সত্যি কথা বলতে কি, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে আমারও ধারনা ছিলো, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সে জ্বালা এখন আমি হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি। একটা সময় মানুষ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ে শুনলে একরকম নাঁক সিটকাতো, কালের আবর্তে বর্তমানে সেটার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। যদিও আমি নিজে সেখানকার ছাত্র হওয়া স্বত্বেও আমি নিজেই কাউকে বলবোনা সেখানে পড়তে। যদিও অনেকের কাছে সেখানে পড়াটা আধুনিক ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে। আর সেখানে পড়ুয়া কতিপয় এমন মানুষেরও সন্ধান হয়তো মিলবে, যারা কিনা বলবে “ওমা, পাবলিকে কেন পড়বো; সেখানেতো গাইয়ারা পড়ে”। হ্যা, সেখানে গ্রাম থেকে আসা কিছু গাইয়া ছেলেপেলেরা পড়ে, যারা কিনা ভবিষ্যতে এ দেশটাকে নেতৃত্ব দেবে। ভাবতেই খুব গর্ব লাগে, যেখানে দেশ কিনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয়, সেখানে বাংলাদেশকে জন্ম দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
তবে স্বাধীনতার ৪৫বছর পরে এসে এমন একটি দেশেই যে শিক্ষা পণ্যে পরিণত হবে, সেটা কেই বা ভাবতে পেরেছিলো। এ দেশে সন্তানরা বড় হয়ে যাই হতে চাক না কেন, অভিভাবকরা সবসময়ই ডাক্তার-ইন্জিনিয়ার সন্তান চেয়েছিলেন। একটা সময় নিজেও খুব স্বপ্ন দেখেছিলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়ে কূটনৈতিক হবো। সে আশায় বাবাকে না বলে নিজের টিউশনির টাকায় ফরম কিনে পরীক্ষা দিয়ে সুযোগও পেয়েছিলাম প্রায় বলতে গেলে। কিন্তু সে আশা নিরাশায় পরিণত হয়, ইন্জিনিয়ারিং+বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁতাকলে পড়ে। যাই হোক, দুঃখটা সেখানে নয়।
তবে বর্তমান সময়ের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোযে আর যাই হোক, কোন ছেলেখেলার জায়গা নয়, সেটা এখানে যারা পড়ছে, বেশ ভালোভাবেই তারা বোঝে। একেরপর এক ক্লাস টেস্ট, সেমিস্টার শুরু হতে না হতেই মিড, এর মিড শেষে দম ফেলার আগেই ফাইনাল কাঁধে নিঃশ্বাস ছাড়ে। তার সাথে ল্যাব রিপোর্ট, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন সহ প্রায়ই নিত্ত-নতুন প্যারার উদ্ভব। তবে আমরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্ররা সবসময় স্বীকার করি যে, আমরা পাবলিকে পড়ুয়াদের মতোন অতোটা মেধাবী নই। সোজা বাংলাতে বলতে গেলে, আমরা কতিপয় গরু-গাধা, যারা কিনা পশ্চাতে বাড়ি খেয়ে খেয়ে মানুষ হবার চেষ্টা করছি।
তবে কষ্টটা লাগে তখনই, যখন কোন পাবলিকে পড়ুয়া মানুষ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি বলে নানাভাবে, নানা কথায় অপমান করার চেষ্টা করে। এই গতকাল হঠাৎ করেই কথাচ্ছলে বলে বসেছিলাম, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা আর যাই হোক, পাবলিকে পড়ুয়াদের চেয়ে ইংরেজিটা একটু বেশি ভালো পারে। জবাবে কয়েকজন বলেই বসলো পাবলিকেরগুলোকি স্কুল-কলেজে ইংরেজি পড়েনাই নাকি? এই কথার উত্তরটা খুবই সহজ, স্কুল-কলেজের ইংরেজি সবাই পড়লেও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর তিন-চারটা ইংরেজি কোর্স অার প্রেজেন্টেশনের ঝক্কি কয়জন পাবলিকের ছাত্র সামলায়, আমি সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এর জবাবে পাবলিকে পড়ুয়া কিছু মানুষ আমাকে ব্যাক্তিগতভাবে যে আক্রমন করে বসেছিলেন, তাতে রীতিমতোন ঘাবড়েই গিয়েছিলাম। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও কি করে অশিক্ষিত থাকা যায়, তার উদাহরণ খুজতে হলে মনে হয় সবার আগে বাংলাদেশেই আসতে হবে।
আমি ঠিক জানিনা, বাংলাদেশের কয়টা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভীনদেশি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে স্টুডেন্ট এক্সচেন্জ চুক্তি আছে। এ ব্যাপারে সত্যি কথা বলতে আমার বিন্দুমাত্র ধারনা নেই। তবে এটুকু বলতে পারি যে, বেশ কয়টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন চুক্তি আছে। তবে এখনো অনেকের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি একধরনের বৈরি মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে আমাদের দেশে সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে স্টুডেন্ট এক্সচেন্জ প্রোগ্রাম চালু করাটা বেশি পয়োজন। তাহলে হয়তো বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমাদের এ ধরনের বৈরি মনোভাব পরিবর্তনের একটু সুযোগ তৈরি হবে। আবারো বলবো, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, কারন আমরা অতোটা মেধাবী তাই সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগও হয়নি। তবে অন্যেরা বাপের টাকায় পড়ে দেখে তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার শিক্ষাটা আপনাদের কেউ দিয়ে থাকলেও আমাদের কেউ কখনোই দেয়নি
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ১:১৫