আমাদের সময়ে নবম শ্রেণির বাংলা বইয়ে কাজী নজরুল ইসলামের ‘উমর ফারুক’ কবিতাটি পাঠ্য ছিল। এখন এটা ওই জায়গায় আছে কিনা জানি না। বাংলা বিষয়টি আমাদের প্রধান শিক্ষক পড়াতেন। তিনি ইসলাম ব্যবহারকারী একটা রাজনৈতিক দলের কট্টর সমর্থক। তার দেয়া পাঠ হেফজ (মুখস্থ) করে না আসলে বেতের ঘা খেতে হতো। তিনি এ-কবিতার একটা প্রশে্নর উত্তর বাড়ি থেকে শিখে আসতে দিয়েছিলেন।
যে যার মতো শিখে আসলাম পরদিন। যথারীতি প্রধান শিক্ষক ক্লাসে এসে ধারাবাহিকভাবে দাঁড় করিয়ে পড়া আদায় করছিলেন। যে যতটুকু হেফজ করেছি, পাখির মতো মুখস্থ বলে যাচ্ছিলাম। আমার বন্ধু হিমাংশু (হিমাংশু সূত্রধর) উত্তর দেওয়ার সময় একজায়গায় ‘হযরত মুহম্মদ (সা)' বলে ফেলল। অর্থাৎ ‘(সা.)’-এর পূর্ণরূপ না জানার কারণে হয়তো ‘(সা)’ বলে অগ্রসর হয়েছিল, যা 'সাহ্/শাহ' শোনাচ্ছিলো। স্যার তাকে থামিয়ে পুনরায় উত্তর বলতে বাধ্য করেছিলো। সে আবারও ঐ একই জায়গায় ‘(সা)’ বলল। অর্থাৎ সে বারবার ‘হযরত মুহম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাহি আসসালাম)’ না বলে ‘হযরত মুহম্মদ (সা)’ বলছিল। ব্যাপারটা স্যারকে ক্ষিপ্ত/বিরক্ত করে তোলে।
কেন স্যার হিমাংশুকে বারবার উত্তর বলতে বলেছিলেন, তা ঐ-বয়সে আমরা কেউ কেউ বুঝতে পেরেছিলাম। কোন কারণে হিমাংশু বেতের ঘা খেয়েছিল, তা আমরা কেউ কেউ তখন বুঝতে পেরেছিলাম। একজন হিন্দু ছাত্র ‘সাল্লাল্লাহু আলাহিআসসালাম’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ যে ‘(সা.)’, তা নাও জানতে পারে। এর জন্যে জোরজবরদস্তি নেই। আবার জানলেও তা আওয়াজ করে বলতে হবে, মনে করি না। কারণ মুসলমানরা ‘সাল্লাল্লাহু আলাহিআসসালাম’ দ্বারা মুহম্মদের নামে দরুদ পড়েন। একজন হিন্দু ছাত্রের বেলায় মুহম্মদের নামে দরুদ পড়াটা বাধ্যতামূলক নয়। মুসলমানও তো কোন (বিশিষ্ট) হিন্দু ব্যক্তির নামে ‘শ্রী শ্রী হরিঃ সহায়ঃ’ পড়ে না। পড়াটা বাধ্যতামূলক নয়।
[আমার বন্ধু হিমাংশু এখন ডাক্তার]
@স্মৃতিকথা
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৩৫