কতা কইয়েন না ঝটপট পইরা লান। ঠ্যান্ডা হয়া যাইবো


১. ঝট্ করে স্টার্ট নিয়েই যত সত্বর পারবেন, যথাসম্ভব উঁচু গীয়ারে গাড়ি চালাবেন। ধীরে ধীরে অনেকক্ষন ধরে স্টার্ট এবং নীচু গীয়ারে গাড়ি চালিয়ে গেলে পেট্রোল খরচ বেশী হয়। আর ঝট্ করে স্টার্ট নিয়ে যত সত্বর সম্ভব উঁচু গীয়ারে চালালে পেট্রোল খরচ শতকরা ২৫ থেকে ৪০ ভাগ কমে যাবে। এভাবে চালালে প্রতি লিটার পেট্রোল খরচ কম হবে-প্রতি মাইলে কম তেল পুড়িয়ে যেতে পারবেন।
২. আগে থেকে ঠিক করে নেবেন, কোথায় গাড়ি থামতে পারে। ধীরে ধীরে গাড়ি থামান। ঝট্ করে গাড়ি থামালে ইঞ্জিনের মধ্যে যে এনার্জী জমে উঠেছে, তা শেষ হয়ে যাবে। অনেক পেট্রোল তাতে অযথা নষ্ট হয়ে যায়। ঘন ঘন ব্রেক ব্যবহার বন্ধ করুন। পরিছন্ন ড্রাইভিং প্রচুর পেট্রোল বাচাঁয়।
৩. শহরের পথে গাড়ি চালনায় পেট্রোল খরচ কমাতে গেলে যেসব দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, তা হলো-ধীরে ধীরে স্টার্ট, কম গীয়ারে গাড়ি চালনা, ঘন ঘন ব্রেক ও বেশী উচুঁ-নীচু পথে গাড়ির ঝাঁকানিকে অবশ্যই পরিহার করে চলতে হবে। তাহলে সব মিলে মোট ৩৩ ভাগ পেট্রোল খরচ কমে যেতে বাধ্য। মুফঃস্বলের লম্বা রাস্তায় যে গাড়ি ১ লিটারে ১০ কিঃ মিঃ যায়, তা শহরে এক লিটারে কিঃ মিঃ মাত্র যায়-তার কারন হলো উপরের জিনিষ গুলি। বুদ্ধিমানের মতো গাড়ি চালান-প্রতি ৫ লিটারে ১৫ থেকে ২২ কিঃ মিঃ পথ বেশী যেতে পারবেন।
৪. অতিরিক্ত স্পীড দেবেন না। ঘন্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিঃ মিঃ স্পীডে তেল খরচ কম হবে। ৮০/৯০ কিঃ মিঃ স্পীড দিলে তার চেয়ে পেট্রোল খরচ হবে অনেক বেশী-এমনকি শতকরা ৪০ ভাগ পেট্রোল বেশী খরচ হতে বাধ্য। তাছাড়া স্লো ড্রাইভিং নিরাপদও বটে। পেট্রোল খরচ কম হয় ৫০/৬০ কিলোমিটার স্পীডে-তার বেশি দিলে হবে ঠিক তার উল্টো।
৫. ইঞ্জিন ঠিকমতো শব্দ না করলে, বেশি আ উল্টো-পাল্টা শব্দ করলে গাড়ির ত্রুটি আর তাতে পেট্রোল খরচ অন্ততঃ ২০/২৫ ভাগ বুদ্ধি পায়।
প্রথমে কাজটা কঠিন বলে মনে হতে পারে-কিন্তু তা ঠিক কঠিন নয়। চারটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাহলেই কাজটি ঠিক হবে। তা হলো-
(ক) ডিস্ট্রিবিউটারঃ শহরের ড্রাইভিং ও লম্বা জানি ড্রাইভিং এর জন্য ডিস্ট্রিবিউটার পৃথকভাবে সেট করতে হয়। যদি সেটে কোন গোলমাল না থাকে তাহলে শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ পেট্রোল খরচ কম হতে বাধ্য।
(খ) স্পার্ক প্লাগঃ পোড়া পেট্রোলের কার্বন স্পার্ক প্লাগে লেগে ঠিকমত ফায়ারিং হতে দেয় না। তার ফলে পেট্রোল পরিষ্কার করতে হবে ও ১৫০০ কিঃ মিঃ পথ চলার পর, স্পার্ক প্লাগটিকে পাল্টে দিতে হবে।
(গ) কার্বোরেটার এ্যাডজাস্টমেন্টঃ ঠিকমতো কার্বোরেটার এ্যাডজাস্ট করা না হলে গাড়িতে শব্দ হতে পারে। এর ফলে প্রতি ট্যাঙ্ক পেট্রোল ১৫/২০ কিঃ মিঃ পথ আপনার নষ্ট হবে। নিয়মিত কার্বোরেটারকে ঠিকমতো এ্যাডজাস্ট করতে হবে।
(ঘ) ফুয়েল পাম্প ও ইলেকট্রিক্যালঃ যন্ত্রপাতি গুলো ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা দেখবেন। এগুলো খারাপ হয়েছে সন্দেহ হলে ঠিক করবেন-তাহলে পেট্রোল খরচ শতকরা ১০ ভাগ কম হবে।
