সাফল্য নিয়া আতলামি করেছেন মিঃ শিব খেরা তাহার বিখ্যাত বই তুমিও জিতবে-৭তে---স্রোত
সাফল্যের চাবিকাঠিঃ
সাফল্য কোনও আকস্মিক ব্যাপার নয়। এটি আমাদের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির ফল এবং সেই মনোভাব আমরা নিজেরাই নির্বাচন করি। সুতরাং সফলতা আমাদের নিজেদের নির্বাচনের উপর নির্ভরশীল কোন আকস্মিকতার উপর নয়।
অনেক জীবনে একটা বড় ধরনের লটারি জেতার আশা করে, কিন্তু লটারি জেতাকেই কি সাফলতা বলে?
একজন ধর্মযাজক একটি ফসলে পরিপূর্ণ ক্ষেতের পাশ দিয়ে গাড়িতে যাচ্ছিলেন, সুন্দর ফসল দেখে তিনি গাড়ি থামিয়ে ফসলের প্রশংসা করলেন এবং সেই ক্ষেতের মালিক ধর্মযাজককে দেখে তার ট্রাক্টর চালিয়ে তার কাছে এল। ধর্মযাজক যখন জিজ্ঞেস করলেন,“ভগবান তোমাকে ক্ষেতভরা ফসল দিয়েছেন তুমি কি তার কাছে কৃতজ্ঞ?” ক্ষেতের মালিক জবাব দিল, “হ্যাঁ, ভগবান আমাকে এই ক্ষেতটি দিয়েছিন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ, কিন্তু এই ক্ষেতভরা ফসল আমার পরিশ্রমের ফল।”
এটা ভাবতে আশ্চর্য লাগে যে কোনও কোনও ব্যক্তি জীবনে একরে পর এক সফলতা লাভ করে আবার কেউ কেউ কেবল কাজের জন্য প্রস্তুতি হয়। এটাও খুব আশ্চর্যের বিষয় যে একজন মানুষ তার জীবনে একটার পর একটা বিপত্তি কাটিয়ে তার লক্ষ্যে পৌঁছায়, আর একজন একটামাত্র বিপত্তি অতিক্রম করতেই হিমসিম খায় এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। উপরের দুটি প্রশ্ন যদি স্কুল-কলেজে শিক্ষাসূচীর অন্তর্ভূক্ত হত এবং তার যথার্থ উত্তর যদি ছাত্রদের শেখানো হত তবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নতুনরূপ নিত। যারা অসাধারণ ব্যক্তি তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন না, আর যারা সাধারণ ব্যক্তি তারা জীবনে নিরাপত্তা খোঁজেন। আমরা জীবনে যে লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই তার প্রতি স্থির দৃষ্টি রাখা উচিত। আমরা যা চাই না তার প্রতি নজর না দিলেও চলে।
সাফল্য কীঃ
সাফল্য এবং অসাফল্য নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা যখন সফল ব্যক্তিদের জীবকাহিনী পড়ি তখন দেখতে পাই যে ইতিহাসের যে যুগেই তার আবির্ভুত হোন না কেন তাদের একই রকমের অনেগুলি গুণ থাকে। যে গুনাবলী তাদের সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল, সেগুলিকে চিন্হিত করতে পারলে এবং যথাযথ অনুসরণ করতে পারলে আমরাও সফল হতে পারি। অনুরূপভাবে সমস্ত অসাফল্যেরও কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে। যদি সেই বৈশিষ্ট্যগুলিকে এড়িয়ে চলি তাহলে আমরা বিফল হব না। সাফল্যের মধ্যে কোন রহস্য নেই। সাফল্য কেবলমাত্র কয়েকটি মূল আদর্শকে নিয়মিতভাবে প্রয়োগ করার ফলশ্রুতি । উল্টোটাও একইরকম ভাবে সত্যি। বিফলতা হচ্ছে কয়েকটি ভুলের ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি, এগুলি সরলীকরন মনে হতে পারে কিন্তু আসল কথা হচ্ছে যে সমস্ত সত্যই খুব সরল একথা বলার উদ্দেশ্য নয় যে মূল আদর্শগুলি খুব অনায়াসে পালন করা যায়, কিন্তু এটা ঠিক যে এগুলি খুব জটিল বা অসাধ্য নয়।
