"যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।"
অংশটি একটি দেশাত্ববোধক গানের। বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও দলীয় অনুষ্ঠানে প্রায়ই শুনতে পাই। এর গীতিকার ও সুরকার হাসান মতিউর রহমান।
বঙ্গবন্ধু মরে নাই— এ-কথা রাত পোহালে শুনতে পেতে চাওয়া কেন,'বঙ্গবন্ধু' তো জন্মের পর থেকেই চিরজীবিতা নিয়ে বেঁচে আছেন। 'বঙ্গবন্ধু' চিরজীবিতাপ্রাপ্ত ধারণাগত সত্তা বলেই তাঁকে বিশ্ববাসীর 'মহান নেতা' হিসেবে অপ্রাপ্তির কোনো হা-হুতাশ তথা বাঙালির 'জাতির পিতা' হিসেবে পুনর্প্রাপ্তিমূলক জরুরতের বিন্দুমাত্র প্রকাশ থাকবার কথা নয়। তিনি তো সততস্বীকৃত 'মহান নেতা' ও 'জাতির পিতা'!
গানটিতে 'বঙ্গবন্ধু', 'মহান নেতা' ও 'জাতির পিতা'— শব্দবন্ধত্রয়ের সহযোগে মৃত্যুর কারণে 'বঙ্গবন্ধু'কে 'মহান নেতা' হিসেবে বিশ্বের অপ্রাপ্তি বা মৃত্যুর কারণে বিশ্ববাসীর সামনে 'বঙ্গবন্ধু'র 'মহান নেতা'রূপে উপস্থিত হতে না-পারা এবং বর্তমানে ফিরে পাচ্ছি না হেতু বাঙালি 'জাতির পিতা'র অনস্তিত্ব তথা অবর্তমানতার পরোক্ষ ইঙ্গিত পরিলক্ষিত।
শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম ও মৃত্যুর অধীন একটা মানবসত্তা। এ-কথায় কারও দ্বিমত নেই। কর্মেতিহাস থাকায় তিনিও আর দশজনের মতো 'মহান নেতা'য় অভিধিত এবং ফলে এক অবশ্যস্মর্তব্য ব্যক্তি। কিন্তু 'বঙ্গবন্ধু' ও 'জাতির পিতা' প্রশ্নে তিনি সর্বপৃথক এক সত্তা। পৃথিবীতে এ-দুটো অভিধার অধিকারী হবার যোগ্যতা একমাত্র তাঁরই ছিল এবং তিনি অভিধিত হয়েছেনও। 'মহান নেতা'র মতো ব্যক্তি-আশ্রিত এ-দুটো কর্মগুণগত প্রত্যয়েরও শুধু জন্মই থাকে, মৃত্যু থাকে না। জগৎবিস্তৃত ও চিরজীবনপ্রাপ্ত অস্তিত্বের পরিচায়ক বলে এদুটোর কারণে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান চিরস্মরণীয় হয়েছেন। মূলকথা এই যে,শেখ মুজিবের মৃত্যু হলেও 'মহান নেতা', 'বঙ্গবন্ধু' ও 'জাতির পিতা' অমর। এবং এই কারণে কোনো গানে বা সঙ্গীতে 'মহান নেতা' হিসেবে 'বঙ্গবন্ধু'র মৃত্যুবয়ান ও বাঙালি 'জাতির পিতা'র অনস্তিত্বের প্রকাশসম্বলিত ধারণাগত ভুল অভিধান রাখাটা অবাঞ্ছনীয়।
সুতরাং গানটি নিষিদ্ধ হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৪