৬. ভাল ফিল্টার-ব্যবহার করলে বিরাট-সুবিধা। ভাল ফিল্টার ব্যবহারে গাড়ি শান্ত ও পরিচ্ছন্নভাবে ছুটবে। বেশি ব্যবহার না করে নিয়মিত ফিল্টার পাল্টাতে হবে-যাতে তা জাম হয়ে না যায়। নিয়মিত ফিল্টার চেক করা ও খারাপ হলেই পাল্টানো উচিত।
তাছাড়া ফিল্টার পাল্টাবার একটা নিয়ম আছে।
তেলের ফিল্টার - প্রতি ৬৫০০ মাইল ভ্রমনের পর।
জ্বালানীর ফিল্টার - প্রতি ৮০০০ মাইল ভ্রমনের পর।
বাতাসের ফিল্টার - প্রতি ১৮০০০ মাইল ভ্রমনের পর।
বিঃ দ্রঃ এইখানের অনেক গাড়ির ফুয়েল ফিল্টার বা জ্বালানীর ফিল্টার থাকে না। না থাকলে তা লাগিয়ে নিলে অনেক টাকা খরচ কম হবে।
৭. টায়ার যেন ঠিকমত ফোলা থাকে। টায়ার ঠিকমতো ফোলা না থাকলে অনেক বেশি পেট্রোল খরচ হয়।
৮. শক্ এ্যাবজবরি ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। শক্ এ্যাবজবরি ঠিকমতো কাজ না করলে অনর্থক ঝাঁকানি দিতে থাকতে পারে-তার ফলে পেট্রোল বেশি খরচ হতে বাধ্য।
৯. পথের ধারে গাড়ি থামিয়ে ইঞ্জিন চালু রেখে গল্প করা খারাপ অভ্যাস। তাতে প্রচুর তেল বাজে খরচ হবে। কখনো ১ থেকে ২ মিনিটের বেশী থামিয়ে ইঞ্জিন চালু রেখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা উচিত নয়।
১০. বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে মিলে মিশে প্ল্যান করে ভ্রমন করা উচিত। যে তেল খরচ হবে, তাতে যেন গাড়িতে যত জন আঁটে, সকলে ভ্রমন করতে পারে। আবার বন্ধুর গাড়িতে একদিন ভ্রমন করতে হবে। এই ভাবে ছক বেধে কাজ করলে অনেক খরচ কমানো যায়।
১১. গাড়ির কতগুলো দোষ হবার সম্ভাবনা আছে। এগুলি হলে সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিকার করতেই হবে। যেমন-
(ক) পিছনের এগজস্ট স্মোক বেশী হলে অবশ্যই জ্বলানী ঠিকমতো জ্বলছে না বুঝতে হবে। অবিলম্বে মেরামত না করলে অযথা ভীষণভাবে পেট্রোল বাজে খরচ হবে।
(খ) কয়েকবার মোড় ঘুরে যদি ইঞ্জিনে “ব্যাক্ ফায়ার” করতে থাকে অর্থাৎ পিছন থেকে ভট্ ভট্ শব্দ করে, অবশ্য মেরামত করাতে হবে।
(গ) পেট্রোলের বেশী কাঁচা গন্ধ বের হওয়া-মানেই কোথাও লিক হয়েছে। পেট্রোল পড়ে নষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে পাইপ লাইন বা পেট্রোল লাইন চেক করতে হবে, তা না হলে ভীষন অপচয় অবশ্যই হতে থাকবে।
(ঘ) তাপ বেশি হচ্ছে-অর্থাৎ রেডিয়েটর ঠিকমত কাজ করছে না ও ঠান্ডা করছে না। সঙ্গে সঙ্গে মেরামত না করারে নানা ক্ষতি হতে পারে। এ্যাডজাস্টমেন্ট ডিষ্ট্রিবিউটার দেখতে হবে। না হলে পেট্রোল বেশী খরচ হবে।
(ঙ) ঠিকমত ব্রেক হচ্ছে না বা গীয়ার ইত্যাদি কোন যন্ত্র কদাচ যেন ঢিলে না থাকে-তৎক্ষনাত তা মেরামত করা একান্ত প্রয়োজন।
(চ) গাড়ি একদিকে বেশি বেঁকে থাকা মানেই গীয়ারে ভীষণ ক্ষতি ও জ্বালানী নষ্ট। সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করাতেই হবে-তা না হলে বিপদ ও বাজে খরচ, তা মনে রাখতে হবে।
(ছ) গাড়ির ঝাকুনি বেশী হওয়া মানে স্প্রীং এ্যাজবরি প্রভৃতির গোলমাল। সঙ্গে সঙ্গে মেরামত না করালে পেট্রোল বাজে খরচ হতে বাধ্য।