যারা প্রায়ই হাসতে জানে এবং ভালোবাসতে জানে,
যারা জ্ঞানী লোকের কদর পায়,
আর পায় বাচ্চাদের আদর,
সমঝদার সমালোচকের প্রশংসা পায়,
আর যারা মিথ্যা বন্ধুত্বের বেইমানি সহ্য করতে পারে,
যারা সৌন্দর্যের পূজারী,
যারা মানুষের মধ্যে মহত্ত্ব খুঁজে বেড়ায়
যারা প্রতিদানের প্রত্যাশা না করে
নিজেদের উজাড় করে দেয়;
যারা অনাবিল হাসিতে হয়ে উঠতে পারে উচ্ছ্বসিত,
গান গেয়ে যারা আত্নহারা হয়
যারা পৃথিবীতে জন্মেছে বলে,
পৃথিবীর বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়া সহজ হয়েছে;
যদি জানে যে অন্তত একটি জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এনেছে
তারই চেষ্টায়,
তাহলে তাই হবে জীবনের সার্থকতা, সাফল্য।
সফলতার সংজ্ঞা কীঃ
একজন ব্যক্তি কিভাবে সফল হয় ? সাফল্যকে আমরা কিভাবে চিনতে পারি ? কেউ কেউ মনে করে সাফল্যের অর্থ, ধনবান হওয়া, কারোর নিকট সাফল্যের অর্থ সামাজিক স্বীকৃতি, সুস্বাস্থ্য, সুন্দর পরিবার, সুখ-সন্তুষ্টি এবং সামাজিক শান্তি। এগুলির নিহিতার্থ হচ্ছে সাফল্য প্রকৃতপক্ষে নিজ নিজ ধারণার উপর নির্ভরশীল, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে এর অর্থ বিভিন্ন। একটি সংজ্ঞা যাতে সফলতাকে সংক্ষেপে প্রকাশ করা যায় তা হলো, “একটি যথার্থ উদ্দেশ্য উত্তরোত্তর উপলব্ধির নামই সফলতা,”-আর্ল নাইটিংগেল।
এই সংজ্ঞাটিকে সযত্নে বিচার করা যাক, “উত্তরোত্তর” এই কথাটির অর্থ হলো সফলতা একটি গন্তব্যে পৌঁছানো নয়, এটি একটি সফর। আমরা কখনোই গন্তব্যে পৌছই না। একটি লক্ষ্যে পৌঁছবার পর আমরা দ্বিতীয়টির দিকে যাত্রা করি সেখান থেকে পরবর্তী লক্ষ্যে, পরে তার পরবর্তী লক্ষ্যে। “উপলব্ধি” হল একটি অভিজ্ঞতা। বাইরের কোন শক্তি আমাকে সাফল্যের অনুভূতি দিতে পারবে না, এটা আমাদেরকে নিজের মধ্যে অনুভব করতে হবে। সাফল্যের অনুভূতি আন্তরিক, বাহ্যিক নয়। মূল্যবোধ বোঝাতে আমরা অনেক সময় “যথার্থ” শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। আমরা কোন দিকে যাচ্ছি? ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক ? “যথার্থ” এই কথাটির দ্বারা পদ্ধতির ও লক্ষ্যের গুণমান নির্ধারিত হচ্ছে এবং এর সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট আছে লক্ষ্যের অর্থ এবং আত্নিক পূর্ণতা দান করা। আত্নিক পূর্ণতা ব্যতীত সমস্ত সাফল্যই শূন্য মনে হয়।
কেন? “লক্ষ্য” খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কারণ স্থির লক্ষ্যস্থলে পৌঁছবার পথ নির্ধারণ সহজ নয়।
