেন বলেই তাঁর নামের শেষে বসরী বিশেষণটি যুক্ত হয়েছে। নবী পাক (স.)-এর অন্যতম বিবি হযরত উম্মে সালমা (র.)-র এক পরিচারিকার গর্ভে হযরত হাসান বসরী (র.) এর জন্ম হয়। হযরত রাবেয়া বসরী (র.) তাঁর সমসাময়িক মহিয়সী ছিলেন। হযরত হাসান বসরী (র.) ১৩০ জন সাহাবার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ লাভ করেন। আধ্যাত্মিক শিক্ষায় তিনি ছিলেন হযরত আলী (ক.) এর অন্যতম প্রধান শিষ্য। সম্ভবত এ জন্যই সুফি তরিক্বায় আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (ক.)-এর নামের পরেই তাঁর নামটি স্থান লাভ করে।
কাদেরিয়া, চিস্তিয়া ও সোহরওয়ারদিয়া এ তিন প্রধান সুফি ত্বরিক্বার সাধকগণ আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (ক.) এর পরেই হযরত হাসান বসরী (র.)-কে তাদের পথ প্রদর্শক বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
সুফিজম নারীবাদের সমর্থক, কেননা সুফিবাদে মহিলা সুফিদেরও সন্ধান পাওয়া যায়। তেমনি এক মহিয়সী নারী হযরত রাবেয়া বসরী (রহ.)। তিনি ৭১৯ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ইরাকের বসরা নগরীতে এক দরিদ্র পল্লীতে জন্ম গ্রহন করেন ধর্মভীরু এই তাপসী নারী। দরিদ্র ছিলেন বটে তবে পরম ধর্মিক ও আল্লাহভক্ত ছিলেন। রাবেয়া বসরী ছিলেন ভদ্র, নম্র ও সংযমী। সেই সাথে প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারিনী ছিলেন তিনি। সব সময় গভীর চিন্তায় ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতেন। রাগ, হিংসা, অহংকার তার চরিত্রকে কখনো কলুষিত করতে পারেনি। মোট কথা আল্লাহর একজন প্রকৃত ওলী হবার জন্য যা যা গুনাবলি থাকা প্রয়োজন সকল গুণের অধিকারিনী ছিলেন হযরত রাবেয়া বসরী (রহ.)। হযরত রাবেয়অ বসরী (রহ.) সকল বিপদ-আপদকে আল্লাহর তরফ থেকে পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করতেন।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:০৩