**প্রথম জন**
কেউ আমাকে অনুসরণ করছে। আমি বেশ কয়েকবার পিছনে তাকিয়ে নিশ্চিত হয়েছি। আমার পিছনে অনেক্ষণ ধরেই লেগে আছে লোকটা। আমি যেদিকে যাই, সেও সেদিকে যায়। আমি মোড় ঘুরলে সেও তাই করে। আমি অনেক চেষ্টা করেও তাকে পিছন থেকে সরাতে পারছি না।
লোকটার বয়স হিসেবে তাকে তরুণ বলা চলে। ফর্সা মুখে খোচা খোচা দাড়ি। দেখতে নিরিহ গোছের হলেও তার গায়ের জবরজং জ্যাকেটটা সন্দেহ ধরিয়ে দেয়। এই শীতের সকালে ঠান্ডার পোশাক পরে আছে সবাই। আমার গায়ে আছে একটা খয়েরী চাদর। আর পিছনের ওই লোকটা পরেছে কালো রঙের মোটা জ্যাকেট। কেন যেন মনে হয় এই জ্যাকেটের আড়ালে আছে একটা ইউনিফর্ম। অথবা নাও থাকতে পারে, ইদানিং তো সাদা পোশাকে কিংবা সিভিল ড্রেসেই গোয়ান্দা বিভাগের লোকেরা ঘুরে বেড়ায়। অথবা এই লোক কোন ইনফর্মারও হতে পারে। হয়তো ছদ্মবেশে কাজ করছে। কে বলতে পারে?
হাতের ভারী বাজারের ব্যাগটা ভালোভাবে আকড়ে ধরি। বাইরে থেকে কিছুই বুঝা যায় না, এর ভিতরে আছে কয়েকটা সাধারণ হাতবোমা। একেবারে খোলা নয়, প্রথমে খবরের কাগজ, তার উপর তিন স্তরের পলিথিন মোড়ানো। তাই ভিতরে কি আছে তা কাক-পক্ষীও টের পাওয়ার কথা না। তবু সাবধানের মার নেই। এরা কিভাবে কিভাবে যেন ঠিক-ই খবর পেয়ে যায়।
যা খুশি হোকগে। আমি এখন নিরাপদে এটা জায়গামত পৌছে দিতে পারলেই খুশি। বিনিময়ে টাকাও পাব অনেক। তবে এভাবে পিছন পিছন একটা টিকটিকি নিয়ে আসাও কোন কাজের কথা না। সামনের গলিটাতে ডুকার পর এদিক-ওদিক গোলক ধাধায় ঘুরে ফিরে একটা ব্যাবস্থা করা যাবে। ভাবতে ভাবতে আরেকবার পিছনে তাকালাম। হ্যা, লোকটা এখনো আছে।
**দ্বিতীয় জন**
সামনের ওই লোকটার কি সমস্যা বুঝলাম না। খালি বার বার পিছনে তাকাচ্ছে। বিষয়টা কি? শীতের সকালে হাটতে বেরোলাম। এটা আমার একটা বিনোদন। হাটা পথে একটু দূরের একটা টং দোকানে বসে সিগারেট আর চা খাই, দোকানের মামার সাথে একটু খোশগল্প করি। ইদানিং রাজনৈতিক অবস্থা ভালো না, কখন কি হয়, কোথায় কোথায় ককটেল ফুটে তার সব খবর শুনি। এটাও একটা বিনোদন।
ককটেলের কথা মনে হতেই ভাবলাম সামনের লোকটারসাথে ওই ককটেলবাজদের সম্পর্ক নেই তো? হতেও তো পারে। তার হাতে যেই ব্যাগটা দেখছি, তার মধ্যে হয়তো এত এত ককটেল। আজ রাতেই বা তার আগেই এগুলো ফোটানো হবে-- ঠাস্ ঠাস্ গ্রুম গ্রুম...হাহাহা... পুরাই বিনোদন।
আবার সে পিছনে তাকালো। নাহ্, এর মনে হয় আসলেই ঝামেলা আছে। একবার ভাবলাম দাড় করাই, একটু হুম্বি-তম্বি করা যাবে। পরে সেটা বাতিল করে দিলাম, বলা তো যায় না কখন কি হয়।
**শেষের জন**
আমার সামনে জবরজং জ্যাকেট পরা ছেলেটা হেটেই চলেছে। এই গলি সেই গলি যেই গলিতেই যাই, ছেলেটা আমার আগে আগে চলে সব সময়। তবে আমার লক্ষ্য এই ছেলেটি নয়, বরং তার সামনের ওই যুবকটি, যার হাতে একটা বাজারের ব্যাগ।
সামান্য নিরিহ গোছের একটা চটের ব্যাগ হলেও আমি জানি ওই ব্যাগে আছে ভয়ংকর হাতবোমা, অনন্ত আমার পাওয়া তথ্য যদি সঠিক হয়। এই মূহুর্তে সেটা সঠিক বলে মনে হবার কারণ দেখতে পারছি। ব্যাগ হাতে যুবক বার বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছে, মনে হয় ভয় পাচ্ছে। তার মানে ব্যাপারটা সত্য। একেবারে কিছুই না হলে লোকটা এমন আচরন করত না।
আমার উপর দায়িত্ব হল তাকে অনুসরণ করা, যাতে ওদের আস্তানাটা চেনা যায়। তারপর হেড কোয়ার্টারে জানিয়ে দিলেই রেইড হবে। এইবার পেয়েছি তপমাকে বাছাধন।
আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল ওই কালপ্রিটটা মোটেও আমাকে সন্দেহ করছে না। বরং বার বার জ্যাকেট পরা ছেলেটার দিকেই তাকাচ্ছে। তারমানে বোকাটা ওই ছেলেটাকেই সন্দেহ করছে। ভালো ভালো, যতক্ষণ এরকম চলবে ততক্ষণ আমার কাজ খুব সহজ হয়ে গেল।
ব্যাগহাতে যুবক বায়ে মোড় নিল, ছেলেটা মনে হয় সোজাই হাটছে। যাও বাছাধন, ভালো কাজ দেখিয়েছ তুমি।