সাফল্যের ফলে যে প্রত্যেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে তা নয়। কোন কোন গোষ্ঠীর কাছে আমি গ্রহণযোগ্য হতে চাইব না। বুদ্ধিহীনের সমালোচনা সহ্য করা যায় কিন্তু অসৎ চরিত্রসম্পন্ন ব্যক্তির প্রশংসা অনেকের নিকট অসহ্য। আমাকে সাফল্যের সংজ্ঞা দিতে বললে আমি বলব যে সাফল্য হচ্ছে এমন একটি সৌভাগ্য যার মূলে ক্রমান্বয়ে আছে অনুপ্রেরনা, উচ্চাশা, তীব্র ইচ্ছা, কঠিন পরিশ্রম।
সাফল্য এবং সুখ পরস্পরের হাত ধরাধরি করে চলে। আপনি যা চেয়েছেন তা পাওয়াই সাফল্য, আর সুখ হচ্ছে আপনি যা পেয়েছেন তার মধ্যেই পাওয়ার ইচ্ছাকে সীমাবদ্ধ রাখা। শুধু টিকে থাকাই সাফল্য নয়। এটি তার চেয়েও বেশি।
শুধু জীবনধারণের থেকে বেশি কিছু-মানুষের মত বাঁচা।
স্পর্শের থেকে বেশি কিছু- অনুভব করা।
দেখার থেকে বেশি কিছু- নিরীক্ষণ করা।
পড়ার থেকে বেশি কিছু-হৃদয়ঙ্গম করা।
শোনার থেকে বেশি কিছু-অনুধানন করা।
---John H. Rhoades
সাফল্যের পথে কিছু বাধা (প্রকৃত বা কল্পিত)ঃ
-আত্নকেন্দ্রিকতা
-বিফলতার আশঙ্কা/আত্নমর্যাদার অভাব
-পরিকল্পনার অভাব
-নিদির্ষ্ট কাঠামোগত লক্ষ্যের অভাব
-জীবন পরিবর্তনশীল
-দীর্ঘসূত্রতা
-পারিবারিক দায়িত্ব
-আর্থিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা
-নিদির্ষ্ট লক্ষ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে তালগোল পাকিয়ে ফেলা
-আশু আর্থিক লাভের আশায় ভবিষ্যতের পরিকল্পনা পরিত্যাগ করা
-একাই অনেক কাজের ভার নেওয়া
-সামর্থ্যের অতিরিক্ত দায় গ্রহণ
-দায়বদ্ধতার অভাব
-প্রশিক্ষণের অভাব
-অধ্যবসায়ের অভাব
-অগ্রাধিকারের অভাব
বিজয়ীর প্রাধান্যঃ
বিজয়ীর সুবিধা পেতে হলে আমাদের কাজের উৎকর্ষের জন্য চেষ্টা করা উচিত; কিন্তু সম্পূর্ণরূপে নিখুঁত হওয়ার জন্য নয়। যারা সম্পর্ণরূপে নিখুত হওয়ার চেষ্টা করে যায় তার মানসিক বিকারগ্রস্ত। যারা উৎকর্ষের জন্য চেষ্টা করে তারাই অগ্রগতির পথে যায়। প্রয়োজন হলো সামান্য একটু সুবিধা বা প্রাধান্য পাওয়া। ঘোড়দৌড়ে বিজয়ী ঘোড়া পাচ ও একরে অনুপাতে বা দশ ও একের অনুপাতে জেতে, তার অর্থ কি এই যে বিজয়ী ঘোড়াটি পরাজিত ঘোড়াটি থেকে পাঁচ বা দশগুণ বেশি পুরস্কার লাভ করে, অন্যগুলি কিছু পায় না।
এটা কি সুবিচার ? হয়ত নয় কিন্তু কেউ তার তোয়াক্কা করে না। এইটাই এই খেলার নিয়ম এবং সেই জন্যই ঘোড়দৌড়ে ঘোড়া দৌড়ায়। আমাদের জীবনের ক্ষেত্রেও এই কথা সত্য । সফল ব্যক্তিরা অসফলদের থেকে দশগুণ ভালো নয়, তারা হয়ত ভগ্নাংশ মাত্র ভালো কিন্তু তাদের পুরস্কার দশগুণের থেকেও বেশি।
তাই আমাদের কোন একটি বিশেষ ক্ষেত্রে শতকরা এক হাজার ভাগ উন্নতি করার দরকার নেই । যা করা দরকার তা হলো এক হাজারটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক শতাংশ উন্নতি করা। এটি আরও সহজ। এখানেই হল বিজয়ীর প্রাধান্য।
শিব খেরা-তুমিও জিতবে ৬
Click This Link
শিব খেরা-তুমিও জিতবে ৫
Click This Link
(আর খুব বেশি দিন চইলবে না...)
(তাইপ কইরতে কাহিল লাগে)

(আইলসামি লাগে)
(স্রোত)