১২. গাড়ির আর একটি প্রধান বিষয় হলো গাড়ির চাকা। এদিকে সব সময় নজর রাখবেন। দুটি সামনের ও দুটি পেছনের চাকার মধ্যে যেন পূর্ণ সমান্তরাল থাকে। তা না থাকলে বা একটু ঢিলে থাকলে অযথা গাড়ি ঝাকুনি খাবে। গাড়ির ঝাকুনি সব সময় বেশী পেট্রোল খরচ করায়।
(ক) গাড়ির চাকার হুব্স বিয়ারিং ঠিক আছে কিনা এবং তা ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা দেখতে হবে এবং একটু গোলমাল থাকলে তার ফলে অন্যান্য সব কিছু ঠিক থাকলেও গাড়ি অযথা ঝাকুনি খেতে পারে। এর পালিশ যেন ঠিক থাকে। তা না হলে এর ফলে প্রতি লিটার তেলে কিছু মাইল আপনার নষ্ট হবে।
(খ) সবসময় দেখতে হবে স্ট্যাগ নাট যেন ঠিক থাকে ও তা ঠিকমত আটাঁ থাকে। তা না থাকলে গাড়ির গতি ঠিকমতো হবে না। জোরে চালালে মাঝে মাঝে ঝাঁকুনি খাবে গাড়ি, তার ফলে তেলের অপচয়।
(গ) ক্রাউন ও টেল পিনিয়ামের কোন দাঁত ভাঙ্গা নেই তো এটা ভাল করে নজর রাখবেন। কারন হয়ত দেখা গেল, গাড়ি অন্য সবদিকে স্বাভাবিক আছে, কিন্তু ক্রাউন বা টেল পিনিয়ামের একটি দাঁত ভাঙ্গা থাকার জন্যে গাড়ি ঝাঁকুনি খাচ্ছে অনাবশ্যকভাবে। এরূপ দেখা গেলেই, সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করিয়ে নিতে হবে। গাড়ি গ্যারেজে থাকার সময় তা খুলে ভালভাবে চেক্ করে নিন, ও গুলোর কোনও দাঁত ভাঙ্গা আছে কিনা।
(ঘ) টেল বিয়ারিং যেন সবসময় ঠিক থাকে। অনেক সময় তাতে ময়লা জমে যেতে পারে। এইভাবে তার মধ্যে ময়লা জমলে তার ফলে এটি কিছুটা জাম হবে এবং তার ফলে গাড়ি চলবে বটে ঠিকমতই, তবে গাড়ি একটু কাঁপতে পারে বা মাঝে মাঝে ঝাঁকুনি দেবে। তাই টেল বিয়ারিং পরিষ্কার করে নিতে হবে নিয়মিত। যদি সন্দেহ হয় যে এটি কাজ করছে না, তাহলে গ্যারেজে গাড়ি প্রবেশ করলে তা চেক করে নেবেন ও তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নেবেন। যদি মনে করেন প্রতি মাসে একবার করে এই সবগুলি চেকআপ ও পরিষ্কার করতে হবে। যদি বিয়ারিং এর লুব্রিকেশান ঠিক না থাকে, তাহলে তা লুব্রিকেট করে নিতে হয়।
(ঙ) ক্রাউন ও টেলের এ্যাডজাস্টমেন্ট ঠিক আছে কিনা তা ভালভাবে লক্ষ্য করতে হবে। এই এ্যাডজাস্টমেন্ট একটু গোলমাল থাকলে গাড়ি মাঝে মাঝে ঝাঁকুনি খেতে পারে। তার ফলেও তেল খরচ বেশী হবে।
১৩. সব সময় আপনি যখন বাড়ি থেকে বের হবেন, তখন পর পর কোথায় কোথায় যাবেন তা আগে থেকে মনে মনে ছক করে নিবেন। তা না করলে আপনাকে কতগুলি নির্দিষ্ট কাজ করার মধ্যে হয়ত বেশী ঘুরতে হলো। আজকের যুগে পেট্রোল বেশী খরচ করা যে অন্যায় তা নিশ্চয়ই আপনি মানতে বাধ্য।
১৪. যদি একান্ত প্রয়োজন না হয়, তা হলে লম্বা জার্নি পরিহার করা উচিত। যদি সুবিধা থাকে এবং অন্যভাবে লম্বা জার্নি সহজে করা যেতে পারে বোঝেন, তা হলে আজকের তেলের অভাবের দিনে অনর্থক মোটরে করে লম্বা ভ্রমন যতটা সম্ভব পরিহার করে চলার চেষ্টা করুন।
সবশেষে বক্তব্য-প্রতি তিন মাস অন্তর, কারন থাক বা না থাক, মেকানিককে দিয়ে গাড়ি চেক করানো ও সার্ভিসিং প্রয়োজন, তাতে অনেক সুফল পাওয়া যেতে পারে।